পাথর ও রক্তের বিবাদ
কি আছে অনাস্বাদিত? ঠোঁট রেখে কঠিন শিলায়
পাথরের গন্ধ শুঁকি পেতে চাই সৃষ্টির লবণ।
গ্রানিটে জিহবা লাগে, আলজিহেব শ্যাওলার স্বাদ
স্বাদ নয়, এ কেবল পাথর ও রক্তের বিবাদ।
অভুক্ত কবির মুখে, আলজিহেব জমেছে যে পানি
এ দিয়ে নরম হয় জগতের প্রকৃতিনিচয়,
কেবল অনম্য তুমি। পাথরের চেয়েও পাথর।
হাসো বাসো নাশ করো মানুষের সব বরাভয়।
২
তবু তো পৃথিবী আমাকেই ডেকে আনে
পাথরে-মাংসে খিচুড়ি রাঁধাতে চায়
বৃষ্টি এবং রৌদ্রের আহবানে
‘কবি’ শব্দটি করতলে চমকায়।
কখনো গদ্যে কখনো পদ্যে হাঁটি
নিজের অস্ত্রে নিজেকেই কাটাকাটি
করে গড়ে তুলি ছন্দের পরিপাটি –
একটি অশ্ব এক জোড়া ডানাঅলা।
৩
তুমি তো আমাকে আমারই স্বপ্ন ভেঙে এর ভেতরের শ্বাসটুকু
দেখাতে বলেছিলে। দেখো
এর মধ্যে আছে কী গনগনে লাভার স্রোত
আছে গলিত তামা। আর্সেনিক ও সোনার রস।
এতে কি তোমার ক্ষিধে মিটবে?
তুমি মানুষের স্বপ্ন খেতে চাও কেন?
কেন গলিত ধাতুর সাথে এত খনিজ বিষের জন্যে
তোমার লালা ঝরছে?
আমি কি বলিনি মানুষের স্বপ্নের ভেতরটা হল
আর্সেনিকের মতো দাহযুক্ত? তোমার চোখের জল
কি আমার পানীয় হতে পারে?
না তোমার হাসির হিরক আমার খাদ্য?
এসো আমরা কেউ কিছু ভাঙবো না। মুচড়াবো না
দলে পিষে রস বের করতে চাইবো না।
কবিতার আবার অন্তরাত্মা কি?
২৩/০২/২০০৪
পুরানো ঢাকায়
বারবার ফিরে আসি। জেট পেস্নন স্পর্শ করে পিচ
তুমি আছো এ শহরে শুধু এই স্মৃতির কিরিচ
বাতাসের বুক চিরে বিদ্ধ করে আমাকে একাকী
মহাদেশ সমুদ্র ও নদী পার হয়ে কড়া ধরে ডাকি
এ গৃহের।
তোমার চটির শব্দে নড়ে ওঠে প্রাণ।
জানি খুলে যাবে দ্বার। ক্লান্তির আহার দেবে তুমি
সকালের প্রাতরাশে যেন উষ্ণ ডিমের কুসুম
ঘুম ঘুম ফোলা চোখ।
হাত ভরা চুড়ির আওয়াজ।
খাওয়ার টেবিল জুড়ে অপার্থিব সুবাসিত ধূম
কু-লী পাকায়।
এই সুখ পেতেই তো ফিরে আসা পুরানো ঢাকায়।
যে শহরে তুমি নেই সে শহর বাসযোগ্য নয়
হোক তা নিউইয়র্ক লন্ডন প্যারিস কলকাতা
হোক না সে-সব রাষ্ট্র মানুষের দ-মু–র বিধাতা
আমি ভাসি মেঘে মেঘে। জেট পেস্নন স্পর্শ করে মাটি
আবার ঢাকায় আসি। ভিড় ঠেলে হাঁটি। কড়া নাড়ি
বদ্ধ দরোজায়
পুরানো ঢাকায়।
১৮/০১/০৫
কালঘুম
এতোদিন আমাকে নিয়ে
কারো কোনো উদ্বেগ-ই ছিল না।
পরিবারের একটা প্রায়ান্ধ মানুষ
কোথায় কীভাবে আছে
এ-নিয়ে কেউ ভাবতো না।
কারণ ছেলে-মেয়েদের ধারণা ছিল
আববা ঘরের যেখানেই থাকুন
বই নিয়েই আছেন
সজাগ।
কেবল আহার-বিহারের সময়
স্ত্রী একটু তাগাদা দিতেন
বলতেন ওঠ …
যেন একটা পাথরকে ঠেলে গড়িয়ে
নাইতে নিয়ে যাচ্ছেন।
আমার খাওয়া হয়ে গেলে
এ-বাড়ির সবাই ঝাঁকবেঁধে
ডাইনিং টেবিলে উবু হয়ে পড়ত
যেন ক্ষুধার্ত বুনো হাঁসের দল
স্ব-শব্দে নেমে এসেছে মেদীর হাওরে।
তাদের বাছবিচারহীন গেলার শব্দ
আমি পাশের ঘরে
সিগারেট টানতে টানতে শুনতে পেতাম।
সবাই ভাবত আমি এদের দলের কেউ নই।
আমার ব্যাপারে কত সহজে তারা
প্রকৃত সত্যে পৌঁছে গেছে,
দল নেই
বল নেই
চলাচল নেই
এরকম একজন মানুষ আছে আমাদের পরিবারে।
কিন্তু আমার স্ত্রী
আমার ব্যাপারে কোনো সিদ্ধামেত্ম পৌঁছোতে চাননি
পঞ্চাশ বছর একসাথে থাকলে যে নির্ভরতা গড়ে ওঠে
তা তার মধ্যে নেই।
কে জানে
তিনি হয়তো ভাবেন আমার বালিশের নিচে
কোনো সম্পর্কবিনাশী সর্বনাশ লুকিয়ে রেখেছি।
আমার কোনো অনিদ্রা রোগ নেই বলে
আমার স্ত্রীর অনুযোগের অন্ত নেই
আমি বালিশে মাথা রাখলেই নাকি ঘুমিয়ে পড়ি
এটা যে একটা নালিশ হতে পারে
তা আমার আদতেই জানা ছিল না।
আগে বলতেন –
আমি পশুর মতো ঘুমাই
আর দিনমান জেগে স্বপ্ন দেখি।
আমি যে মানুষ নই
এ-ব্যাপারে আমার সহধর্মিণীর
তিলমাত্র সন্দেহ নেই
তেমন অভিযোগও নেই।
সম্প্রতি তিনি আমাকে নিয়ে ভীত
তার ধারণা – দিবসযামিনী আমি ঘুমিয়ে-ই চলেছি
আমার চোখ খোলা থাকলেও
আমি নাকি গভীর নিদ্রায় নিমগ্ন।
চিকিৎসায় আমি ভালো হব না
এটাও তিনি জানেন
তিনি আমাকে জাগাতে চান।
আমি ভাবি এ-কালঘুম থেকে
যদি আমি দৈব কারণে জেগে যাই
আমার পরিবার-পরিজন
আমার স্ত্রীকে
আমি কি আগের জায়গায় ফিরে পাব?
২৭ জুন ২০০৪
সময়ের চিত্রকল্প অন্তরে বাহিরে
কী এক বেদনার ভারে ভারি হয়ে রয়েছে হৃদয়। ভাবি বহুদিন
তোমার তরঙ্গ থেকে সুখানুভূতির কোনো বার্তা কেন পৌঁছে না
আমার শহরে। দুমড়ে মুচড়ে ছোট হয়ে যাচ্ছে শরীর। কবে হবে
কফিনের ভেতরে যাওয়ার মতো আরো ছোট আরো শীর্ণকায়
সবাই বলছে ডেকে, এই নাকি কবিদের কথা বদলের মহা এক
মুহূর্ত এসেছে। আমার তো কথা নেই। তুমি ছাড়া দেখার বিষয়ও আর
অবশিষ্ট রাখিনি কিছুই। এমনকি উপমা দেওয়ার মতো ঘনঘটা
একে একে খরচ হয়েছে। এখন এই দেখো একটি কলম ছাড়া
পুরুষের প্রতীক হওয়ার আর কোনো নিঃসরণ যন্ত্র বাকি নেই।
তোমার তরঙ্গ তবে ক্ষুদ্র এই দ্বীপদেশ আবর্তন করে ফিরে যাক
তোমাতে আবার। সবারই অতীত থাকে পেছনের দিকে। কিন্তু দেখো, আমার
অতীত ওই উদয় দিগমেত্মর দিকে, যাকে বলে ভবিষ্যৎ, দ্রম্নত প্রসারিত।
চেয়ে দেখো উদয়াস্তহীন আমার অতীতে আমি হেঁটে যেতে
অক্লান্ত, অধীর। সব স্বপ্নই আজ দেখো ভয়ংকর সত্য হয়ে
আপেলের মতো দোল খায়। যে ফল ফলে না কোনো
বৃক্ষের শাখায় তুমি শুধু সেই ফল ধরেছো শরীরে।
লালসার অস্ত্রাঘাতে চুরমার আমাদের সাবেক পৃথিবী
এখন লুণ্ঠন লীলা। বলো প্রিয়তমা, তবে আমার
কলম কেন অগ্নিঝরা গর্জমান পুরুষাঙ্গ হবে না?
লুট লুট লুট। এখন হরির লুট হত্যার বাজারে। প্রাণ যেন
প্রাণাধিক অস্ত্রে পরিণত। শুধু প্রাণ বিস্ফোরণের শব্দে
কান ঝালাপালা। বারুদের বাতাস এসে বলে যায় –
‘শোন খোকা, তত্ত্বপাঠে মগ্ন হয়ে রুদ্ধ করো দ্বার। এখন
দারুণ তাপে পুড়ে ছাই হবে তেলের বাজার। জানো নাকি
আবার জ্ঞানীর দল তত্ত্বতালাশ করে পৃষ্ঠা খুলে বসেছে
টেবিলে। তুমি শুধু দেখে নাও রুদ্ধ দ্বার অন্ধকার ইতিহাসহীনতার
কয়েকটি ঝলসানো পৃষ্ঠা উড়ে আসে মানুষেরই দিকে।
২৬ মে, ২০০৫
কবিতার কাল
কবিতার কাল শেষ হয়ে আসে ক্রমে
আমি কবিতার আঁচল ছুঁয়েছি হাতে
বড়ই শীতল ঠান্ডার কালো রাতে
আমি কবিতার আঁচল ছুঁয়েছি হাতে।
আমি খুঁজে ফিরি মালঞ্চে এক ফুল
ফুল নয় যেন ভ্রান্তির উপকূল
সেখানে আমার শেষ হবে শেষ বেলা
আসলে কবিতা জাদুকরি এক খেলা।
শেষ নেই তবু খুঁজে ফিরি শেষ কই
আমাকে কি তুমি ভুলে গেছ ওগো সই
আমি চিরকাল শেষের স্বপ্ন বুনি
আর চুপচাপ বিদায়ের বাণী শুনি।
আমি চলে গেলে শেষ হবে এই দিন
অস্ত সূর্য আঁকবে সোনালি দিন
আমি থাকবো না এই হলো শেষ কথা
আমাকে তুমি খুঁজো না পথে পথে যথাতথা
তেপান্তরের মাঠে গিয়ে তুমি একা
ডেকো নাম ধরে পাবে সেখানেই দেখা
তারপর যেন কেউ নেই কিছু নেই
কেবল আমিই ছিলাম সেখানে, সেই।
কাব্য পিশাচশিল্প
পিশাচরীতির মধ্যে কবিতা এসে গেছে এখন
ডাইনিদের হাসির মতো খলখলিয়ে হাসছে বাতাস
কবিতাকেই ধুনোর মতো দগ্ধ করে
মন্ত্রপূত যজ্ঞের অগ্নিতে ঘৃতাহুতি দেয়া হবে
পৈশাচিক মেদ গন্ধ সৃষ্টির উল্লাসে।
কবিদের মগজ পোড়া মানুষের খুলিতে জ্বলছে
কতো মিলের বাসনা, যৌনতা শুষে নিচ্ছে কবিতার
সব স্বেদ, সব স্বাদ, সব গন্ধ, রুচি-অভিরুচি।
কে কাকে থামাবে? পিশাচীরা কবিতার মেদ মাংস দগ্ধ করে
সৌরভ টেনে নিচ্ছে নিজেদের বুকে
আর দেখো ফুলে উঠছে পৈশাচিক স্তনের
শ্বেত-শুভ্র মায়াবি মাখন।
কখনো রবীন্দ্র গন্ধ, কখনো কাজীর মগজ
ময়দার তালের মতো কচলে দলাই-মলাই করে
হয়ে যাচ্ছে সুগন্ধী অসুর খাদ্য।
খা রে কবি কবিতার নিঃসৃত রক্ত পান কর গেলাসে গেলাসে
ইচ্ছে হলে মেশাও না আরো কিছু মেদ মাংস
আরো কিছু কাংসধ্বনি
কে ঠেকাবে কবিতার পিশাচ যজ্ঞ
পাশবিক প্ররোচনায় পার্শ্বচরীদের উদোম নাভির মতো
গর্তযুক্ত চিৎ হয়ে শোয়া।
মেদ গন্ধ, স্বেদ গন্ধ, ক্লেদ গন্ধে যজ্ঞ হবে আজ।
০৯.০৫.০৬
পরিক্রম শেষ প্রামেত্ম
আর কেউ হাঁটবে না এই পথে। শেষ যাত্রী ছিলাম আমিই
পথশেষে পরাজয়। মৃত্যুর তামস
ঘিরেছে আমাকে। পতনের ঘোর লেগেছে দুচোখে
এখন মৃত্যুর দেখা শেষ হবে প্রান্তরের মাঝে
এসো মৃত্যু।
জীবন দিয়েছে বহু খড়কুটো, ক্লেদক্লান্তি, প্রেম
আমি এরি কৃতজ্ঞতা বহুবর্ণে সাজিয়ে গিয়েছি
এবার মৃত্যুর কাছে প্রশ্ন রাখি :
কী দেবে আমাকে তুমি বলো নিরুত্তর?
আরো পথ আছে নাকি যা আমার পরিক্রম বাকি?
ঝাঁকি মেরে কোথা থেকে এলো এক নারী
আমি শুধু বাকি আছি। আমি শুধু
এখনো তো অফুরন্ত। ফেটে পড়ে আমার দু বুক।
পৃথিবীর সব শঙ্খ চূর্ণ করে শ্বেত শুভ্রতার
তবু তো ধৈর্য আছে অপেক্ষার –
কবিদের পঙ্ক্তি রচনার।
সুন্দরবন
মনের পেছনে মন বসে না
থাকে অগ্রভাগে
আছাড়ি-পিছাড়ি খেয়েও
সে-মন চলবে সবার আগে।
আগের পেছনে ভাগ বসাবার
বাধ মানে না মন
বাঘের গন্ধে বাঘিনী বেরোয়
কাঁপে সুন্দরবন।
চিনতে নারি
কোথায় কারা ডাক দিয়েছে
হাঁক দিয়েছে আমার নাম
হঠাৎ আমি দাঁড়াই ঘুরে
বলি শুনুন, আছ-ছালাম।
আমার নামে পক্ষি উড়ে
আকাশজুড়ে তারার ঢেউ
তারায় তারায় পথ হারিয়ে
একলা চলি নেই তো কেউ।
একলা আমি অগ্রগামী
কোথায় থামি কোথায় ঘর
ভাঙা বেড়ার ফাঁক দিয়ে ওই
চিনতে নারি আপন-পর।
অদৃশ্য এস্রাজ
একটা অদৃশ্য বাজনা আছে আমার মধ্যে। এস্রাজ।
মৃত্যুর কথা ভাবলেই ঝনঝনিয়ে বেজে উঠে ভেতরের তার
জীবনের কথাও।
ভেতরে বাজনা নিয়ে একলা একটা মানুষ এই দ্বীপদেশে লুটোপুটি খায়
ডালপালা ছড়িয়ে দেয়া গাছের মতো তার অবয়ব
কিন্তু তার যন্ত্রের আলামত তার রগেরেশায় সাতের অধিক
সুর তুলে নিশ্বাস ছাড়ে।
আজকাল সে কথা বলতে পারে না।
শব্দ বিলুপ্তির রোগ হয়েছে তার
কিন্তু তাকে দেখলে এখনো লোকজন বলাবলি করে
এ কোনো মানুষ নয়
আসলে এ হলো গুঞ্জরিত মৌমাছির বাসা
মধু ও হুলের বিষ জমা হচ্ছে তার অস্তিত্বের কাঠামোতে
তাকে কেউ হাত ধরে নিয়ে গেলে সে কবর পর্যন্ত যেতে রাজি।
কিন্তু তাকে কেউ সমাধিক্ষেত্রে নিয়ে যেতে চায় না
সে যখনই পৌঁছে, এসে পড়ে কোলাহলের মধ্যে
মানুষের কত যে গমক। গান আর গায়ত্রীমন্ত্রের উচ্চারণ
এই তো আমি।
ভেতরে অদৃশ্য এস্রাজ আমার রক্তকে লোহিত কণিকায় ভরে দিচ্ছে
আমি হেরে যাচ্ছি অন্য একটা শতাব্দীর সকালবেলায়
আমার তো পৌঁছার কোনো আগ্রহ নেই, শুধু চলে যাওয়া।
কেউ মানুক বা না মানুক আমি তো এর বেশি
কিছুই ছিলাম না।
আমার আবার আরম্ভ বা শেষ কোথায়?
১৮.০১.০৭
ছায়া হয়ে গেল মায়া
কবিতা তো নয় কবিতার মতো কিছু
এসেছিল বুঝি আমার কাছেই আমাদের পিছু পিছু
আমি বললাম – কে তুমি ছলনা, ছায়া হয়ে এলে দূরে – সাপুড়ে বাঁশির সুরে।
ছায়া বলে ওঠে – আমি তো ছায়া’ই তুমি আমার কায়া,
কথা ফুরোতেই শুনলাম হাসি ছায়া হয়ে গেল মায়া।
কতদূর আর হাঁটবো বলো না – ওগো ছলনার সই,
আমি তো মানুষ – কবি বটে আমি আর তো কিছুই নই।
আমাকে নিয়েই দিগন্ত রাঙা করে দেয় যুবতীরা,
আমাকে নিয়েই ধুক্ ধুক্ বাজে কত যুবকের শিরা।
আমি প্রান্তরে গান গেয়ে উঠি – বলে উঠি ‘ভালোবাসা’,
লোকে বলে দেখো – এসেছে চারণ আবার সর্বনাশা।
দূর দূর করে উঠেছে জগৎ কেবল আমাকে দেখে,
শত কবি দেখ লিখছে কাব্য আমার গন্ধ মেখে।
আমার সুরভি মরণের ঘ্রাণ ছড়ালো দেশের মাটি,
আমার জন্যে বিছালো নারীরা কত যে শীতল পাটি।
কিন্তু আমার ঘুম নেই তবু যাতনায় জ্বলে যাই,
দুর্ঘটনারা ডাকছে আমায়, ওগো সহোদর ভাই।
এভাবে কত যে পাড়ি দেই আমি – তোমার তেপান্তর,
তুমি এক নারী ভাঙলে কেবল শত কবিদের ঘর।
তবু তোমাকেই ভালোবাসি নারী – এ-কথা জানাতে আজ,
ছেড়েছি আপন ভিটেমাটি আর পরেছি কবির সাজ।
২৬.০১.২০০৯
অস্তগামী মানুষের ফিরে দেখা
এতো পথ আমি হেঁটেছি তো একা একা
সূর্যের রং শেষ রশ্মির ছটা
এখন আমার মুখের ওপর নাচে
ঘনায়ে এসেছে রাত্রির ঘনঘটা
নীড়ের কাকলি নীরবতা বুঝি যাচে
রাতের কুহক আমাকে ঘিরেছে
আমি দেখি আমাতেই সব বাঁচে
পাখ-পাখালির এহেন শেষের বেলা
তারা বলে ওঠে শেষ করো এই খেলা
খেলা শেষ হলো বেলা পড়ে গেছে তবে
কিন্তু কী যেন এখনো রয়েছে বেঁচে
আমাকে জড়িয়ে আমাতেই অবশেষ
তার মাঝে আছে কোথাও একটি দেশ
ফিরবো কী আমি উদয়কালের দেশে
আমার পোশাকে জোনাকিরা বাসা বাঁধে
আমার পোশাকে হাওয়ার রোদন শুনি
কারা যেন বলে জন্ম-মৃত্যু গুনি
আঙুলে আমার জপেছি তোমার নাম
জপেছি কিন্তু ভাবিনি তো পরিণাম
এখন দেখছি অস্তের ঘনঘটা
আমার মুখে বুঝি তারই লাল ছটা
Leave a Reply
You must be logged in to post a comment.