২৯ জানুয়ারি ২০১৭-এ পাঁচজন তরুণ কবি ও লেখককে প্রদান করা হয়েছে কালি ও কলম তরুণ কবি ও লেখক পুরস্কার ২০১৬। জাতীয় জাদুঘরের প্রধান মিলনায়তনে অনাড়ম্বর আয়োজনের মধ্য দিয়ে সাহিত্যের পাঁচটি বিভাগে বিজয়ীদের হাতে পুরস্কার তুলে দেওয়া হয়। এবার বিজয়ী হয়েছেন কবিতা বিভাগে ঢেউয়ের ভেতর দাবানল গ্রন্থের জন্য নওশাদ জামিল, কথাসাহিত্য বিভাগে ফুলবানু ও অন্যান্য গল্প গ্রন্থের জন্য রাফিক হারিরি, প্রবন্ধ ও গবেষণা বিভাগে কুঠুরির স্বরগ্রন্থের জন্য তুষার কবির, মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক সাহিত্য বিভাগে ভাটকবিতায় মুক্তিযুদ্ধ গ্রন্থের জন্য হাসান ইকবাল এবং শিশু-কিশোর সাহিত্য বিভাগে অদ্ভুতুড়ে বইঘর গ্রন্থের জন্য শরীফুল হাসান।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটনমন্ত্রী রাশেদ খান মেনন, এমপি। বিশেষ অতিথি ছিলেন বিশিষ্ট প্রাবন্ধিক ও রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন উপাচার্য চিন্ময় গুহ এবং বিশিষ্ট কথাসাহিত্যিক ইমদাদুল হক মিলন। সভাপতিত্ব করেন বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক শামসুজ্জামান খান। শংসাবচন পাঠ করেন ‘কালি ও কলম তরুণ কবি ও লেখক পুরস্কার ২০১৬-এর বিচারকমণ্ডলীরপক্ষে অধ্যাপক বিশ্বজিৎ ঘোষ এবং অধ্যাপক মাহবুব সাদিক। এই বিচার প্রক্রিয়ার সঙ্গে যুক্ত আরও যুক্ত ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের চেয়ারম্যান ও কলা অনুষদের ডিন বেগম আকতার কামাল এবং জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক খালেদ হোসাইন।
সূচনা বক্তব্যে কালি ও কলমের সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য ও বেঙ্গল ফাউন্ডেশনের মহাপরিচালক লুভা নাহিদ চৌধুরী বলেন, আগেরবারের তুলনায় ২০১৬ সালে আমরা তরুণ লেখকদের কাছ থেকে অধিক সাড়া পেয়েছি। চার সদস্যের বিচারকমণ্ডলী চূড়ান্তভাবে পুরস্কারের বই নির্ধারণ করেন। তিনি আরও বলেন, আগামী ১ ফাল্গুন কালি ও কলম ১৪ বছরে পদার্পণ করবে। এ উপলক্ষে কালি ও কলম বিশেষ সংখ্যা প্রকাশ করছে।
বিশেষ অতিথি ইমদাদুল হক মিলন প্রথমেই পুরস্কারপ্রাপ্তদের অভিনন্দন জানান। তিনি বলেন, অনেক সাহিত্য পুরস্কার প্রবর্তিত হয়েছে। কিন্তু কালি ও কলম তরুণ কবি ও লেখক পুরস্কার এ কখনো কোনো পক্ষপাতিত্ব করা হয় না। এসময় তিনি এ প্রতিযোগিতার পূর্বে বিচারক হিসেবে ভুমিকা তুলে ধরেন। তিনি আরও বলেন, কালি ও কলম প্রমান করেছে বাংলাদেশের মানুষ সাহিত্য পড়তে চায়। শুধু বাংলাদেশে নয়, কালি ও কলম এখন বাংলা ভাষাভাষীর মানুষের মাঝে বিশাল স্থান দখল করে আছে। তাঁদের এ অর্জন হিমালয়সম হোক।
শুভেচ্ছা বক্তব্যে চিন্ময় গুহ বলেন, কালি ও কলম, বেঙ্গল ফাউন্ডেশনের সংগীত উৎসব, সাহিত্য সংস্কৃতির পরিচর্যায় এসব উদ্যোগের সীমা ছাড়িয়ে গেছে আজকের অনুষ্ঠান। এটি একটি অদ্ভুত সুন্দর উদ্যোগ, আপনাদের অভিনন্দন। তিনি বলেন, ই- পৃথিবী ও বোকাবাক্সের সর্বগ্রাসী থাবায় পৃথিবী যখন বিপর্যস্ত, বিপন্ন, বই শকুনির থাবার নিচে তখন কালি ও কলমের এ উদ্যোগ প্রশংসনীয়। পৃথিবীর শিল্প সাহিত্যের ইতিহাস তরুণরাই সৃষ্টি করে। তারা বারবার সাহিত্যের অঙ্গনকে তছনছ করে দিয়েছে। তাঁদের সব সময় প্রশ্ন ছিল, কেন আমার তোমাকে মানতে হবে।? তরুণরাই বারবার নিয়ম ভেঙেছেন, তরুণরাই হাতে তুলে নিয়েছে মশাল। এটা প্রতিরোধ। আজকের আয়োজনে আপনারা এসেছেন এটাও প্রতিরোধ। কালি ও কলম ও প্রতিরোধ| তিনি আরও বলেন, জীবনের সঙ্গে যোগ না থাকলে কোনো তারুণ্য গন্তব্যে পৌছাতে পারেনা। তিনি আশা প্রকাশ করেন পুরষ্কার প্রাপ্ত তরুণরা তাঁদের এই সাহিত্যচর্চা অব্যাহত ভাবে চালিয়ে যাবেন।
প্রধান অতিথির বক্তৃতায় রাশেদ খান মেনন বলেন, তরুণরাই পারে এবং পেরেছে সবসময় । পঞ্চাশের দশকের তরুণরা প্রায় সকলেই প্রতিষ্ঠিত। তবে সাহিত্য ক্ষেত্রে উনসত্তর ও একাত্তরের তরুণরা তেমন কোন প্রভাব ফেলতে পারেননি বলে তিনি হতাশা ব্যক্ত করেন। অবশ্য আশির দশকে তরুণদের সাহিত্য চর্চা রাজনীতিতে প্রভাব ফেলেছে বলে উল্লেখ করেন তিনি। রাশেদ খান মেনন আশাবাদ ব্যক্ত করেন, কালি ও কলম তরুণ কবি ও লেখক পুরষ্কার তরুণদের সাহিত্যচর্চাকে উৎসাহিত করবে ।
অনুষ্ঠানের সভাপতি শামসুজ্জামান খান পুরস্কার প্রাপ্ত সবাইকে অভিনন্দন জানিয়ে বলেন, সচেতন হও যত্নের সঙ্গে পড়। শুধু বিদেশী সাহিত্যের পেছনে ছুটো না। তিনি বলেন,সাহিত্যচর্চার ক্ষেত্রে আত্মিক সম্পর্কের সঙ্গে নিষ্ঠার সম্পর্ক রয়েছে। তিনি আশা প্রকাশ করেন, তরুণরাই সাহিত্যের স্বকীয়ধারা তৈরি করবে। আরও বক্তব্য রাখেন কালি ও কলমের প্রকাশক ও বেঙ্গল ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান আবুল খায়ের।
সবশেষে শুভাশিস সিনহা-রচিত কাব্যনাট্য ‘দ্বিখণ্ডিতা’র পাঠাভিনয় করেন ফেরদৌসী মজুমদার ও ত্রপা মজুমদার।