পুবের জানালা

ঘুরেফিরে বারবার এই জানালার পাশে বসে চন্দনা। বসতেই হয়। কেমন যেন এক ঘোরলাগা টানে ও ফিরে আসে জানালায়। কাজে-অকাজে
এদিক-ওদিক তো যেতেই হয়। হোক না একা মানুষ। তবু তো কিছু কাজ থাকে। পত্রিকার হকার বেল টেপে, ডাকপিয়ন বেল টেপে, ময়লাওয়ালা বেল টেপে, দরজা খুলতে হয়। গৃহকর্মী আসে ঘণ্টাকয়েকের জন্য। তার সঙ্গে সঙ্গে ঘুরতে হয় কিছুটা সময়। এটা করো, আহা, ওটা ধরো না। এমন আরো থাকে টুকিটাকি। কিন্তু সে আর কতক্ষণ। ফিরে আসে এই জানালাতেই। জানালার পাশে রাখা আরএফএলের পস্নাস্টিকের চেয়ারটায় কখনো আলগোছে, কখনো ধপ করে বসে। চেয়ার ওকে টানে, নাকি জানালা – জানে না চন্দনা। ভাবেনি কখনো। অফুরন্ত অবসরের মাঝে কতটা সময় সে জানালার পাশে কাটাল তার গাণিতিক হিসাবের কোনো প্রয়োজনই নেই ওর জীবনে। ঘণ্টা, মিনিট, সেকেন্ড অথবা গোটা দিনটা কাটিয়ে দিলেই-বা কে তাকে বলছে, ‘সারাটা দিন জানালায় বসে করোটা কী শুনি!’

এই যে কেউ বলে না বা বলার কেউ নেই এটা মাঝে মাঝে ভাবায় চন্দনাকে। যখন কেউ ছিল বোঝেনি ব্যাপারটা কত গুরুত্বপূর্ণ। সামান্য ওই একটা প্রশ্নের কত দাম। যখন কেউ জানতে চাইত ভ্রম্ন কুঁচকে উঠত মাঝে মাঝে। কেন এত প্রশ্ন, কেন উত্তর দিতে হবে সব কথার। এখন চন্দনার ইচ্ছা হয় – কেউ যদি জানতে চাইত একবার, সারাদিন কী করো তুমি জানালায়? যদিও প্রশ্নের কোনো সদুত্তর নেই চন্দনার কাছে।

জানালার ওপাশে খটখট চলে সারাদিন-সারারাত। সেটাও একদিন হঠাৎই আবিষ্কার করে চন্দনা। শব্দটা যেন আচমকা কানে যায়। ছিল কী এতদিন শব্দটা? মনে করতে পারে না। শব্দ চলছে, বাড়ছে তা নিয়ে কারো কোনো বিকার নেই। কেউ কিছু বলেও না। বোধ করি শব্দ পায়ও না। পেলেও গ্রাহ্য করে না। অথবা ধরেই নিয়েছে বলে লাভ কী। কে শুনবে কার কথা। শুধু শুধু মুখ নষ্ট, শত্রম্ন বাড়ানো। টাকা যার যত জোর তার তত। অত বড় বাড়ি যারা বানায় তাদের পকেটের স্বাস্থ্য বেশ ভালো। পকেটের স্বাস্থ্য ভালো মানে ব্যাংকের স্বাস্থ্য ভালো আর ওটা ভালো মানেই ধরাধরি ভালো। কাজ কী ঝামেলায় জড়িয়ে। তাছাড়া নাগরিক জীবনের অন্তহীন দৌড়ে ক্লান্ত সবাই। চন্দনার জীবনে কোনো দৌড় নেই, কোনো উত্তেজনা নেই, চার হলো না ছক্কা এমন কোনো টেনশন নেই। তাই ক্লান্তিও নেই। ঘুমও তাই চোখে সহজে আসন পাতে না। আর একদিন এমনি এক নির্ঘুম রাতে শব্দটা প্রথম ও শুনতে পায়। বুঝে উঠতে পারেনি কিসের এই শব্দ-তান। গভীর রাতে বিছানায় শোয়ার পর মনে হলো দেয়ালে সম্মিলিতভাবে কেউ বুঝি কিছু ঘষছে। চন্দনা ধরেই নিল এ-কাজ প্রতিবেশীদের। রাত যত বাড়ে ওদের ঘষাষষি তত বাড়ে। একটু বিড়বিড়ও করল আপনমনে। তবে প্রতিবেশীদের ও চেনেই-বা  কাকে। এই ফ্লোরটাতে পাঁচটা ফ্ল্যাট। তার একটাতে এখনো লোক ওঠেনি। আর একটাতে থাকে তিনজনের একটা পরিবার, যার মা-মেয়ে দুজনই বোবা। ওদের জন্য খুব কষ্ট হয় চন্দনার। বিশেষ করে বাচ্চা-মেয়েটার জন্য। আহা রে, মেয়েটা যদি কথা বলতে পারত! কত মানুষ দিন-রাত অকারণে কথা বলে যাচ্ছে। ওদের কথা থেকে বাঁচার জন্য কতজন কানে আঙুল দিচ্ছে, কতজন ওদের এড়িয়ে চলছে, ওদের দু-চারজনের কথা কমিয়ে এই মা-মেয়ের কণ্ঠে কথা দিলে কী এমন অসুবিধা ছিল বিধাতার। চন্দনা বিধাতার অনেক হিসাবই বোঝে না। এটাও বোঝে না। দ্বিতীয় বাসিন্দা বান্দরবান অঞ্চলের। জানালায় ভারী পর্দা। গৃহিণীর মুখ কখনো দেখা যায় না। স্বামী চাকরি করেন ঢাকার বাইরে। মাঝেমধ্যে স্বামী যখন ঢাকায় আসেন, তখন অনেক রাত অবধি এক অচেনা ভাষায় উচ্চস্বরে কথা বলেন তারা। রাত যত বাড়ে সে-স্বর তত উচ্চকিত হয়। প্রথমদিকে তো অদ্ভুত সেই ভাষা শুনে ভয় পেয়ে গিয়েছিল চন্দনা। মনে হতো, ভিনগ্রহের কোনো প্রাণী বুঝি তার জানালার পাশে বসে অচেনা ভাষায় কথা বলছে। আর তৃতীয় বাসিন্দার সঙ্গে চোখাচোখি হয়েছে, কথা হয়নি। কথা বলতে ইচ্ছুক মনে হয়নি তাকে। এই আর এক ব্যাপার আজকাল। কেউ সহজে কথা বলে না, হাসে না, হাততালি দেয় না। এই ফ্লোরের এই কটা বাড়ি ছাড়া ওপরে-নিচে আরো কত বাড়ি এ-বিল্ডিংয়ে। কত মানুষ। তা ওই লিফটে দেখা, সালাম পর্যন্ত। এর বেশি আলাপ এগোয় না। কাকে বলতে যাবে চন্দনা। দু-রাত তাই এভাবেই কাটে। বরং বুয়াকে একবার শুধায়,

: আচ্ছা বুয়া তুমি কি জানো, ওই যে ঘষঘষ একটা শব্দ হচ্ছে ওটা কীসের?

বুয়া কান পেতে শোনে সামান্যক্ষণ। তারপর নির্লিপ্তভাবে বলে,

: কত রকমের শব্দ কানে যাচ্ছে খালাম্মা। গাড়ির শব্দ, মানুষের শব্দ, মাইকের শব্দ আরো কত কি। খালি শব্দ আর শব্দ। অত শব্দের মইধ্যে একটা শব্দ খুঁজে লাভ কী!

বুয়া কাজে ব্যস্ত হয়ে পড়ে। এসব কথা শুনলে তার চলে না। সে সারাক্ষণ দৌড়াচ্ছে। দিনে-রাতে পাঁচ-ছয়টা বাসায় কাজ করে। তারপর আছে নিজের সংসার। অত শব্দ খোঁজার সময় কোথায় তার! বুয়াকে আর কিছু বলেনি চন্দনা। তবে তৃতীয় রাতে দু-কানে কাপড় গোঁজার পরও যখন শব্দজাল মসিত্মষ্কে আছাড় খেতে লাগল, তখন শব্দের উৎস-সন্ধানে বের হলো চন্দনা। এপাশ-ওপাশ তাকিয়ে জানালার পাশে এসে দাঁড়াল। আর তখনই চোখে পড়ল বেশ বড়সড় কয়েকটা বাতি জ্বালিয়ে রাসত্মার ওপাশে নির্মাণকাজ চলছে। গর্ত খোঁড়া হচ্ছে, সুরকি পড়ছে ঝরকে ঝর। সুরকিতে বাড়ি লেগে লেগে কেমন যেন করকর শব্দ হচ্ছে। লোকজন অনেক, কথা হচ্ছে, কাজ চলছে। চলবে সারারাত-সারাদিন পালাক্রমে। অবাক হলো চন্দনা, কেন এতদিন সে বিষয়টা দেখেনি। তারপর মনে হলো, আসলে ও-বাড়িটা আরেকটা বাড়ি দিয়ে কিছুটা ঢাকা পড়েছে বলেই হয়তো চোখে পড়েনি।

না, এজন্যও জানালার কাছে আসে না চন্দনা। এরপর ও প্রতি রাতে শব্দ শোনে। আর একটু একটু করে বিল্ডিংটার বেড়ে ওঠা দেখে। রাসত্মার ধারে চওড়া সাইনবোর্ড ওঠে। তাতে অনেকগুলো নম্বর ঝলমল করে। দু-চারদিন পত্রিকাতেও বিজ্ঞাপন আসে। চোখ এড়ায় না চন্দনার। তবে ও-বাড়ি তাকে আকর্ষণ করে না। বরং কিছুটা বিষাদাক্রান্ত করে। হারিয়ে যাবে আরো কিছুটা খোলা আকাশ। আটকে যাবে বাতাস। চোখ বাধা পাবে বারবার, ধাক্কা খাবে ইট-সিমেন্টে।

জানালায় দাঁড়ায় চন্দনা। তবে সচেতনভাবেই নির্মাণাধীন বাড়িটার দিকে তাকায় না। এ-জানালাটা বড়ই চমৎকার। বহুদূর পর্যন্ত দেখা যায়। দেখা যায় সূর্যোদয়। মাতৃগর্ভ থেকে কীভাবে একটু একটু করে বেরিয়ে আসে সূর্যশিশু, সেটা দেখা যায়। দেখা যায়, দিনের রিলে রেসরত ঢাকা শহর। রাতের মায়াবী ঢাকাকেও দেখা যায়।

একবারেই রাসত্মার ওপর থেকে উঠে দাঁড়িয়েছে বাড়িটা। দেখা যায় ফুটপাতের দোকানি, চাওয়ালা, সবজিওয়ালা, পথচারী, ভিখিরি। ট্যাক্সি আর গাড়ির জানালায় টোকা দিতে দেখা যায় হিজড়াদের। নামানো জানালা উঠে যায় দ্রম্নত। দেখা যায় হিজড়াদের এক অদ্ভুত ভাষাতীত মুখভঙ্গি। এমন অনেক কিছু দেখা যায়। দেখা যায়
বেলুন-হাতে শিশু, প্রেমিকার হাতে ফুল, আর তোয়ালের ভারে বেঁকে যাওয়া হকার। আরো কত কী। আর দেখা যায় চারপাশের বেশ কয়েকটা বাড়ি।

বাড়িটা কেনার সময় ডেভেলপার কোম্পানি লম্বা-চওড়া একটা বক্তৃতা দিয়ে বলেছিল, ‘চারদিক ফাঁকা। একদম ফকফকা। প্রচুর আলো-হাওয়া। দশ-বিশ বছরে আশপাশে কোনো বাড়ি হবে না।’ ওর কথাগুলো বিশ্বাস করতে ইচ্ছা না হলেও করেছিল চন্দনা আর আসিফ। আসিফ বড় সরল মানুষ ছিল। সাদা পাতার মতো স্বচ্ছ ওর মন। চন্দনা কিছু বলতে উদ্যত হতেই বলেছিল,

: তিনি যখন বলছেন জেনেই বলছেন।

চন্দনা বুঝেছিল এ-নিয়ে কথা বলতে চায় না আসিফ। আসিফের ইচ্ছা-অনিচ্ছা বড়ই মূল্যবান চন্দনার কাছে। আর কথা বলেনি। তাছাড়া কিছু কথা আছে, সত্য হোক অথবা মিথ্যা, বিশ্বাস করলে আনন্দ পাওয়া যায়। সে-আনন্দটাই পেতে চেয়েছিল চন্দনা।

কিন্তু আনন্দ মাটি হয়ে গেল বাড়ি হ্যান্ডওভার হওয়ার আগেই। একেবারে গা-ঘেঁষে একটা বাড়ি উঠল। আলো-বাতাস আর প্রকৃতির অনেকটাই খেয়ে ফেলল ওটা। চন্দনা থাকে দশতলায়। বাড়িটা নয়তলা অবধি উঠে থেমে গেল। তবে রড বেরিয়ে রইল। তার ওপরে উঠল একটা পানির ট্যাঙ্ক। অর্থাৎ যে-কোনো সময় গাঁথনি শুরু হতে পারে। চন্দনা সারাক্ষণ ভয়ে ভয়ে থাকে, কখন না জানি ইটের পর ইট উঠতে থাকে। ও-বাড়ির ছাদে দু-চারজন লোক একসঙ্গে দেখলেই ভাবে এখনই বুঝি মাপজোখ শুরু হবে। বাড়িটা একটা হাসপাতাল। এটাও একটা ভয়ের ব্যাপার। যেভাবে ওদের ব্যবসা বাড়ছে যে-কোনো দিন ফ্লোরে টান পড়বে। ঢাকা শহরের সব রোগী কি ভিড় জমিয়েছে এই হাসপাতালে?

তারপর বেশ কিছুটা ফাঁকা রেখে একটা বাড়ি। চন্দনার বাড়ির সঙ্গে কিছুটা দূরত্ব আছে বাড়িটার। তারপরও বাতাসে ভেসে আসে ও-বাড়ির দু-একটা শব্দকণা কখনো-সখনো। কেমন যেন বাঁকা হয়ে দাঁড়িয়ে আছে বাড়িটা। চন্দনা বাড়ির সামনেটা স্পষ্ট দেখতে পায়। যদিও সেটা দেখতে পাওয়ার কথা নয়। দেখা যায় আর একটা বাড়ির মাঝখানের একচিলতে ফাঁক দিয়ে। আর দেখা যায় পেছনের বারান্দাটা। সে-বারান্দায় একটা হেলানো চেয়ার পাতা। সে-চেয়ারে বসে থাকে একজন পুরুষ। তার মুখটা ভালোভাবে দেখা যায় না।  মাঝে মাঝে একটা বাচ্চা মেয়ে এসে তাকে এক পেয়ালা চা বা  খবরের কাগজটা দিয়ে যায়। ভদ্রলোক চোখে চশমা এঁটে মুখের সামনে কাগজটা মেলে ধরেন। কখনো-বা একহাতে চায়ের পেয়ালা ঠোঁটে ছোঁয়ান। মেয়েটা তাঁকে ধমকায়, ‘আহ্ দাদু গরম চা গায়ে পড়বে তো।’ ভেসে আসে সে-কথা। বাতাসে ভেঙে ভেঙে টুকরো কথা জোড়া লেগে শব্দ হয়ে যায়। অথবা চন্দনা শব্দ একটা বানিয়ে ফেলে। সারাক্ষণ একই ভঙ্গি একই রকম ভদ্রলোকের। না চিৎ, না কাত, না উপুড়, না উঠে দাঁড়ানো। আচ্ছা ওর কি পক্ষাঘাত। বাচ্চা-মেয়েটা কি গৃহকর্মী? ওই মেয়ে ছাড়া কেউ কি ওকে দেখার নেই? ছেলেমেয়ে সবাই বুঝি প্রথম বিশ্বে। সেকেলে বাপকে তৃতীয় বিশ্বে একা একটা বাচ্চা কাজের মেয়ের হাওলায় ফেলে ওপরে ওঠার রুদ্ধশ্বাস দৌড়ে রত। মনে মনে একটা গল্প সাজিয়ে ফেলে চন্দনা। এটাই হবে, হতেই হবে। এটাই যে এ-যুগের টাটকা গল্প।

বাঁদিকে আছে আরেকটা বাড়ি। সে-বাড়ির জানালায় কদাচিৎ কোনো ওড়নার পাড় বা মুখের একটা কোণ দেখা যায়। ওটা রান্নাঘর। জানালাটা ছোট। মাঝে মাঝে রান্নার গন্ধে চনমনিয়ে ওঠে পেট। না দেখেও বলতে পারে চন্দনা, ও-বাড়ির বউ চমৎকার রাঁধুনি। কনটেস্টে গেলে সেরা হবে। আর আছে ও-বাড়ির কার্নিশ জুড়ে অসংখ্য কবুতর। ওদের বাকম বাকমে মনের অতল অবধি ভরে যায় চন্দনার। ওরা যদি না থাকত কী হতো চন্দনার। নিয়মিত শব্দ যা পাওয়ার ওদের কাছ থেকেই তো পায়। ওরাই যে প্রতিদিন চন্দনার ঘুম ভাঙায়। ওদের বাকবাকমে চন্দনা হাসে, উচ্ছ্বসিত হয়।

আর তার পাশ ঘেঁষে আর একটা বাড়ি। সরাসরি দেখা যায় না বাড়িটা। ও-বাড়ি উচ্চতায় চন্দনাদের বাড়ি থেকে কিছুটা নিচু। সারাবছর ও-বাড়ির মাথায় একটা লাল-সবুজ পতাকা দোলে। ওটা কি কোনো সরকারি দফতর? কোনো স্কুল? সারাবছর পতাকা কেন?

আর দেখা যায় বহুদূর প্রসারিত পথ। একেবারে সোনারগাঁও পেরিয়ে হাতিরঝিল অবধি। ক্ষণে ক্ষণে সে-পথের রূপ বদলায়, রং বদলায়।

বাড়িতে ওঠার আগেই চলে গিয়েছিল আসিফ। আশ্চর্য! হাসপাতালে ভর্তি করার সময় বা ভর্তি করার পরও সে বা আসিফ ভাবেনি, ও আর ফিরবে না। ও ফিরবে, আর কদিন পর এ-বাড়িতে উঠবে – এটাই ছিল পরিকল্পনা। আসিফই আবিষ্কার করেছিল এ-বাড়ি থেকে সূর্যোদয় আর সূর্যাস্ত দুটোই দেখা যায়। একজন ফিজিসিস্ট তো এমন বাড়িই চায়। দুরবিন দিয়ে সূর্যোদয় আর সূর্যাস্ত দেখবে সে। কোথায় বসে দেখবে সে-জায়গাটাও নির্দিষ্ট করা ছিল। কিন্তু বসা আর হলো না। তার আগেই চলে গেল। যেখানে গেল সেখানে কি সূর্যোদয়-সূর্যাস্ত দেখা যায়? দেখা যায় কুয়াশা-কাটানো ভোর কিংবা আবির গোলা সন্ধে!

ছেলেকে নিয়ে এ-বাড়িতে এলো চন্দনা। ছেলে তার বড় বন্ধু। যত কাজই থাকুক প্রতি রাতে মাকে সময় দেওয়া তার সবচেয়ে বড় কাজ। বাবার চলে যাওয়া, মা-র একা হয়ে যাওয়া, এই খাঁ খাঁ গিলতে আসা বাড়ি সবই সে বোঝে। রাতে শোবার আগে মাথার কাছে ছেলের বসা, বৃষ্টির আগে ভেজা বাতাসের মতো চন্দনার কাছে। কিন্তু সে-বাতাস ভাসিয়ে নিয়ে গেল ক্যারিয়ার। পড়াশোনা, বৃত্তি, কাজ এবং কাজ। আমেরিকার বাতাসের স্পর্শ পান্থপথে বসে কীভাবে পাবে চন্দনা? কীভাবে তাকে ভেজাবে ছেলেকে ছোঁয়া সে-বাতাস! বড়জোর চোখ ভেজে এই তো।

ফ্রিল্যান্স সাংবাদিকতা করত চন্দনা। নামও হয়েছিল বেশ। সবাই চেনে-জানে। কিন্তু আসিফের চলে যাওয়ার পর সে-কাজও আর টানল না। নাম-যশ, অর্থবিত্ত মিছে মনে হলো। নিজেকে দেয়ালবন্দি করল চন্দনা। জাগতিক জরুরি প্রয়োজন ছাড়া বাইরের আলোয় সে আর যেতে চায় না। দেহবন্দি মনমুক্ত এক চন্দনা এখন সে। এ-ঘরেই চলা তার, ওঠাবসা। তার রাজত্ব, তার সাম্রাজ্য এটাই। তার অধিক্ষক্ষত্র, সেটাও এই ঘর।

শুধু মাঝে মাঝে খাঁ খাঁ বাড়িটা হাঙর হয়ে চন্দনাকে গিলে খেতে চায়। তখন মানুষ দেখতে ইচ্ছা হয়। আর সে-থেকেই বুঝি জানালাকেই অাঁকড়ে ধরে। ঠায় দাঁড়িয়ে থাকা পাথর সময়টাকে সঞ্চারণমান জনস্রোত দেখে গতিমান ভাবতে চায়।

রাঁধতে ভালো লাগে না চন্দনার। নিজের জন্য রাঁধতে-বাড়তে ভালো লেগেছে কবে কার? স্বামী খাবে, ছেলেমেয়ে, বন্ধু খাবে, চেটেপুটে খাবে, বলবে বেশ হয়েছে তবেই না রাঁধতে ভালো লাগে। চন্দনা একা রাঁধে, একা খায়। তাই এক তরকারি রাঁধে। তিনদিন ধরে সেটাই খায়। ইচ্ছা না হলে রাঁধে না। মুড়ি-চিড়ে বড় কাজের জিনিস। এখন বেশ বোঝে চন্দনা।

মাঝে মাঝে-অতীতে ফিরে যায়। মাথাগোঁজার একটা ঠাঁইয়ের জন্য কত হাপিত্যেশই না ছিল। ‘হবে না, কিচ্ছু হবে না, ভাড়াবাড়িতে জীবন পার করতে হবে।’ আক্ষক্ষপের সুরে আসিফকে কতবার বলেছে চন্দনা। আসিফ হেসেছে, আশ্বাসের হাসি। বাড়ি হলো, গাড়ি হলো, টাকা-পয়সা, মানসম্মান সব হলো। কিন্তু আসলে কি কিছু হলো? দিনের শেষে কেউ তো শুধায় না, কেমন আছ তুমি, শরীরটা কেমন? কেউ তো বলে না আজ তোমাকে চমৎকার লাগছে কিন্তু। বলে না, কতদিন লাল টিপটা পরো না বলো তো? বাড়ি তো কথা বলে না, টাকা প্রশংসা করতে জানে না। নাম-যশ, খ্যাতি, প্রতিপত্তি কাগুজে বুলি অর্থহীন অর্থহীন। মানুষ কথা বলে, প্রশংসা করে। মানুষ চাই, মানুষ। বুঝেছে চন্দনা দেরিতে। আগে বুঝলেই বা করার কী ছিল!

চন্দনা মানুষ দেখতে চায়। তাই জানালায় দাঁড়ায়-বসে, বাইরে তাকায়। এটাই তার জানালায় দাঁড়ানোর ব্যাখ্যা নিজের কাছে। ও জানালায় দাঁড়ায়। চোখ পড়ে পাশের ছাদে পতপত করে উড়ছে ধুয়ে দেওয়া হাসপাতালের নীল রঙের বিছানার চাদর। বাঁয়ে তাকায়।  আজ আর ওড়নার পাড় চোখে পড়ে না। কবুতর ডেকেছিল সকালে, এখন নেই। ডানে তাকায়। সেই বাড়ি। বারান্দায় চেয়ার। মানুষটা খবরের কাগজ পড়ছে। এতক্ষণ ধরে কাগজ পড়ার কী আছে। কাগজে আজকাল এমন কী খবর থাকে, যা এতক্ষণ ধরে পড়া যায়? তার চেয়ে উঠে দাঁড়াতে কি পারে না মানুষটা একটু? খুব রাগ হয় চন্দনার। অদ্ভুত মানুষ। একটু দাঁড়ালে কী হয়? আর দাঁড়াতে যদি না পারে পাশ ফিরে একটু তাকাতে তো পারে!

আর তখনই চোখ পড়ে নির্মাণাধীন বাড়িতে। অনেকটা উঠে এসেছে বাড়িটা। আর একটু হলেই চোখের সামনে টানিয়ে দেবে কিছুটা পর্দা। আর তখনই মনে হয় ও-বাড়ি উঠলে ঢাকা পড়বে না তো ওই বারান্দাটা? দেখা যাবে তো মানুষটাকে? যদি না যায় কী হবে তখন, কী? তার চেয়ে ও-বাড়ি না উঠুক। বড়সড় ঝড় উঠুক, ভেঙে পড়ুক বাড়ি। কোনো অবজেকশন হোক বাড়িটার ওপর সিটি করপোরেশন বা রাজউকের। কোর্ট নিষেধাজ্ঞা দিক বাড়িটার ওপর। কিছু একটা হোক, কিছু একটা।

না বাড়ির ওপর কোনো নিষেধাজ্ঞা হয় না। বাড়ি উঠতে থাকে তরতরিয়ে। চন্দনা জানালায় দাঁড়িয়ে বুঝতে চেষ্টা করে ওই বাড়িটা উঠলে সামনের বারান্দা কতটা ঢাকা পড়বে। অনেক সময় নিয়ে অনেক অঙ্ক কষে বুঝতে চেষ্টা করে। পারে না। দূরের দুটো বাড়ি, একটা উঠলে আর একটা কতটা ঢাকা পড়বে বুঝবে কী করে চন্দনা।  তাছাড়া নতুন বাড়িটা কতটা উঠবে তাও তো সে জানে না। জানলেও বুঝত না। ও যে অঙ্কে বরাবরই কাঁচা।

চন্দনা দুশ্চিমত্মায় সময় কাটায়। এর মাঝে একদিন জানালায় দাঁড়িয়ে দেখে বাড়িটা পুরোটা উঠে বারান্দার অনেকটা ঢেকে ফেলে। চন্দনা বিড়বিড় করে দোয়া পড়ে। অনেকক্ষণ চোখ বন্ধ করে থাকে, তারপর চোখ খোলে। জানালার এক কিনারে নিজেকে সেঁটে ও বারান্দার দিকে তাকিয়ে চেয়ারে শায়িত মানুষটাকে দেখে হাততালি দিয়ে ওঠে। দিতেই থাকে। তারপর গুনগুনিয়ে ওঠে। আর তো কেউ পারবে না পুরো বারান্দাটা ঢেকে দিতে।

দুই

দুদিন ধরে একটানা বৃষ্টি ঝরছে। আর বৃষ্টি কি যা-তা বৃষ্টি! ঝুম বৃষ্টি যাকে বলে। বৃষ্টির তোড়ে সামনের কিছুই দেখা যায় না। জানালাও খোলা যায় না। এর মাঝে জানালা খানিকটা খুলে সামনের জানালাটা দেখার চেষ্টা করছিল চন্দনা। তাতে বিছানার অনেকখানি ভিজে গেছে। সে ভেজা চাদর-বালিশ নিয়ে এখন মহাঝামেলায় চন্দনা। তোশকের অনেকটা ভিজেছে। এটা সে কী করে শুকাবে। তারপরও জানালা খুলতে ইচ্ছা করছে। একটু ফাঁক করতেই ঝাপটা এসে আবারো ভিজিয়ে দিলো ঘরের অনেকটা। চন্দনা মন খারাপ করে বসে থাকে।

ঘরে খাবার নেই। কিছু একটা রাঁধতে হবে। আমেরিকায় ছেলেটা একা রাঁধে, একা খায়। ওর কি রান্নার অভ্যাস ছিল কোনোকালে? আজ ছেলে কাছে থাকলে নিশ্চিত বলত,

: খুব বৃষ্টি হচ্ছে মা। খিচুড়ি করো না। সঙ্গে ইলিশভাজি। চন্দনা ইলিশের সঙ্গে আরো দুটো পদ বাড়িয়ে দিত।

চন্দনা গুম হয়ে বসে থাকে। বুয়া আসেনি। আসবেই-বা কী করে এই বৃষ্টিতে। ও নাক টানে। বৃষ্টির তোড় আটকাতে পারেনি ইলিশের গন্ধ। কারা যেন মাছভাজি করছে। সঙ্গে নিশ্চয়ই খিচুড়ি। ওই রন্ধনপটীয়সী নাকি? চন্দনারও রান্না করা দরকার, ইচ্ছা করছে না। ও জানালায় দাঁড়ায়। আর তখনই পরিষ্কার হয়ে যায় বহুদূর অবধি। গাছের পাতাগুলো কী সবুজ! ও-বাড়ির রেলিংয়ে জমে আছে বৃষ্টির দানা। বারান্দায় কেউ নেই। থাকবে কী করে এই বাদলায়। ও দাঁড়িয়ে থাকে। ছোট মেয়েটা বারান্দায় চেয়ার আনে। আর তখনি বেল বেজে ওঠে। বুয়া।

চন্দনা বুয়াকে দরজা খুলে দিয়ে পর্দা সরায়। তখনি যেন সরে যায় সব মেঘ। তারাবাজির আলোয় ঝলমল করে ওঠে চারদিক। কেউ যেন বালতি বালতি রোদ ছিটিয়ে দেয় চারদিকে। সে-আলোয় চন্দনা দেখে, বারান্দায় সেই মানুষ। আজ আর বুয়াকে এটা-ওটা বলতে ইচ্ছা করে না। সব তো ওর জানাই। করুক নিজের মতো। বুয়া নিজের মতো কাজ করে। আর একসময় কাজ করতে করতে ঘরে ঢুকে চন্দনার পাশে দাঁড়ায়। এদিক-ওদিক তাকিয়ে বলে,

: ওই যে বাড়িটা দেখছেন খালাম্মা, ওই বাড়িতে আমি কাজ করি। এখনই কাজ করে আসলাম। ওই যে চেয়ারে বসা মানুষটারে দেখেন। মানুষের কি ভাগ্য খালাম্মা। তিন তিনটে ছেলে, দুটো মেয়ে বিদেশে। একবার করে আসে আর একখান-দুইখান সম্পত্তি বিক্রি করে। বাপটারে দেখার কেউ নেই। হাঁটতে-চলতে পারে না। ওই অতটুকুন একটা মেয়ে, ও-ই দেখে। এখন আবার অসুখ খুব বাড়াবাড়ি।

চন্দনা কেঁপে ওঠে। ওর গল্প যে এভাবে মিলে যাবে ভাবেনি সে। নিজেকে একটু সামলে বলে,

: তুমি ও-বাড়িতে কী কাজ করো?

রান্নাবান্না, ঘরদোরের কাজ। ওইটুকুন মেয়ে কী পারে কন? তবু মেয়েটা আছে বলে রক্ষা। সাত-সাতটা বছর এমনভাবেই আছে। ঘরে থাকতে চায় না। কাঁহাতক আর ঘরে থাকা যায়, এক খাটে এক বিছানায়। মেয়েটা তাই বারান্দায় ইজিচেয়ারে শুইয়ে রাখে। মানুষটা খুব ভালো। ভালো বেতন দেয় আমারে। আর ঈদে-পার্বণে দুহাত ভরে দেয়। এমন মানুষের কেন যে এমন ভাগ্য!

: তিনি খেতে পারেন ঠিকমতো?

: তা কি আর পারে? সামান্য খায়। মুখের একদিক তো বাঁকা। আজ খিচুড়ি খাওয়ার ইচ্ছা ছিল। ভুনা খিচুড়ি। মেয়েটা বলল, ভুনা খিচুড়ি ওনার খুব পছন্দ। কিন্তু আমার সময় ছিল না। তাছাড়া ভুনা খিচুড়ি আমি ভালো রানতেও পারি না। তবু কইছি কাল রাইন্ধে দেবো যা পারি। অসুস্থ মানুষের খাওয়ার ইচ্ছা হইছে যখন।

বলতে বলতে ব্যস্ত হয়ে পড়ে বুয়া। বলে,

: আরে বাপ রে, আমার অনেক দেরি হয়ে যাচ্ছে।

চন্দনা কিছুক্ষণ কী যেন ভাবে। তারপর বলে,

: শোনো বুয়া, একটা অসুস্থ লোকের খিচুড়ি খাওয়ার সাধ  হয়েছে।  আমাদেরই তো প্রতিবেশী, বলো। তুমি ভুনা খিচুড়ি ভালো রান্না করতে পারো না বলছ। আমার হাতের ভুনা খিচুড়ির নাম আছে। শোনো, আমি ইলিশ-টিকিয়া, মাংস রাতে সব করে রাখব। কাল গরম গরম ভুনা খিচুড়ি রান্না করে দেবো। তুমি দিয়ে এসো।

বুয়া অবাক হয়ে তাকায়। তারপর ভাবে, বড়লোকের এ-ও এক আজব খেয়াল। মুখে বলে,

: তাই। তাহলে তো খুবই ভালো। চাইলে আপনিও যেতে পারেন। মানুষ দেখলে তিনি খুশি হন।

: আগে খিচুড়ি তো রাঁধি, তারপর দেখা যাবে।

বুয়া কাজ সেরে চলে যায়। আজ বহুকাল পরে চন্দনার জীবনে দৌড় শুরু হয়। ও এক হাতে মাংস কাটে, মাছ কাটে, টিকিয়া বানায়, ভাজে, রাঁধে। বাইরে গিয়ে সোনামুগ ডাল আর চিকন চাল আনে। একটু বেশি করেই রাঁধবে সবকিছু। ওই মানুষটা খাবে, মেয়েটা খাবে, বুয়াও খাবে। আর বাড়িতে দারোয়ান-ড্রাইভার থাকতে পারে। কে আছে কে নেই, জানে না তো সে। দেবে যখন বেশি করে দেবে। ভালো লাগলে দুদিন রেখে খাবে।

উৎসব লেগে যায় চন্দনার। অনেক রাত অবধি রেঁধে সে গভীর রাতে গুনগুন করে গাইতে গাইতে গোসল সারে। তারপর সারাশরীরে সুগন্ধি পাউডার ছড়ায়। গন্ধে ম-ম করে চারদিক। চন্দনার কেমন যেন ঘোর ঘোর লাগে। গরম খিচুড়ি রেঁধে ও কি নিয়ে যাবে নিজ হাতে? যাবে, নাকি যাবে না? সিদ্ধান্ত নিতে পারে না। তারপর জানালায় দাঁড়ায়। নেই। এত রাতে থাকবে কী করে বারান্দায়। রাত বেশি হলে হিম পড়ে যে!

চন্দনা বাতি নিভিয়ে শুয়ে পড়ে। স্বপ্ন দেখে, গরম গরম খিচুড়ি নিয়ে সে গেছে বারান্দাওয়ালা বাড়িতে। আর ওই মানুষটা তার দিকে তাকিয়ে বলছে, ‘লাল টিপটাতে তোমাকে দারুণ লাগছে কিন্তু।’

 

তিন

সকালে অ্যাম্বুলেন্সের বিকট শব্দে ঘুম ভাঙে। অ্যাম্বুলেন্সের শব্দ সে সারাক্ষণই পায়। কিন্তু এই শব্দটা যেন জোরালো। মনে হচ্ছে শব্দটা জানালার দিক থেকে আসছে।

ও কাপড় সামলাতে সামলাতে জানালার পাশে যায়। এদিক-ওদিক তাকায়, কিছু দেখতে পায় না। তারপর দুবাড়ির ফাঁক দিয়ে দেখতে পায় ওই বারান্দাওয়ালা বাড়ির সামনে একটা অ্যাম্বুলেন্স। একজন মানুষকে স্ট্রেচারে তোলা  হচ্ছে। আর স্ট্রেচার ধরে যাকে এগোতে দেখে সে ওই মেয়ে। চন্দনা বারান্দার দিকে তাকায়। নেই, বারান্দার চেয়ার খালি।

চন্দনা জানালায় দাঁড়িয়ে থাকে অনড়। একসময় রাসত্মার বাতিগুলো জ্বলে ওঠে।

পরদিন গমগম করে ওঠে বাড়িটা। অনেক মানুষ ঘর-বারান্দায় ঘোরাফেরা করে। কেউ একজন চেয়ারটা ঠেলে একপাশে সরিয়ে দেয়। ফাঁকা চেয়ার। আর কিছুক্ষণ পর মেয়েটাকে দেখতে পায় চন্দনা। দেখতে পায় বুয়াকেও। রেলিং ধরে চিৎকার করে কাঁদছে মেয়েটা। কিছু বলছেও বুঝি। বাতাসের ঝাপটায় সে-কথা আছাড় খেয়ে পড়ে চন্দনার জানালায়। ‘দাদু, দাদু রে, কেন তুমি চইলা গেলা। এ-চেয়ারে এখন কে বসব।’

সে-প্রশ্ন তো চন্দনারও। চন্দনা টাল সামলায়। তারপর ধীরে জানালাটা বন্ধ করে দেয়। পিঠ লাগিয়ে দাঁড়িয়ে থাকে জানালায় অনেক অনেকক্ষণ। তারপর আছড়ে পড়ে বিছানায়। আর একসময় চন্দনা ভুলে যায় তার ঘরের পুবে একটা জানালা আছে।