‘উচ্চস্তরে বাংলাভাষা প্রচলনের চালচিত্রে’র সংশোধন

কালি ও কলম সাহিত্যপত্রিকার পঞ্চম     সংখ্যায় প্রকাশিত আবুল আহসান চৌধুরীর ‘উচ্চস্তরে বাংলাভাষা প্রচলনের চালচিত্র’ শীর্ষক সুচিন্তিত প্রবন্ধটি একটি চমৎকার প্রয়াস।

উচ্চস্তরে বাংলাভাষা প্রচলনের প্রশ্নে সাংবিধানিক স্বীকৃতির ব্যর্থতা, আমাদের    আন্তরিকতার দৈন্যতা, বাংলা একাডেমীসহ বিভিন্ন প্রকাশনীর মৌলিক, অনুবাদ, পাঠ্য ও পাঠ্যসহায়ক পুস্তক-প্রকাশনায় অপ্রতুলতা এবং বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর ব্যবসায়িক মনোবৃত্তির পাশাপাশি ভাষা-আন্দোলন ও মুক্তিযুদ্ধের ওপর যে-আলোকপাত হয়েছে এই প্রবন্ধে, যে-দৃষ্টিভঙ্গি থেকে তা করা হয়েছে, তার সঙ্গে আমার বিশেষ দ্বিমত নেই। তবে কিছু সংশোধন আছে।

লেখক এক জায়গায় বলছেন, ‘বিস¥য় ও বেদনার হলেও এ-কথা সত্য যে, আমাদের দেশের প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে বাংলা ভাষার কোনো স্থান নেই।… এখানে একমাত্র ইংরেজি ভাষার মাধ্যমেই পঠন-পাঠন ও পরীক্ষা গ্রহণ করা হয়। না আছে বাংলা ভাষা, না আছে বাংলা বিভাগ। দেশের ভাষা-সাহিত্য-সংস্কৃতির সঙ্গে সংশ্রবশূন্য এইসব বিশ্ববিদ্যালয়ের…’

লেখক বোধহয় প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়-গুলো সম্পর্কে খুব বেশি অবহিত নন। বাংলাদেশে অনেকগুলো বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় রয়েছে, তাদের মধ্যে ইন্ডিপেন্ডেন্ট ইউনিভার্সিটি, বাংলাদেশ (আই.ইউ.বি.) একেবারে প্রথম সারিতে অবস্থান করছে এবং এটি গভীরভাবেই সকল বিদ্যার চর্চায় নিবেদিত হতে দৃঢ়পণ। এখানে জাতীয় কৃষ্টি এবং ঐতিহ্য-বিষয়ে দুটি অসামান্য কোর্স পড়ানো হয়ে থাকে। এটি সকল বিভাগের ছাত্রদের জন্যই আবশ্যিক। এতে বাঙালির জাতিসত্তার ইতিহাস Ñ দূর অতীতকাল হতে বর্তমান পর্যন্ত সময়ের রাজনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক পালাবদলের ইতিহাস, বাংলা সাহিত্যের ইতিহাস ও বৈশিষ্ট্য, বাংলা চিত্রকলার বিবর্তন ও প্রবণতা Ñ এ-সকল কিছুই বিস্তৃত ও অনুপুঙ্খভাবে পড়ানো হয়ে থাকে; যা অন্য কোনো সরকারি ও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে অদ্যাবধি প্রচলিত নয়। এই ক্ষেত্রে আই.ইউ.বি. অগ্রগামী ভূমিকা পালন করে চলেছে।

লেখক আরেকটি জায়গায় বলছেন, ‘বাংলাদেশে একমাত্র ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাড়া আর কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলাভাষার ফাউন্ডেশন কোর্স প্রবর্তিত হয়নি।’ কিন্তু আই.ইউ.বি.-ই প্রথম এবং একমাত্র বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় যেখানে ২০০১ সালের আগস্ট মাস থেকে নিয়মিতভাবে বাংলা ভাষা-কোর্স অফার করা হচ্ছে। এটি শিক্ষার্থীদের মধ্যে এতটাই জনপ্রিয় হয়েছে যে, তারা স্বতঃস্ফূর্তভাবে এই কোর্সটি করতে আসে।

আই.ইউ.বি. শুধু ভাষাচর্চার ব্যাপারেই সীমাবদ্ধ থাকেনি, অফার করেছে বাংলা সাহিত্যবিষয়ক একটি কোর্স। বাংলা সাহিত্যের প্রধান ধারাগুলো এবং প্রধান লেখকদের গুরুত্বপূর্ণ সাহিত্যকর্মের সঙ্গে পরিচয় ঘটানোই এর লক্ষ্য। অতএব, এটি নিঃসন্দেহে বলা যায় যে, আই.ইউ.বি.   জ্ঞানসাধনার ক্ষেত্রে থাকতে চায় সাধকের ভূমিকায়।

আই.ইউ.বি.-কে অনুসরণ করে অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়গুলোও যদি জাতীয় কৃষ্টি, সংস্কৃতি, ঐতিহ্য এবং সর্বোপরি বাংলা ভাষা-সাহিত্যকে কোর্স হিসেবে অফার করে তাহলে তাতে আমাদের ভাষা-আন্দোলন এবং মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনার প্রতি যথাযথ শ্রদ্ধা ও সম্মান প্রদর্শন করা হবে।

বিধান রিবেরু

তেজগাঁও, ঢাকা নতুন চেতনার আলোকবর্তিকা