নাসরীন জাহান
বারান্দার সামনে থেকে আচমকা বাতাসে খাটিয়ার ওপর ঢেকে থাকা শাদা কাপড়টা কেঁপে মাথার কাছ থেকে মৃদু শব্দে সরে গেলে জেসমিনও ক্ষীণ নড়ে দৃষ্টি প্রসারিত করে। এক দুর্মর নিষিদ্ধ কৌতূহলে ভেতরটা চায় মুখটার এক ফালি হলেও দেখতে, যা এতক্ষণ তাকে কেউ দেখতে বলেনি, তার নিজেরও সাহস বা ইচ্ছে কোনোটাই হয়নি। বজ্রাহতের মতো কিছুদূরে বসে আছে আবদুল্লাহ। নানা-নানির বিলাপের মাঝখানে নানাজনের কতরকম প্রতিক্রিয়ার বহিঃপ্রকাশ যে ঘটলো।
আহা। ছেলেমেয়েদের কথা ভাবলো না।
কেমন মেয়েছেলে বাবা, পয়লা মরদ ছাইড়া দ্বিতীয় মরদের ঘরেও নিজেরে খাপ খাওয়াইতে পারলো না।
কিছু মাইয়ার খাইসলতই এমুন…।
এই নারীর কথার রেশ ধরে জম্পেশ কিছু রগরগে কথা ডালপালা মেললে Ñ কেউ একজন ধমক দেয়, থামেন, যা বলার বাড়িতে গিয়ে বলেন, যারে বলতাছেন সে তো শুনতাছে না… এইসব কথা বলনের এইটা জায়গা না।
জেসমিন ঝাপসা চোখে দেখে আবদুল্লাহর পিঠে সহানুভূতির হাত রেখে ছোট মামার ক্রুদ্ধ চোখ। সেন্টু, মন্টু দুই শিশু এতক্ষণ আবদুল্লাহকে আঁকড়ে ধরে বসেছিল। কী বুঝে তারা ভয়ে ভয়ে জেসমিনের পাশে বসে ফিসফিস করে কাঁদে, আম্মু আর কোনোদিন আসবে না?
দুজনকে দুডানার ভাঁজে ঢুকিয়ে হিমেল বসন্তের হাওয়াতেও কাঁপে জেসমিন। কণ্ঠ থেকে বিষাক্ত গোঙানির মতো কিছু শব্দ বের হতে গিয়েও আটকে যায়। সিলিংফ্যান নয়, যেন অনন্ত আসমানের নিচে সে লটকে থাকা মায়ের অবয়ব দেখে, মুখ বেয়ে গড়াতে থাকা গ্যাজলানো ফেনা দেখে।
এই একটা দৃশ্য স্বপ্নে জাগরণে যতবার দেখেছে জেসমিন, প্রায়শ কঠিন হতাশার নিকষে তলিয়ে যেতে যেতে সে নিজেকে দেখতে পেত অমন ঝুলন্ত অবস্থায়। একবার যখন চোখের সামনে কঠিন শূন্যতা নেমে এলো… মানুষ-প্রতিবেশের প্রতি প্রচণ্ড ধিক্কার নেমে এলো, যেন সে নয়, কোনো এক সম্মোহনী শক্তি তাকে লটকে দিয়েছিল সিলিংফ্যানে। মায়ের মতো কঠিন করে দরজা লাগানোর হুঁশটুকু ছিল না… মুহূর্তে একেবারে চিলের মতো ছুটে এসে মা বিছানায় দাঁড়িয়ে জেসমিনের দেহটাকে উঁচু করে ধরে চিৎকারে বাড়ি কাঁপিয়ে সবাইকে ডেকে ধরাধরি করে জেসমিনকে জড়িয়ে ধরেছিল। রাতে ফিসফিস কান্নায় ওর মুখ ভিজিয়ে আকুল কণ্ঠে বলেছিল, কেন এমন করিস? তোর কিছু হলে আমি বাঁচবো?
কেন? তোমার তো স্বামী আছে, তার দুই বাচ্চা তো আমার চাইতেও বেশি আপন তোমার, আমি মরলে তোমার কী?
এতদিন গেল, এত আদর করে তোকে, মানুষটাকে এখনো আপন ভাবতে পারছিস না? ওর সঙ্গে যখন বিয়ে হয় তখন তোর অনুমতি নিইনি, তোকে বোঝাইনি আমার অবস্থা?
ওই পরিস্থিতির কথা মনে হলে সেই সময়কার ভয়… কাঁপন আঁকড়ে ধরে জেসমিনকে… গলা ফাটিয়ে চিৎকার করে সে, ওই লোকটার সঙ্গে থাকার জন্য তুমি তখন আব্বুর নামে আমাকে মিথ্যা কথা বলে বলে আমাকে ফুঁসলেছো। কই, আমি তো আব্বুর মধ্যে কোনো খুঁত দেখিনি। মার্কেটে আমার সঙ্গে ছোট ফুপুর দেখা হয়েছিল। বাবা কাজের জন্য বাইরে থাকত, আমাদের সময় দিতে পারত না, হেঁচকি উঠতে থাকে জেসমিনের কণ্ঠে, ওই ব্যাটার সঙ্গে তোমার পুরনো প্রেম, শকুনের মতো দোয়া পড়ছিল, ব্যাটার বউটা মরুক, যাতে তুমি তখন বাবাকে ত্যাগ করে তার সঙ্গে থাকতে পারো। ঘেন্না করি তোমাকে, তুমি যাও, ওই ব্যাটার কাছে যাও।
মায়ের উষ্ণ স্পর্শ মুহূর্তে শিথিল হয়। কিছুক্ষণ বাকরুদ্ধ হয়ে থেকে ঘর থেকে বের হয়ে গিয়েছিলো মা।
দুই
আবদুল্লাহ আর সুরাইয়া দুজন চাচাতো ভাইবোন ছিল। একান্নবর্তী পরিবারে দুজনের এক বাড়িতেই হেসেখেলে শৈশব কেটেছে। সময়ের বিবর্তনে সুরাইয়ার বাবার আর্থিক অবস্থা খারাপ হতে থাকায় আর আবদুল্লাহর বাবার ব্যবসায় সফলতা… ক্রমে ক্রমে দুই পরিবার আলাদা হয়ে যায়। কিন্তু এই দুজনের সম্পর্কে কখনো যেন চিড় ধরেনি। পেরোতে থাকা কৈশোরেই একজন আরেকজনের প্রতি অনুভবের বদল উপলব্ধি করেছিল। আবদুল্লাহ মাঝে মাঝেই আসত। এছাড়া ফোন, চিঠি আদান-প্রদান, কলেজ ফাঁকি দিয়ে দেখা করতে করতে দুজন দুজনের প্রতি এমনই মোহাবিষ্ট হয়ে পড়ে, ইন্টারমিডিয়েট পাশের পর যখন আর্থিক দৈন্যের চূড়ান্তে সুরাইয়ার বাবা মেয়ের জন্য পাত্র খুঁজতে এসপার-ওসপার করছেন, তখন বাপের ভরসায় জাস্ট অনার্স ফার্স্ট ইয়ারে পাঠরত আবদুল্লাহ চোখে আঁধার দেখলো।
তিন
জেসমিন বিছানায় বসে আছে। কয়েক মাস আগেই মা-বাবাকে ছেড়ে নানির বাড়ি এসে থাকছে। রাতবিরাতে প্রায়ই সে বাবা-মায়ের দাম্পত্য কলহের শব্দ শুনে নিজ বিছানায় মটকা মেরে পড়ে থাকত। এখন এই বাড়ির অসীম দারিদ্র্যে হাবুডুবু খেতে খেতে কটা টিউশনি নিয়ে যখন জীবন কাটাচ্ছে, অসীম ধৈর্যে অপেক্ষা করত জেসমিন বাবার আগমনের।
কিন্তু তার বয়স যখন সবে নয়, তাকে একজন পূর্ণবয়স্ক মানুষ জ্ঞান করে এক শীতসন্ধ্যায় তার নানু আর মা মিলে এসব কী বলছে?
তুমি অত ছোট বাচ্চা না যে তুমি আমার অবস্থাটা বুঝবে না, মায়ের কণ্ঠ যত কাঁপে তার চেয়ে দ্বিগুণ ভয়ে জেসমিনের শীতকাতুরে হৃৎপিণ্ড কাঁপে। দুটি হাত ঠেসে যেতে থাকে তোষকের শরীরে। তোমার জানার দরকার আছে তোমার বাবা সম্পর্কে, সে অনেক টিনএজ মেয়ের জীবন নষ্ট করেছে। এটা ওর একটা বিকৃতি। কিছুই বুঝে না জেসমিন স্পষ্ট করে, কী করে একজন টিনএজ মেয়ের জীবন নষ্ট করে একজন পুরুষ, তার ডিটেইল রূপটা কী? কিন্তু তার নিষ্পলক চেয়ে থাকা মুখের দিকে তাকিয়ে কান্নাভেজা মা কেন যে আন্দাজ করতে থাকে জেসমিন সব বুঝছে, জেসমিন তার কূলকিনারা পায় না। তাও সব সয়ে ছিলাম, কিন্তু যখন শুনলাম তোমার বাবা একটা বাচ্চা মেয়েকে বিয়ে করে আলাদা আরেকটা সংসার পেতেছে আর সইতে পারলাম না… হু-হু করে কাঁদে মা।
বুকের ভেতরটা ধড়াস করে ওঠে, বাবা আরেকটা বিয়ে করেছে? বাচ্চা মেয়েকে? কতটা বাচ্চা? আমার মতো? নিজের অবয়বের দিকে সন্তর্পণে চোখ বোলায় জেসমিন। এই প্রথম নিজের বয়স সম্পর্কে কোনো সিদ্ধান্তে আসতে পারে না। আরো বিভ্রমে পড়ে সে নানির কথায়। আমাদের আর্থিক অবস্থা তো তুমি জানোই, এছাড়া তোমার আর তোমার মায়ের মাথার ওপর একটা ছায়া না থাকলে জীবনটা তোমাদের কাটবে কীভাবে? এখন তুমিই তোমার মায়ের একমাত্র ভরসা। তুমি যদি সহজভাবে সমস্ত ব্যাপারটা নিয়ে মাকে সাপোর্ট দাও, তাহলেই সে আরেকটা সংসার করার ব্যাপারে সাহস পাবে।
চার
সেদিন মা আর নানি ন-বছর বয়সী একজন মেয়েকে মায়ের গার্জেন মেনে আরেকটা বিয়ের অনুমতি নিয়েছিলো।
খাটিয়া কাঁধে তুলেছে চারজন লোক। থ্যাঁতলানো যন্ত্রণার কষ্টে জেসমিন দম নিতে পারে না। কতরকম গুঞ্জন যে হলো চারপাশে, সব ছাপিয়ে নানির পরিবারে একটাই উদ্বিগ্নতা আছাড় খাচ্ছিলো, আত্মহত্যা যে করে তার জানাজার কাজ করতে কোনো মৌলভিই রাজি হচ্ছে না। ইসলাম ধর্মে আত্মহত্যা মহাপাপ। এ পাপ যে করে, কোনোকালেই সে বেহেশতে যেতে পারে না। এই পাপীর জন্য দোয়া পড়ে কেউ পাপের ভাগী হতে চায় না। মা… মা গো… জেসমিনের ভেতর ক্রন্দনের দমক উঠেও থমকে যায়, কোনো একজন হুজুরকে কিছু বেশি টাকা দিয়ে জানাজার জন্য রাজি করানো গেছে।
আবদুল্লাহ নামের লোকটার সঙ্গে মায়ের বিয়ে হলে সেন্টু-মন্টু ওই লোকের দুটো অবুঝ শিশুসহ মায়ের সঙ্গে ধীরে ধীরে জেসমিনও সহজ হয়ে এসেছিল। পরিবর্তিত জীবনে কখনো মসৃণ, কখনো অকৃষ্ট পথে চলে খাপ খাওয়াতে গিয়ে জেসমিন অনুভব করে, সব ঠিক আছে, কেবল ওই আবদুল্লাহ নামের মানুষটি মায়ের সঙ্গে যেন মহাকালের দোস্তি Ñ এই মুডে কথা বললে, অথবা লোকটা পিতৃøেহে জেসমিনের দিকে হাত বাড়াতে চাইলে গা রি-রি করত জেসমিনের। ক্রমে ক্রমে যখন জেনেছে লোকটা মায়ের চাচাতো ভাই, ছোটবেলা থেকেই মায়ের সঙ্গে খাতির ছিল, তখন টিনএজের দিকে পা বাড়াতে থাকা জেসমিন ভেতরে ভেতরে অদ্ভুত সব দৃশ্য দেখতে শুরু করলো। হিন্দি চ্যানেলের ক্রাইম প্যাট্রলের এপিসোডগুলো সেসব দৃশ্যকে এক করে একটি কাহিনিতে রূপ দিতে সাহায্য করতো। সেই দৃশ্যের মধ্যে সবচাইতে নিটোল আর দুর্দান্ত যেটা সেটা ছিল এরকম, মা আর আবদুল্লাহর দেখা হয়েছে একটি পার্কে। তারা পুরনো প্রেম ভুলতে না পারায় ধীরে ধীরে প্ল্যান তৈরি করে, আবদুল্লাহ এক রাতে বালিশচাপা দিয়ে বউকে মেরে, ঘুমের মধ্যে স্ত্রীর স্ট্রোকে মৃত্যু হওয়ায় সবাইকে দেখিয়ে খুব আউলা-ঝাউলা কাঁদল, আর মা Ñ।
আবদুল্লাহকে জেসমিন যাতে বাবা হিসেবে মানে, বাবা হিসেবে দেখে এ নিয়ে দিন মাস বছর অনেকরকম কসরত করেছে তারা দুজনই। কিন্তু কিছুতেই এটা না করতে পেরে যখন মা হাল ছেড়ে দিয়েছে, তখনই বালিশচাপার কাহিনিটা জেসমিনের ভেতর পোক্ত হতে শুরু করেছে। এরপর থেকে দুজনই তার চোখের বিষ হয়ে যাওয়ায় যখন মাকে অশ্লীল গালি দিচ্ছে জেসমিন কথায় কথায়, আবদুল্লাহকে দেখে সশব্দে তার মুখের ওপর দরজা বন্ধ করে দিচ্ছে, তখনই সহপাঠী প্রিয় বন্ধু তানিয়ার সঙ্গে মার্কেটে গিয়ে ফুপুর সঙ্গে দেখা।
সব শুনে মার্কেট থেকে বেরিয়ে যখন হাউমাউ করে কাঁদছে জেসমিন, তানিয়া তাকে প্রবোধ দিতে দিতে ফুপুর কাছ থেকে নেওয়া বাবার নম্বরে ফোন দেয়। আমি আব্বুর কাছে যাবো… গুমড়ে গুমড়ে কাঁদে জেসমিন আর শোনে, তানিয়া বলছে, তার বাবা এক মাসের জন্য দেশের বাইরে গেছে।
এই এক মাসেই বাড়িটাকে দরজা-জানালাহীন একটি দমবন্ধকর বোধ করায় এ থেকে মুক্তি পেতে সে কখনো চিল্লিয়ে কখনো আত্মহত্যার চেষ্টা করতে করতে মায়ের জীবনটাকে নরম বানাতে শুরু করেছিলো জেসমিন। এর মধ্যেই মা যে কখন মানসিক ভারসাম্য হারাতে শুরু করেছে, জেসমিনের তা গ্রাহ্যের মধ্যেই ছিলো না, বরং সে অবাক হতো আবদুল্লাহর ভদ্রতাবোধ আর ধৈর্য দেখে, একদিকে মাকে মানসিক ডাক্তার দেখানো, আরেকদিকে প্রচণ্ড মায়ায় জেসমিনের মাথায় হাত রেখে øেহমাখা কণ্ঠে বলত, মা গো, একটু শান্ত মাথায় আমাদের কিছু কথা শোনো, জেসমিন ফুঁস করে উঠলে সে কাতর মিনতি জানায়, মা গো, আমার কথা না মানো, আমাকে ঘৃণা করো, সব মেনে নেবো, তুমি একবার ডাক্তারের সঙ্গে দেখা করো।
না! সশব্দে চিৎকার করে জেসমিন, আমি পাগল না, যা করি যা বুঝি সুস্থ মাথায় করি, আর কটা দিন, আব্বু বিদেশ থেকে এলেই এই দোজখ থেকে চলে যাবো।
রাতে মা এসে ভয়-কম্পিত হাত রাখে জেসমিনের মাথায়, তুমি আমাকে বিশ্বাস করো না তো? তোমার বাবা ওই মেয়েকেও ডিভোর্স করে আরেকটা প্রেম করছে, আমি ওই ডিভোর্সি মেয়ের ঠিকানা খুঁজছি, পেলেই তোমাকে Ñ।
যাও! তোমার শরীর থেকে পচা গন্ধ আসছে, কিছুক্ষণ আগেই ওই বদমাশটার সঙ্গে শুয়ে এসে আমাকে আর কল্পকাহিনির গল্প শুনিও না। মায়ের হাতটা জেসমিনের গালে পড়ার জন্য সশব্দে উত্তোলিত হতেই আবদুল্লাহর হাত এসে সজোরে সেটাকে টেনে নেয়।
ভয়ে সেন্টু-মন্টু কাঁদতে থাকলে নিজেকে স্থির করে পরম মায়ায় জেসমিন রোজকার মতোই সামলায়, কেঁদো না ভাই। তোমাদের কপালও আমার মতোনই Ñ আরেকটু বড় হও, বুঝবে।
পাঁচ
পুরো স্কুলে হইচই। কদিন ইশকুলে যায়নি, কারো সঙ্গে যোগাযোগ রাখেনি বলে জেসমিন ব্যাপারটা জানতে পারেনি। তাদেরই ইশকুুলের এক টিচারের বিরুদ্ধে কমপ্লেইন দিতে প্রতিবাদী তানিয়া স্কুলের গভর্নিং বোর্ডের চেয়ারম্যানের কাছে গিয়েছিলো। ব্যাটা তানিয়ার শ্লীলতাহানির চেষ্টা করায়, প্রতিবাদে ওই লোকের পোস্টার দেয়ালে ছেপে প্রতিবাদ করছে স্টুডেন্টরা।
মানুষটার ছবি দেখে আস্ত আসমানটা মাথার ওপর ভেঙে পড়ে জেসমিনের।
যেনবা ঢাকার যানজটময় পথ নয়, আসমান-জমিন ডিঙিয়ে বাড়ির দরজায় পা রাখে জেসমিন। পুরো নিঃসীম বাড়িতে আবদুল্লাহ বিছানায় একাকী শোয়া আবদুল্লাহ। ক্রন্দনময় আর্তিতে আছড়ে পড়ে জেসমিন, আম্মু কই? জেসমিনের এই অপরিচিত রূপ দেখে হকচকিয়ে উঠে দাঁড়ায় আবদুল্লাহ। ঘুমাচ্ছে মনে হয়; বললো, শরীরটা খুব খারাপ লাগছে। মানুষটাকে মহীরুহ মনে হয়, আর নিজের প্রলয় ভাঙন থামাতে তার বুকেই আছড়ে পড়ে কাঁদতে থাকে জেসমিন, আমাকে মাফ করে দিন, হেঁচকির ঠেলায় কণ্ঠ রোধ হয়ে আসতে থাকে জেসমিনের, আজ ইশকুলে গেছিলাম, আমার আব্বু…।
জানি, পেপারে পড়েছি, লক্ষ্মী সোনা তুমি শান্ত হও বলে ভেঙে চুরচুর হতে থাকা মেয়েটিকে পিতৃøেহে দুহাতে আমূল জড়িয়ে থামাতে চেষ্টা করে আবদুল্লাহ।
আবদুল্লাহর দুহাতের আগলে সমস্ত øেহের প্লাবন তার, কী বলবে মেয়েটিকে এটা ভেবে চোখে আর কিছু না বলতে পারার হতবিহ্বলতা… কেমন যেন ছায়াচ্ছন্ন হয়ে আসতে থাকে চারপাশটা, কেবল একটি ধ্বনি তার দুই অসার পাকে মেঝেতে ঠেসে রাখে, আপনারা জানতেন? তারপরও আমাকে একবারও বলেননি, কেন?
তোমার আম্মু চায়নি, কিন্তু সবমিলিয়ে সে খুব ভেঙে পড়েছে, তোমার এই রূপ তোমার আম্মুকে নতুন জীবন দেবে, চলো তার কাছে যাই।
ছুটতে ছুটতে মায়ের বন্ধ দরজায় থাপ্পড় দিতে দিতে অঝরে কাঁদতে থাকে জেসমিন… আম্মু, তোমার অসভ্য মেয়েটাকে মাফ করে দাও…।
কিন্তু দুজনের অক্লান্ত ধাক্কার পরও সেই দরজা কোনোদিনই আর খোলে না।
Leave a Reply
You must be logged in to post a comment.