নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী
ভুলব কেন, সবকিছু এখনও দুই চক্ষে লেগে আছে,
কিচ্ছুই ভুলিনি।
এটা তো গেরস্তপাড়া, মধ্যবিত্ত মানুষজনের
একতলা দোতলা
ঘরবাড়ি এখানে ছিল পরপর সাজানো।
সব বাড়ি কি পাকা ছিল? না, তাও ছিল না।
ইটে-গাঁথা বাড়ির পাশেই
এখানে ওখানে
ঢেউ-খেলানো টিনের চালের কিছু কাঠের বাড়িও
দেখেছি তা পষ্ট মনে পড়ে।
প্রতিটি বাড়ির সামনে একটুখানি করে
ফাঁকা জমি-জায়গা ছিল। তাতে জুঁই টগর ইত্যাদি
ফুল যেমন চোখে পড়ত, তেমনি তার পাশে
কুমড়ো ঝিঙে লাউয়ের মাচাও
থাকত বই কী। আর যেহেতু পৌরসভা থেকে
তখনও কলের জল দেওয়া শুরু হয়নি, তাই প্রতিটি বাড়ির
উঠোনে অবশ্য থাকত টিউকল অথবা
কুয়ো কি ইঁদারা।
শহরতলির এই মধ্যবিত্ত গেরস্তের পাড়া
আজকে আমি আর
চিনে উঠতে পারছি না যে, তার
কারণ এ-জায়গাটার ভোল পালটে গেছে
আপাদমস্তক।
ছু-মন্তরে ভ্যানিশ হয়েছে সেই একতলা-দোতলা বাড়িগুলি।
চতুর্দিকে হাইরাইজ, ফাঁকা
জমি আর এক ছটাকও দেখছি না কোথাও।
আকাশটা ভয় পেয়ে মুখ লুকিয়ে ফেলেছে।
সর্বত্র গাড়ির গাদি, প্রাণ বাঁচিয়ে পথে যায় না হাঁটা।
তারই মধ্যে হুলুস্থুলু চলছে বিক্রিবাটা
যেমন ফুটপাথে তেমনি শীতাতপনিয়ন্ত্রিত শপিংমলের
সব ক’টি তলায়।
আমি তো কিনব না কিছু, চুপটি করে তাই দাঁড়িয়ে থাকি
রাস্তার একপাশে, আর ভাবি যে, এটাই
সত্যি-সত্যি শহরতলির
মধ্যবিত্ত মানুষের সেই পাড়াটা নাকি?
২৩ আষাঢ়, ১৪১৮
Leave a Reply
You must be logged in to post a comment.