নদী কারো নয়

সৈয়দ শামসুল হক

\ ১৬ \

এতক্ষণে আমরা নিশ্চয়
ভুলি নাই যে, বাংলাদেশের ঔপন্যাসিক মকবুল হোসেন এখন জলেশ্বরীতে। এবং এখানে এসে
নিরিবিলিতে কোনো উপন্যাস রচনারও উদ্দেশ্য তার নাই, যেমনটা সে দেশের বহু শহরে
নিবাসে যায় লেখার জন্যে। এখানে তার আসা বাবার পূর্বাপর সমাচার সংগ্রহ করতে। বাবা
মইনুল হোসেন মোক্তার সম্পর্কে প্রথম সে বিচলিত হয়েছিলো মরণ শয্যায় মায়ের মুখে
কয়েকটি কথা শুনে। তারপর সেই বিচলন আরো বৃদ্ধি পায় সাইদুর রহমান কন্ট্রাক্টরের
মেয়ের জামাই গফুর, ঢাকায় যে এসেছিলো চাকরির সন্ধানে, তার তদ্বির নিতে, সেই গফুরের
কাছে যখন সে শোনে বাবার মৃত্যু হয়েছিলো অপঘাতে। কিন্তু এখন পর্যন্ত বিশেষ
বিস্তারিত সে জেনে ওঠে নাই। জলেশ্বরীতে সে নিবাস পায় এখানকার সবচেয়ে ধনী
কন্ট্রাক্টর সাইদুর রহমানের বাংলাবাড়িতে। ছবির মতো বাড়ি। পায়ের নিচে কুলকুল করে
বহে চলেছে আধকোশা নদী। রাত এখন অনেক।
বারান্দায় রাতের অন্ধকারে বসে হুইস্কি পান করে চলেছে মকবুল। আধকোশা নদী
রাতের সম্মানে, যেন মানুষের ঘুম না ভাঙে, মৃদুস্বরে বয়ে চলেছে। নদীর বুকে নির্মেঘ
আকাশের তারাগুলো নাইতে নেমেছে। তাদের নাহনের শেষ নাই। হাওয়াতেও কোনো কৃপণতা নাই
শীতলতার। মকবুল হোসেনের মাথার ভেতরে তার উপন্যাসের একটি-দুটি চরিত্র ক্ষণকালের
জন্যে এসে দাঁড়াচ্ছে, আবার পরমুহূর্তেই সরে যাচ্ছে। এই এক যুবতী হাতের গোলাপ থেকে
কুটিকুটি করে পাপড়ি ছিঁড়ছে, ওই একজন নিউইয়র্কগামী বিমানে বসে পাশের যাত্রীর সঙ্গে
আলাপ জমাচ্ছে, আবার পরমুহূর্তেই রাতের বরিশালের লঞ্চ থেকে কে একজন ঝাঁপিয়ে পড়লো
কালো কালির মতো নদীজলে। মকবুল নির্ণয় করতে পারে না এই ছবিগুলো কি ওই চরিত্রগুলো
তার অতীত রচনা থেকে উঠে আসছে নাকি এখন পর্যন্ত না-লেখা তারা। মকবুলের সুরাচ্ছন্ন
মস্তিষ্কে এটি ধরা পড়বার কথাও নয়। সুরা কিংবা অসুরা, অধিক যাদের রচনা তেমন সব ঔপন্যাসিকেরই
এমনটা হয়, অতীত-ভবিষ্যতের চেতন থাকে না। ওদিকে সাইদুর রহমান কন্ট্রাক্টর এত রাত
অবধি কুসমির ঘরে আছেন তো আছেনই। ঘরেও নয় বারান্দায়। একা বিধবা যুবতীর ঘরের ভেতরে
যাওয়া যে বিহিত নয়, এতটুকু সৌজন্য এখনো কন্ট্রাক্টরের আছে। তারপরও কুসমির গা ছমছম
কাটে না। মানুষটা তাকে হিন্দুধর্ম ত্যাগ করে মুসলমান হতে বলেছিলো একবার, আবার
একদিন নিকার প্রস্তাবও দিয়েছিলো। হিন্দু-মুসলমানের কথায় ভারত-পাকিস্তান এসে যায়,
সেই থেকে ভারত ভাগের কথা উঠে পড়ে। কী উন্মাদের কালই না গেছে! – এই শুনিলোম খুলনা
পাইছে হিন্দুস্থান, মুর্শিদাবাদ হামরা, দুইদিন না ঘুরি যাইতে মুর্শিদাবাদ গেইলো
হিন্দুস্থানে, খুলনা আসি গেইলো হামার পাকিস্তানে। শুধু কি এই? মানুষও কত উন্মাদ
হয়া গেইলো! তবে শোনেন ওয়াহেদ ডাক্তারের কথা। আমরা কন্ট্রাক্টরের মুখে দেশভাগের
কালে ওয়াহেদ ডাক্তারের এক অবিশ্বাস্য কাহিনির অবতারণা-ভাগ কেবল শুনে উঠছি, এমতকালে
আমরা আবার কিছু পূর্বোক্ত ভাগে ফিরে গিয়েছিলাম। মনেই হতে পারে, গল্পের অনেকটা দূর
চলে এসে এখন যেন এক বৃত্তে ঘুরে চলেছি। আমরা কিছুটা পেছন ফিরে গেছি; আবার একবার
দেখে নিয়েছি, শুনে নিয়েছি, কিছু কিছু বিষয়, সন্ধ্যা, নদী, সংলাপ; হাঁ, কিঞ্চিৎ দম
নেবার দরকার ছিলো আমাদের। যদি মনে হয় বৃত্তই ঘুরে এসেছি, তাহলে তো জীবনের দিকে
দৃষ্টি ফেরাতে হয়। থোড় বড়ি খাড়া, খাড়া বড়ি থোড়! চাল ডাল নুন শাক, শাক নুন ডাল চাল!

জীবন গতিমান, সমুখের দিকে অগ্রসরমান – এ-কথা বলার জন্যে বুকের পাটা
লাগে।  অধিকাংশ আমাদের কাছে জীবন এক বিন্দুতে
বৃত্তাকারে ঘুরে চলে। কিংবা ঘোরে না! স্থির থাকে। যেনবা মূর্তির প্রায় এ জীবন!
দেখা যাবে, আমাদের পর্যবেক্ষণ তো তাই বলে – অধিকাংশ মানুষের কাছে জীবন সচল বা
অগ্রসরমান নয় – জীবন স্থির, মন্দিরে দেবী প্রতিমার মতো, কিংবা আরো ভালো বৃক্ষের
উপমা। বৃক্ষ থাকে শেকড়বদ্ধ, যদি কিছু আন্দোলন তো তবে সেটি তার পাতা-সকলে, তাও
হাওয়া এলে! সে হাওয়াই বা কতজনার কাছে আসে! বস্ত্তত জীবন বা জীবনের গতি সম্পর্কে
যদি তাদের কাছে প্রশ্ন করা হয়, তাহলে তারা বিস্মিতই হবে। ভেবে তারা হদিস পাবে না,
বলবে – জীবন কি অম্পুর হতে জলেশ্বরীর টেরেনগাড়ি যে ছুটিবে! এমনকি সময় সম্পর্কেও
তাদের এতাবধি ধারণা যে – হাঁ সময় বহিয়া চলে। এ-কথা তারা সহজেই বলতে পারে, কারণ
তারা দ্যাখে চোখের সমুখেই শিশুরা বৃদ্ধ হয় পলে পলে, এবং তারা নিজেরাই তো এখন
মৃত্যুর দিকে ধাবমান। কিন্তু মৃত্যুও যে অবশ্যম্ভাবী, এটা তাদের গোচরে আসে না। বলে
বটে – মউতের ঠিক-ঠিকানা নাই, সাবধানের ঘণ্টা নাই, কখন যে আচমকা আসি দ্যাখা দিবে আর
বলিবে যে চলো বাপ্! কিন্তু নিজের বেলায় নিশ্চয় করে এ কথন গায়ে মাখে না। জগতে এটাই
বড় বিস্ময়ের যে মৃত্যুকে আমরা ভুলে থাকি। আমরা অমর নই, কিন্তু অমর বলে বোধ করি।
আমরা মৃতকে কবর দিই, চিতার আগুনে সঁপি, কিন্তু জীবনে ফিরে যাই। মৃত্যু আমাদের কাছে
ক্ষণকালের অধিক সত্য বলে স্থায়ী হয় না।

সময় নদীর মতো বয়ে চলে। নদীর সঙ্গে সময়ের বহমানতার তুলনা সে কোন প্রাচীনকাল
থেকে মানুষের ওষ্ঠাগ্রে। কিন্তু জীবন? জীবনও কি নদীর মতো নয়! নদীও বয়ে চলে। জীবনও
বয়ে চলে। নদীতে আষাঢ়ের বৃষ্টিতে বিপুল ঢল নামে – আমাদের আধকোশা নদীটিকেই দেখে ওটা
বুঝি। নদী তখন উন্মাদ হয়ে পড়ে, পাড় ভাঙতে থাকে। জলেশ্বরীর মূল জনপদ ভাঙতে ভাঙতে
এখন তো আড়াই মাইল  সরে এসেছে দক্ষিণে। ভাঙন
জীবনেরও আছে। তুমুল ভাঙন। অপ্রত্যাশিত ভাঙন। এবং জলেশ্বরীর বসতির মতো জীবনও তখন
হটে আসে নিরাপদ অবস্থানে। তবে সেটাও স্থায়ী নিরাপদ ভূভাগ কিনা, নিশ্চয়তা নাই।
কিন্তু মানুষ এমন, যখন যেখানে হটে আসে সেখানেই সে তার স্থায়িত্ব পাবে বলে বোধ করে,
যখন আবার ভাঙন আসে তখন সে বিস্মিত হয়, ক্রু্দ্ধ হয়, বেসামাল হয়ে পড়ে, যেনবা প্রতারিত।
তখন আবার সে উন্মাদের মতো নিরাপদ স্থানের সন্ধান করে।

কুসমিকে যে সাইদুর রহমান বলছিলেন, আমরা সেই ওয়াহেদ ডাক্তারের কথা ভুলি নাই,
কলকাতায় গিয়ে তার জীবনে যে আশ্চর্য পরিবর্তন আসে, যে-পরিবর্তনের ফলে ওয়াহেদ
ডাক্তার ভারত ভাগের কালে এক অলৌকিক বার্তা পেয়ে যাবে নিয়তির কাছ থেকে – যদি আমরা
নিয়তিই মানি – এসব কথা সাইদুর রহমান কন্ট্রাক্টর এই মধ্যসন্নিহিত রাত্রিকালে
কুসমিকে কেবল বলতে শুরু করেছেন রূপকথা বর্ণনের ভঙ্গিতে, আমরা এখন সে-পরিবেশ থেকে
ক্ষণকালের জন্যে সরে এসেছি। আবার নাহয় সূত্র ধরা যাবে। আমরা কন্ট্রাক্টরের ড্রাইভারের
কথাও ভুলে যাচ্ছি না। রেললাইনের পাশে মেহেরুল্লাহ মিয়া কন্ট্রাক্টরের জিপগাড়ি নিয়ে
অপেক্ষা করছে কখন তিনি কুসমির ঘর থেকে বেরিয়ে বাড়ির পথে রওনা হবেন।  আমরা এখানেই বলে রাখি, কুসমির কাছ থেকে বেরোতে
আরো অনেকটা সময় লাগবে সাইদুর রহমানের, ড্রাইভার নেতিয়ে পড়বে খিদেয়, এবং আশ্চর্য
হওয়ার কিছু নাই যে মেহেরুল্লাহ এই প্রথম ভাবতে শুরু করবে – আইজ তবে কন্ট্রাক্টর
মনের হাউস পুরা করিয়াই উঠিবে! এ-কথা ভাবতে ভাবতেই মেহেরুল্লার অনাহারী শরীরে
কল্পিত সঙ্গমের উত্তাপ ছড়িয়ে পড়বে। সে বড় বেপথু বোধ করতে থাকবে।

আমরা নদীর কথা বলছিলাম। বলছিলাম আষাঢ়ের ঢলে নদী ভাঙনের কথা। এই নদী ভাঙনই
যে মকবুল হোসেনের বাবা মইনুল হোসেন মোক্তারের জীবনে – এমনকি মৃত্যুতেও – একটা
ভূমিকা রাখবে, তার বিস্তারিত মকবুল এখনো জানে না; কেবল এটুকু যে তার বাবার মৃত্যু
হয় আধকোশাতে ডুবে। এইটুকুই সে এখন পর্যন্ত জানে। অচিরেই সে সব জানবে। কিন্তু এখন
সে ঘুমে। অথবা ঘুম নয় যাকে আমরা ঘুম বলে জানি। মকবুল বেসামাল হুইস্কির তরলে ভাসতে
ভাসতে অচেতনই এখন বলা যায়। কখন যে সে বারান্দা থেকে টলতে টলতে বিছানায় এসে গেছে তা
নিজেও জানে না। বারান্দায় সে বসেছিলো অন্ধকার আধকোশা নদীটির দিকে মুখ করে, যেন সে
প্রতীক্ষাই করছিলো সন্ধ্যার সেই বিভ্রমটি তার চোখের সমুখে আরো একবার ঘটে উঠবে –
যুবতীটি আবার নদীজল থেকে জেগে উঠে পাড় ঘেঁষে হাঁটতে থাকবে, হাঁটতে হাঁটতে মিলিয়ে
যাবে। এবং তাকে দেখে মকবুলের মনে পড়ে যাবে তার নিজের মেয়েটির কথা। প্রিয়লি! বড় শখ
করে নামটি রেখেছিলো মকবুল। সেই প্রিয়লি! আর মকবুলের সেই প্রেমিকা – সহেলি! – এখন
নিউজিল্যান্ড প্রবাসী – কী আশ্চর্য মিল! – শুধু নামের ওই লি-টির জন্যে নয় – দুজনেই
এখন তার জীবন থেকে কবেই অন্তর্হিত।

রাত এখন কত নির্ণয় নাই। মকবুল হোসেন ঘুম থেকে নিজেকে জাগিয়ে তোলে। সে জানেই
যে, যা সে দেখছিলো তা স্বপ্ন, স্বপ্ন ভিন্ন কিছুই নয়। এ সত্য নয়, সত্য হতে পারে
না। স্বপ্নের ভেতরেই সে নিজেকে বলছিলো, আরে, আমি স্বপ্নই দেখছি। সে দেখছিলো
সাভারের দিক থেকে সে ঢাকার দিকে গাড়িতে করে আসছে। দিনটি ঝলমলে সোনালি। এমন দিনে,
দিনের এমন এ বেলায়, রাজধানীর মানুষগুলো কী করছে? তারা পথে নেই কেন? পথ এত জনশূন্য
কেন? মকবুল হোসেনের মন আশঙ্কায় ভরে ওঠে, তবে তা এত প্রবল নয় যে গাড়ি থামিয়ে কাউকে
জিগ্যেস করবে। হাঁ, ওই তো একটি দোকান খোলা দেখা যাচ্ছে। পান-সিগারেটের দোকান। না,
সে পেরিয়ে গেলো, অথবা ড্রাইভারকে থামতে বলবে, বলা আর হয়ে ওঠে নাই। তারপর
আমিনবাজার। ওই তো মাংসের দোকানগুলো। সারি সারি ঠ্যাং ঝুলছে, খাসির, গরুর, হলুদ
চর্বি, জমাট রক্ত। আরে এ কী! শেষ নাই মাংসের দোকানের – যেন ঢাকা পর্যন্ত ঝুলছে
লোহার শিক থেকে ঝোলানো রান, ঠ্যাং, সিনা। রক্তমাখা। চর্বি থলথল। মাছি উড়ছে। মকবুল
গাড়ি থামাতে বলে না। বলবে কি, পেছনের সিট থেকে সে হঠাৎ লক্ষ করে দ্যাখে, তার গাড়ি
চালাচ্ছে এখনকার ড্রাইভার নয়, অনেক বছর আগের সেই ড্রাইভার, সেই শাহজাহান মিয়া,
সে-ই যখন সহেলির সঙ্গে তার ছাড়াছাড়ি হয়ে যায় নাই! ভাঙা পুরনো রঙচটা সেই টয়োটা
করোলা! সেই গাড়িতে করেই সহেলিকে নিয়ে কত বেড়ানো! আর সেই গাড়িটা থাকতে থাকতেই সহেলি
তাকে ছেড়ে চলে যায়। গাড়িটার ভেতরে তখন বসলেই মকবুলের মনে হতো, ছিলো একটা বাগান,
এখন বিরান হয়ে গেছে। শুধু কি তারই এমন মনে হতো? – শাহজাহানেরও!  শাহজাহান মিয়াও তখন কী মন খারাপ করে
স্টিয়ারিংয়ে হাত রাখতো। রেডিওতে প্রতিদিন খবর শোনার অভ্যেস ছিলো শাহজাহান মিয়ার।
খুব একটা খারাপ খবর না হলে মনিবকে সে বলতো না – ছার, আইজ রেডিওতে শুনলাম বাস
অ্যাকসিডেন্টে বারোজন মারা গেছে, আমার মনে হয় দোষটা ড্রাইভারের। তারপর সহেলি যখন
চলে গেলো, তখন শাহজাহান মিয়ার ভেতরে একটা পরিবর্তন দেখা গেলো, ভালো খারাপ যা-ই
হোক, রেডিওতে শোনা খবর গড়গড় করে সে বলে যেতো মকবুলকে – ছার, ইন্ডিয়ার
প্রধানমন্ত্রী কইছে বাংলাদ্যাশ আমাদের বন্ধু দ্যাশ – ছার, এইবার গারমেন্টসের
রপ্তানি বাড়ছে কইলো – ছার, আখাউড়ায় টেরেন একটা ডিরেল হইছে, তবে কোনো জানের ক্ষতি
হয় নাই। হয়তো এভাবেই সে তার মনিবের মন দুঃখতাপ থেকে দূরে রাখতে চাইতো। সহেলি চলে
যাওয়ার পর মকবুলকে ভূতে পেয়ে বসে, সেইসব দিনের কথা কি ভোলা যায়? স্বপ্নের ভেতরে
শাহজাহানকে পেয়ে মনে পড়ে যায়, কী ব্যাকুলই না হয়ে পড়েছিলো লোকটা! সেইসব দিনে মকবুল
যখন উদ্ভ্রান্তের মতো উদ্দেশ্যহীন ঢাকা চষে ফিরতো, যখন অনেক দিন আর সে লেখার
টেবিলে বসে নাই, শাহজাহান মিয়া বড় মায়ামাখা গলায় বলতো – ছার, একটু রেস্ট ন্যান,
কোথাও বইসা একটু চা-পানি খান! সেসব কতকাল আগের কথা। এতদিন পরে, হলেও বা স্বপ্ন,
স্বপ্নের মধ্যে শাহজাহান মিয়াকে আবার তার কাজে ফিরতে দেখে মকবুল বড় খুশি হয়।

ঘুম থেকে উঠে, বিছানার ওপর হামা দিয়ে বসে, স্বপ্নটির কথা মনে করতে করতে,
মকবুল হোসেন সেই খুশিটা উপভোগ করে। আহ্, পুরনো সব কিছু যদি এভাবে ফিরে আসতো!
কিন্তু তাপিত এ জগতের কে আমাদের বলবে যে পুরনো কিছুই আর ফেরে না, কেউ ফেরে না,
একজনও না। যে পুরনো ঢাকায় মকবুল এসে প্রথম নেমেছিলো মায়ের সঙ্গে উত্তর বাংলার
ট্রেনে, ফুলবাড়ি ইস্টিশানে, সেই ফুলবাড়ি আর হবে না, সেই ঘোড়াগাড়িও আর নবাবপুর দিয়ে
প্যাসেঞ্জার নিয়ে টকটক করে ঠিকানায় যাবে না। কবর থেকে মা-ও আর উঠে আসবে না।
বুড়িগঙ্গা দিয়ে যে পানি বহে যায়, সেও আর উজান পাবে না। সহেলি! সহেলিও তার জীবনে
ফিরবে না। না, প্রিয়লির কথা এখন এই মধ্যরাতে স্বপ্নভাঙা তার মনে পড়ে না। তার
মেয়েটি যেন এখনো তার কাছেই আছে, এখনো সে রাগ করে বাড়ি ছেড়ে যায় নাই, এখনো সে ওই
দুর্বৃত্ত ছেলেটির সঙ্গে কাজীর অফিসে বিয়ে করে সংসার পাতে নাই, সে- সংসারও ছাই হয়ে
যায় নাই, বাবার কাছে ফিরে আসার জন্যে আকুতি তার ওঠে নাই। না, এ সকল তার, মকবুলের,
স্বপ্নকালে কিংবা স্বপ্ন ভাঙবার পর এখন তার স্মরণপথে আসে নাই। স্বপ্নের ভেতরে
বিচ্ছিন্ন সব ছবি, মকবুলের কল্পনায় এখন চলচ্চিত্রের মতো ধারাবাহিক হয়ে ওঠে। তার
গাড়ি এখন আমিনবাজার ছেড়ে যায়। তুরাগ নদীর ওপরে ব্রিজ। ব্রিজের কাছে এসে মাংসের
দোকানের সারি অকস্মাৎ শেষ হয়ে যায়। আরে, বাজার তবে এতদূর পর্যন্ত চলে এসেছে! এই
বিস্ময়টার সঙ্গে সঙ্গে ঝাপট দিয়ে শঙ্কা ফিরে আসে তার ভেতরে। এবার দ্বিগুণ তিনগুণ
শতগুণ। তবে কি আরো একবার রাষ্ট্রক্ষমতা সেনাবাহিনীর হাতে চলে গেলো! আবার সেই ফিরে
ফিরতি! এটা কি বঙ্গবন্ধু নিহত হবার পরের দিন? নাকি, খালেদ মোশাররফ নিহত হওয়ার সেই
রাতের পর দুপুরবেলা এটি? নাকি জেনারেল জিয়া চট্টগ্রামে নিহত হওয়ার পরপরই কোনো একটা
দিন? কাউকে জিগ্যেস করলে হতো, কিন্তু শাহজাহান মিয়া গাড়ি থামায় নাই। পুরনো ড্রাইভার
ফিরে আসবার খুশিতে সে তাকে তার ইচ্ছার ওপরেই ছেড়ে দিয়েছে গাড়িকে।

কিন্তু শাহজাহান মিয়াকে গাড়িটা থামাতেই হলো। গাবতলি বাস স্টেশন পেরিয়ে
খানিকটা এগোতেই, টেকনিক্যাল মোড় আসতে না আসতেই, পথের ওপর দেখা গেলো ব্যারিকেড।
মকবুল গাড়ি থেকে নামলো। ভালো করে নজর করে দেখলো, কাঁটাতারের ব্যারিকেডটা রাস্তার
মাঝখানে, দুপাশে সরু ফাঁকা অবকাশ আছে। সেই ফাঁকা দিয়ে গাড়ি ওপারে যেতে পারবে?
মকবুল এগিয়ে গেলো দেখতে। শাহজাহান মিয়া গাড়িতেই বসে রইলো, যেন তার বিন্দুমাত্র
উদ্বেগ নাই। আর এই গাড়িটিও পুরনো সেই টয়োটা করোলা নয়, এখনকার ঝকঝকে নতুন মডেলের।
শাহজাহান মিয়া  নিশ্চিন্তমনে রেডিও ঘোরাতে
শুরু করছে, দেখছে এই মুহূর্তে কোন স্টেশনে খবর হচ্ছে। মকবুল দ্যাখে, ব্যারিকেডের
দুপাশে যে ফাঁকা, আসলে ফাঁকা মোটেই নয়, ওপাশেই আবর্জনার স্তূপ, পাহাড়প্রমাণ,
কোনোমতে মানুষ হয়তো পার হতে পারবে, কিন্তু গাড়ি কিছুতেই নয়। মকবুল ফিরে আসে গাড়ির
কাছে। রেডিওতে খবর নয়, ঝিঁঝি সাঁ সাঁ করে আওয়াজ হচ্ছে। কিছুই শোনা যাচ্ছে না, তবু
কেন রেডিওটা খোলা রেখেছে শাহজাহান মিয়া? বিরক্ত হয়ে গাড়ির দরোজা খুলে মকবুল ভেতরে
বসতেই দ্যাখে এক অবাক কান্ড! সামনের সিটের পেছনে, কালো রঙের কভারের ওপরে কে যেন চকখড়ি
দিয়ে বিশাল এক কুমিরের ছবি এঁকে গেছে। হাঁ করে আছে কুমিরটা, আর সেই হাঁ-এর মুখে
ইংরেজিতে লেখা – আই হ্যাভ কাম ব্যাক! কুমিরটা হাঁ করে তো নয়, যেন দাঁত বের করে
হাসছে! শাহজাহান মিয়াকে সে জিগ্যেস করতে যাবে, কে লিখেছে, তুমি দ্যাখোনি? – তার
আগেই পাহাড়সমান একটা অচেনা লোক জানালায় মুখ ঢুকিয়ে উর্দুতে তাকে বলে উঠলো – আবে
শালা, নিকাল তো আও! নিকাল বাহার!  – তবে কি
পাকিস্তানিরা আবার ফিরে এলো? সেই একাত্তর তবে? আবার! আবার তারা! দরদর করে ঘাম
ছুটতে লাগলো মকবুলের। লোকটাকে তার ভীষণ ভয় করতে লাগলো। ইচ্ছে করলে তো তাকে অবলীলায়
তুলে নিয়ে মারতে পারে আছাড়! শাহজাহান মিয়া পেছনে মুখ ঘুরিয়ে বলে, ছার, ডরাইয়েন না,
আমিও পুরান ঢাকার বিচ্ছু! – আর বিচ্ছু! মকবুলের শরীর ভয়ে অবশ হয়ে পড়ে। না, এ
স্বপ্ন, দুঃস্বপ্ন, এ সত্যি নয়, ঘটছে না! নিজেকে তখন জোর করে জাগিয়ে তোলে মকবুল।

বিছানার ওপর হামা দিয়ে বসে সে হাঁপাতে থাকে। নির্ণয় করে উঠতে পারে না কোথায়
সে কোন ঘরে কোন বিছানায়। এমনকি এটাও তার ঠাহর হয় না, ঘরে সে একাই কিনা। মকবুল হাত
দিয়ে বিছানার আশপাশ ছুঁয়ে দ্যাখে। না, কেউ নাই। কাকে সে আশা করেছিলো? সহেলিকে? না,
সহেলির সঙ্গে রাত্রিবাসের অভিজ্ঞতা তার নাই, হয় নাই। নাসরিনকে? ক্ষণকালের জন্যে সে
থমকে যায় – মনে করতে পারে না নাসরিন মৃত অথবা জীবিত? তবে কি তাদেরই কেউ একজন যাদের
সে  বিছানায় নিয়ে যেতো – স্ত্রী মারা
যাওয়ার পর, নিজ বাড়িতে নিজ বিছানায়? মাথার ভেতরে পাখি ওড়ে। সত্যি সত্যি রাত জাগা
একটা পাখি কোথাও ঠির্র্র্র্ ঠির্ঠির্ করে ডেকে ওঠে। সাতসওয়ালি পাখি এ নয় যে
মানুষকে মনে করিয়ে দেবে জীবনের যাত্রায় প্রশ্ন করো হে, গুনে দেখো সাত সাতটি প্রশ্ন
আছে সবাকার। মকবুলের জীবনে সেই সাতটি প্রশ্ন তবে কী? হিসাবটা নেওয়া যাক। এক, বাবার
মৃত্যু কি সত্য সত্যই অপঘাতে? দুই, সাতচল্লিশে দেশভাগের সঙ্গে বাবার মৃত্যুর কোনো
সম্পর্ক আছে কিনা অথবা তারই জন্যে কিনা? তিন, কন্যার বান্ধবীকে ধর্ষণ করা, এটি পাপ
– অথবা অতদূর নাইবা হলো – অন্যায় একটি কাজ ছিলো কিনা? চার, এ কারণেই কি তার মেয়েটি
ঘর ছাড়ে? বাবার প্রতি এত ঘৃণা তার? সাতের বাকি আর তিনটি প্রশ্নের জন্যে আমাদের
অপেক্ষা করতে হবে এ-কথনের ইতিভাগের জন্যে।

মকবুল উঠে গিয়ে ছরছর করে প্রস্রাব করে। প্রস্রাবের ধারা কমোডে না কোথায়
পড়ে, এতটা দেখার মতো পায়ের বা চোখের বা লিঙ্গের তার স্থিরতা নাই। এতটুকু ধারণা
আছে, ওইটি বাথরুম, এর অধিক নয়। বাথরুমটা যে শনাক্ত করতে পেরেছে, এতেই আমরা বুঝে
যাই তার এটুকু জ্ঞান ফিরে এসেছে যে এটি কন্ট্রাক্টরের বাংলাবাড়ির বেডরুম। আর যখন
সে আর্তনাদ করে ওঠে, হাহাকার করে ওঠে, মাথা এপাশ-ওপাশ করতে থাকে যাতনায়, তখন
আমাদের আর বলে দিতে হয় না যে প্রিয়লির সন্ধ্যাকালের ফোনটির কথা তার মনে পড়েছে। –
বাবা, আমাকে নিয়ে যাও! – বাবা, বাবা! তুমি শুনতে পাচ্ছো? মকবুল অবসন্ন হয়ে যায়।
প্রিয়লি! – মা, তুই! – বাবা! – বল, মা। – তুমি কোথায়? –  জলেশ্বরীতে। – আমাকে নিয়ে যাও, বাবা। পরক্ষণেই
আর্তস্বর ভেসে আসে – না! একটি পুরুষকণ্ঠ শোনা যায়। – কোথায় ফোন করছিস, মাগী!

বিছানায় ঢলে পড়ে মকবুল। হুইস্কিটা আজ বেশিই হয়ে গেছে তার। মেয়ের অমন
প্রাণঘাতী ফোন পেলে কার না বুক ফেটে যায়? আর ওই পুরুষকণ্ঠটি? – নিশ্চয় সেই
ছেলেটির, যার হাত ধরে প্রিয়লি বেরিয়ে গিয়েছিলো। কবে কোথায় পরিচয় হলো ছেলেটির
সঙ্গে? কার ছেলে? কোন পরিবারের? কোন বাড়ির? কিচ্ছু জানা নাই। কত খুঁজে দেখেছে
মকবুল। তন্ন তন্ন করে প্রিয়লির ড্রয়ার, সুটকেস, খাতা, চিঠি, খুঁজে দেখেছে সে।
যাদের নাম পেয়েছে তাদের প্রত্যেকের বাড়িতে খোঁজ নিয়েছে। না, তাদের ছেলে বাড়িতেই
আছে। না, তাদের বাড়িতে প্রিয়লি নাই। তবে? তবে কি সব চিহ্ন মুছে দিয়ে গেছে তার মেয়ে
যেন বাবা টের না পায়, ধাওয়া না করতে পারে। মেয়ের শোকে অনেকদিন মকবুল কিছু লেখে
নাই। যে-মকবুলের লেখা প্রতি সপ্তাহে তিন তিনটি দৈনিকে  নিয়মিত বেরোতো, বইমেলায় বছরে আসতো একটি বড়
উপন্যাস, অন্ততপক্ষে তিনটি ছোট উপন্যাস আর একটি ছোটগল্পের বই, কোনো কোনো বছরে এর
অতিরিক্ত একটি ভ্রমণকাহিনি, সেই মকবুলের এমন দেড় দেড়টি বছর বিনা ফসলে কেটে যায়।
প্রকাশক মহলে হাহাকার পড়ে যায়। পাঠক মহলে বিস্ময়। লেখকদের সমাজ বড় ঈর্ষার সমাজ।
সেখানে গুঞ্জন ওঠে – নাহ্, শুকিয়ে গেছে কলমের কালি, ফুরিয়ে গেছে প্রতিভার
ফল্গুধারা। মকবুলের অগ্রজ লেখক-সকলের মধ্যেও অনেকে ছিলেন যাঁদের চোখ টাটাতো তার
সৃষ্টি প্রাচুর্য দেখে। মনে মনে ঈর্ষান্বিত হলেও তাঁরা মুখ খুলতেন না। এখন তাঁদের
কেউ কেউ মকবুলের দেখা পেলে তার পিঠ চাপড়ে সান্ত্বনা দিতে থাকেন, হয়, হয়, এরকম হয়!
রবীন্দ্রনাথও দেখা গেছে, বছর গেছে, একটি কবিতাও তাঁর কলমে আসেনি! মকবুল তাঁদের
মনোগত আসল কথাটি ঠিকই টের পেতো, কিন্তু চোখে-মুখে রাজ্যের বিস্ময় ফুটিয়ে বলতো,
বলেন কী। রবীন্দ্রনাথও! – ইয়েস! ইভেন টেগোর হ্যাড হিজ ড্রাই মোমেন্ট! – আশ্চর্য।
তোমারও একদিন কেটে যাবে। ডু নট ওয়ারি! – না, আমি ওয়ারি করছি না। তারপর মিথ্যে করেই
মকবুল একটা বাধা উত্তর দিতো, আসলে আমি একটা বড় উপন্যাসের জন্যে প্রস্ত্ততি নিচ্ছি।
মকবুলের মজাই লাগতো তখন ওই লেখকদের চেহারা দেখে। ও বাবা! – এই ভাবটা কেবল মুখেই
উচ্চারণ করছেন না মহাশয় লেখকটি, কিন্তু চোখেমুখে ঠিকরে বেরোচ্ছে!

না, বছর দেড়েকের মাথাতেই মকবুল ফিরে পায় কলম, পাঠক পায় উপন্যাস; না, তার
কলমের জোর কমে নাই, বরং আরো যেন বেগ পেয়েছে, রচনা যেন আরো ঘন হয়েছে। তখন ওই অগ্রজ
লেখকেরা কেউ কেউ দীর্ঘনিঃশ্বাস ফেলে বলতে থাকেন, মরা গাছেও তাহলে ডাল গজায়! এ কথা
মকবুলের কানে আসে, কিন্তু সে সত্য বলেই নির্মলচিত্তে গ্রহণ করে মন্তব্যটি। আর কেউ
না জানুক তার নিজের তো জানা, কেন তার হঠাৎ ওই মরুভূমি হয়ে যাওয়া। সে তো ভেবেইছিলো,
প্রিয়লির চলে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে তার মৃত্যু হয়ে গেছে। মানুষের মৃত্যু অনেক রকম।
শুধু শারীরিক মৃত্যুই মৃত্যু নয়। আরো আছে। আত্মার মৃত্যু। আদর্শের মৃত্যু।
নৈতিকতার মুত্যু। আমাদের চারপাশে এমন কত মানুষ আমরা রোজ দেখি অথবা দেখেও মোটে
জানতে পারি না বা জেনেও কিছু বলি না যে, তারা বেঁচে আছে বটে, তবে তাদের নৈতিকতার
মৃত্যু হয়েছে। কিংবা আদর্শের। আর নৈতিকতা বা আদর্শের মৃত্যু যার হয়েছে তার তো
আত্মারই মৃত্যু ঘটে গেছে। অথবা এ আত্মহত্যাই। শুধু গলায় দড়ি দিলে, ট্রেনের নিচে
ঝাঁপিয়ে পড়লে বা এনড্রিন গিললেই আত্মহত্যা হয় না, আত্মার মৃত্যু যে ঘটায় সে
আত্মহত্যাকারীর মতো সচেতনভাবেই তা ঘটায়। এখন কেবল একটি মৃত্যুর কথাই বলা বাকি রয়ে
যাচ্ছে – আনন্দের মৃত্যু। না, বাংলা শব্দ প্রয়োগের ধারা এখানে বিভ্রম ঘটাতে পারে;
মনে হতে পারে যে মৃত্যু আনন্দের, বুঝি তার কথা বলা হচ্ছে। তা নয়। আনন্দ যে উৎস
থেকে অবিরল ধারায় আমাদের অস্তিত্বকে ধৌত করে নিয়ত, এ সেই উৎসের মৃত্যু হয়ে যাওয়ার
কথা বলা হচ্ছে। কথাটা তবে দাঁড়াচ্ছে এই – আনন্দ-এর মৃত্যু। মকবুলের জন্যে প্রিয়লি
তার কন্যা ছিলো আনন্দের উৎস। স্বর্গীয় সে-আনন্দ। মকবুলের মনে পড়ে, জীবনে সে একবারই
চড় মেরেছিলো একজনকে, দেশের বড় এক পুস্তক প্রকাশককে, যে তার মেয়ে হওয়ার সংবাদ পেয়ে
বাড়িতে মিষ্টির বাকসো নিয়ে হাজির হয়েছিলো ঠিকই, কিন্তু মুখে বলেছিলো, হেঁ হেঁ,
মেয়ে না হয়ে আপনার ছেলে হলে আপনার যোগ্য একজন উত্তরসূরির আশা আমরা করতে পারতাম।
নেক্সট টাইম! তৎক্ষণাৎ ধাঁই করে সপাটে একটা চড়। – অাঁ এ কী! – কেন, মেয়ে কি লেখক
হতে পারে না! – তারপর চিবিয়ে মকবুল হোসেন উচ্চারণ করেছিলো, আ-মা-র যো-গ্য  উ-ত্ত-র-সূরি। হতে পারে না? অবশ্য ওই চড়ের
কারণেই মকবুল হোসেন তার পরের উপন্যাসটি ওই প্রকাশককেই দিয়েছিলো। আর যাই হোক, মাতাল
কিংবা কামুক, মকবুল হোসেনের মনটা যে নরম, এটি আমরা যেন ভুলে না  যাই\
r (চলবে)