মানবীকল্পা

মহুয়া চৌধুরী

জিনা ঘরের বাইরে থেকেই মায়ের গলা শুনতে পাচ্ছিল। মা ভীষণ উত্তেজিত হয়ে কার সঙ্গে যেন মোবাইলে কথা বলছে।
‘এঁহ্, নীলনদ বলিস না তো! এক্কেবারে পাতি বাঙালির মতো শোনায়। বল না-আ-ই-ল। না-আ-ই-ল। আহা’ – কেমন স্বপ্নাচ্ছন্ন হয়ে গেল মায়ের গলা। যেন চকলেটের মতো চুষে-চুষে স্বাদ নিচ্ছে শব্দটার। দু-এক সেকেন্ড চুপ। আবার শুরম্ন করল, – ‘ল্যান্ড করারও কত আগে – জানিস, ওপর থেকে দেখা যাচ্ছে প্রথমে সরম্ন নীল আঁকাবাঁকা রেখা, ক্রমশ আরো-আরো চওড়া, আরো স্পষ্ট হতে থাকে। তখন সব যেন জলে জলময়। আমি তো জানালার কাচে একেবারে নাক ঠেকিয়ে বসে আছি। যতই লোকের পা মাড়িয়ে-মাড়িয়ে টয়লেটে যেতে হোক না বাবা, আমি সব সময়ে উইন্ডো শিটের জোরালো দাবিদার। তা যা বলছি, ওপর থেকে ওই সরম্ন জলের রেখা দেখেই তো আমি চিনতে পেরেছি, এ আমার সেই না-আ-আ-ই-ল না-আ-আ-ই-ল – আহা, কত রোমাঞ্চময় সব গল্পের দেশ, বল তো, কী আশ্চর্য দেবতারা…।’
জিনা এই সময়ে ঘরে ঢুকে ওর জামা-কাপড় লন্ড্রিতে দেবার ব্যাপারে কিছু বলতে গেল। অন্য জগতে ছিল মা এতক্ষণ! ভালো করে শুনলও না। কেবল সঙ্গে-সঙ্গে তার বাঁ-হাতের আঙুলে প্রাচীন সেই বরাভয় মুদ্রা ফুটে উঠল পুরোপুরি অন্য অর্থবোধক হয়ে। আর ভুরম্নতে ফুটল ভাঁজ। সব মিলিয়ে যার পরিষ্কার বাংলা অনুবাদ – থাম না রে বাপু, ওসব পরে হবে অখন। এই ভারতভূমিতে ফিরে পা দেবার হপ্তা কেটে গেল, মা তবু এখনো সেই মিশরভ্রমণের ঘোর কাটাতে পারছে না।
লেডিজ ক্লাবের দলবলসমেত পিরামিডের দেশে গিয়েছিল এক নামজাদা ট্রাভেল এজেন্সির সঙ্গে। সে-ক্লাব, সত্তর টপকানো বৃদ্ধায় ছয়লাব। কাজে-কাজেই জিনার মধ্য চলিস্নশ আর ভারি করিৎকর্মা মা স্বাভাবিকভাবেই সেখানে তরম্নণীর তারিফ ও দায়ভারপ্রাপ্ত হয়ে থাকে। লেডিজ ক্লাবের মেম্বারদের জন্য প্রতিবছরই ‘ট্যুর অ্যারেঞ্জ’ করে মা। এবার প্রথম বিদেশের মাটি ছোঁয়া হলো। আর মায়েরই উদ্যোগে হলো তো হলো সেই পিরামিডের দেশ। কেন ইজিপ্ট? আধা গোপনীয় এক কারণ আছে তার! এ হলো মায়ের বহুকালের স্বপ্ন। এদিকে আবার জিনা আর তার বাবার, পয়সা খরচ করে, শুকনো মরম্নভূমির দেশ দেখতে যাবার বাসনা নেই। কারম্নকার্যবিহীন পিরামিডও টানে না তাদের তেমনভাবে।
অগত্যা লেডিজ ক্লাবের মেম্বারদের মিশরভ্রমণে উদ্দীপিত করে তুলল মা। চলিত ভাষায় যাকে বলে ‘উশকোনো’। যাবতীয় রকমের প্রাথমিক সাহস প্রদান থেকে শুরম্ন করে, পস্ন্যান-প্রোগ্রাম, ছোটাছুটি, ফোনাফুনি, ই-মেইল টি-মেইল সর্ব ব্যাপারেই মায়ের কাঁঠালি কলার ‘রোল’।
ঠিক আছে। ভালো কথা। সাধ মিটিয়ে এসেছ। বেশ করেছ। কিন্তু ফিরে এসে পর্যমত্ম মা কী যে এক আবেশে বিভোর হয়ে রয়েছে। বেড়ানোর কটাদিনের সমসত্ম ভালোলাগা, অনেক কিছু জেনে ফেলে বিস্ময়ে কথাহারা হয়ে যাওয়া, চমকে ওঠার মুহূর্তগুলোকে অন্যদের মধ্যেও ঠেসেঠুসে ভরে না দিতে পারলে শামিত্ম নেই মায়ের। এমত্মার গল্প। যত বা ইতিহাস তত বা ভূগোল! মাঝে মাঝে দর্শনের ফোড়ন। পিরামিড, মানিফিকেশান সম্বন্ধীয় আবছা বিজ্ঞানও খানিক। তবে মায়ের সবচেয়ে প্রিয়প্রসঙ্গ কিন্তু পুরাণ। মিশরের কত যে দেবদেবী – নুথ, রা, হাথোর, আনুবিস, হোরাস, ওসিরিস, আইসিস। আর তাঁদের রকমারি কত যে কা–কারখানা! পরীক্ষার পড়ার মতো সেসব মুখস্থ করে তবে ইজিপ্ট থেকে ফিরেছে মা। মোবাইলে তাঁদের ছবি তুলে এনেছে অজস্র। আর স্বাভাবিকভাবেই সেগুলো দেখাতেও ছাড়েনি। ‘দেখ দেখ, এই হোরাস ফ্যালকন গড’, ‘এই আনুবিস! শেয়াল-দেবতা। ফেলুদার দৌলতে একে তো চিনিসই।’ ‘এটা নাকভাঙা স্ফিংক্স প্র-কা– জানিস!’ ‘এই হাথোর, উর্বরতার দেবী। দেখ মাথার মুকুটটা। দুটো শিঙের মধ্যে – ওটা কিন্তু আসলে চাঁদ বুঝলি – গাইড বলল। চাঁদটা লাল রঙের কেন কে জানে! জিজ্ঞেস করা হলো না।’ ‘আর এই হলেন নুথ, সৌরজগৎ আর বাতাসের দেবী। দেখ কী অদ্ভুত বিশাল লম্বাটে গড়ন। কেমন নুয়ে পড়ে যেন সবকিছুকে ঘিরে আগলে রেখেছেন।’
মা হেসেছিল বলতে-বলতে, – ‘আমাদের পুরাণের মতো একই রকম, জটিল আর স্ববিরোধী বুঝলি। আসল কথা, সব দেশে মানুষ তো পুরাণ লিখত তার চারদিকে নিজের চোখে দেখা নানারকম ঘটনা, বিভিন্ন ধরনের চরিত্রের আদলে। অলৌকিক ঘটনার ঢাকনিগুলো সরিয়ে নে। দেখবি দেব-দেবীরা সব আসলে মানুষ।
আর পুরাণ কেবল সে-সময়কার সমাজের আর লেখকের নিজস্ব ইচ্ছা পূরণের গল্প বলে গেছে। যুদ্ধ, ভালোবাসা, প্রতিহিংসার সব গল্প। খুব ফ্র্যাঙ্কলি বলেছে। একজন সৎ ডায়েরি লিখিয়ের মতোই প্রায়। কারণ মানুষ তখনো প্রবৃত্তিকে ঢেকেঢুকে রাখার বিশেষ দরকার টের পায়নি।’
মা বাড়িতে পা দিতে না দিতেই জিনা টীকাসহ সেসব গল্প প্রথমবার শুনেছে। পরের দিন পিউকাকি যখন বেড়াতে এসেছে, তখন শুনেছে দ্বিতীয়বার। পাশের বাড়ির মীরাদিদার সঙ্গে মায়ের বারান্দাসংলাপ চলাকালীন, নিজের ঘর থেকে তৃতীয়বার – এভাবে চতুর্থ, পঞ্চম, ষষ্ঠ – আরো কে জানে কতবার। এই এক হপ্তায় হিসেব গুলিয়ে গেছে। আর গোনার চেষ্টাই করছে না সে।
এখন বেশ বিরক্ত হয়ে জিনা ঘর থেকে বেরিয়ে আসতে যাচ্ছিল, হঠাৎ দেখল মায়ের খাটে ছড়ানো রাজ্যের পুরনো অ্যালবাম। খুব বাতিক আছে মায়ের। থেকে-থেকে সব আলমারির জিনিসপত্তর টেনে নামিয়ে আবার গোছানো। জিনা দেখতে পেলে হাঁকে – ‘টাইম পাস’, ‘টাইম পাস’। এখন কিন্তু বহুদিন পরে অ্যালবামগুলো দেখতে কেমন যেন ইচ্ছে করল নিজেরই। বসে পড়ল বিছানার ওপর। ছবির ওপরের পাতলা অয়েল পেপার ছিঁড়ে-ছিঁড়ে গেছে। সাবধানে ওল্টালো জিনা।
ইস, কবেকার সব অ্যালবাম। সাদা-কালো। রঙিন। মায়ের বিয়ের সময়ে সবে রঙিন ছবির চল হয়েছে। মা তখন এখনকার চাইতে আরো একটু রোগা। লম্বা চুল। মুখের ভাবে খানিকটা ছেলেমানুষি। ভালোমানুষি। নয়তো বিশেষ কিছু বদলায়নি। নিজেকে ধরে রাখার লুকোনো এক চেষ্টা আছে মায়ের। জিনা দেখেছে ভিতরে-ভিতরে তার আয়োজনও আছে যথেষ্টই। কিন্তু ঠোঁট-রেডি এক সংলাপও আবার আছে, – আমি বাবা এতসব পারিটারি না! যেন না পারাটাই বাঞ্ছনীয় আর গৌরবজনক। জিনার মনে হয় রূপচর্চা নিয়ে মা কেমন এক অপরাধবোধেও ভোগে। কেন রে বাবা! তার এই বুঝতে না পারাটাকেই কি জেনারেশান গ্যাপ বলে! জিনা ভেবেছে কখনো।
পাতা উলটে খানিক-খানিক থেমে যাচ্ছিল জিনা। সিমলায় বাধহয় কয়েকটা ছবি মায়ের। পুরীতে। মহাবালেশ্বরে। সমুদ্র-পাহাড়ের পটভূমিতে, ফুলবাগানে। তাজমহলের সামনে। কোনারকের চাকাটাকে পিছনে রেখেও বাঙালির চিরাচরিত সেই ছবি। সে শুনেছে, তার জন্মের আগে বাবা-মা অনেক ঘুরেছিল। সালোয়ার-কামিজ, জিন্স, টি-শার্ট পরা মা। একটা-দুটোতে লং স্কার্টও। তখন একটু যেন লজ্জা-লজ্জা ভাব। পোশাকে রকমারি রং। বাচ্চা রম্নরম্নদাদাকেও দেখা যাচ্ছে অনেক ছবিতে। ওই বয়সেই কী লম্বা! জিনা শুনেছে, বাবা-মা বাইরে গেলেই তাকে নিয়ে যেত সঙ্গে।
তাদের এক্সটেন্ডেড ফ্যামিলিতে কি বাবা কি মা, দুদিক থেকেই পুরম্নষ হলো সংখ্যালঘু সম্প্রদায়। একটাই মোটে দাদা, জিনার। ও-ই রম্নরম্ন। অনেক বড় তার চেয়ে। কিন্তু জিজ্ঞেস করো সে কী রকম দাদা হয়, তা বলতে গেলে ঢোঁক গিলে ভেবে-ভেবে বলতে হবে জিনাকে। আসলে ওর ঠাকুরমার কীরকম যেন বোনের ছেলের ছেলে বোধহয়। তবে তাতে কিছু যায় আসে না। ছোট থেকেই তাকে খুব কাছের বলেই দেখছে। প্রতি উইকএন্ডে তো আসতই। তাছাড়া লম্বা ছুটিতে এসে থেকেও যেত। খুব হিংসে করত তখন জিনা। সেসব গজগজানির সংলাপ মনে পড়ে এখনো।
‘ও কেন আমার চকলেট খাবে?’
‘ছিঃ মাম্, ওরকম কি বলতে আছে! তুমি তো জানো – সেই বলেছি না তোমাকে – ওর বাপী, মা সববাই আকাশের তারা হয়ে গেছে। আর কোনোদিনও ফিরবে না। কক্ষনো বলবে না কিন্তু ওর সামনে – দেখ, ও তো ছোট্ট একটা ছেলে – নিজের বাপীকে-মাকে না দেখে ওর কত কষ্ট হয় -’
ছোট আবার কোথায়! চোদ্দো বছর বয়স নাকি ওর! একটা আলমারির মতো লম্বা ছেলে, যে তাকে টুনটুনির বই আর স্নোহোয়াইটের গল্প পড়তে দেখলে নাক সিটকোয়, বার্বিডল নিয়ে খেলতে দেখলে ঠোঁট কুঁচকে ছিক্-ছিক্ আওয়াজ করে, তার
বাপী-মা থাকার দরকারটাই বা কী!
জিনা বলতে গিয়েও বলত না। ও তো কবে থেকেই জানে, শুধু ‘নটি গার্ল’রাই এরকম কথা বলে। ভাগ্যিস, ‘গুড গার্ল’রা এসব ভাবলেও কেউ জানতে পারে না!
অবশ্য ‘বাপী-মা না থাকার’ দুঃখ যে রম্নরম্নদাদার কোন জায়গাটায় আছে তাও বুঝতে পারত না জিনা। এখানে এলেই তো বেশ, তার বাবা আর মায়ের সঙ্গে হাসছে, গল্প করছে, স্ক্র্যাবল খেলছে, টিভিতে টেনিস ম্যাচ দেখছে, ক্রস ওয়ার্ড পাজ্ল করছে আর তাকে মোট্টে পাত্তা দিচ্ছে না। মা রান্নাঘর থেকে মুখ বার করে বলছে, – ‘রম্নরম্ন ফ্রিজে চকলেট আছে, যখন ইচ্ছে হবে খাস।’ আবার কখনো বলছে, – ‘দেখ তোর জন্য কেক বানালাম।’ মায়ের মুখে ঘাম। মুখে হাসিও। হাসলে টোল পড়ে গালে। লাল, কালো ছোট্ট-ছোট্ট ফুলের হাউজ কোট মায়ের গায়ে। – কী কষ্ট, কী কষ্ট তখন। জিনার দিকে দেখছেই না মা! জিনাও যে কত কেক ভালোবাসে! কিন্তু জিনা যেন এখন মায়ের সামনে নেই-ই। মা রম্নরম্নদাদার সঙ্গে কথা বলতে-বলতে অন্যমনস্কভাবে তার দিকে পেস্নট এগিয়ে দিচ্ছে। এক টুকরো কাটা কেক তাতে। জিনা না খেলেও যেন কিচ্ছু এসে যায় না!
লম্বা ছুটিতে এলে কখনো আবার মায়ের সামনে বসে, কী এক রকম অঙ্ক করত রম্নরম্নদাদা। জিনা সেই সময়ে শুনেছিল তাকে অ্যালজেব্রা বলে বুঝি! ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে দেখত। ক্ষুদি-ক্ষুদি a, b, c, d আর তাদের মাথার ওপর 1, 2, 3, 4 অদ্ভুত সব কা-। রম্নরম্নদাদা খাতার পাতায় চটপট করে যেত। ক্রমশ বড় থেকে ছোট হতে-হতে তবে শেষ হতো অঙ্ক। সেই অ্যালজেব্রা সংক্রামত্ম
হিংসে-মেশানো বিস্ময়ের কথা মনে পড়লে হাসি পায় এখন। জিনা ঠিক তখনই ঘ্যানঘ্যান করে সমানে বলে যেত, – ‘মা, আমার ক্রাফ্টের জন্যে গস্নসি পেপার চাই কিন্তু… কালকেই চাই… গস্নসি পেপার… অ্যাঁ…’
জিনার কানে যেত বাবার কাছে আড়ালে বলত মা, – ‘রম্নরম্নর মাথা কিন্তু খুব পরিষ্কার জানো। এত তাড়াতাড়ি ধরে নেয়। আর একদম ভোলে না।’
বাবা একটা বড় নিশ্বাস ফেলে বলত, – ‘আসল কথা, হেরিডিটি। জিন। আফটারঅল উপলদার ছেলে না। উপলদা ওয়াজ এক্সেপশনালি ব্রিলিয়ান্ট। তেমনি হ্যান্ডসাম। তুমি তো দেখইনি। ছবিতে অত বোঝা যায় না। এক সময়ে আমার আইডল ছিল। অথচ দেখো লোকটাকে ভূতে পেয়েছিল যেন তখন, নয়তো…’ – থেমে যেত। কথাটা আর শেষ করত না। আবার নতুন করে শুরম্ন করত, – ‘হয়তো অনেক সব পুরনো স্মৃতির কারণেই আমার মনে রম্নরম্নর জন্য অদ্ভুত একটা সফ্ট কর্নার আছে।’ মা একটু থেমে বলত, – ‘সত্যি। বড্ড দুর্ভাগ্য ছেলেটার। শুধুই কি কষ্ট! কতখানি লজ্জাও বলো…। এসব কথা কি আর চাপা থাকে। এখন তো বড় হয়েছে। বোঝে। আমার কাছে বলেছিল একবার। আমার যে কী অবস্থা তখন!’
সব পরিবারেই নানা গল্প থাকে। লুকিয়ে রাখা হয় তাদের। কিন্তু ইটের ফাঁক দিয়ে বট-অশ্বত্থের চারার মতো বেরিয়ে আসবেই তারা কোনো না কোনোভাবে। বড় হয়ে জিনা জেনেছে রম্নরম্নদাদার বাবা ইউনিভার্সিটির নামকরা ফিজিক্সের প্রফেসার ছিল; কিন্তু খুব খারাপ একটা সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েছিল। নিজেরই এক স্টুডেন্টের সঙ্গে। একেবারে চক্ষুলজ্জাহীন আর ভীষণ নিষ্ঠুর হয়ে উঠেছিল তখন। রম্নরম্নদাদার মায়ের যখন ক্যান্সারের টার্মিনাল স্টেজ, তখন সেই অর্ধেক বয়সের মেয়েটাকে নিয়ে দীঘা যাওয়ার পথে কার অ্যাকসিডেন্টে দুজনেই শেষ।
এসব মায়ের বিয়েরও আগের ঘটনা। রম্নরম্নদাদার তখন পাঁচ-ছ বছর বয়স। ঠাকুরমার কাছে বড় হয়েছে সে। আরো পরে, অনেকটা জিনার বাবা, মায়ের কাছেও। জিনা জ্ঞান হওয়া পর্যমত্ম নিজেদের বাড়িতে তার অবাধ আসা-যাওয়া দেখেছে। পরে সে হিসাব করে দেখেছে, তখনই ওইসব ঘটনার অনেকগুলো বছর কেটে গেছে। কিন্তু রম্নরম্নদাদার ওপর জিনার বাবার তো বটেই, মায়েরও অদ্ভুত এক মায়া। তারা তখন অবধি রম্নরম্নদাদার বিষয়ে খুবই সতর্ক রয়ে গিয়েছিল। যেন তার মনের মধ্যে ছোটবেলাকার সেই সব কষ্ট, লজ্জার স্মৃতির একটুখানি রেশও যদি থেকে যায় কোথাও, তবে নিজেদের নরম মনোযোগ আর আদর দিয়ে একেবারে মুছিয়ে দেবে তা।
সেই সময়কার চাপা হিংসা মিটিয়ে জিনার সঙ্গে রম্নরম্নদাদার ভাব হতে-হতে আরো অনেকগুলো দিন কেটেছে। এখন যথেষ্ট পাত্তা দেয় তাকে রম্নরম্নদাদা। কয়েক মাস আগেই একটা সারপ্রাইজ দিয়েছে চুপিচুপি। জিনা প্রথমে শুনেই চমকেও গিয়েছিল একটু। তারপর খুব এক্সাইটেড হয়ে উঠেছিল তাই নিয়ে; কিন্তু ব্যাপারটা আপাতত তাকে নিজের মধ্যেই রাখতে বলে দিয়েছে রম্নরম্নদাদা।
কিছুদিন আগে জিনার বিএসসির রেজাল্ট বেরোনোর পরে তাকে ট্রিট দিতে সিসিডিতে নিয়ে গিয়েছিল। সেখানে আবার এক কা-! সৌম্যজিৎ, জোনাকি, রম্নবিকদের সঙ্গে দেখা। ফ্রেঞ্চ ক্লাসের নতুন বন্ধু সব। রম্নরম্নদাদাকে চেনে না তারা। সিক্স টু হাইটের রম্নরম্নদাদাকে সঙ্গে দেখে, ওরা ভেবেই নিয়েছে, জিনার সস্নাইটলি এজেড বাট ভীষণ হ্যান্ডসাম বয়ফ্রেন্ড। কিছুতেই বিশ্বাস করানো যায় না। জোনাকি চাপা গলায় বলল, – ‘আরে বস, লোকে বয়ফ্রেন্ডকে কাজ্ন বলে চালাত সে… ই লাস্ট সেঞ্চুরিতে। আর তুই অ্যাখনোওওও – ছ্যা-ছ্যা – একটু গাট্স নেই… -’
রম্নরম্নদাদা নিশ্চয় বুঝতে পেরেছিল। ফেরার পথে গোঁফের ফাঁক দিয়ে যেভাবে মুচকি হাসছিল। পরে জিনা, হি-হি হাসি আর ‘জানো তো মা’ সহযোগে সেই কথা বলতেই, মা চটে লাল। –
‘কী করে ভাবল ও এমন! ছি-ছি। অত বড় দাদা। রম্নরম্নর কত খারাপ লাগল। এক্কেবারে জঘন্য একটা মেয়ে। ওর সঙ্গে মেশার দরকারটা কী তোর!’ জোনাকির সম্বন্ধে এইসব মমত্মব্য করে, মা এমন ওভার রিঅ্যাক্ট করল যে, বিরক্ত লাগছিল জিনার। তারপরই ফতোয়া দিলো, – ‘আর এভাবে একলা বেরোস না রম্নরম্নর সঙ্গে বুঝলি। কে আবার কোনদিন না জেনে আরো খারাপ কিছু কথা বলে বসবে।’
জিনা বেশ বুঝতে পারে, মায়ের অবস্থানটা পরিস্থিতির সঙ্গে-সঙ্গে আচমকা বদলে যায় থেকে-থেকে। কখনো মধ্যযুগ, কখনো ঊনবিংশ শতক কখনো আবার পোস্ট মডার্ন, তাই মায়ের কথাকে কখন পাত্তা দিতে হয় বা হয় না এক্কেবারে চুপচাপ মেপে ফেলতে শিখে গেছে ও।
অ্যালবামের পুরনো ছবি দেখার ফাঁকে-ফাঁকে জিনার এইসব ভাবনার মধ্যে কখন যেন মায়ের মোবাইলি সংলাপ শেষ হয়ে গিয়েছিল।
জিনা শুনলো, মা এখন ভারি আবেগ দিয়ে খোলা গলায় কবিতা বলছে, – যেমন আছ তেমনি এসো আর কোর না সাজ, বেণী হয় এলিয়ে রবে, সিঁথি না হয় বাঁকাই হবে, নাই-বা হোল পত্রলেখায় সকল কারম্নকাজ।’
মিশরভ্রমণের পর থেকে সারাদিনই দারম্নণ মুডে থাকছে মা ইদানীং। আর তার মানেই ফাঁকা বাড়িময় বয়ে যাবে মায়ের ভরাট গলায় কবিতার ঢেউ। জিনা বিশেষ কবিতা পড়ে না। কিন্তু ছোট্ট থেকে মায়ের মুখে শুনে অনেক কবিতার ভগ্নাংশ মুখস্থ হয়ে গেছে। রবীন্দ্রনাথ, জীবনানন্দ। শক্তি, সুনীলও। – ও জানে, – ভ্রূ পলস্নবে ডাক দিলে দেখা হবে চন্দনের বনে, ভারি ভাললাগার লাইন মায়ের।
এখন অচেনা শব্দটার মানে জানতে চাইল। ‘পত্রলেখা কী গো মা?’
‘সে এক ভারি রোমান্টিক ব্যাপার। বুঝলি? পুরাকালে মেয়েদের বুকের ওপরে আঁকা হতো চন্দন আর কুমকুমের নকশা। অনেক সময়ে আবার প্রেমিকরাই এঁকে দিত।’ – মা হাসছে। সে মায়ের অল্পবয়সের সমত্মান। খুব সহজেই বন্ধু হয়ে উঠেছে তারা। জিনা দেখছে সাজানো ঝকঝকে দাঁত আর গালের টোল নিয়ে মা এখনো যেন পঁচিশ বছর আগেকার ছবিগুলো থেকে খুব বেশি দূরে নয়। আজকাল রম্নরম্নদাদার তাদের বাড়িতে আসা-যাওয়া অনিয়মিত। হবেই। অফিসে কত উঁচু পোস্ট এখন। করপোরেট হাউজে খুব খাটায়। মাসের অনেকটা সময় পৃথিবীর এ-প্রামত্ম থেকে ও-প্রামত্ম চষে বেড়ানো। তবে জিনাই শুধু জানে, ব্যসত্ম থাকার কারণ শুধু ওটা নয়। কিন্তু ইজিপ্ট থেকে ফেরার পরেও দুটো উইকএন্ড এ-বাড়িতে
আসেনি বলে মা সেদিন ফোনে খুব বকেছে। তাই বোধহয় এই রোববার সকাল থেকেই সে হাজির। তার পেস্নটে পুর-ভরা অমলেট তুলে দিতে-দিতে মা ঠোঁট কুঁচকে হঠাৎ বলল, – ‘এক্কেবারে ইউজলেস!’ মিশর ভ্রমণ বৃত্তামেত্মর শেষে অন্য টপিক এবারে। জিনা নড়েচড়ে বসল।
‘কে কে?’ – চমকে ওঠার ভান করল রম্নরম্নদাদা।
‘তুই। আবার কে?’
‘কেন কেন কেন?’ – এবার রম্নরম্নদাদার গলায় নকল ভয়।
‘শোন রম্নরম্ন, তুই তো আর ছেলে নোস। এক্কেবারে গোঁফ-দাড়ি গজানো পুরোপুরি একটা লোক হয়ে গেছিস…’
‘সে কি আজকে হয়েছে!’ – মাঝপথে টিপ্পনী কাটলো বাবা।
‘হ্যাঁ, অথচ এখন পর্যমত্ম দেখো একটা ফিয়ন্সে জোটাতে পারল না। ছ্যা-ছ্যা-ছ্যা…’ – বাবাকে সালিশি মেনে কষে ছিছিক্কার করে মা। সেই মার্কামারা মুচকি হাসল রম্নরম্নদাদা গোঁফের ফাঁকে। একবার তাকালো জিনার দিকে। চোখ দিয়ে আশ্বসত্ম করল জিনা। বলবে না। মোটেই বলবে না সে। মা বহুবার দুপুরে খেয়ে যাওয়ার কথা বললেও করম্নণ মুখ করে, – ‘সত্যি হবে না জানো… এক্ষুনি বাড়ি গিয়ে কালকের প্রিপারেশান আবার… ভোর সাড়ে চারটের ফ্লাইট -’ জিনা ছোট্ট করে জিভ ভ্যাঙচালো বড়দের চোখ এড়িয়ে। রম্নরম্নদাদার এসব কথার অর্ধ সত্যতা বেশ ধরে ফেলতে পারে সে আজকাল।
জিনার খুব ভালো লাগে দীপাকে। ময়লা রং। ছোটখাটো গড়ন। অসম্ভব মিষ্টি মুখখানা। বয়সের চাইতে অনেক ছোট দেখায়। রম্নরম্নদাদার কলিগ। প্রথম আলাপ করিয়েই রম্নরম্নদাদা বলে দিয়েছিল, – ‘অ্যাই এক্ষুনি কিন্তু বলবি না কাকু-কাকিমাকে।’
‘কেন রম্নরম্নদাদা কেন? ভীষণ খুশি হবে ওরা। মা তো এখন থেকে তোমার বিয়ের ছুতোয় মার্কেট সার্ভে শুরম্ন করে দেবে।’
রম্নরম্নদাদা তবু রাজি হয়নি। খুব ইতসত্মত করেছিল। খালি বলছিল, – ‘পরে-পরে। এখন নয়। একদম না।’
অনেকগুলো মাস কেটে গেছে তারপরে। জিনা জানে, ওরা ফাইনাল ডিসিশান নিয়ে নিয়েছে নিজেদের মধ্যে। তবু কাউকে জানায়নি এখনো রম্নরম্নদাদা।
কিন্তু যে-কথা ফাঁস করার ইচ্ছে, তা দিনের পর দিন চেপে রাখতে হলে মেয়েদের দমবন্ধ হয়ে আসে। সেই কথাটাই প্রকাশ করার হাজার যুক্তির খোঁজ পড়ে ভিতরে-ভিতরে। বিশ্বাসঘাতকতা-টাতকতা কথার দাম ইত্যাদি ভাবল বটে জিনা দু-চারবার। কিন্তু এ তো আর কয়েকদিন পরে রম্নরম্নদাদার জানাতে হবেই বাবা-মাকে। আর এত লিবারেল, এত ফ্রেন্ডলি ওরা। কেনই বা জানাচ্ছে না! একটু রাগও হচ্ছে জিনার। তাই পরের দিন কলেজ থেকে ফিরে, – ‘মা… রম্নরম্নদাদার একটা কথা বলব – তোমাকে, পিস্নইজ আর কাউকে বলো না যেন…’ বলে শুরম্ন করতে গেল।
কিন্তু সেকেন্ডের মধ্যে অস্বাভাবিক ফ্যাকাশে হয়ে যায় মায়ের মুখ। কী, কী করেছে রম্নরম্ন? চেরা গলায় চাপা আর্তনাদ করে ওঠে মা। বড়-বড় চোখে তাকিয়ে থাকে। মায়ের চোখে ভীষণ ভয়। রকম দেখে জিনা হেসে ফেলে।
অনেক রাত এখন। গভীর রাত। আবছা অন্ধকারের দিকে তাকিয়ে শুয়ে থাকে জিনা। ঘুম নেই। আগে কখনো না-দেখা কী অদ্ভুত রাগ দেখেছিল তখন মায়ের মুখে। হিংস্র রাগ। অশালীন সব শব্দ। একেবারেই স্বভাবছাড়া। ‘ছিপে গাঁথা’ ‘টোপ ফেলা’ এগুলো দীপার সম্বন্ধে ব্যবহার করেছিল মা। জিনার অচেনা হয়ে যাওয়া মা! ‘মা তুমি দীপাকে দেখোনি তাই এরকম বলছ। দেখলে বুঝবে কত ডিসেন্ট ও। আর রম্নরম্নদাদাই ওকে অ্যাপ্রোচ করেছিল।’ – মরিয়া হয়ে বলেছিল জিনা। তখন মায়ের চোখের কোণ বেয়ে নেমে এসেছিল অপমানের রাগি জল।
‘আমাকেও বলল না রম্নরম্ন। ছিঃ-ছিঃ। অথচ আমি দিনের পর দিন কীভাবে দেখাশোনা করেছি ওকে। ওর পছন্দের খাবার… সমসত্ম শখের জিনিস ওর… জয়েন্টের রেয়ার বইয়ের জন্যে দুপুররোদে কলেজ স্ট্রিট দৌড়োনো… প্রাণপাত করেছি… সমসত্ম কথা ছিল আমারই সঙ্গে। টিন এজের অদ্ভুত-অদ্ভুত সব প্রবলেম। আমিই তো গাইড করতাম। আবার সমবয়সী বন্ধুর মতো গল্পের ছলে জেনে নিতাম কাদের সঙ্গে মেশে। আর আমারই কাছে কিনা লুকোলো! আমারই কাছে! ছি-ছি!’ মায়ের নাকের পাটা ফুলে-ফুলে উঠছিল। জোর-জোর নিশ্বাস পড়ছিল। তারপর বলে উঠেছিল, – ‘হবেই তো। হেরিডিটি, জিন এসব কি আর মিথ্যে? রক্ত যাবে কোথায়? যা গল্প শুনেছি ওর বাবার… তেমনি… ঠিক তেমনি… হয়েছে ও’ – জ্বলমত্ম চোখে তাকিয়ে হাঁপাচ্ছিল মা। শক্ত হয়ে উঠেছিল চোয়াল।
জিনার তখন মনে পড়েছিল প্রায় ভুলে যাওয়া রম্নরম্নদাদার বাবার গল্প। কিন্তু সে তাদের মধ্যে কোনো মিল খুঁজে পাচ্ছিল না। মানুষের যে খুব ব্যক্তিগত কিছু জায়গা থাকে। যে যত ঘনিষ্ঠই হোক না কেন, সব সময়ে সব কথা বলা যায় না। জেনারেশান গ্যাপ, বয়স এগুলোও ঘটনা। মাকে এসব বোঝাতে-বোঝাতে ক্লামত্ম হয়ে পড়ছিল জিনা। তারপর এক সময়ে কেমন নির্জীব হয়ে যায় মা। একেবারে চুপ।
গভীর রাত এখন। ঘুম চলে গেছে। অন্ধকারের দিকে খোলা চোখে তাকিয়ে থাকে জিনা। টের পায় মা বেরিয়ে এসেছে নিজের ঘর থেকে। পাশের বারান্দায় এখন একলা দাঁড়িয়ে আছে মা। একটি পাতলা দেয়ালের আড়াল মাত্র। একটানা চাপা কান্না শুনতে পায় ও। আর হঠাৎই গায়ে কাঁটা দিয়ে ওঠে। জিনার সামনে ছুটে আসে নাইলের ধারা। দূর থেকে দেখা, ক্ষীণ সেই জলরেখা যত কাছে আসে, ক্রমাগত আরো-আরো বিসত্মীর্ণ হয়ে উঠতে থাকে, জিনা আর মায়ের মাঝখানে। ভয়ংকর গর্জনশীল। কিছুতেই তাকে পেরিয়ে সে পৌঁছতে পারে না মায়ের কাছে। চরাচর এখন জলে জলময়। মহাপস্নাবনে ভেসে গেছে দেশ ও কাল।
ফিরে-ফিরে আসে আদিম পুরাণ। এই তো সেদিন শুনেছিল। বারবার। কতবার। বিরতিতে, অন্যমনস্কতাতেও, শুনেছিল।
হাথোর ও হোরাসের উপাখ্যান। হোরাস… পক্ষীমুখী আকাশ-দেবতা হোরাস। ওসিরিস আর আইসিসের সমত্মান। ওসিরিসের ভাই সেথ হত্যা করতে চায় তাকে। জননী আইসিস, শিশুপুত্রকে হাথোরের হাতে তুলে দেন। তাকে সেথের বিষদৃষ্টি থেকে লুকিয়ে রাখতে অনুনয় করেন। জীবন ও উর্বরতার দেবী হাথোর। প্রেম ও সৌন্দর্যের দেবী হাথোর। গর্ভাধানের দেবী, হোরাসের পালিকা মাতা হাথোর। তাই বুঝি সুদূর অতীতেই একদিন, হাথোর শব্দের অর্থ হয়ে ওঠে, হোরাসের আশ্রয়। সেই আশ্রয়ে বাস করে, দিনে-দিনে পূর্ণ যুবক হয় শিশু হোরাস। আর তারপরে এক তীব্র রাত আসে। উত্তাল রাত। যে-রাতে আচমকা বদলে যায় পালিকা মাতার সঙ্গে তার সম্পর্কের সমীকরণ। মাতৃসত্মনে, রক্তচন্দনের পত্রলেখার উন্মত্ত আঁকিবুঁকি কাটে মুহূর্তগুলি। উঠে আসে সত্মব্ধ ইতিহাস। মানুষ-মানুষীর যাপিত জীবনের গহন ইতিকথা যত।
জিনা কোনো গোপন অ্যালবামের ছবির মুখেতে দেখে, হাজার-হাজার বছর আগের এক সুন্দরী নারীকে। পরিণত যৌবনা। পুরাণকার ক্রমশ সাজিয়ে তোলেন তন্বী সেই মানুষীকে। রক্তবসন পরান তাকে। মাথায় পরান আশ্চর্য এক শিরোভূষণ। দুটি বাঁকা শিঙের মাঝখানে জ্বলজ্বল করে, রক্তাক্ত ভয়াল চাঁদ! কণ্ঠে, বাহুতে, প্রকোষ্ঠে একে-একে পরিয়ে দেন আরো কত মহার্ঘ আভরণ। সবশেষে চোখ থেকে, ঠোঁট থেকে তার নিজস্ব অনুভবের বিচিত্র হাসি-কান্না আর্তিগুলিকে নিঃশেষে মুছে দিয়ে আঁকেন শুধু নিরেট মহিমা। তখনই যুগযুগামেত্মর পটভূমিতে স্থির আসনে অধিষ্ঠিত হয় সেই নারী। আর এক নিমেষে হয়ে ওঠে দেবীকল্পা।