জীবনের একটা বড় সময় সুইডেনে কাটিয়ে রাশেদুন্নবী চৌধুরী বা রাশেদ চৌধুরী বলতে গেলে প্রৌঢ়ত্বের শেষ বেলায় দেশে ফিরেছেন। বর্তমানে ওর বয়স প্রায় ষাট ছুঁইছুঁই। আর চুলে সাদা-কালোর মিশ্রণ তো ওর বেশ কয়েক বছর আগে থেকেই শুরু হয়েছে। তবে মোটামুটি ভালো শারীরিক গড়নের কারণে ঢাকা শহরে ঘুরে ঘুরে নিজের কাজকর্ম রাশেদ চৌধুরী এখনো নিজেই করতে পারেন। আসলে ইউরোপে দীর্ঘদিন থাকার ফলে নিজের কাজ নিজে করার অভ্যাসটা ওর গড়ে উঠেছিল। বহু বছর আগে শান্তিনগরে কেনা ওর ফ্ল্যাটটাতে রাশেদ চৌধুরী বর্তমানে একাই থাকেন। সুইডেনের সব পাট চুকিয়ে তিনি এখন পুরোপুরিই দেশে ফিরে এসেছেন। কেবল মাঝে মাঝে ব্যাংকে গিয়ে ও-দেশ থেকে পাঠানো পেনশনের টাকাটা তোলেন। টাকার অঙ্কটা খুব বেশি নয়। তবে সুইডেনের তুলনায় বাংলাদেশে খরচ তো অনেক কম। ফলে অর্থের অভাব ওর নেই। রাশেদ চৌধুরী একা থাকেন কারণ বিবাহ, সন্তান – জীবনের এ-পর্বগুলো উনি সুইডেনেই মিটিয়ে এসেছেন। সুইডিশ স্ত্রী আনার সঙ্গে তার ডিভোর্স হয়েছে তা প্রায় বছর দশেক। একমাত্র মেয়ে ইসাবেলাকে নিয়ে আনা স্টকহোমে পৃথক থাকে। স্ত্রীর সঙ্গে তেমন যোগাযোগ আর না থাকলেও তাদের তরুণী কন্যা ইসাবেলার সঙ্গে রাশেদ সাহেবের এখনো কিছুটা যোগাযোগ রয়েছে। প্রতিবছর নববর্ষে বা ‘বাবা দিবস’-এ মেয়ের কাছ থেকে কার্ড পান রাশেদ চৌধুরী। মেয়েটাকে বেশ মিস করেন তিনি।
তবে স্ত্রী না থাকলেও নারীসঙ্গ রাশেদ চৌধুরীর জীবনে রয়েছে। বরাবরই মোটামুটি সুস্বাস্থ্যের অধিকারী তিনি। থাকেন ঢাকা শহরে নিজস্ব ফ্ল্যাটে। ব্যাংক ব্যালান্সও রয়েছে বেশ। ফলে এ-গরিব দেশে নারীদেহ পাওয়া তার জন্য কঠিন কিছু ছিল না। তবে তার বরাবরই পছন্দ অল্পবয়সী তরুণী মেয়ে। অবশ্য দেখা গেল সেটা জোগাড় করাও ঢাকা শহরে তেমন কঠিন কিছু নয়। বিশেষ করে তার পুরনো বন্ধুদের, যাদের সঙ্গে তিনি সন্ধ্যায় ধানমন্ডি বা গুলশানের কোনো রেসেত্মারাঁয় বসে আড্ডা দেন, তাদের অনেকেরই যখন দু-একজন সুগার ডটার রয়েছে। ঢাকার বহু অল্পবয়সী মেয়েরই ইদানীং টাকার খুব প্রয়োজন। আর নির্ঝঞ্ঝাট একজন প্রৌঢ় সিঙ্গল, যার নিজস্ব নিরাপদ ফ্ল্যাট আছে, যিনি মেয়েদের জন্য অর্থ ব্যয় করতে দ্বিধা করেন না, এরকম একজন সুগার ড্যাডি পেতে এই ধারার তরুণী মেয়েরা আগ্রহী হবে বইকি!
বন্ধুদের মাধ্যমে বিভিন্ন সময়ে দু-তিনজন সুগার ডটার পেয়েছিলেন রাশেদ চৌধুরী। তবে তারা সবাই দেখা গেল বড্ড বেশি অর্থলোলুপ। ঘরে ঢুকে শারীরিক সম্পর্কের আগেই বলা শুরু করে ‘অমুক শপিংমলে একটা পাকিসত্মানি ড্রেস দেখে এসেছি। দাম মাত্র আট হাজার। রংটা আমাকে খুব মানাবে।’ কিংবা বলে ‘এক সেট আর্টিফিশিয়াল মুক্তার মালার সেট পাওয়া যাচ্ছে। গুলশানের অমুক দোকানে। দাম মাত্র বাইশ হাজার।’ রাশেদ চৌধুরী অচিরেই বুঝলেন যে, তার চেয়ে তার টাকার প্রতিই এসব মেয়ের আগ্রহটা বেশি। অবশ্য এটাও ভাবতেন যে, সেজন্য কি মেয়েগুলোকে দোষ দেওয়া যায়? নাকি রাশেদ অন্য কিছু আশা করতেন? প্রায় নিজের মেয়ে ইসাবেলার বয়সী এসব মেয়ের কাছ থেকে কি অবচেতন মনে তিনি স্নেহ-মমতার কোনো সম্পর্ক আশা করতেন? আর সেরকমটা পেতেন না বলে প্রতিবার এ-ধরনের কোনো মেয়ে দুপুরটা তার সঙ্গে কাটিয়ে বিকেলে যখন ওর ফ্ল্যাট থেকে চলে যেত, একটা বিষণ্ণতা ছড়িয়ে পড়ত তার দেহ-মনে। হয়তো বারান্দার চেয়ারে একা বসে অন্যমনস্কভাবে বাইরের প্রকৃতি বা রাসত্মাঘাটে মানুষের চলাফেরা দেখতেন। তবে মানসিক স্বস্তি পেতেন না তেমন।
সম্প্রতি রিয়া নামে একটি মেয়ের প্রতি রাশেদ চৌধুরী কিছুটা আসক্ত হয়ে পড়েছিলেন। কারণ মেয়েটি
টাকা-পয়সার ব্যাপারে কখনো বাড়তি কিছু চাইত না। অল্পবয়সী মেয়েটি বলত, সে শহরের নামকরা একটি ইংরেজি মাধ্যম কলেজে পড়ে। অবশ্য এ-লাইনে দীর্ঘ অভিজ্ঞতার কারণে রাশেদ চৌধুরী জানেন, ‘রিয়া’ যেমন মেয়েটার আসল নাম নয়, মেয়েটি তেমনি ওই নামকরা ইংরেজি মাধ্যমের কলেজেও পড়ে না। কারণ ওই কলেজটি ঢাকার এলিট সমাজের মেয়েদের একটি কলেজ। মেয়েটার ইংরেজি শব্দের জ্ঞান ও উচ্চারণ শুনে রাশেদ চৌধুরী সহজেই বুঝে ফেলেন যে, মেয়েটা কোনো নিম্নমধ্যবিত্ত পরিবারের এবং পড়াশোনা সে বাংলা মাধ্যমেই করেছে। হয়তো স্কুল ফাইনালও পাশ করেনি। তবে মেয়েটার এটুকু মিথ্যাচার রাশেদ চৌধুরী মেনে নিয়েছিলেন। কারণ মেয়েটির ব্যক্তিজীবনের ব্যাপারে তো তার কোনো আগ্রহ ছিল না। বরং রিয়া মেয়েটিকে তার সারল্যের জন্য তিনি কিছুটা পছন্দই করতেন। তার পেশার তুলনায় বলতে হবে রিয়া বেশ সরলই ছিল। রাশেদ সাহেবকে যে-সময় দিত ঠিক সে-সময়টাতে আসত। আর কখনোই তাকে অপেক্ষায় বসিয়ে রাখত না। যতক্ষণ সময় দেওয়ার কথা ততক্ষণই সময় দিত। তাড়াহুড়ো করত না এবং যে-টাকাটা তার প্রাপ্য, সেটা নিয়ে নীরবে চলে যেত। কখনো কোনো বাড়তি টাকা বা এটা-ওটা কেনার জন্য কোনো আবদার করত না। বরং যতক্ষণ থাকত সে রাশেদ সাহেবকে খুশি করার আপ্রাণ চেষ্টা করত। কেবল শারীরিকভাবে নয়, মানসিকভাবেও। নানা রকম গল্পও করত।
তবে সতেরো-আঠারো বছরের একটা মেয়ের কতটুকুই বা জীবনাভিজ্ঞতা! ফলে রিয়ার গল্পগুলো থাকত খুব সীমিত বিষয় নিয়ে। দীর্ঘদিন বিদেশে থাকা এবং তার সামাজিক অবস্থানের কারণে এ-নগরের সাধারণ মানুষের সঙ্গে রাশেদ চৌধুরীর তো খুব একটা মেলামেশা ঘটত না। ফলে রিয়ার বলা নানা ঘটনার মধ্য দিয়ে তিনি দেশের বর্তমান অবস্থা ও নানা বিষয় সম্পর্কে অনেক কিছু জানতে পারতেন। রিয়ার সঙ্গে তাই তিনি গল্প করতে ভালোবাসতেন।
তবে রিয়া নিজের সম্পর্কে বলত খুব কম। তার এসব ভালো আচরণের জন্য রাশেদ চৌধুরী ভেবেছিলেন তাকে একবার কাঠমান্ডু বা কক্সবাজারে বেড়াতে নিয়ে যাবেন। বাড়তি পেমেন্ট পাবে। কিন্তু তাকে অবাক করে দিয়ে রিয়া রাজি হয়নি। আর তখনই রাশেদ সাহেব জানতে পারেন যে, মেয়েটার বাবা নেই। মোহাম্মদপুরে তাদের বাসাতে অসুস্থ মাকে নিয়ে সে থাকে। মাকে নিয়মিত ওষুধ রিয়াকেই খাওয়াতে হয়। একটা ছোট ভাই আছে যে স্কুলে পড়ছে। ভাইটা অবশ্য জানে না যে, তার বোনটা কীভাবে টাকা উপার্জন করে। ওই ভাইটাকে নিয়েই তাদের
মা-মেয়ের অনেক স্বপ্ন যে, ভাইটা একদিন লেখাপড়া শিখে বড় হবে এবং তাদের দেখবে। রিয়াকে প্রতিদিন বাড়িতে রান্নাবান্নার সব কাজ শেষ করে আর অসুস্থ মাকে দেখাশোনা করে তবেই বাইরে বের হতে হয়। ফলে তার পক্ষ দু-তিনদিনের জন্য বাড়ি ছেড়ে ঢাকার বাইরে থাকাটা সম্ভব নয়। এবং তখনই রাশেদ চৌধুরী মনে করতে পারলেন যে, রিয়া শুধু দুপুরবেলায় আসতে চাইত এবং সন্ধ্যার পর কখনো থাকত না।
আর রিয়া যখনই আসত রাশেদ সাহেবের বিছানা ও ঘরটা গুছিয়ে দিয়ে যেত। রাশেদ সাহেব লক্ষ করেছেন যে, ঘর গোছানোর ব্যাপারে অত অল্পবয়সী মেয়েটার বেশ ভালো দক্ষতা রয়েছে। রিয়া একদিন রাশেদ সাহেবের মুখে খোঁচা খোঁচা দাড়ি দেখে নিজেই রেজার দিয়ে খুব যত্ন করে দাড়িটা শেভ করে দিলো। দাড়ি কাটার সময় রিয়া এটা-ওটা বলছিল। একসময় বলল, ‘আববু যখন বেঁচে ছিল আমি মাঝে মাঝে আববুকে শেভ করে দিতাম।’ রিয়ার সঙ্গে কাটানো ওইসব মুহূর্ত রাশেদ সাহেব খুবই পছন্দ করতেন। তাই রিয়ার সঙ্গে আর্থিক লেনদেনের ব্যাপারটা তিনি তেমন বড় করে দেখতে চাইতেন না। সুগার ডটারের বদলে মনে করতেন, মেয়েটা যেন ওর ‘ডটার-ই’। রিয়াও একদিন বলেছিল, ‘বাবাকে তো ছেলেবেলার পর খুব বেশি পাইনি।’ এ-কথা বলার পর কিছুটা লাজুক হেসে বলেছিল, ‘আর আপনি তো আমার ড্যাডিই।’
এরকমই চলছিল। কিন্তু রাশেদ সাহেবের সাজানো-গোছানো জীবনে যে হঠাৎ এত বড় একটা বিপর্যয় নেমে আসবে তা তিনি ভাবতেই পারেননি। আর তার জন্য তার ঘনিষ্ঠ বন্ধু মোখলেসকে তিনি কখনোই ক্ষমা করতে পারবেন না। কারণ মোখলেসই তাকে প্রায় হাতে ধরে শেয়ার কেনাবেচার জগতে ঢুকিয়েছিল। সে-সময়টায় শেয়ার কিনলেই লাভ হতো। দশ হাজার টাকার শেয়ার কিনলে পরের সপ্তাহেই বিশ হাজার টাকা হাতে এসে যেত। এত লাভ পৃথিবীর আর কোন ব্যবসায় আছে! ফলে শেষের দিকে রাশেদ সাহেব প্রায় পাগলের মতো শেয়ার কেনা শুরু করলেন। প্রথমে ব্যাংকে যা জমা টাকা ছিল তার সবটা উঠিয়ে তিনি শেয়ার কিনলেন। কিন্তু মনে হলো সেটা যথেষ্ট নয়। ফলে বৃদ্ধ বয়সের নিরাপত্তা হিসেবে যে টাকাটা এফডিআর হিসেবে দীর্ঘমেয়াদি খাতে জমা রেখেছিলেন সেগুলোও ভাঙিয়ে শেয়ার কিনে ফেললেন। সেই দিনগুলোতে শেয়ার কেনা যেন একটা নেশার মতো হয়ে গিয়েছিল রাশেদ সাহেবের। এত লাভ যখন হচ্ছে, তখন তার শান্তিনগরের ফ্ল্যাটটা বন্ধক দিয়ে ব্যাংক থেকে বড় অঙ্কের একটা ঋণও নিয়ে ফেললেন। তার চিন্তাটা ছিল শেয়ার থেকে আরো কিছু লাভ হলে গুলশান-বনানীর দিকে
ঝাঁ-চকচকে একটা আধুনিক ফ্ল্যাট কিনবেন। আর এর পরের সপ্তাহেই ঘটল ঘটনাটা। ভয়াবহ এক ব্যাপার! তবে হয়তো একেবারে অপ্রত্যাশিত ছিল না। কারণ শেয়ারবাজারের যারা ঘাগু কিছুদিন ধরেই তারা বলাবলি করছিলেন যে, যে-কোনো একদিন শেয়ারবাজারের এই রমরমাটা ধসে পড়তে পারে। কথাটা বাতাসে চাউর ছিল। কিন্তু রাশেদ সাহেব সেটা বিশ্বাস করতে চাননি। আসলে মানুষ কি নিজের কাছে যা অপ্রিয় এমন কোনো সত্য সহজে বিশ্বাস করতে চায়? এক রোববার থেকে হঠাৎ শুরু হলো শেয়ারের দরপতন। আর সে-পতন চলতেই থাকল। যেন দ্রুতগতির একটা লিফট নিচে নামছে তো নামছেই। রাশেদ সাহেবসহ হাজার হাজার মানুষ, যারা
বুঝে-না-বুঝে তাদের সর্বস্ব দিয়ে শেয়ার কিনেছিলেন, তারা সকাল-বিকেল শেয়ারবাজারের অফিসে আর ব্যাংকে ছোটাছুটি করতে থাকলেন। কেউ কেউ সারাদিনই শেয়ার মার্কেটের সামনের রাস্তায় বসে থাকতেন কোনো সুখবরের আশায়। কিন্তু না, কোনো ভালো খবর নেই। তারা মনে মনো আশা করতেন, শেয়ারের পতনের এই লিফটটা নিশ্চয়ই কোনো না কোনো একটা তলায় এসে একসময় থেমে যাবে; কিন্তু কেউ ভাবতেই পারেনি যে, এ-লিফটের নিচে নামাটা আর কখনোই থামবে না। কিংবা শেষ হবে এক্কেবারে পাতালে গিয়ে! শেয়ারের দাম কমতে কমতে ক্রমে প্রথমে ক্রয়মূল্যে তারপর অর্ধেকে, তারপর সিকিতে এবং শেষমেশ শেয়ারগুলো সব অর্থহীন কাগজে পরিণত হয়ে গেল।
হাজার হাজার মানুষ সর্বস্ব হারিয়ে পথে বসে গেল। দু-একজন তো আত্মহত্যাই করে ফেলল। শেয়ারের পতনের পর কয়েকটা দিন রাশেদ সাহেব যেন একটা ঘোরের মধ্যে ছিলেন। ঠিক বুঝতেই পারছিলেন না কি থেকে কি হয়ে গেল! প্রথম কয়েকদিন মোখলেস ফোনে নানা রকম আশ্বাসবাণী শোনাত। অবশ্য সে যে নিজেও খুব বিপদে রয়েছে সেটা বলত। তারপর একসময় থেকে মোখলেস আর রাশেদ সাহেবের ফোন ধরত না।
রাশেদ সাহেব মেনে নিতেই পারছিলেন না যে, মাত্র অল্প কয়েকদিনে কি করে তিনি একেবারে সর্বস্বান্ত হয়ে গেলেন! জমা টাকা তো সব গেছেই। নিজের এত যত্নে সাজানো ফ্ল্যাটটাও গেল। তারপরও ব্যাংকের কাছে রয়ে গেছে একটা মস্ত বড় অঙ্কের ঋণ। জীবনে এই প্রথম রাশেদ সাহেব বুঝলেন কপর্দকশূন্য হওয়া কাকে বলে! একসময়ের নিকট বন্ধুরাও আস্তে আস্তে তার কাছ থেকে দূরে সরে যেতে থাকল।
রিয়া অবশ্য আসত। আর আসতে না পারলেও টেলিফোন করত। রাশেদ সাহেবকে নানা সান্ত্বনা দিত। সে আরো বেশি আসতে চাইত। কিন্তু রাশেদ সাহেবের তখন এমন অবস্থা যে, তার প্রিয় এই সুগার ডটারটাকে সামান্য অর্থও দিতে পারার অবস্থায় তিনি তখন আর ছিলেন না। রিয়া অবশ্য এমনও বলেছে, ‘আপনি যা দিতেন তার অর্ধেক দিয়েন। তবু আমি আসি।’ কিন্তু অল্পবয়সী এই মেয়েটাকে কে বোঝাবে যে, সেটুকু টাকাও তো রাশেদ সাহেবের কাছে এখন আর নেই! কিছুদিন পর রাশেদ সাহেব বলতে গেলে রিয়ার কাছ থেকে নিজেকে বিচ্ছিন্নই করে ফেললেন। গেটে বলা ছিল, ওই মেয়েটাকে যেন আর ঢুকতে দেওয়া না হয়। একদিন দুপুরে রিয়া নাকি এসে ফিরেও গেছে। ফোনও করেছে কয়েকবার। কিন্তু রাশেদ সাহেব আর মেয়েটার ফোন ধরেননি। এর প্রায় মাস ছয়েক পরের কথা। সেদিন রাশেদ সাহেব ধানমন্ডির আরা শপিংমলে গিয়েছিলেন। না কিছু কিনতে নয়। জিনিস কেনাকাটা তিনি অনেকদিন আগেই ছেড়ে দিয়েছেন। সে আর্থিক অবস্থা এখন তার আর নেই। শপিংমলটায় গিয়েছিলেন পুরনো এক বন্ধুর সঙ্গে দেখা করতে। বন্ধুটা কিছু টাকা কর্জ দেবে বলেছে। ইদানীং প্রায় ধারদেনা করেই চলতে হচ্ছে তাকে। আরা সেন্টারের সামনে রিকশা থেকে নেমে ভাড়া দেওয়ার সময় রাশেদ সাহেব হঠাৎ যেন রিয়াকে দেখতে পেলেন। নিজেকে একটু আড়ালে সরিয়ে দেখলেন, হ্যাঁ রিয়াই। তবে একা নয়। ওর সঙ্গে রাশেদ সাহেবের মতোই বয়স, কাঁচা-পাকা চুলের ভালো কাপড়-চোপড় পরা, প্রৌঢ় একজন ভদ্রলোক। দুজনে আরা সেন্টার থেকে বেরিয়ে একটা সিএনজিচালিত অটোরিকশায় উঠল। বহুদিন পর রাশেদ সাহেব তার প্রিয় সুগার ডটারটাকে আবার দেখলেন, যে তার প্রায় সামনে দিয়েই তার অন্য আরেক সুগার ড্যাডির সঙ্গে চলে গেল। রাশেদ সাহেবের মনে পড়ল প্রথম যেদিন রিয়ার সঙ্গে তার দেখা হয়, সেদিনও ধানমন্ডির এরকমই আরেক শপিংমল থেকে বেরিয়ে তারা দুজন একটা অটোরিকশায় চেপেই তার শামিত্মনগরের ফ্ল্যাটে গিয়েছিলেন। রিয়া সেদিন খুব হাসিখুশি ছিল। বোঝাই যাচ্ছিল রাশেদ সাহেবকে পেয়ে খুশি হয়েছে মেয়েটা। আজো দেখলেন ওই প্রৌঢ় ভদ্রলোকটার সঙ্গে অটোরিকশায় চড়ার সময় রিয়া হাসছিল। বোঝা যাচ্ছিল, তার ওই নতুন সুগার ড্যাডিকে পেয়ে মেয়েটা খুশি হয়েছে। তবে এত দূর থেকে দেখে রাশেদ সাহেব ঠিক বুঝতে পারছিলেন না যে, মেয়েটার হাসিটা কি শুধু তার নতুন সুগার ড্যাডিটাকে দেখানোর জন্য? নাকি হাসিটা তার অন্তর থেকে ছিল?


Leave a Reply
You must be logged in to post a comment.