October
-
মনিরুজ্জামান স্যার : আমার বিশ্ববিদ্যালয়
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগে ভর্তি হওয়ার পর প্রথম বর্ষের ক্লাসেই মনিরুজ্জামান স্যারকে প্রথম দেখি। লোকসাহিত্য পড়াতেন আমাদের। লোকসাহিত্য ও এর অন্তর্ভুক্ত নানান উপকরণের সংজ্ঞার্থ পর্যালোচনা ও বিশ্লেষণ নিয়ে স্যারের ক্লাস। একেকটা পারিভাষিক শব্দের ভেতর দিয়ে একটানে গভীর, জটিল ও বিমূর্ত তাত্ত্বিক আলোচনায় ঢুকে পড়তেন স্যার। মুগ্ধ ও মগ্ন হয়ে স্যারের কথাগুলো শুনতাম। আজ থেকে দুই…
-
গবেষক গোলাম মুরশিদের মনীষাদীপ্ত সুকীর্তি
একজন বাঙালি হিসেবে বাংলা ভাষা ও সাহিত্য বিষয়ে নিজের অনুরাগের কথা বলতে গিয়ে মোহাম্মদ ওয়াজেদ আলী সেই কবে মাঘ ১৩২৫ বঙ্গাব্দে জানিয়েছিলেন, ‘গম্ভীর উদাত্ত সুর বাঙালীর কণ্ঠে, বাঙালীর সুরে গীত না হইলে তাহা কানের ভিতর দিয়া আমাদের মরমে পশিবে না, আমাদের অন্তরের সুপ্ত তন্ত্রীগুলি সেই সুরের তালে তালে বাজিয়া উঠিবে না।’ আর সেই একই প্রসঙ্গের…
-
অ্যান মারি ওয়ালীউল্লাহর মৃত্যুবার্ষিকীতে শ্রদ্ধাঞ্জলি : এক ভালোবাসার বয়ান
ফরাসিনী অ্যান মারি ওয়ালীউল্লাহর মৃত্যুদিনটি নিঃশব্দে পার হয়ে গেল। যেমন করে সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহর জন্ম-মৃত্যুবার্ষিকী প্রতিবছর একরকম উদ্যাপনহীনভাবেই পার হয়ে যায়। শুধু সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহর সহধর্মিণী হিসেবেই নয়, নিজের সাহিত্যকৃতির সুবাদেও বাড়তি মূল্যায়ন প্রাপ্য অ্যান মারির। সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহর জন্মশতবর্ষ অতিক্রান্ত হলেও আমরা অনেকেই হয়তো অবহিত নই যে, তাঁর রচনাবলির বিপুল অংশ এখনো অগ্রন্থিত, অসংকলিত ও অপ্রকাশিত অবস্থায়…
-
আবু ইসহাকের মহাপতঙ্গের ছয় দশক : অশেষ ক্ষত, গভীর ঘৃণা, জাগরণের বীজ
আবু ইসহাকের মহাপতঙ্গ গল্পগ্রন্থটি প্রথম প্রকাশিত হয়েছিল ১৯৬৩ সালে। সে-হিসাবে বর্তমান সময়ে গল্পগ্রন্থটি পার করছে এর ছয় দশক। সময়টা নিতান্ত কম নয়। এতদিন পরে যখন ছোটগল্প নিয়ে কথা হচ্ছে তখন ওই গ্রন্থের গল্পগুলি নিয়ে কিছু মৌলিক প্রশ্ন উত্থাপিত হতে পারে। সেগুলি হতে পারে মোটামুটি এরকম – গল্পগুলির প্রাসঙ্গিকতা কেমন, অভিঘাত কতটা প্রভাববিস্তারী, গভীরতা কতদূর, সমকালীন…
-
জুলফিকার মতিনের কবিসত্তা
যে কোনো শোক বুকের কবচে রেখেছি বেঁধে ভ্রাতৃ-মাতৃ-পিতৃ শোক এমন কিছুই নয় উপমা বিহীন শোকের নকশী মাঠ শবদেহ হয়ে চোখের সমুখে আছে। শোকের অন্য নাম জানা নেই, স্বাধীনতা জানা আছে মৃত্যুর কোন মানে জানা নেই, পতাকা ওড়ানো আছে জনজোয়ারের ভাষা জানা নেই দেয়ালে নেতার ছবিই টাঙানো আছে। শোকের অন্য কি নাম দেব, স্বাধীনতা…
-
অন্ধকার গভীরতর
মোটরবাইকে ওঠার আগেই কী ভেবে থমকে দাঁড়ালো শাহীন। মনে হলো, পেছন থেকে কেউ যেন ডাক দিলো। কোনো সিরিয়াস কাজে যাওয়ার আগে এভাবে পেছন দিয়ে কেউ ডাক দিক, সেটা একেবারেই পছন্দ নয় ওর। মেজাজটা একেবারেই খিঁচড়ে গেল। মাথায় হেলমেটটা গলানোর আগে ধীরে একবার ঘাড় ঘুরিয়ে পেছন দিকে তাকালো। পরিচিত কাউকে তো দেখা যাচ্ছে না। তাহলে কি…
-
লন্ডনি মা
হোয়াইট চ্যাপেল মেট্রো স্টেশন থেকে দুটো রাস্তা পেরিয়েই জেসমিনদের অফিস। ব্রিটিশ স্বাস্থ্য দফতরের অধীনে এক বড় হাসপাতালের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ওদের অফিসে ওরা যে ছয়জন অ-ডাক্তার কর্মচারী রয়েছে তাদের অফিসিয়াল নাম হচ্ছে ‘লিংক অফিসার’। ওদের কাজ হচ্ছে এশীয়, বিশেষ করে এই উপমহাদেশ, মানে ভারত, পাকিস্তান, বাংলাদেশ ও শ্রীলঙ্কার কিছুটা পিছিয়ে পড়া যেসব পরিবার ইস্ট লন্ডনে রয়েছে,…
-
কেশ-বন্দনা
কেতকী কেশরে কেশপাশ করো সুরভি – ক্ষীণ কটিতটে গাঁথি লযে পর করবী, কদম্ব রেণু বিছাইয়া দাও শয়নে অঞ্জন আঁকো নয়নে ॥ – রবীন্দ্রনাথ পশুপাখি, কীটপতঙ্গের সৌন্দর্য স্থানভেদে – কারো ঝুঁটিতে, কারো কেশরে, কারো লেজে, কারো পাখায়, কারো পদমূলে। কিন্তু মানুষের সৌন্দর্যের কেন্দ্রবিন্দু মুখমণ্ডলে। এই মুখমণ্ডলের সৌন্দর্যকে উন্নততর ও বিকশিত করে কেশরাশি। কাজলকালো কেশের গর্ভ…
-
শেল্টার
হারিকেনের সলতে জোর করে জ্বালানো হচ্ছিল, কাচের অর্ধেকের বেশি কালিতে ভরা, যে-কোনো সময় তেলের অভাবে দপ করে নিভে যাবে। রাহেলার বুকে জমা ক্ষোভটা সলতের মতো কালিমাখা কাচের ভেতর তোলপাড় তুলে ওষ্ঠাগত হতে চায়। প্রতিবেশীর বাড়িতে আসতে ঝোপঝাড়ের সরুপথ, অন্যরাতে জোনাকি জ্বলে, আজ তারা কোথায় যেন লুকিয়ে আছে! পথে হোঁচট খেয়ে ভারী দেহ কোনোরকমে সামলেছে। তাই…
-
থাডার
‘অ’পুত, অ’পুত এই ঠাডারের মইধ্যে ঘরত্তুন বাইর ন হইছ অ’পুত। আঁরত বাইশ ধরা লাইগদুনু। টেঁয়া-পইশে লাইগদুনু অ’পুত।’ মায়ের এই আকুতি শোনার সময় নেই আব্বাসের। সে পলিথিনের ব্যাগে সিগারেটের প্যাকেট, লাইটার আর টাকা ভরে কোমরে গুঁজতে ব্যস্ত। বাইরে মুষলধারায় বৃষ্টি পড়ছে। সঙ্গে বিজলি আর থেকে থেকে বজ্রপাতের বুক কাঁপানো আওয়াজ। বৈশাখের দুই সপ্তাহ পার হয়ে গেছে।…
-
মাহমুদ দারবিশের কবিতায় ফিলিস্তিনি মুক্তিসংগ্রাম
ফিলিস্তিনের (আরবি উচ্চারণে ফলাস্তিন) গাজায় এখন যা ঘটছে তা কেবল গণহত্যা নয়, এটা জাতিহত্যা। একটি মুক্তিপিয়াসী জাতিকে নির্মূল করতে সেখানে চলছে পরিকল্পিত হত্যাযজ্ঞ। গাজা এখন ‘বসবাসের অযোগ্য’ এক মৃত্যু-উপত্যকা। প্রতিদিনই সেখানে লাশের মিছিল বাড়ছে। এর প্রকৃতির জলপাই রঙের স্নিগ্ধ মেদুরতা প্রায়-অপসৃত, মাটি রক্তাক্ত, আকাশের নীলিমা বিধ্বস্ত। নির্বাসন ছাড়া কোনো গত্যন্তর নেই তাদের। যে-পবিত্র মাটি থেকে…