সাহিত্যের ভিন্ন এক উৎসব ঢাকা লিট ফেস্ট

অত্যন্ত সফলভাবে সম্পন্ন হলো সাহিত্যের বড় উৎসব ‘ঢাকা লিট ফেস্ট’-এর দশম আসর। বাংলাদেশের বর্তমান সামাজিক ও সাংস্কৃতিক প্রেক্ষাপটে সাহিত্যকে কেন্দ্র করে এমন একটি বৃহৎ উৎসব নিঃসন্দেহে তাৎপর্যপূর্ণ ঘটনা। অর্থনীতির অভূতপূর্ব বিকাশ ঘটছে বাংলাদেশে, অর্থনীতি পৌঁছে যাচ্ছে অন্য এক উচ্চতায়। কিন্তু একটি দেশের অর্থনৈতিক উন্নতিই কি সব? এ উন্নতি সাধিত হলেই কি দেশ সভ্যতার উচ্চতর মার্গে পৌঁছতে পারে? সম্ভবত না। শুধু অর্থনৈতিক উন্নতির মাধ্যমে কোনোভাবেই সংস্কৃতিবান মানুষ, সভ্য দেশ বা সভ্য নাগরিক গড়ে তোলা যায় না। সংস্কৃতিবান সুনাগরিক গড়ে তুলতে না পারলে শুধু জাগতিক অন্যান্য অগ্রগতি সামাজিক পরিপোষণের অনুকূল হতে পারে না।

কীভাবে তা করা যায়? এর জন্য প্রয়োজন শিল্প, সাহিত্য, সংস্কৃতি, জ্ঞান, বিজ্ঞান ও রাজনীতির সম-উন্নয়ন।

দুই

বাংলাদেশের সাহিত্য, সংস্কৃতি এবং ঢাকাকে বিশ্বমঞ্চে তুলে ধরার লক্ষ্যে কাজী আনিস আহমেদের পরিচালনায় ‘ঢাকা লিটেরারি ফেস্টিভ্যাল’ বা ‘ঢাকা লিট ফেস্ট’ এখন আমাদের সাহিত্য-উৎসবে এক নতুন মাত্রা যোগ করেছে। এ উপলক্ষে পৃথিবীর নানা দেশের লেখকরা আসেন, তাঁদের সঙ্গে এদেশের লেখকদের একটা যোগসূত্র তৈরি হয়। এর আগের লিট ফেস্টে দেশ-বিদেশের অনেক সাহিত্যিক, শিল্পী, সাংবাদিক, সমাজ-বিশ্লেষক, অভিনেতা, রাজনীতিক, গবেষক, অনুবাদক, সাহিত্যিক, শিক্ষাবিদ এসেছেন। এবারের আসরেও এসেছেন নানা দেশের অনেক লেখক।

কথা ছিল এবারের আসরে আসবেন নোবেল বিজয়ী ঔপন্যাসিক তুরস্কের ওরহান পামুক। নিঃসন্দেহে তিনি বর্তমান জীবিত ঔপন্যাসিকদের মধ্যে প্রথম সারির একজন। তাঁর বিখ্যাত উপন্যাস মাই নেম ইজ রেড কিংবা স্নো-সহ অন্যান্য গল্প-উপন্যাস এদেশের অগ্রসর পাঠকদের অনেকেই পড়েছেন। তিনি আসবেন বলে সাহিত্যপাড়ায় সাড়া পড়ে গিয়েছিল, সবাই প্রস্তুত হচ্ছিলেন তাঁকে দেখার, তাঁর কথা শোনার জন্য। কিন্তু দুঃখের বিষয়, অসুস্থতার কারণে শেষ মুহূর্তে তিনি তাঁর আসা বাতিল করেন।

তাঁর শূন্যতা অনেকটা পূরণ করেছেন ২০২১ সালের নোবেলজয়ী কথাসাহিত্যিক আবদুলরাজাক গুরনাহ। সম্প্রতি বাংলায় অনূদিত হয়েছে তাঁর বহুল পঠিত উপন্যাস প্যারাডাইস। উপন্যাসটি পড়তে পড়তে মনে হচ্ছিল আলেক্স হেলির দ্য রুটস-এর কথা। রুটসের পটভূমিও আফ্রিকা, প্যারাডাইসের যেমন। রুটসের নায়ক কুন্টাকে দাস হিসেবে বিক্রি করে দেওয়া হয়েছিল আমেরিকায়। প্যারাডাইসের নায়ক ইউসুফকে বিক্রি করে দেওয়া হয় আফ্রিকারই এক ব্যবসায়ীর কাছে। কুন্টা বারবার পালাতে চেয়েছে, পারেনি। তাকে নির্যাতন করা হয়েছে, বন্দি করে রাখা হয়েছে, শিকল পরিয়ে রাখা হয়েছে, কুকুর লেলিয়ে দেওয়া হয়েছে। ইউসুফকে নির্যাতন করা হয়নি, কিন্তু দুজনের দুঃখ এক। দুজনেই ক্রীতদাস। আসলে গোটা আফ্রিকার একই গল্প। পিছিয়ে থাকার গল্প, উপনিবেশের দগদগে ক্ষতের গল্প। আফ্রিকার তাঞ্জানিয়ায় তখন ইউরোপীয়রা ছড়িয়ে পড়তে শুরু করেছে। দখল করছে ভূমিপুত্রদের ভূমি, ব্যবসা। কালের এমনই এক সন্ধিক্ষণে ইউসুফের দরিদ্র পিতা ঋণের দায়ে পুত্রকে বিক্রি করে দেয় এমন এক ব্যবসায়ীর কাছে, যে কি না গভীর অরণ্য, দুর্গম পাহাড় এবং শুষ্ক সমতলে ব্যবসা করে বেড়ায় স্থানীয় আদিবাসীদের সঙ্গে। পণ্যের বিনিময়ে পণ্য। পুঁতির মালা, সুতি কাপড়ের বিনিময়ে স্থানীয়দের কাছ থেকে কিনে নেয় হাতির দাঁত, সোনা-রুপা ইত্যাদি। কর্মচারী হিসেবে ইউসুফও ঘুরে বেড়ায় বণিকের কাফেলার সঙ্গে। সঞ্চয় করে নানা অভিজ্ঞতা। গুরনাহর এই উপন্যাসে আছে পৃথিবীর এক প্রান্তের গল্প, সমুদ্রতীরবর্তী এক জনপদের গল্প, পিছিয়ে থাকা এক জনগোষ্ঠীর গল্প। উপন্যাসের কেন্দ্রীয় চরিত্র ইউসুফ সোয়াহিলি গোত্রের। আবদুলরাজাক গুরনাহও একই গোত্রের। প্যারাডাইস পড়তে পড়তে মনে হচ্ছিল, প্রত্যেক লেখকেরই একটি গল্প থাকে। তাঁর নিজের জীবনের গল্প। দেখা গল্প নয়, যাপনের গল্প। সেই যাপনের গল্পই লিখেছেন গুরনাহ তাঁর প্যারাডাইসে। গুরনাহ তাঁর এক লেখায় বলেছেনও সে-কথা। বলেছেন, ‘আমার কল্পনা, আমার মনোজগৎ, আমার জন্মভূমির স্মৃতিতে সতত আপ্লুত। এমনকি অন্য এলাকার গল্প বলতে চাইলেও অজান্তে আমার জন্মভূমির ছায়া পড়ে তাতে।’ প্যারাডাইসেও তিনি জন্মভূমিকে এড়াতে পারেননি। ছায়া নয়, গোটা জন্মভূমিকেই তিনি তুলে এনেছেন। লিখেছেন তাঁর জাতির কথা, গোত্রের কথা, তাঁর শৈশব-কৈশোরের কথা। ছোটবেলায় যে তাঞ্জানিয়াকে তিনি দেখেছেন, সেই তাঞ্জানিয়াকে এঁকেছেন এই উপন্যাসে। তাঞ্জানিয়ার মুসলমানদের সমাজ ও সংস্কৃতিকে এঁকেছেন। মানুষের প্রবৃত্তি, কুস্বভাবকে এঁকেছেন। তাঞ্জানিয়ার মুসলমান সমাজে যে ছেলেশিশু কিংবা কিশোর বলাৎকারের কুসংস্কৃতি প্রচলিত, সেই কুসংস্কৃতিকে এঁকেছেন। কোনো কিছুই বাদ দেননি। আফ্রিকার অভিজাত শ্রেণি, শ্রমিক শ্রেণি আর পিছিয়ে পড়া মানবসমাজকে দেখিয়েছেন তাঁর উপন্যাসে। পাওলো কোয়েলহো বলেছিলেন, উপন্যাসের কাজ হচ্ছে সংস্কৃতিসমূহের মধ্যে সেতু নির্মাণ করা। আবদুলরাজাক গুরনাহ ঠিক সেই কাজটিই করেছেন। এবং সেই কাজের জন্যই, একটি জনগোষ্ঠীর সামগ্রিক চিত্র উপন্যাসে আনার জন্যই ভূষিত হয়েছেন নোবেল পুরস্কারে। সেই কারণে এই উপন্যাস স্থানিক এবং একই সঙ্গে বৈশি^ক।

গত ৫ই জানুয়ারি ২০২৩ তারিখ সকালে বাংলা একাডেমির আবদুল করিম সাহিত্যবিশারদ মিলনায়তনে ঢাকা লিট ফেস্টের দশম আসর উদ্বোধন করেন আবদুলরাজাক গুরনাহ। সকাল ৯টায় বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণে চমৎকার এক আধ্যাত্মিক পরিবেশনার মধ্য দিয়ে শুরু হয় লিট ফেস্ট ২০২৩-এর আনুষ্ঠানিকতা। গোটা মিলনায়তনের কোথাও একটি আসন ফাঁকা ছিল না, পরিপূর্ণ ছিল দর্শক-শ্রোতায়। গুরনাহর সঙ্গে উপস্থিত ছিলেন ভারতীয় লেখক ও সাহিত্য-সমালোচক অমিতাভ ঘোষ, বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক কবি মুহম্মদ নূরুল হুদা এবং বাংলাদেশের সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ। উপস্থিত ছিলেন ঢাকা লিট ফেস্টের তিন পরিচালক ড. কাজী আনিস আহমেদ, সাদাফ সায্‌ ও আহসান আকবার। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বাড়তে থাকে  শ্রোতা-দর্শনার্থীদের ভিড়। তারা প্রিয় ব্যক্তিত্বের কর্ম ও সাহিত্যকথা মনোযোগ সহকারে শুনেছেন। দেখেছেন সিনেমা, শুনেছেন গান। পরিবেশিত হয়েছে বাংলার ঐতিহ্যবাহী যাত্রাপালা। নানা উদ্যাপন, সেশন, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, নৃত্য, কবিতা পাঠ, গল্প বলা, বিতর্কের মধ্যে দিয়ে অতিবাহিত হয় আসরের প্রথম দিন।

পরদিন শুক্রবারেও ছিল নানা আয়োজন। সকালে যথারীতি আধ্যাত্মিক সংগীতের মাধ্যমে শুরু হয় দিনের আনুষ্ঠানিকতা। সকাল ১০টায় আবদুল করিম সাহিত্যবিশারদ মিলনায়তনে উদ্ভাবনী আলাপে বিজ্ঞানী সেঁজুতি সাহার সঙ্গে আলাপে ছিলেন প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক। একই সময়ে ছিল আরো  তিনটি সেশন, যার মধ্যে শিশুদের জন্য ছিল গল্প বলার সেশন। এই রচনাটির লেখকের সঞ্চালনায় ‘আগামীর আখ্যান’ নিয়ে নজরুল মঞ্চের একটি সেশনে আলাপ করেছেন কথাসাহিত্যিক সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম এবং ঔপন্যাসিক ইমদাদুল হক মিলন। সাড়ে ১১টায় ভারতীয় লেখক ও সাহিত্য-সমালোচক অমিতাভ ঘোষের সঙ্গে আলাপে ছিলেন ঢাকা লিট ফেস্টের প্রযোজক ও পরিচালক সাদাফ সায্। পাশাপাশি সাংবাদিকতার পরিবেশ নিয়ে আলোচনা করেছেন দেশবরেণ্য সাংবাদিকরা। দুপুর সাড়ে ১২টায় দ্বিতীয় দিনের আয়োজনে যুক্ত হন সাফ ফুটবল বিজয়ী নারী দলের সদস্যরা। শিশুদের জন্য একই সময়ে পাপেট শো পরিবেশন করেন শিল্পী মুস্তাফা মনোয়ার। দুপুর পৌনে ২টায় লেখার স্বাধীনতা নিয়ে আলাপ করেন আলোচকরা। সাংস্কৃতিক যুদ্ধ নিয়ে আলাপ করেন যুক্তরাজ্যের অধ্যাপক সারাহ চার্চওয়েল। দুপুর ৩টায় সোমালীয় লেখক নুরুদ্দিন ফারাহর মুখোমুখি হন ঢাকা লিট ফেস্টের পরিচালক ড. কাজী আনিস আহমেদ। একই সময়ে ছিল ওটিটি কন্টেন্ট নিয়ে আলোচনা। বিকাল সাড়ে ৫টায় ব্রিটিশ অভিনেত্রী টিল্ডা সুইনটনের সঙ্গে আলাপে বসেন ঢাকা লিট ফেস্টের পরিচালক আহসান আকবার। সন্ধ্যায় কবি শামীম রেজার সঞ্চালনায় কবিতা পাঠ ও গল্পে মেতেছিলেন বাংলা ভাষার অন্যতম প্রধান কবি জয় গোস্বামী। এছাড়া সারাদিন শিশুদের জন্য নানা আয়োজনের পাশাপাশি ছিল সংগীত পরিবেশনা এবং চলচ্চিত্র প্রদর্শনী।

৭ই জানুয়ারি আসরের তৃতীয় দিনেও ছিল ব্যতিক্রমী সব আয়োজন। সকালে গুরুদোয়ারের আধ্যাত্মিক সুরের মাধ্যমে শুরু হয় দিনের আনুষ্ঠানিকতা। সকাল ১০টায় আব্দুল করিম সাহিত্য বিশারদ মিলনায়তনে কোক স্টুডিও বাংলার নেপথ্যের গল্প শোনান সংগীতশিল্পী বুনো, আবির রাজবিন এবং চিত্রনাট্যকার গাওসুল আলম শাওন। একই সময় বাঙালির চিন্তার ইতিহাস নিয়ে কথা বলেন অধ্যাপক সলিমুল্লাহ খান ও ভারতীয় প্রাবন্ধিক তপোধীর ভট্টাচার্য। একই সময়ে ছিল ‘আইরা এবং তার মায়ের অভিযান’ নিয়ে গল্প বলার আসর। ‘আইরা আর মায়ের অভিযান’ সিরিজের বই প্রকাশ করে দুই বাংলার স্বনামধন্য শিল্পী রাফিয়াত রশিদ মিথিলা এরই মধ্যে প্রশংসিত হয়েছেন। তিনি ও তাঁর কন্যা আইরা তাহরিম খান ছিলেন এই গল্প বলার আসরে। তাঁরা গল্প পড়ে শোনান শিশু ও বাবা-মায়েদের। সকাল সোয়া ১১টায় আলোচনা করেন ভারতীয় সাহিত্য-সমালোচক অমিতাভ ঘোষ, নোবেল বিজয়ী সাহিত্যিক আবদুলরাজাক গুরনাহ ও পংকজ মিশ্র। একই সময়ে উপন্যাসের নতুন ধরনের খোঁজ নিয়ে আলাপ করেন কথাসাহিত্যিক আনিসুল হক, মোহিত কামাল, পারভেজ হোসেন প্রমুখ। দুপুর সাড়ে ১২টায় ছিল বুকার পুরস্কারপ্রাপ্ত অঞ্জলি শ্রীর আলোচনা। বইয়ের বাজার নিয়ে একই সময়ে আলাপ করেন খান মাহবুব, দীপঙ্কর দাস। ছিল ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী সম্প্রদায়ের সদস্যদের একটি সেশন। তাছাড়া বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা ব্র্যাকের আয়োজনে পারফরম্যান্স এবং বইয়ের মোড়ক উন্মোচন অনুষ্ঠান ছিল দুপুর পৌনে ২টায়। একই সময়ে ব্রিটিশ অভিনেত্রী টিল্ডা সুইনটনের সঙ্গে আলাপে ছিলেন আহসান আকবার। ভ্যাকসিন নিয়ে আলাপ করেন অ্যাস্ট্রাজেনেকার সহ-উদ্ভাবক সারাহ গিলবার্ট এবং তাঁর সঙ্গে আলাপে ছিলেন সাদাফ সায্। বিকালে উদ্ভাবনী আলাপচারিতায় ছিলেন ব্র্যাকের নির্বাহী পরিচালক আসিফ সালেহ ও স্থপতি মেরিনা তাবাসসসুম। একই সময়ে ধরাবাঁধার বাইরে যাওয়ার গল্প শোনান অভিনেত্রী আজমেরী হক বাঁধন, সঙ্গে ছিলেন অভিনেত্রী বন্যা মির্জা। ছিল রিকশা গার্ল সিনেমার প্রদর্শনী। এ নিয়ে আলাপ করেন নির্মাতা অমিতাভ রেজা। এছাড়া মহাবিশ^ নিয়ে কথা বলেন অধ্যাপক ড. মুহম্মদ জাফর ইকবাল। এদিন শিশুদের জন্য আরো ছিল ‘লাল পরী, নীল পরী’ শীর্ষক পাপেট শো। দিনশেষে বাউল শফি মণ্ডলের সংগীত পরিবেশনার মধ্য দিয়ে শেষ হয় তৃতীয় দিনের আয়োজন।

৮ই জানুয়ারি লিট ফেস্টের সমাপনী দিনের সকালে ‘স্যান্ডবক্স : ফিউচার ইজ নাও’ শিরোনামের সেশনে সৈয়দ মফিজ কামালের সঞ্চালনায় উপস্থিত ছিলেন সাংবাদিক ডমিনিক জিগলার, আমেরিকান লেখক এবং চিকিৎসক রেসা লিউইস, থিংক লিগ্যাল-এর প্রতিষ্ঠাতা অনিতা গাজি, মাইটি বাইটপর একজিকিউটিভ ডিরেক্টর নওশের রহমান। পুরো সেশনজুড়ে অতিথিরা নগর, সামাজিক ও প্রযুক্তিগত গোপনীয়তা নিয়ে কথা বলেন এবং উপস্থিত শ্রোতাদের মতামত নিয়ে সমস্যার সমাধান খোঁজার চেষ্টা করেন। এদিন দুপুরে বাংলা একাডেমির লনে ‘দ্য অ্যাপেল অ্যান্ড দ্য ট্রি’ শিরোনামের সেশনে সাংবাদিক সরদ কুতনের সঞ্চালনায় উপস্থিত ছিলেন মালয়েশিয়ার প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী মাহাথির মোহাম্মদের মেয়ে, লেখক ও সমাজকর্মী মারিনা মাহাথির। অনুষ্ঠানের শুরুতে সঞ্চালক সরদ কুতন মারিনা মাহাথির ও তাঁর কর্মজীবন সম্পর্কে এবং পিতা মাহাথির মোহাম্মদের সঙ্গে তাঁর সম্পর্ক নিয়ে লেখা দ্য অ্যাপেল অ্যান্ড দ্য ট্রি এস ড. মাহাথিরস ডটারস বই নিয়ে কথা বলেন। পরবর্তী সময়ে মারিনা তাঁর বইয়ের কয়েকটি অনুচ্ছেদ পড়ে শোনান, সঞ্চালক এবং উপস্থিত দর্শকদের প্রশ্নের উত্তর দেন। প্রশ্ন তালিকায় ছিল বাবার সঙ্গে সম্পর্ক, বই, বাবার রাজনৈতিক জীবন প্রভৃতি।

এদিন কোক স্টুডিও বাংলা কনসার্টকে ঘিরে দেখা যায় উৎসবমুখর পরিবেশ। সন্ধ্যা গড়াতেই বাংলা একাডেমির বর্ধমান মঞ্চের সামনের মাঠ ভরে ওঠে মানুষে। সন্ধ্যা সোয়া ৭টায় সুরের মূর্ছনা ছড়াতেই বাঁধভাঙা উল্লাসে মেতে ওঠে তরুণ-তরুণীরা। এই কনসার্টে অংশ নিতে পেরে দর্শকরা ছিল উচ্ছ্বসিত। কনসার্টে আলোঝলমল মঞ্চে দাঁড়িয়ে সংগীতশিল্পীরা গেয়ে শুনিয়েছেন ‘আল্লাহ মেঘ দে’, ‘বুলবুলি’, ‘লীলাবালি’, ‘চিলতে রোদ’, ‘নৌকা কিনে দেবো’, ‘নাসেক নাসেক’ প্রভৃতি গান। এগুলির বেশিরভাগই কোক স্টুডিও বাংলার প্রথম মৌসুমে প্রকাশিত হয়েছে। গান গেয়েছেন পান্থ কানাই, অনিমেষ রায়, বগা তালেব, ঋতুরাজসহ অনেকে।

চারদিনের এই আয়োজনে বাংলাদেশের লেখকদের মধ্যে বিভিন্ন সেশনে অংশগ্রহণ করেন কবি কামাল চৌধুরী, কবি ফরিদ কবির, কবি খালেদ হোসাইন, কথাসাহিত্যিক ও অনুবাদক মাসরুর আরেফিন, কবি সাজ্জাদ শরিফ, কথাসাহিত্যিক আহমাদ মোস্তফা কামাল, কথাসাহিত্যিক মশিউল আলম, কথাসাহিত্যিক ও কবি শাহনাজ মুন্নী, কবি শামীম রেজা, অনুবাদক আলম খোরশেদ, অনুবাদক জিএইচ হাবীব, অনুবাদক রফিক-উম-মুনীর চৌধুরী, কথাসাহিত্যিক প্রশান্ত মৃধা, গবেষক সাইমন জাকারিয়া, গবেষক সুমনকুমার দাশ, কবি মোস্তাক আহমাদ দীন, কবি জফির সেতু, কথাসাহিত্যিক হামীম কামরুল হক, কথাসাহিত্যিক মোজাফফর হোসেনসহ নবীন-প্রবীণ অনেকে।

তিন

ঢাকা লিট ফেস্ট উপলক্ষে বাংলা একাডেমির মাঠে বিদেশের এই গুণীজনরা না এলে জীবনে হয়তো তাঁদের সঙ্গে আমাদের দেখাই হতো না, তাঁদের কথা শোনা হতো না, শিল্প-সাহিত্য নিয়ে তাঁদের ভাবনা আমাদের জানা হতো না। তাঁরা এসেছেন, সাহিত্য নিয়ে কথা বলেছেন, আমাদের দেশের লেখকরাও এসেছেন, তাঁরাও সাহিত্য নিয়ে কথা বলেছেন। পারস্পরিক আলাপ-সংলাপের মাধ্যমে সমৃদ্ধ হয়েছে উভয়পক্ষের জানাশোনা। আর এসেছে স্কুল-কলেজ ও বিশ^বিদ্যালয়ের অসংখ্য ছাত্রছাত্রী। এই আসা-যাওয়া, দেওয়া-নেওয়ার মধ্য দিয়ে তৈরি হয়েছে একটা শৈল্পিক সম্পর্ক, বেড়েছে জানার পরিধি, গঠিত হয়েছে মননচর্চার ভিত। এমন আয়োজন অক্ষুণ্ন থাকুক, প্রসারিত হোক আরো নতুন নতুন মাত্রার দিকে – এই আমাদের প্রত্যাশা।