সাক্ষাৎকার গ্রহণ : হামিদ কায়সার
এমন দিন তাঁর কখনোই ছিল না – এই যে রাতদিন ঘরের ভেতর শুয়ে-বসে থাকা, একাকী, নির্জন-নির্জনতায় অবগাহন – এমন নৈঃশব্দে তাঁকে কখনোই মানাত না। একদিন আকর্ষণের কেন্দ্রে ছিলেন তিনি – সৌন্দর্যের সঙ্গে মেধার দুর্লভ সংশ্রবে একদিন বড় রাজসিক ছিল তাঁর জীবন, ছিলেন সৃষ্টির আনন্দে মেতে কর্মমুখর প্রতিটি মুহূর্তেই – এই যদি এলিয়ট পড়াচ্ছেন তো পরক্ষণেই ডুবে আছেন উপন্যাস-রচনায়। ইংল্যান্ডে যদি একবার ছুটে গেছেন গবেষণার জন্যে, আর একবার পর্তুগালে পাড়ি জমিয়েছেন চলচ্চিত্র-উৎসবে বিচারকের দায়িত্ব পালন করতে। শখের বশে যেমন অভিনয় করেছেন মঞ্চনাটকে, সাংবাদিকতার অভিজ্ঞতায় তেমনি ঋদ্ধ হয়েছেন অবজারভার আর বিবিসিতে। আর সবসময়েই সময়ের গতির সঙ্গে হেঁটেছেন সমান্তরাল। সেই বর্ণাঢ্য জীবনের অধিকারী – ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের একসময়ের ডাকসাইটে অধ্যাপক কথাশিল্পী রাজিয়া খানের শরীরটা আজকাল তেমন ভালো যাচ্ছে না। যে-হাতে একসময়ে লেখা হয়েছে বটতলার উপন্যাস, অনুকল্প, প্রতিচিত্র, চিত্রকাব্য, হে মহাজীবন, দ্রৌপদী, বহমান, পাদবিকের মতো উপন্যাস, সে-হাতটিও আর আগের মতো সচল নয়। উপন্যাস ছাড়াও তাঁর সুকীর্তির মধ্যে রয়েছে কাব্যগ্রন্থ অৎমঁং, ঈৎঁবষ অঢ়ৎরষ ও সোনালী ঘাসের দেশ, নাটক আবর্ত ও নোংরা নাটক, তিনটি একাঙ্কিকা, জর্জ এলিয়ট সম্পর্কে ইংরেজি গবেষণাগ্রন্থ এবং নিজের উপন্যাস দ্রৌপদী ও জহির রায়হানের উপন্যাস আরেক ফাল্গুনের ইংরেজি অনুবাদ। এছাড়াও ইংরেজি থেকে বাংলা অনুবাদ করেছেন বাবা তমিজউদ্দীন খানের জীবনী কালের পরিক্রমা।
গুলশানে তাঁর বাসার সামনে যখন পৌঁছলাম, বৃষ্টির কুজ্ঝটিকা কেটে গেছে ঠিকই, কিন্তু ততক্ষণে সন্ধ্যার অন্ধকার ঘনিয়ে এসেছে। তাঁর বাসায় ঢুকতেই আলোর স্পর্শ পেলাম, তারপর আলোকপাত ঘটল তাঁর জীবন ও সাহিত্যচর্চাসহ বিভিন্ন বিষয়ে।
হামিদ কায়সার : আপনার প্রথম গল্পটি ছাপা হয়েছিল সলিমুল্লাহ হলের বার্ষিকীতে – ব্যাপারটি কিন্তু চমকপ্রদ।
রাজিয়া খান : তখন মেয়েদের আলাদা হল না থাকায় এস এম হলে সংযুক্ত ছিলাম। জানি না ব্যাপারটি চমকপ্রদ কিনা, তবে তখন যারা বলত আমি বাংলা জানি না, তাদের জন্যে তো সেটি নিঃসন্দেহে চমকই ছিল। গল্পের নাম ছিল ‘প্রবাহ’। এস এম হল-বার্ষিকীর সম্পাদক গল্প চাওয়াতে আনন্দিত হয়েই লিখেছিলাম গল্পটি। কপি নেই।
হামিদ কায়সার : কী বিষয় নিয়ে ছিল গল্পটি?
রাজিয়া খান : মধ্যবয়সী এক পুরুষের স্ত্রী-বিয়োগের কাহিনী।
হামিদ কায়সার : এটিই কি প্রথম লেখা গল্প?রাজিয়া খান : এটি প্রথম গল্প নয়। প্রথম গল্প ছিল ‘বিপদ’। প্রকাশিত হয়েছিল কলকাতার দৈনিক আজাদের মুকুলের মহফিলে।
হামিদ কায়সার : তার মানে এটি আপনার শৈশবের লেখা?
রাজিয়া খান : হ্যাঁ, তখন আমরা কলকাতায়। তেতো ওষুধ খাওয়ার বিড়ম্বনা নিয়ে লিখেছিলাম গল্পটি।
হামিদ কায়সার : সেজন্যেই গল্পের নাম ‘বিপদ’?
রাজিয়া খান : হ্যাঁ, সাত বছর বয়সে আমার একবার সেরিব্রাল ম্যালেরিয়া হয়। লিভার খারাপ হয়ে যায়। অনেক অ্যালোপ্যাথিক চিকিৎসা করার পর শেষে আব্বা বাসায় নিয়ে আসেন ওঁর এক বন্ধু হোমিওপ্যাথিক ডাক্তার এ টি এম মোয়াজ্জমকে। তিনি ছিলেন ড. আনিসুজ্জামানের বাবা।
হামিদ কায়সার : চমৎকার ব্যাপার। তাঁর ওষুধেই নিশ্চয় আপনার বিপদ কাটল?
রাজিয়া খান : হ্যাঁ। খুব যত্ন নিয়ে আমার চিকিৎসা করেন। দীর্ঘদেহী, সুদর্শন, স্নেহশীল এই মানুষটিকে দেখে আমার খুব শ্রদ্ধা হতো। মনে আছে আমাকে খুব পেঁপে খেতে বলতেন। আমার স্বাস্থ্য-সম্পর্কে আব্বাকে অনেকক্ষণ ধরে পরামর্শ দিতেন।
হামিদ কায়সার : তখন, সেই শৈশবে ড. আনিসুজ্জামানের দেখা মিলেছিল?
রাজিয়া খান : তখনো দেখিনি। কলকাতাতেই দেখিনি। তাঁকে প্রথম দেখি ঢাকায়। তখন আমি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে – সবার কাছে আনিসুজ্জামানের খুব প্রশংসা শুনতাম, কিন্তু আলাপ হয়নি। সেটা হলো এম.এ.-র শেষ অধ্যায়ে। তারপর যখন আমার উপন্যাস অনুকল্প ছাপা হচ্ছে, সেই সময়ে আনিসভাই বাসায় এসে আমাকে প্রুফ দেখা শিখিয়ে দিয়েছিলেন। আমার আর দেখা হয়নি, আনিসভাই-ই পুরো বইটির প্রুফ দেখে দিয়েছিলেন। এরপর আনিসভাই যখন অধ্যাপক – আমাকে দিয়ে দীর্ঘ এক প্রবন্ধ লিখিয়েছিলেন।
হামিদ কায়সার : কী বিষয়ে?
রাজিয়া খান : সমকালীন পূর্ব পাকিস্তানের কবিতার ওপর। ইংরেজিতে লেখা এ-প্রবন্ধটি আনিসভাই তাঁর বন্ধু মার্কিন লেখক কার্লো কাপোলার কাছে পাঠিয়ে দেন। ইন্ডিয়ানা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপিকা মেরি লেগো প্রবন্ধটি ছাপেন। এই মহিলা রবীন্দ্রনাথের গল্পগুচ্ছের বেশ কয়েকটি গল্প ইংরেজিতে অনুবাদ করেছেন। আমার ওই প্রবন্ধে শামসুর রাহমান থেকে শুরু করে অনেক কবিকে নিয়ে আলোচনা করেছি। পরে ওই প্রবন্ধকে দীর্ঘায়িত করে বাংলা একাডেমীর ইংরেজি পত্রিকায় ছাপাতে দিই। তখন প্রফেসর কবীর চৌধুরী বাংলা একাডেমীর মহাপরিচালক। মজার ব্যাপার, আমেরিকায় ছাপা প্রবন্ধটি মুদ্রিত অবস্থায় দেখার সুযোগ আমার হয়নি।
হামিদ কায়সার : বলেন কী! কেন?
রাজিয়া খান : কী জানি! ওঁরাও পাঠাননি, আমারও দেখা হয়নি। তবে, পরে একদিন বিদেশে গিয়ে সেটি দেখার সুযোগ হয়। ১৯৮৮ সালে আমি শান্তিনিকেতনে যাই। প্রয়াত কবি অসিত ভট্টাচার্যের বাড়িতে গিয়ে আবিষ্কার করলাম সেই ইংরেজি পত্রিকা। এবং সত্যি সত্যি পুলকিত হলাম, যখন দেখলাম আমার প্রবন্ধের পাশেই রয়েছে বুদ্ধদেব বসুর প্রবন্ধ। তিনি লিখেছেন পশ্চিমবঙ্গের সমকালীন বাংলা কবিতার ওপর আর আমার প্রবন্ধটি পূর্ববাংলার সমকালীন বাংলা কবিতার ওপর।
হামিদ কায়সার : আমরা আবার আপনার শৈশবে ফিরে যাই। এই যে তেতো ওষুধ খাওয়ার অভিজ্ঞতা নিয়ে গল্প লিখলেন – এই গল্প-লেখা কেন? আপনি তো অন্য কিছুও করতে পারতেন!
রাজিয়া খান : হয়তো লেখালেখির ব্যাপারটি আমার ভেতরে সুপ্ত ছিল। সেই পরিস্থিতিই আমাকে দিয়ে গল্পটি লিখিয়ে নিয়েছে। এবং এরকম কিন্তু চলতেই থাকল -।
হামিদ কায়সার : মানে এই লেখালেখিটা…?
রাজিয়া খান : হ্যাঁ। সাত থেকে দশ বছরের মধ্যে তখন অনেক কিছুই লিখে ফেলি। সৃষ্টির একটি উন্মাদনা বুঝি সেই বয়সেই আমাকে পেয়ে বসেছিল। সাত বছর বয়সেরই ঘটনা সেটি – একদিন প্রথম কবিতার লাইন মাথায় এলো আমার। সেদিন খুব জ্বর ছিল। বারান্দায় একা একা দাঁড়িয়ে আছি, কয়েকটি শব্দ মস্তিষ্কে উদয় হলো : বৃষ্টি পড়িয়া যায় / মুষলধারায়… এরপর লিখলাম উপন্যাস ‘অলুক্ষুণে’, ‘উদয়ের পথে’। অনেক কবিতা। ছোটগল্প তখন কম লিখেছি।
হামিদ কায়সার : এত অল্পবয়সেই উপন্যাস! সেগুলো কি বই হয়েছিল?
রাজিয়া খান : বই হওয়ার মতো হলে তো হবে! এখনো আছে পাণ্ডুলিপি। রেখে দিয়েছি। সব বিভূতিভূষণ আর গোর্কির নকল। ‘অলুক্ষুণে’ বিভূতির আর ‘উদয়ের পথে’ গোর্কির। চরিত্র, পটভূমি সব রুশ।
হামিদ কায়সার : আপনার লেখক হওয়ার পেছনে দেখছি বই পড়ার একটা অবদান আছে। এই বইপড়ার ব্যাপারটি কীভাবে শুরু হলো?
রাজিয়া খান : তাহলে তো নিজের পারিবারিক পরিবেশের কথা বলতে হয়।
হামিদ কায়সার : প্লিজ, বলুন। তখন তো কলকাতায় থাকতেন?
রাজিয়া খান : কলকাতায়। আমার পারিবারিক পরিবেশ ছিল ঘোর রাজনৈতিক। জানো বোধকরি, আমার বাবা তমিজউদ্দীন খান, অবিভক্ত বাংলায় দুবার কেবিনেট-সদস্য ছিলেন। হক-মন্ত্রিসভায় ছিলেন স্বাস্থ্য ও শিল্পমন্ত্রী, নাজিমউদ্দিন-মন্ত্রিসভায় ছিলেন শিক্ষামন্ত্রী। দেশবিভাগের সময়ে তিনি কেন্দ্রীয় আইনপরিষদের সদস্য ছিলেন। যা হোক, রাজনীতিবিদ ছাড়াও আব্বার একটি আলাদা সত্তা ছিল। তিনি ইংরেজি সাহিত্যে প্রেসিডেন্সির অনার্স গ্র্যাজুয়েট, কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের এম.এ.। তাঁর ছিল বইয়ের এক বিশাল ভাণ্ডার, যা আমার খুব কাজে লেগেছিল।
হামিদ কায়সার : বইয়ের ভাণ্ডার পেয়ে শৈশবেই বইয়ের পোকা হয়ে উঠলেন?
রাজিয়া খান : তা হলাম।
হামিদ কায়সার : সেই অভিজ্ঞতা জানতে চাচ্ছি, কীভাবে শুরু হলো আপনার বইপড়া?
রাজিয়া খান : সবকিছু তো ওভাবে মনে নেই। প্রথম পড়া বই বোধহয় গোর্কির মা। বাংলা অনুবাদ। পড়ে অভিভূত হই। পড়ার জন্য ছিল আব্বার বিশাল সঞ্চয় – বর্ষবাণী, ভারতবর্ষ পত্রিকা, শরৎচন্দ্রের সব উপন্যাস, টঢ়ঃড়হ ঝরহপষধরৎ-এর ঙরষ, জধষঢ়য ঋড়ী-এর ঞযব অৎঃ ড়ভ ঃযব ঘড়াবষ – সব একে একে হজম করে ফেলি।
হামিদ কায়সার : তখন কোন কোন লেখকের লেখা আপনাকে অভিভূত করেছিল?
রাজিয়া খান : বিভূতি, গোর্কির কথা তো বলেছিই। আরো ভালো লেগেছিল শরৎচন্দ্র, প্রমথনাথ বিশী, মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়, প্রবোধ সান্যাল, নারায়ণ গঙ্গোপাধ্যায়, অন্নদাশঙ্কর- সবাই। অ্যালেক্সি টলস্টয়, আনাতোল ফ্রাঁসে, ভিক্টর হুগো – এঁরাও। এঁদের মধ্যে শরৎ, মানিক, টলস্টয়, গোর্কি, চেখভ আমার গুরুপ্রতিম। তখন পাগলের মতো পড়ি আর লেখি।
হামিদ কায়সার : পড়ে পড়ে আপনার মধ্যে সৃষ্টির স্পৃহা জেগেছিল?
রাজিয়া খান : ঠিক তা-ই।
হামিদ কায়সার : একটু বিস্তারিত জানতে চাচ্ছি – আপনার সেই শৈশব, সেই লেখালেখির শুরুর ক্ষণগুলোকে। রাজিয়া খান : তখন কলকাতার আমীর আলী অ্যাভিন্যুতে বিরাট তিনতলার এক বাড়িতে থাকতাম। এই বাড়িতেই শুরু আমার গল্প-উপন্যাস লেখা। তিনতলায় একাকী ঘরে, ট্রামের ঘড়ঘড় শব্দের মধ্যে লিখলাম উপন্যাস ‘উদয়ের পথে’, ‘অলুক্ষুণে’। টেবিলের নিচে পুতুল। ফাঁকে ফাঁকে খেলতাম। আব্বার রিভলভিং বুক শেলফে সঞ্চিত ভারতবর্ষ, প্রবাসী, বসুমতী পড়তাম। লর্ড সিনহা রোডের আভিজাত্যে লালিত আমাদের ততোধিক বনেদি স্কুল বেগম রোকেয়ার গড়া, তাতে বাংলা পড়াতেন মেহরুন আপা। গল্প-টল্প লেখায় প্রচুর উৎসাহ দিতেন। মিস মর্টন হেডমিস্ট্রেস। স্কুল শুরু হতো নজরুলের ‘খেলিছ এ বিশ্ব লয়ে হে বিরাট শিশু’ গান দিয়ে। কচিপাতা, কাঠবিড়ালীর আত্মকাহিনী লিখে মজা পেতাম। তিনতলায় হোস্টেল। মুনীর ভাইয়ের (মুনীর চৌধুরী) হবু বউ, লিলি মির্জা কালবৈশাখী নাটকে নাচলেন। আমি জুঁই ফুল, লাবু মির্জা আমের মঞ্জরি। লেডি কেসির হাত থেকে প্রাইজ নিলাম। সারাদিন রঙ্গন ফুলের ঝোপের পাকা ফল খুঁজে খেতাম। কালবৈশাখীর রিহার্সালে আমি যখন বলতাম ‘একী হদবলল’ (হযবরল) – লিলি আপারা হেসে কুটিকুটি হতেন।… সেই কলকাতা ত্যাগ করতে হলো। এলো দাঙ্গা, হলো দেশবিভাগ!
হামিদ কায়সার : এই যে আপনি লিখছেন, আপনার বাবা তো ছিলেন একজন মুসলিম লীগার, উনি ব্যাপারটি কীভাবে দেখতেন?
রাজিয়া খান : এটি ঠিক যে আব্বা রক্ষণশীল ছিলেন। কিন্তু আগেই তো বলেছি উনি ছিলেন প্রেসিডেন্সি কলেজের ইংরেজি-গ্র্যাজুয়েট – একটা উদার মুক্ত মনও ছিল ওঁর। শুনলে অবাক হবে, ১৯৫৪ সালে আমি আর আমার বড় বোন, বর্তমানে মহিলা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস চ্যান্সেলর প্রফেসর কুলসুম হুদা, ভোট দিয়েছিলাম যুক্তফ্রন্টকে, আব্বা কিন্তু ছিলেন মুসলিম লীগার। উনি কোনোদিন আমাদের কোনো মতে কিংবা কাজে বাধা দেননি।
সত্যি আব্বা ছিলেন দেবতুল্য মানুষ; নিজে এত রক্ষণশীল, ধার্মিক হয়েও আমার ব্যক্তিস্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ করেননি। ক্লিফটন রোডে একটি বিরাট ঘর পার্টিশন দিয়ে দুভাগ করা, একদিকে আব্বার ঘরোয়া অফিস, অন্যদিকে আমার পড়ার টেবিল। সামনের জানালা দিয়ে ক্লিফটন-বিচের সামুদ্রিক হাওয়ার উন্মত্ততা বইপত্র তছনছ করত। আমার পড়ার জায়গা পার হয়ে তাঁকে শোবার ঘরে যেতে হতো। টেবিলে এমিল বার্নসের মার্কসবাদ আর কমিউনিস্ট মেনিফেস্টো। একদিন দেখলাম, উদ্বিগ্ন চোখে সেদিকে তাকিয়ে আছেন, কিন্তু মুখে কিছু বলছেন না।
আরো পরের একটি ঘটনা বলি, তখন তো বিশ্ববিদ্যালয়ের হলে নাটক হতো, কিন্তু অভিনয়ের জন্যে মেয়ে পাওয়া যেত না। একবার আমাকে বলা হলো ইকবাল হলের নাটকে অভিনয় করতে। রাজি হলাম, বাড়িতে কিন্তু বললাম না। নাটক করব লুকিয়ে। নাটকটি ছিল নুরুল মোমেনের খধি রং ধহ অংং। আমি উকিলের গাউন পরে মঞ্চে উঠেছি। অভিনয়ও চালিয়ে যাচ্ছি বেশ ভালোভাবে। হঠাৎ চোখে পড়ল সামনের রো-তে বসে আছেন আব্বা – বসে বসে আমার অভিনয় দেখছেন। তার মানেটা হলো, অভিনয়ের প্রতি তাঁর একধরনের মৌন সম্মতি রয়েছে।
হামিদ কায়সার : কলকাতা থেকে ঢাকায় কবে এলেন – সাহিত্যজগতের সঙ্গে সম্পৃক্তই বা হলেন কীভাবে?
রাজিয়া খান : কলকাতা থেকে ঢাকায় নয়, চলে এসেছিলাম চট্টগ্রামে। সেটি ১৯৪৭ সাল। দেশবিভাগের সময়ে। সে-অভিজ্ঞতা বর্ণিত হয়েছে আমার ‘ভ্রষ্টনীড়’ উপন্যাসে। ১৩ বছর বয়সে লেখা।
হামিদ কায়সার : ‘ভ্রষ্টনীড়’! বই হয়েছিল কি?
রাজিয়া খান : না, বই আকারে বের হয়নি। আমি আর আঞ্জুমান আরা বেগম মধুমিতা বলে একটা পত্রিকা বের করতাম, সেখানে বেরিয়েছিল ‘ভ্রষ্টনীড়’।
হামিদ কায়সার : ‘ভ্রষ্টনীড়ে’ নিশ্চয়ই দেশবিভাগের যন্ত্রণা ছিল?
রাজিয়া খান : চট্টগ্রাম আসার বছর দেড়েক পর শুরু করেছিলাম লেখা – হ্যাঁ, চলে আসার অভিজ্ঞতাই বর্ণনা হয়েছে – যাত্রা-ছেড়ে আসার বেদনা-স্টিমারে চড়া-নতুন জীবন-এইসব। তবে চট্টগ্রামে এসে এর সৌন্দর্য দেখে সত্যিই অভিভূত হয়েছিলাম – পাহাড় কী সবুজ! বড় ভালো লেগেছিল। আর কলকাতায় যেখানে ছিলাম, সেটি তো ছিল কংক্রিটের জঙ্গল।
হামিদ কায়সার : কলকাতা নিয়ে আপনার কোনো নস্টালজিয়া নেই, যেখানে আপনার শৈশব কেটেছে, পেয়েছেন লেখার মন্ত্রণা?
রাজিয়া খান : অবশ্যই আছে। মনের সে কোন গভীরে লুকিয়ে আছে কলকাতা – আমার শৈশবের কত স্মৃতি সেখানে – আমার লেখার মধ্যেই তো খুঁজে পাবে – বটতলার উপন্যাস, ‘ভ্রষ্টনীড়’, চিত্রকাব্য কোথায় নয়? সেখানে আমার মায়ের কবরও রয়েছে, সে-কবরের পাশে আমার জন্যে জমিও কিনে রেখেছি – বুঝতেই পারছ আমি আমার শৈশবকে কী গভীরভাবে অনুভব করি। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ তখন তুঙ্গে। দীর্ঘকাল অসহযোগ-আন্দোলনে অংশগ্রহণ করে, ব্রিটিশ জেলে পচে, আমার বাবা তমিজউদ্দীন খান তখন বাংলা মন্ত্রিসভার স্বাস্থ্যমন্ত্রী। তখনই মায়ের মৃত্যুশয্যায় গম্ভীর মুখে বসে আছেন ড. বিধান রায়, মণি দে। আব্বা কাঁদছেন। আমি টলমলে পায়ে বারান্দায় – একসময়ে বললাম, কাঁদো কেন? ওতো ঘুমিয়ে আছে। আমার কেরালার দাইমা কোলে তুলে কেঁদে বলল, তোর মা আমারে বিশ টাকায় কিনছে – এখন আমিই তোর মা।
হামিদ কায়সার : কিন্তু এটাও তো ঠিক, কলকাতা থেকে চট্টগ্রাম এসে জীবনের জন্যে আপনি এক নতুন প্রণোদনা খুঁজে পান?
রাজিয়া খান : জীবনের নিয়মই তো এই – জীবন নিজস্ব গতিতেই এগিয়ে চলে, আর তখন তো পেছন ফিরে তাকানোর সময়ই ছিল না। স্বপ্ন দেখার বয়স তখন, চট্টগ্রামে এসে ভর্তি হয়েছিলাম খাস্তগীরে। খাস্তগীরে বাংলার শিক্ষিকা তাপসীদি কী করে যেন বুঝতে পেরেছিলেন আমার লেখার হাত আছে। উনি গ্রীষ্মের ছুটিতে হোমওয়ার্ক দিলেন উপন্যাস লেখার। লিখলাম ‘বিধাতার দান’। সে-ও বলতে পারো শরৎচন্দ্রের নকল – কাশীবাসের কাহিনী, দশাশ্বমেধ ঘাটের বর্ণনা।
হামিদ কায়সার : কোন ক্লাসে পড়তেন তখন?
রাজিয়া : সেভেন কি এইট।
হামিদ কায়সার : তারপর ঢাকায় এলেন কখন?
রাজিয়া খান : তারপর ঢাকায় না। চট্টগ্রাম থেকে সোজা করাচি। আব্বার কর্মসূত্রে। পাকিস্তানে অনেক গুরুদায়িত্ব পালন করতে হতো ওঁকে। ১৯৪৭-এর পর তিনি প্রথমে গণপরিষদের ডেপুটি স্পিকার হলেন, পরে হলেন স্পিকার। আইয়ুব খানের আমলে আরো একবার স্পিকার হয়েছিলেন – তখন আইয়ুব দেশের বাইরে গেলে তাঁকে প্রেসিডেন্টের দায়িত্বও পালন করতে হয়েছে। করাচিতে কিন্তু আমার মন টিকল না। তখন ১৭-১৮ বছর বয়স। আই এ পড়ি। সবসময়েই ত্রাস – মরুমুল্লুকে এসে পাছে আমার বাংলাটা না আবার নষ্ট হয়ে যায়! সে-ভয়েই প্রচুর বাংলা লিখতাম। এইভাবে হঠাৎ, কোন প্রেরণায় বলতে পারব না, শুরু হলো – অনুকল্প। বটতলার উপন্যাসের আগে কিন্তু আমি শুরু করেছিলাম অনুকল্প। তবে ওটি শেষ করার আগেই লেখা হয়ে যায় বটতলার উপন্যাস। অনুকল্প শেষ হয় চার বছর পর।
হামিদ কায়সার : আগে যা লিখেছেন, তা আপনি নিজেই বাদ দিয়ে দিয়েছেন, সে-অর্থে বটতলার উপন্যাসই আপনার প্রথম উপন্যাস, অনুকল্প শুরু করলেও স্বতঃস্ফূর্তভাবে আপনার ভেতর থেকে বেরিয়ে এসেছে বটতলা-ই – তাহলে কি বলব এতে আপনার জীবনের ছায়া আছে, সচরাচর যা ঔপন্যাসিকদের ক্ষেত্রে হয়ে থাকে?
রাজিয়া খান : একদম নেই। বটতলা কী অনুকল্প – কোনোটিতেই আমার ব্যক্তিগত জীবনের অভিজ্ঞতা নেই। সবকিছু অতিক্রম করতে পেরেছি। বটতলার নায়ক পুরুষ অ্যাডাল্ট। থাকার মধ্যে বলতে পারো – চাটগাঁ, করাচি, কলকাতা, ঢাকা, ভাষা-আন্দোলন – এসব দেখা জায়গা ও ঘটনা আছে।
হামিদ কায়সার : বটতলার উপন্যাস কি করাচিতে লেখা?
রাজিয়া খান : করাচিতে। বিষণ্ন মনে তখন ঢাকা থেকে করাচি ফিরেছি। ছিমছাম ঘরে শুরু হলো বটতলার উপন্যাস। সমুদ্রের বাতাস চিরুনি উড়িয়ে নিত। সারারাত জেগে লিখতাম। এ-সময়ে কিন্তু আমার বই-পড়ারও এক নতুন দুয়ার খুলে যায় –
হামিদ কায়সার : এ-সময়ের পড়ার অভিজ্ঞতা বলুন।
রাজিয়া খান : শীলাদের বাসায় ছিল বিরাট লাইব্রেরি। ওখান থেকে পেলাম কান্ট, হেগেল, শপেনহাওয়ার। দর্শনে ডুব দিলাম। এ সময় মরিয়রের রেবেকা উপন্যাস হাতে আসে। জন স্টাইনবেক, শ, সার্ত্র, প্রুস্ত পড়া শুরু তখন থেকেই। পাশাপাশি বাংলা উপন্যাস।
হামিদ কায়সার : সেই করাচিতে?
রাজিয়া খান : হ্যাঁ। মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়, প্রবোধ সান্যাল, নারায়ণ গঙ্গোপাধ্যায়, অন্নদাশঙ্কর, বুদ্ধদেব, অচিন্ত্যকুমার, বিভূতিভূষণ প্রভৃতি। ছিন্নপত্র চিত্তে দারুণ দোলা দিল। কলেজ-লাইব্রেরিতে নাইপলের হাউজ ফর মি. বিশওয়াস, জর্জ এলিয়টের মিল অন দি ফ্লস পেলাম। এভাবে নীরবে সন্তর্পণে বিশ্বসাহিত্যের ভাণ্ডার আমার জন্য উন্মুক্ত হচ্ছিল। নাজমুদ্দীন হাশিম ছিলেন বড় আপার শ্বশুরবাড়ির আত্মীয়, করাচি বেতারে চাকরিরত। দীর্ঘকাল করাচিতে আমাদের সঙ্গে ছিলেন। তিনিও আমার আব্বার মতো প্রেসিডেন্সি কলেজে ইংরেজির ছাত্র ছিলেন। তাঁর সমৃদ্ধ সংগ্রহও আমার আয়ত্তে এলো।
তারপর তো চলে এলাম ঢাকায়, ভর্তি হলাম ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে। শুধু সাহিত্যচর্চাই নয়, জড়িয়ে পড়লামমঞ্চনাটকসহ অনেক কিছুর সঙ্গেই।
হামিদ কায়সার : আপনার এই ঢাকার নতুন জীবন-সম্পর্কে জানতে চাচ্ছি – মেধাবী ছাত্রী, ফ্যাশন-সচেতন আধুনিক তরুণী এবং শিল্প-সাহিত্যের একজন সক্রিয় কর্মী হিসেবে আপনি নাকি ছিলেন আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দুতে?
রাজিয়া খান : তাই নাকি! যখন করাচি থেকে এলাম, তখন কিন্তু আমাকে মেধাবীও বলা যায় না, ফ্যাশনেবলও বলা যায় না। ফ্যাশন যে করব টাকা কোথায়, তখন তিন-চারটির বেশি পোশাক আমার ছিল না। পরে যদি কিছুটা ফ্যাশন-সচেতন হয়েও থাকি সেটি নিজে রোজগার করার পর। তবে এটা বলতে পারি, আমার অন্তর্জগৎ ছিল ঐশ্বর্যময় – মানসিক পরিবর্তন ঘটছিল আমার মধ্যে। আসলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে এসে বেশ মজা পাচ্ছিলাম, এখানকার পড়ানোর পদ্ধতি, পরিবেশ – সবকিছু আমার খুব ভালো লেগেছিল। আর অনেক পড়ার সুযোগ পেয়েছিলাম – সব বাইরের বই, পাঠ্যবইয়ের চেয়ে বাইরের বই পড়তেই তখন বেশি ভালো লাগত।
হামিদ কায়সার : আপনাকেও নাকি অনেকের ভালো লাগত?
রাজিয়া খান : হ্যাঁ, মানুষের ভালোবাসা আমি পেয়েছি –
হামিদ কায়সার : না, মানে বলছিলাম, আপনার নাকি অনেক অনুরাগী ছিল… মানে হৃদয়ঘটিত ব্যাপার…
রাজিয়া খান : শুনেছি। আমিও শুনেছি। অনেক কথাই কানে আসত। আর কিছু যে হচ্ছে আমি নিজেও টের পেতাম, কিন্তু এসব বিষয়ে খুব একটা সচেতন ছিলাম না। অনভিজ্ঞ ছিলাম, একটু বুঝি বোকাও। প্রচলিত অর্থে যা হয়, আমার ক্ষেত্রে তেমনটি হয়নি। হয়তো মনে মনে কিছু ঘটে যেত, কিন্তু এক ধরনের নিস্পৃহতা, নির্মোহ স্বভাবের কারণে তা আর এগোত না, কোথায় যেন একটা জটিলতা ছিল আমার এই মনের ব্যাপার-স্যাপারগুলোতে।
হামিদ কায়সার : বলছিলেন, মঞ্চনাটকে জড়িয়ে পড়েছিলেন। সেটা কীভাবে হলো?
রাজিয়া খান : সে-ও আরেক কাহিনী।। আমার বড় দুলাভাই সিভিল সার্জন এবং মেডিক্যাল কলেজ নাট্য-সমিতির প্রেসিডেন্ট। তাঁরই উৎসাহে জড়িয়ে পড়া। নাটক ছিল বিজয়া। সহশিল্পীদের মধ্যে ছিলেন মুনীর চৌধুরী – বিলাসবিহারী, নূরজাহান মুরশিদ – বিজয়া, নরেনের ভূমিকায় ডা. নূরুল ইসলাম, আমি ছিলাম নলিনীর ভূমিকায়। ওদিকে সাহিত্যচর্চা তো চলছিলই। একদিন বিশ্ববিদ্যালয়ে চশমাধারী দীর্ঘকায় এক অচেনা ভদ্রলোক এসে বললেন, আমি আবদুল গাফফার চৌধুরী। মেঘনা পত্রিকার সম্পাদক। আপনার উপন্যাসের কথা সৈয়দ হক বলেছেন। দেবেন? ছাপব।
হামিদ কায়সার : দিলেন?
রাজিয়া খান : দিলাম। ধারাবাহিকভাবে বটতলার উপন্যাস দু-এক কিস্তি ছাপার পর সিরাজুর রহমান বাসায় এলেন পুরো পাণ্ডুলিপিটি নিতে। যখন বই হলো তখন ঘটল জীবনের এক বিশেষ অর্জন।
হামিদ কায়সার : বটতলার উপন্যাস প্রকাশ হওয়ার পর কী হলো?
রাজিয়া খান : সাড়া পড়েছিল। নিরীক্ষাধর্মী উপন্যাস হিসেবে সমালোচকদের প্রশংসাও জুটেছিল।
হামিদ কায়সার : অনুকল্প ?
রাজিয়া খান: অনুকল্প যখন বের হলো, তখন আমি ইংল্যান্ড যাওয়ার জন্য প্রস্তুত হচ্ছি। প্রচণ্ড ব্যস্ততায় পুলকিত হতে হতেও হতে পারছি না।
হামিদ কায়সার : বটতলার উপন্যাস, অনুকল্পের পর লিখলেন –
রাজিয়া খান : প্রতিচিত্র। অসহযোগ-আন্দোলন নিয়ে লেখা। সরদার জয়েনউদ্দিন ছেপে দিয়েছিলেন। তখন আমি মাত্র লন্ডন থেকে ফিরেছি। সরদার জয়েনউদ্দিন বললেন, তুমি আমার ছোটবোনের মতো, তোমার এই বইটা আমি ছেপে দেবো। এরপর লিখলাম চিত্রকাব্য। লেখার দশ বছর পর ছাপা হয়।
হামিদ কায়সার : দশ বছর অপেক্ষা করতে হয়েছে?
রাজিয়া খান : আমার প্রায় প্রতিটি বইয়ের ক্ষেত্রেই তো তা হয়েছে। অনেকের লেখার আগেই বই বের হয়ে যায়। আমার বটতলার উপন্যাস লেখা হয়েছে ৫৪ সালে, ছাপা হলো ৫৮ সালে। দ্রৌপদী লেখা শেষ হয়েছে ৮৯ সালে, প্রকাশিত হয়েছে ৯৩ সালে। পাদবিকও ছাপা হলো লেখার অনেক পরে। এখনো প্রচুর লেখা পড়ে আছে ছাপানোর মতো।
হামিদ কায়সার : আপনার উপন্যাসগুলোর মধ্যে কোনটিকে সবচেয়ে সার্থক মনে হয়?
রাজিয়া খান : দ্রৌপদী।
হামিদ কায়সার : কেন – একটু বিশদ করে বলবেন কি?
রাজিয়া খান : এতে মুক্তিযুদ্ধ, বিশ্ববিদ্যালয়-জীবন, পঁচিশে মার্চের গণহত্যা, অবহেলিত তাজউদ্দিনের অবদান – এসব এসেছে।
হামিদ কায়সার : আজ জীবনের এই পরিণত পর্যায়ে এসে নিজের লেখা সম্পর্কে আপনার মূল্যায়ন কী?
রাজিয়া খান : অনেক সময়ে বিশ্বাস হয় না, আমার কলম দিয়ে এসব লেখা বেরিয়েছে। একটি ভিন্ন শক্তি, যা আমার নয়, কাজ করছে বলে মনে হয়। আর হালকা বিষয়ের লেখা আমার পছন্দ নয়। তাই চেষ্টা করি জোরালো বক্তব্য রাখতে। একেবারে অসফল হই বলে মনে হয় না।
হামিদ কায়সার : বিষয়, প্রকরণ, শৈলী – এসব নিয়ে কি আপনি ভেবে থাকেন, না মনে করেন যে, উপন্যাসের বিষয়ই প্রকৃতিগতভাবে তার শৈলীকে খুঁজে নেয়?
রাজিয়া খান : বটতলার উপন্যাস আলোড়ন সৃষ্টি করেছিল তার নিরীক্ষাধর্মী নতুনত্বের জন্যে। পরের উপন্যাসগুলোতে বিষয়বস্তুর বৈচিত্র্য থাকলেও শৈলীতে চমকপ্রদ নতুনত্ব নেই, তবে ভাষা ক্রমশ কঠিনতর অথচ নিপুণ হয়েছে বলে আমার বিশ্বাস। ভাবাবেগের চাইতে বিশ্লেষণে আগ্রহ প্রকট হয়েছে।
হামিদ কায়সার : লেখালেখির সূচনালগ্নে কিংবা পরবর্তী কোনো সময়ে কি কোনো লেখক কিংবা বিশেষ মতবাদ আপনাকে প্রভাবিত করেছিল?
রাজিয়া খান : আনুষ্ঠানিকভাবে সাহিত্য পড়তে আসার বহু আগেই দেশী-বিদেশী বই পড়তাম। মার্কস্বাদ প্রভাবিত করেছিল শুরুর দিকে।
হামিদ কায়সার : একজন লেখক হিসেবে কি কখনো সমাজের সঙ্গে নিজের দ্বন্দ্ব অনুভব করেছেন?
রাজিয়া খান : দ্বন্দ্ব তো থাকেই। আমার মননশীলতা অবহেলিত হয়। কম সময়ই সমবেদনা পাই। আঘাত, অপমান, অবহেলা প্রতিনিয়ত সহ্য করতে হয়। তবে প্রশংসা, শ্রদ্ধা, ভালোবাসাও পাই কখনো কখনো। আবার অন্যভাবে যদি বলি, অনেক লৌকিকতা, সামাজিকতা আমার রুচিবিরুদ্ধ, তাই সংঘাত হয়।
হামিদ কায়সার : বাংলা সাহিত্যে আপনার দৃষ্টিতে সেরা উপন্যাস কোনটি?
রাজিয়া খান : শেষ প্রশ্ন। শরৎচন্দ্রের। এর আধুনিকতা, বৈদগ্ধ্য, মৌলিকতা অসীম। নরনারীর প্রেম, বিবাহবহির্ভূত একত্রে বসবাস, প্রবাসী বাঙালির বৈদগ্ধ্য – এগুলো খুবই অর্থপূর্ণ। এর সঙ্গে যোগ হয়েছে বীর রাজেন্দ্রর দেশপ্রেম, আত্মত্যাগ।
হামিদ কায়সার : আর বিদেশী যদি একটি উপন্যাসের নাম বলতে হয়?
রাজিয়া খান : গলসওয়ার্দির ফারসাইট সাগার প্রতি অশেষ দুর্বলতা আমার। পারিবারিক কাহিনীর এমন বিচিত্র বিন্যাস আর কোথাও পাইনি। অসংখ্য ভিন্ন ধরনের চরিত্রের সমাবেশ একে খুব সুখপাঠ্য করেছে। এর সঙ্গে আর একটি উপন্যাসের নাম বলব – আনা কারেনিনা। এত বিশাল পটভূমিকায় এত সূক্ষ্ম বিশ্লেষণ অসাধারণ, অনবদ্য, অনুপম।
হামিদ কায়সার : সাম্প্রতিক সময়ের লেখকদের মধ্যে কার কার লেখা আপনার ভালো লাগে?
রাজিয়া খান : আখতারুজ্জামান ইলিয়াস, আবু ইসহাকের লেখা। তাছাড়া এ-মুহূর্তে যে-কটি বইয়ের নাম মনে পড়ছে – শওকত আলীর ওয়ারিশ, রাবেয়া খাতুনের মধুমতি, সৈয়দ হকের সীমানা পেরিয়ে, সেলিনা হোসেনের নীল ময়ূরের যৌবন, মাহমুদুল হকের নিরাপদ তন্দ্রা, প্রতিভা বসুর সমুদ্র হৃদয় ও কঙ্কাবতী দত্তের লেখা। ভালো লাগে রিজিয়া রহমানের গল্প।
হামিদ কায়সার : সাম্প্রতিক সময়ের সাহিত্যচর্চার পরিবেশকে আপনার কেমন মনে হয়?
রাজিয়া খান : এখন মানুষের উপন্যাস পড়ার সময় কম। ভালো লেখকের কদরও কম। টিভির দিকে সবার নজর। তবু মনে করি, কিছু পাঠক উপন্যাসের জন্য তৃষ্ণার্ত। তাদের জন্যই আমরা লিখি।
হামিদ কায়সার : সার্বিক পরিবেশটা কেমন?
রাজিয়া খান : খুব খারাপ না। তবে এখন শব্দদূষণ বেশি, নিভৃতির অভাব।
হামিদ কায়সার : পশ্চিমবঙ্গের সাহিত্যের সঙ্গে আমাদের সাহিত্যের তুলনা করলে কী কী সাদৃশ্য বা আমাদের সাহিত্যের কী কী বৈশিষ্ট্য চোখে পড়ে?
রাজিয়া খান : সাদৃশ্য অনেক। প্রতিভা বসুর সমুদ্র হৃদয় ঢাকার গল্প। অন্নদাশঙ্করের লেখায়ও পূর্ববঙ্গ বারবার আসে। সমুদ্র হৃদয়ের কথাই বলছি। আহসান মঞ্জিলের এমন সূক্ষ্ম বর্ণনা, হিন্দু-মুসলিম সম্পর্কের এমন বিচিত্র প্রকাশ আর কোথাও পাইনি।
হামিদ কায়সার : প্রকৃত লেখকদের পায়ের নিচের জমিনটা কি একই? মাথার উপরের আকাশটাও কি এক? দেশ-বিদেশের লেখক এবং তাঁদের লেখার সঙ্গে আপনার রয়েছে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ যোগ – সে-অভিজ্ঞতার আলোক থেকেই জানতে চাচ্ছি।
রাজিয়া খান : যে-লেখা যুগোত্তীর্ণ, তার আকাশ-মাটি এক। সমস্যায়ও মিল। ওয়ালকট আফ্রিকার, পৃথিবীরও। নেরুদা, হিকমত, মায়াকভস্কি সব প্রগতিশীল মানুষের প্রতিভূ। বিক্রম শেঠ পাশ্চাত্যসংগীত নিয়ে যে-উপন্যাস লিখেছেন তা কোনো ইউরোপীয় এখনো পারেননি। তাঁর আকাশে ইউরোপের চক্রবাল একাকার হয়ে গেছে। জাঁ পল সার্ত্র বিশ্বমানবের মুখপাত্র, লৌহহৃদয় কেমন করে মানবতাকে গ্রাস করে, তার উপলব্ধির বর্ণনা বিশ্বজনীন। ব্রেশটের সৎ মানুষের সন্ধানে আমাদের সবার আত্মার আর্ত প্রতিধ্বনি। বেকেটের গডোর প্রতীক্ষা সব মানুষের নিরন্তর প্রতীক্ষার প্রতীক। সুকান্তের ঝলসানো রুটির মতো চাঁদ ন্যুট হামসুনের প্রচণ্ড ক্ষুধার ক্রন্দন- সমতুল্য। গ্রাৎসিয়া দেলাদ্দের মা আর গোর্কির মা শাশ্বত জননীরূপ। শওকত ওসমানের ক্রীতদাসের হাসি আর রুশোর বর্ণিত শেকল একই ধরনের দাসত্বের ছবি।
হামিদ কায়সার : এখন কী লিখছেন, লেখালেখি নিয়ে ভবিষ্যতের পরিকল্পনাই-বা কী?
রাজিয়া খান : ঈশ্বর ইবলিশ আগুন নামে একটি উপন্যাস লিখছি। কিছু কবিতা লিখছি ইংরেজি-বাংলায়, কিছু গল্প…
হামিদ কায়সার : আচ্ছা আপনার তো কোনো গল্পগ্রন্থ নেই, লিখেছেন তো প্রচুর।
রাজিয়া খান : ছোটগল্পগ্রন্থ বের হয়নি – এ-ইতিহাস দুঃখজনক। মুক্তধারার চিত্ত সাহা ছাপাতে উদ্যত, পার্সেন্টেজ নিয়ে অমত হলো – আর দিলাম না পাণ্ডুলিপি। এখন রফিকুল্লাহ খান ৩৫টি গল্প নিয়ে গেছেন ছাপার জন্য। দেখি কী হয়!
হামিদ কায়সার : আপনার জীবনাভিজ্ঞতা নিয়ে কিছু লিখছেন না – আত্মজৈবনিক?
রাজিয়া খান : অনন্যার অনুরোধে আত্মকথা লিখছি। আমার নীলকণ্ঠ স্তম্ভে ধারাবাহিকভাবে বের হচ্ছে।
হামিদ কায়সার : আপনিও পেরিয়ে এসেছেন যৌবন – প্রেমসহ মানবিক অনুভূতিগুলোকে আপনি কী দৃষ্টিতে দেখেছেন? আপনার নিজস্ব অভিজ্ঞতাই-বা কেমন ছিল এসব ক্ষেত্রে?
রাজিয়া খান : তোমাদের সকলের মতোই। তবে ভালোবাসা প্রকাশের অনীহা আমাকে বিপুলভাবে বঞ্চিত করেছে।
হামিদ কায়সার : সাহিত্যচর্চা করতে গিয়ে কখনো বিরূপ অবস্থার মুখোমুখি হননি?
রাজিয়া খান : পিতৃগৃহে আমার পড়ালেখার ভিন্ন দাম ছিল। এখন তুচ্ছ সাংসারিক প্রয়োজনে ধ্যান, সৃজন ব্যাহত হয়।
হামিদ কায়সার : লেখকজীবন কি আপনার জীবনকে বাড়তি কিছু দিয়েছে?
রাজিয়া খান : আমি দিয়েছি বেশি লেখাকে। তেমন কিছু পাইনি। ৎ কঠিনতর অথচ নিপুণ হয়েছে বলে আমার বিশ্বাস। ভাবাবেগের চাইতে বিশ্লেষণে আগ্রহ প্রকট হয়েছে।
হামিদ কায়সার : লেখালেখির সূচনালগ্নে কিংবা পরবর্তী কোনো সময়ে কি কোনো লেখক কিংবা বিশেষ মতবাদ আপনাকে প্রভাবিত করেছিল?
রাজিয়া খান : আনুষ্ঠানিকভাবে সাহিত্য পড়তে আসার বহু আগেই দেশী-বিদেশী বই পড়তাম। মার্কস্বাদ প্রভাবিত করেছিল শুরুর দিকে।
হামিদ কায়সার : একজন লেখক হিসেবে কি কখনো সমাজের সঙ্গে নিজের দ্বন্দ্ব অনুভব করেছেন?
রাজিয়া খান : দ্বন্দ্ব তো থাকেই। আমার মননশীলতা অবহেলিত হয়। কম সময়ই সমবেদনা পাই। আঘাত, অপমান, অবহেলা প্রতিনিয়ত সহ্য করতে হয়। তবে প্রশংসা, শ্রদ্ধা, ভালোবাসাও পাই কখনো কখনো। আবার অন্যভাবে যদি বলি, অনেক লৌকিকতা, সামাজিকতা আমার রুচিবিরুদ্ধ, তাই সংঘাত হয়।
হামিদ কায়সার : বাংলা সাহিত্যে আপনার দৃষ্টিতে সেরা উপন্যাস কোনটি?
রাজিয়া খান : শেষ প্রশ্ন। শরৎচন্দ্রের। এর আধুনিকতা, বৈদগ্ধ্য, মৌলিকতা অসীম। নরনারীর প্রেম, বিবাহবহির্ভূত একত্রে বসবাস, প্রবাসী বাঙালির বৈদগ্ধ্য – এগুলো খুবই অর্থপূর্ণ। এর সঙ্গে যোগ হয়েছে বীর রাজেন্দ্রর দেশপ্রেম, আত্মত্যাগ।
হামিদ কায়সার : আর বিদেশী যদি একটি উপন্যাসের নাম বলতে হয়?
রাজিয়া খান : গলসওয়ার্দির ফারসাইট সাগার প্রতি অশেষ দুর্বলতা আমার। পারিবারিক কাহিনীর এমন বিচিত্র বিন্যাস আর কোথাও পাইনি। অসংখ্য ভিন্ন ধরনের চরিত্রের সমাবেশ একে খুব সুখপাঠ্য করেছে। এর সঙ্গে আর একটি উপন্যাসের নাম বলব – আনা কারেনিনা। এত বিশাল পটভূমিকায় এত সূক্ষ্ম বিশ্লেষণ অসাধারণ, অনবদ্য, অনুপম।
হামিদ কায়সার : সাম্প্রতিক সময়ের লেখকদের মধ্যে কার কার লেখা আপনার ভালো লাগে?
রাজিয়া খান : আখতারুজ্জামান ইলিয়াস, আবু ইসহাকের লেখা। তাছাড়া এ-মুহূর্তে যে-কটি বইয়ের নাম মনে পড়ছে – শওকত আলীর ওয়ারিশ, রাবেয়া খাতুনের মধুমতি, সৈয়দ হকের সীমানা পেরিয়ে, সেলিনা হোসেনের নীল ময়ূরের যৌবন, মাহমুদুল হকের নিরাপদ তন্দ্রা, প্রতিভা বসুর সমুদ্র হৃদয় ও কঙ্কাবতী দত্তের লেখা। ভালো লাগে রিজিয়া রহমানের গল্প।
হামিদ কায়সার : সাম্প্রতিক সময়ের সাহিত্যচর্চার পরিবেশকে আপনার কেমন মনে হয়?
রাজিয়া খান : এখন মানুষের উপন্যাস পড়ার সময় কম। ভালো লেখকের কদরও কম। টিভির দিকে সবার নজর। তবু মনে করি, কিছু পাঠক উপন্যাসের জন্য তৃষ্ণার্ত। তাদের জন্যই আমরা লিখি।
হামিদ কায়সার : সার্বিক পরিবেশটা কেমন?
রাজিয়া খান : খুব খারাপ না। তবে এখন শব্দদূষণ বেশি, নিভৃতির অভাব।
হামিদ কায়সার : পশ্চিমবঙ্গের সাহিত্যের সঙ্গে আমাদের সাহিত্যের তুলনা করলে কী কী সাদৃশ্য বা আমাদের সাহিত্যের কী কী বৈশিষ্ট্য চোখে পড়ে?
রাজিয়া খান : সাদৃশ্য অনেক। প্রতিভা বসুর সমুদ্র হৃদয় ঢাকার গল্প। অন্নদাশঙ্করের লেখায়ও পূর্ববঙ্গ বারবার আসে। সমুদ্র হৃদয়ের কথাই বলছি। আহসান মঞ্জিলের এমন সূক্ষ্ম বর্ণনা, হিন্দু-মুসলিম সম্পর্কের এমন বিচিত্র প্রকাশ আর কোথাও পাইনি।
হামিদ কায়সার : প্রকৃত লেখকদের পায়ের নিচের জমিনটা কি একই? মাথার উপরের আকাশটাও কি এক? দেশ-বিদেশের লেখক এবং তাঁদের লেখার সঙ্গে আপনার রয়েছে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ যোগ – সে-অভিজ্ঞতার আলোক থেকেই জানতে চাচ্ছি।
রাজিয়া খান : যে-লেখা যুগোত্তীর্ণ, তার আকাশ-মাটি এক। সমস্যায়ও মিল। ওয়ালকট আফ্রিকার, পৃথিবীরও। নেরুদা, হিকমত, মায়াকভস্কি সব প্রগতিশীল মানুষের প্রতিভূ। বিক্রম শেঠ পাশ্চাত্যসংগীত নিয়ে যে-উপন্যাস লিখেছেন তা কোনো ইউরোপীয় এখনো পারেননি। তাঁর আকাশে ইউরোপের চক্রবাল একাকার হয়ে গেছে। জাঁ পল সার্ত্র বিশ্বমানবের মুখপাত্র, লৌহহৃদয় কেমন করে মানবতাকে গ্রাস করে, তার উপলব্ধির বর্ণনা বিশ্বজনীন। ব্রেশটের সৎ মানুষের সন্ধানে আমাদের সবার আত্মার আর্ত প্রতিধ্বনি। বেকেটের গডোর প্রতীক্ষা সব মানুষের নিরন্তর প্রতীক্ষার প্রতীক। সুকান্তের ঝলসানো রুটির মতো চাঁদ ন্যুট হামসুনের প্রচণ্ড ক্ষুধার ক্রন্দন- সমতুল্য। গ্রাৎসিয়া দেলাদ্দের মা আর গোর্কির মা শাশ্বত জননীরূপ। শওকত ওসমানের ক্রীতদাসের হাসি আর রুশোর বর্ণিত শেকল একই ধরনের দাসত্বের ছবি।
হামিদ কায়সার : এখন কী লিখছেন, লেখালেখি নিয়ে ভবিষ্যতের পরিকল্পনাই-বা কী?
রাজিয়া খান : ঈশ্বর ইবলিশ আগুন নামে একটি উপন্যাস লিখছি। কিছু কবিতা লিখছি ইংরেজি-বাংলায়, কিছু গল্প…
হামিদ কায়সার : আচ্ছা আপনার তো কোনো গল্পগ্রন্থ নেই, লিখেছেন তো প্রচুর।
রাজিয়া খান : ছোটগল্পগ্রন্থ বের হয়নি – এ-ইতিহাস দুঃখজনক। মুক্তধারার চিত্ত সাহা ছাপাতে উদ্যত, পার্সেন্টেজ নিয়ে অমত হলো – আর দিলাম না পাণ্ডুলিপি। এখন রফিকুল্লাহ খান ৩৫টি গল্প নিয়ে গেছেন ছাপার জন্য। দেখি কী হয়!
হামিদ কায়সার : আপনার জীবনাভিজ্ঞতা নিয়ে কিছু লিখছেন না – আত্মজৈবনিক?
রাজিয়া খান : অনন্যার অনুরোধে আত্মকথা লিখছি। আমার নীলকণ্ঠ স্তম্ভে ধারাবাহিকভাবে বের হচ্ছে।
হামিদ কায়সার : আপনিও পেরিয়ে এসেছেন যৌবন – প্রেমসহ মানবিক অনুভূতিগুলোকে আপনি কী দৃষ্টিতে দেখেছেন? আপনার নিজস্ব অভিজ্ঞতাই-বা কেমন ছিল এসব ক্ষেত্রে?
রাজিয়া খান : তোমাদের সকলের মতোই। তবে ভালোবাসা প্রকাশের অনীহা আমাকে বিপুলভাবে বঞ্চিত করেছে।
হামিদ কায়সার : সাহিত্যচর্চা করতে গিয়ে কখনো বিরূপ অবস্থার মুখোমুখি হননি?
রাজিয়া খান : পিতৃগৃহে আমার পড়ালেখার ভিন্ন দাম ছিল। এখন তুচ্ছ সাংসারিক প্রয়োজনে ধ্যান, সৃজন ব্যাহত হয়।
হামিদ কায়সার : লেখকজীবন কি আপনার জীবনকে বাড়তি কিছু দিয়েছে? রাজিয়া খান : আমি দিয়েছি বেশি লেখাকে। তেমন কিছু পাইনি।


Leave a Reply
You must be logged in to post a comment.