তানভীর মোকাম্মেল
-
বেহুলা বাংলা – সনেট ২
নদী বলে স্বচ্ছতোয়া জল দিই তোমায় জলের আরেক নাম জীবন মধুময় বৃক্ষ বলে ছায়া দিই চৈত্রের নিদাঘ দুপুর আকাশ বলে বর্ষা দিই সাজাই তারার নূপুর বায়ু বলে মৃদুমন্দ বহি তোমার ঘর সূর্য বলে আলোয় ভরাই জগৎ চরাচর চাঁদ বলে দিই তোমায় অপরূপ স্বপ্ন মায়াজাল তারারা বলে সঙ্গী তোমার আলোকবর্ষকাল; কেবল বেহুলা বলে না কিছু নীরবে …
-
সহোদর
ঝাউডাঙার পিচের বড় রাস্তাটায় উঠেই পরেশ দত্ত বুঝতে পারলেন, ভুল করে ফেলেছেন। কারণ দূর থেকে শাঁ-শাঁ করে আসা মিলিটারিভরা ট্রাকটা তখন ওদের অনেকটাই কাছে এসে পড়েছে। মাথায়, কাঁখে বোঁচকা-বুঁচকি নিয়ে পলায়নরত ওর পরিবারটি ততক্ষণে সৈন্যদের চোখে পড়ে গেছে। অবশ্য কেবল পরেশ দত্তের পরিবার নয়, আরো কয়েকটি পরিবার। আসলে চুকনগর গণহত্যা থেকে কপালগুণে সপরিবারে বেঁচে যাওয়া…
-
ছায়ালক্ষ্মী
কে যেন এখনো কর্কটকালে অদৃশ্য আসে যায় আমাদের সিথানে বিষণœ শয্যায় বিরান ধানক্ষেতে আর বটতলার বিষাদ ছায়ায় মায়াচ্ছন্ন এক ছায়াপথ থেকে এ মøান জনপদে কে যেন নিভৃতে অস্ফুটে বলে যায় সুখে থাক; কেউ কী সে-ছায়ারূপ দেখতে পায় কেবল কবি ছাড়া কবি তাই ছন্নছাড়া যেমন পাগল খুঁজে ফেরে পরশপাথর তেমনই অচিন সে-রূপ আজো খোঁজে পাগলপারা। কিন্তু…
-
মুন্নী
সাতচল্লিশের দেশভাগের পর ভারতের উত্তরপ্রদেশের এলাহাবাদ থেকে দিনাজপুরে এসেছিল উর্দুভাষী আরিফ হাশমীর পরিবার। পরে দিনাজপুর শহর ছেড়ে পরিবারটি ঠাকুরগাঁওয়ে চলে আসে। উনিশশো একাত্তর সালে ওরা ঠাকুরগাঁওয়েই থাকত। হাশমী সাহেবের হার্ডওয়্যারের দোকান ছিল রেলস্টেশনের পাশে বাজারে। ঠাকুরগাঁও শহর ছাড়াও পঞ্চগড়, দেবীগঞ্জ এসব জায়গায় ওর পাইকারি দোকানের মাল চালান যেত। তাই ব্যবসাটা বেশ জমজমাটই ছিল হাশমী সাহেবের।…
-
কানাই
শ্রীকৃষ্ণের নামে নাম রেখেছিলেন ঠাকুরমা – কানাইলাল বিশ্বাস। হাটে-মাঠে মানুষ অবশ্য ওকে শুধু কানাই বলেই চিনত। তবে কেন জানি এলাকায় তেমন একটা সুনাম ছিল না কানাইয়ের। জন্মের পরপরই মা মারা গিয়েছিল কানাইয়ের। আর বয়োপ্রাপ্ত হওয়ার আগেই কলেরায় ভুগে দুদিনের ব্যবধানে মারা যায় বাবা রসিকলাল বিশ্বাস ও দিদি মালতী। সেই থেকে কানাই একা। মানুষ বৃদ্ধ ঠাকুরমার…