নাসরীন জাহান
-
গল্পহীনতার রাতগুলি
প্রায়ই এমন ছিন্ন-বিচ্ছিন্ন রাত্রিগুলি হাঁটতে থাকে। বড় বড় পাইপ … সড়ক থেকে অদূরে তার পাশেই ছাতাহীন জীর্ণ ঘর, এঁদো আঁশটে নর্দমার পাশেই শতছিন্ন কাপড় খাবলা খাওয়া মেঝেতে, তার ওপরই চিৎপাত পড়ে আছে গুগলু, পাশে কুকুরটা রাজকীয় হাই তুলছে, তার পাশেই একটা বাক্স, এর ভেতর থেকে সাপ এসে গুগলু যেনবা কোনো দেবতা তার কণ্ঠ পেঁচিয়ে মাঝেমধ্যে…
-
অন্ধপ্যাঁচার রাত্রির ঝিম
যখন প্রচণ্ড তৃষ্ণায় গলায় জল ঢালতে যাবে, শোনে তারিনা বাড়ি গিয়ে মারা গেছে… পুরো বাক্যটাকে বায়বীয় লাগে রোদেলার। সে স্কুলে যায়, বাড়ি ফিরে আসে, যথারীতি বাবা-মা অফিসে, জরিনা কান্নাফোলা চোখে নাস্তা নিয়ে আসে। রোদেলা সান্ত্বনা দেয়, আরে দুদিনের জন্য গেছে, এর মধ্যেই কান্নাকাটি? ও কালকেই চলে আসবে। তাজ্জব বড় বড় চোখে তাকায় জরিনা, আপনি ক্যামনে…
-
পরগাছা, অথবা অগ্নিস্রোতের ঢেউ
দুপাশের ঝাঁক ঝাঁক প্রকৃতি উদ্ভ্রান্ত হয়ে পেছনদিকে পালাচ্ছে। গাড়িটা ছুটে চলছে। মুরাদের এই এক স্বভাব, নিজের মরদাঙ্গি দেখাতে প্রায়ই বেপরোয়া হয়ে পড়ে। এই স্বভাব এমনই তার রক্তে-মাংসে মিশে থাকে, ওমরের মনে হয়, অন্ধকারে একা থাকলেও সে যে-কোনোভাবে বেপরোয়া হয়ে কিছু একটা করে দেয়ালের সঙ্গে কষে ধাক্কা খায়। নইলে প্রায়ই তার মাথা ফাটা, হাত ফাটা থাকে…
-
বাংলাদেশের নারী – ধানের ফসলে ডোবা ফসলের ঘুম
অন্ধকার পিছিয়ে যায় দেয়াল ভাঙে বাধার সাতটি ভাই পাহারা দেয় পারুল বোন আমার!… (সুভাষ মুখোপাধ্যায়) প্রারম্ভিকতার পূর্বপাঠ… প্রকৃতির স্বপ্নজাত সন্তান মানবশিশু। আর এ-মানবশিশুর ক্রমঅগ্রসরমান জীবনের যে-সাম্পান সময়ের সীমাহীন সমুদ্রে ধাবমান – তার নাবিক হলো মেয়েশিশু। প্রাকৃতিক অনিবার্যতায় বেড়ে-ওঠা এই মেয়েশিশুটিরই অপর নাম – ‘নারী’। ফলত এই নারীর করস্পর্শেই শুরু হয় সভ্যতার প্রথম আবাদ। যদিও…
-
মহুয়াপূর্ণিমা আর কালো বিড়াল
জোছনার ছলাৎ ছলাৎ জলের মধ্যে কাজলা মাছের মতোন চিকচিকিয়ে ওঠে মহুয়ার গতর। ঘর থেকে ঠিকঠাক মতোন বেরিয়ে পড়েছে, ভাবতেই ধলা চামড়ার তলার লহুতে শিরশিরে এক আমোদ, পাশের বাঁশঝাড়ে আজ বকপক্ষি ঝাপটা-ঝাপটি করেও খামোকা ডর দেখাচ্ছে না। এই কদিন আগেও যে ছিল দুডানাওয়ালা … ওড়ো … ওড়ো … ক্ষেত, প্রান্তর, আসমান ডিঙ্গিয়ে, মনার সাথে ভেদহীন কিল-থাপ্পড়।…