কবিতা

  • বকলম

    বিশ্বজিৎ মণ্ডল   ঘরকন্না ছেড়ে সোমত্ত বেরিয়ে পড়লে আমার সঙ্গে…   নির্বিকল্প জ্যোৎস্নায় ভেসে যাচ্ছে – বৈষ্ণবীর ধাম আধ-হাঁটু জলে দাঁড়িয়ে কখনো কৃষ্ণনাম ভুলে উচ্চারণ করেছো – পরিযায়ী প্রণয়ীর   যেভাবেই ভেবেছো পরিত্যক্ত সংসার… বিষাক্ত গ্রহ থেকে ঝিরিজল বেয়ে ধুয়ে গ্যাছে তোমার প্রাক্তন জীবন   ঘর আর ছাড়লাম কোথায়? তুলসীতলায় প্রবঞ্চনা খুলে রেখে, শুরু করি…

  • দুটি কবিতা

    শাহজাহান হাফিজ   হে রূপসী, রহস্যময়ী   ভোর হলো; বিষণœ নদীর স্রোতে ভেসে এসে, নারী তুমি, বললে : প্রণাম! হে রূপসী, রহস্যময়ী, কোথায় বসত বলো, কী তোমার নাম?   ফুলগুলি ঝরে যাবে, যৌবনের মতো; বসন্তের হিল্লোলের মতো! জমবে ধুলো, উড়বে স্মৃতি; সময় হারিয়ে যাবে, সময়ের মতো! থাকবে না জীবনের কোনো স্মৃতি আর!   তবু তুমি…

  • মাত্র কয়েকটি কান্না

    শ্যামলকান্তি দাশ   ১ তোমার কান্নাগুলি রত্নসমান। বারবার ভুলে যাই বারবার ভুলতে পারিনি। যতবার বাড়ি ফিরি, গানের আড়াল থেকে কান্না এসে আমাকে কাঁদায়!   ২ কেন কাঁদছ? কেন কাঁদছ? কী-বা লাভ কান্নাকাটি করে? সব কান্না মারাত্মক, সহ্যের অতীত – কান্নার ধারাভাষ্য ধুয়েমুছে সযতনে পাত্রে ধরে রাখি।   ৩ ছোট-ছোট রক্ত দিয়ে কেউ হয়তো লিখেছে তোমাকে,…

  • অবস্থান

    হাবীবুল্লাহ সিরাজী   অনেকদিন থেকে ছিলাম না কিংবা বহুদিন থেকেই আছি পুরোনো কিংবা নতুন শত্রুর কাছাকাছি।   পথ ছিল না জলে কিংবা জলপথেই আছি শাসন আসন থেকে মজুরের পাশাপাশি কুমারের স্রোতে ভেসে বুড়িগঙ্গায় জাগিয়াছি মিত্রের কানামাছি।   শূন্যে ছিলাম শর্তের বাহুডোরে গর্ভে ছিলাম নির্জন প্রহরে অতীতের মায়া ভবিষ্যতের ঘোরে শাদা ও লালের মত্ত সমস্বরে।  …

  • সাপ

    আলোক সরকার   সবকটা অন্ধকার সাজিয়ে যাকে ভালোবেসেছি তার দিকে অভিশাপ আজো বিভাস হলো না   অবিরাম দীনতা, অযোগ্যতা, দীনাতিদীন মৃত্যুপ্রহর।   তাজা পুষ্পচয়ন তাকেও রুগ্ণ ছেঁড়াখোঁড়া করা।   মাটি থেকে শিশিরমিশ্রিত দূর্বাদল মন্ত্রপূত করে অঞ্জলি রচনা করা। পদতল কোথায়! দেখি ভীত সাপ কলকল করে পালাচ্ছে

  • সৌন্দর্যপুরাণ নাওমি উলফ

    অনুবাদ : সাঈদ সানী [এই সময়ের একজন প্রখ্যাত নারীবাদী লেখক নাওমি আর উলফ (জন্ম ১৯৬২)। সামাজিক বিষয়াবলির একজন বস্ত্তনিষ্ঠ সমালোচক এবং রাজনৈতিক কর্মী হিসেবেও খ্যাতিমান। দ্য বিউটি মিথ (১৯৯১) গ্রন্থের প্রকাশনার মাধ্যমে আমত্মর্জাতিকভাবে তিনি পাদপ্রদীপের আলোয় চলে আসেন এবং নারীবাদী আন্দোলনের তৃতীয় ধারার পুরোধা প্রবক্তা হিসেবে বিবেচিত হতে থাকেন। এই বইটিতে তিনি দেখিয়েছেন যে, ‘সৌন্দর্য’…

  • সূর্যজন্মের দিকে

    অলোক সেন   এখন, সূর্যজন্মের আগে চাপচাপ অন্ধকার ঢেকে বসেছে টবের গাছে, বারান্দায়।   নক্ষত্রসভার সদস্য হতে চায় – এই আবেদনপত্রসহ একাকী অমলিন মৃত্যুর দরজায় কড়া নাড়ে আর হাই তোলে।   জীবনের বাড়ি যাবে শরবত খেতে তোমাকে তা কি করে বলে, এবার ভূত ও ভবিষ্যতে কড়া নাড় কবি।   বিদায়, সূর্যজন্মের দিকে – সে বলেছে…

  • ১৯৮০

    দেবজ্যোতি মুখোপাধ্যায়   উনিশশো আশি সাল আমাকে এমন দুঃখ দেয় কী যে দুঃখ দিয়ে গেল উনিশশো আশি তাকাতে পারি না আমি তার দিকে – তাকালেই জল আসে চোখে। এত দুঃখ – তখনো তো জন্মাইনি যে আমি জন্মানোর আগে আমি কী কষ্ট পেলাম দেরি ছিল, পাঁচ-পাঁচ বছর তখনো দেরি ছিল – আমার জন্মের   জন্মের আগেই…

  • সমুন্নত দুঃখগুলি

    আলোময় বিশ্বাস   সমুন্নত দুঃখগুলিই আমার চিত্রকলা। আমার সংগীত আর জঙ্গম-ঘূর্ণি আবেগ আমি তৈরি করি কিছু অনাকাঙিক্ষত ব্যথার সংশ্রবে।   জীবনের সন্ধি-লগ্ন অসত্মগামী সূর্যের মতো ঝুলে আছে লাল সাগরের উপর, আমি কিছু অভিশাপ খুঁজে বেড়াচ্ছি দেখি আর কী নির্মাণ করতে পারি?   এই সময়ে সুরধুনীর জল আর পারুলের গন্ধ নিয়ে কে আসে?

  • রূপকথা

    সেলিম মাহমুদ   ভুল ডুবোচর গ্রামে হঠাৎ কে থামে? কার দরকার ও-দিককার সংস্কার ভুল মনে ভুল পর্যটনে যদিওবা শতভাগ টানে!   এক প্রাণে এক টানে গল্প থাকে সবখানে গল্প থাকে ফুলের রুমালে পরি থাকে না রাত পোহালে।

  • সব কিছু ঠিক আছে?

    নূহ-উল-আলম লেনিন   সব কিছু বদলে যাবে, বদলে যাবে স্বপ্নালু পৃথিবীর সাবেকি স্বরূপ যারা ছিল নিচে, তারা আচম্বিতে উঠে যাবে সপ্তম আসমানে শাস্ত্রে সেসব কথা লেখা আছে স্বর্ণের অক্ষরে সব কিছু ঠিক ছিল, কেবল হতচ্ছাড়া ‘গর্বাচেভ’ (?) উল্টে দিলো পাশা।   সব কিছু বদলে গেল, সমাজতন্ত্র মার্কসবাদ-লেনিনবাদ মাও চিন্তাধারা লাল চত্বরে ও শামিত্মর উদ্যানে লেনিন…

  • অফ দ্য রেকর্ড

    টোকন ঠাকুর   দুঃখকে বিড়াল বলে মনে হয়। কারণ, বস্তাবন্দি করে বিড়ালটিকে নদীর ওপারে রেখে আসার পরদিন সন্ধ্যায় দেখি, উঠোনের নিমগাছটা পেরিয়ে দুঃখবিড়াল ফের ঘরে উঠে পড়ছে। দুঃখকে আশ্রিত-আত্মীয়ার মতো লাগে। তার হয়তো যাওয়ার জায়গাই নেই! কে দায়িত্ব নেবে? সারাদিন, তার হয়তো কথা বলার লোকও নেই। এই অবস্থায় দূরাগত আত্মীয়া যাবেই বা কোথায়? কার কাছে…