কবিতা
-
আড্ডা
চঞ্চল শাহরিয়ার দিলীপের চায়ের দোকানে আড্ডা আমাদের প্রতি মুহূর্তের অহংকার, ফেসবুকে চ্যাট করা, নতুন কবিতা পাঠে মনোযোগ মানুষের কোলাহল, ঈদের বাজার শাড়ির দোকানে উপচেপড়া ভিড় শিউলি কুড়ানো ভোর শরতের মেঘমালা ক্যাটরিনা কাইফের হাসি-হাসি মুখ সব যেন স্বপ্নমাখা সমুদ্রের, উন্মাদনা। দিলীপের চায়ের দোকান সারাক্ষণ উৎসবে ভরপুর। দুঃখ নিয়ে তাই কবিতা লেখার সময় পাই…
-
হে আর্দ্র অভিভাবকেরা
হাফিজ রশিদ খান শোক-জাগানো আগরবাতিগুলো এবার নিভিয়ে দিন কুয়াশা তাড়াতে আমরা বাইরে যাবো হে মুরবিবগণ, যে-উজ্জ্বল আনন্দের প্রয়োজনে আমরা লড়েছি দীর্ঘদিন সেখানে প্রবেশে আমাদের গাঢ় প্রস্ত্ততি এখন মৃত্যুগন্ধী কথাগুলো আপাতত বন্ধ করুন দোহাই অন্তরিক্ষ বিজয় ও সমুদ্রের বুকে ঝাঁপ দিতে কাঁপছি উত্তেজেনায় গলন্ত মোমের মতো আমাদের কাজের গতিকে নুয়ে দেবেন না আর নমস্য…
-
নাচনি
নির্মল হালদার আঁখি তো নয় বাঁশি গো বাঁশি তোকে দু’চোখে ভালোবাসি – অপমানরে অপমান ছুঁড়ি পালায়ছে বাসাল বেটাকে নিয়ে ছুঁড়ি পালায়ছে কলিজা নিয়ে আমি ম’রেও বেঁচে আছি বাঁশের ছায়ায় বাঁশ ছাড়তে আমি নাই পারলি, যদি রস নিংড়াতে পারি, যদি আরেকবার বাঁশবন থেকে বাঘ হ’য়ে বেরাতে পারি, যদি ভালোবাসাকে করতে পারি হালুম, তোদের খাওয়াবো…
-
যুগল
সাজ্জাদ আরেফিন রোদের প্রহর তুমি সামনে দাঁড়ালে একটা সময়ও পাশে এসে দাঁড়ায় তোমাকে দাঁড় করিয়ে রেখে সময়টাকে দেখি – না গোধূলি – না আলো-আঁধারি কড়া রোদের প্রহর আমাকে শাসাতে থাকে – সাজাই আর ভাঙি সব দরোজা জানালা খোলা বাতাস গান গেয়ে গেয়ে এঘর ওঘর ঘুরে বেড়ায় – ফুলেরা বাধাহীন সৌরভ ছড়িয়ে রাখে…
-
ক্ষুধা ও প্রেমের ভাষা
ফারুক মাহমুদ প্রেমের থাকে না কোনো পরবর্তী দিন প্রত্যহ নতুন পৃষ্ঠা, প্রতিদিন নতুন অধ্যায় লেখার দক্ষতা চাই, পাঠের দক্ষতা আরো বেশি প্রয়োজন না-হোক মন্ত্রের ভাষা, প্রতি জন্ম প্রতি মৃত্যুক্ষণ ফিরে আসে ফিরে চলে যায় ক্ষুধা ও প্রেমের ভাষা চিরকাল দিকচিহ্নহীন যখন প্রেমের সঙ্গে থাকি বিষের পেয়ালা রাখি হাতে প্রেম, সে,…
-
নভেরা নেভেনি
মারুফ রায়হান নীলিমা তখনো পরেনি নীলাম্বরী বায়ু আর জলে চলছিল বোঝাপড়া এসে পড়ল সে-তারকা স্বয়ম্বরী সে এক নবীন আলো জমকালো পুরুষ প্রকৃতি আর কে কে চমকালো কোন কোন পাড়ায় শুরু হলো ঢি-ঢি পড়া অপেক্ষমাণ মাটি ও পাথরে মূক নিশ্চলে জাগলো জবান নন্দনবনে ফোটে শোভা থরে-থরে পৌরুষ কেন পরশ্রীকাতর ঈশ্বরী কেন হে…
-
কিছু পঙ্ক্তি
আলতাফ হোসেন মরে গেলে বলে চলে গেল। চলে গেলেন। কোথায়। কোথায় গো? কোনো আম্পায়ারিং? এ ক্রীড়ায় দুজন দূরে থাক একজনকেও দেখছি না যতই আদুরে গলায় কথা হোক যা ঊষ্ণ তা শীতলও কি নয়? পরিহাস ও ক্রন্দনে হাত-ধরাধরি দেখতে চায় না ওরা আমি? এই তো ক্রিকেটে তাকিয়ে আছি বেটার অপশন ফুরিয়ে আসছে দুপাশের আম্পায়াররা ওই দুদিক…
-
বডিমিস্ত্রি ফেসবুক
হাবীবুলস্নাহ সিরাজী ১১ ডিসেম্বর ২০১৫ আগুন লেগেছে জুতো প্যান্ট শেষ ক’রে জামায় পৌঁছুলো – বুকপকেটে বাংলাদেশ ব্যাংকের সঙ্গে জলছাপে মা-র জোড়া পা পুড়লো তা-ও হৃদয় কি জানে নাই ক্ষমা? আগুনের কীবা দোষ পাতে বাড়া ছাই একখ- মহাদেশে মানুষের জন্মের লড়াই। ভাই, তুমিও তো রক্তের বড়াই! ১২ ডিসেম্বর ২০১৫ যে পক্ষ তাহার…
-
এই শহরের কান্না
আবুল মোমেন এই শহরের কান্না আজকাল কেউ শুনতে পায় না। নিজের ভিতরে দ্যাখ, ঝাপসা সব, ঘষা কাচের আয়না সব শুষে আড়াল করেছে, তুমি তো আলেয়া, মরীচিকা-পরাধীন, পাহাড়কে খুবলে খেয়েছ – বোঝনি কখন চুরি গেছে তার উদাসীন। নগ্ন ধ্বস্ত পাহাড়িয়া মাটি আর আব্রম্ন রাখতে পারে না, বেয়াড়া হিংসুটে লোকালয় ছায়া খেয়ে স্তব্ধতা খায়, নির্জন হাসে না!…
-
নদীভাঙা নদীর সন্তান
মাহবুব সাদিক সে কিছু শুনেছে বুঝি সংগোপন ঘুমের গভীরে মেঘ যেন ডাকে গুরু গুরু – দক্ষিণের অন্ধকার থেকে উত্তরের দিগন্তপ্রান্তে ফুটতে ফুটতে যায় শব্দের টাটকা খই – নাকি পরশুর যাত্রাপালায় গহরজানের গানে জাদুতে-পাওয়া মৈজুদ্দির দশটি আঙুল তবলায় এখনো তোলে প্রাণকাড়া ধ্বনির লহর? গহরের গান আর তবলার বোলে সে রাতে আসর মাত – জীবনের প্রাপ্তিপাত্র…
-
কালো অক্ষরের কবিতা
রাহুল পুরকায়স্থ শূন্যের দিকে ছুটে চলেছে যে লোকটা তাকে তুমি জানো? তার ছেঁড়া পোশাক, রুক্ষ চুল, খড়ি-ওঠা ত্বক, সাতবাসি দাড়ি রচনা করেছে যে তামাশা, বিদ্রূপ করেছে যে সম্পর্ক, জানো? প্রিয় গ্রন্থ, প্রিয় নারী, প্রিয় বন্ধু, প্রিয় সংগীত, প্রিয় গন্ধ, প্রিয় বর্ণ তাকে তাড়িয়ে বেড়াচ্ছে কত দিন, কত রাত! সে ছুটছে, পালাচ্ছে, অস্বীকার করছে, ছুড়ে…
-
অক্ষমতা ঢাকতে
প্রবালকুমার বসু নিজের অজান্তেই মানুষ আবিষ্কার করেছিল মুখোশ বেঁচে থাকার জন্য প্রয়োজনমতো যাতে নিজেকে আড়াল করতে পারে – মানুষের প্রতিটি সম্পর্কই সেই থেকে মুখোশের সঙ্গে আড়ালে কী আছে আমরা জানি না যে-মেয়েটির ঠোঁটে কিছুক্ষণ আগে চুমু খেলাম সে-ও কি মুখোশ পরে ছিল? মুখোশ কেন মানুষকেই পরতে হয় শুধু অ্যাকোয়ারিয়ামে দুটো গোল্ড ফিশ ঠোঁটে…