কবিতা

  • মৃত নক্ষত্রের শহরে

    রাহমান ওয়াহিদ কারো কারো চোখে প্রজাপতি বসলে কারো চোখ থেকে পিঁপড়ের বিষ উপচে পড়ে – যেন দহনে কালো হোক প্রজাপতির পেলব ডানা। আমার পাঁজরের খোলেও এক আদিম জিঘাংসা কার যেন বুক এফোঁড়-ওফোঁড় করে আর ক্ষরিত রক্ত ঝরে জমাট বাঁধে আমারই হৃৎপিন্ডে। ক্ষুধা নিবৃত্তিতেও কার যেন মাংসাশি দাঁত হলকুম কামড়ে ধরে, যেন গিলতে না পারি হেমলকও…

  • গুহায়

    হামীম ফারুক রুক্ষ মানচিত্রের মতো মুখ, নিচে আলো ও অন্ধকার ফাঁকা দেশলাইয়ের বাক্স হাতে গুহার ভেতর, একা   সন্ধ্যা নামেনি, বাদুরের ডানা ঝাপটানি শুনি কাঁধের ওপর   মৃত হরিণের শিং, অস্থির স্তূপ ভারী পায়ে পায়চারি – দূরে সতর্ক চোখে কড়া পাহারা, ধোঁয়ার বলয়   গোপন ঝরনায় কারো অসমাপ্ত স্নান টের পাই শিরদাঁড়ায়

  • মৃত্তিকার ঘর

    শ্যামলী মজুমদার   সম্পর্কগুলি এখন শীতরাত পাড়ি দিচ্ছে… গ্রহ যেরকম পুঞ্জীভূত শক্তি কেন্দ্র ছেড়ে ছুটে ছুটে এসেছে ছায়াপথ ধরে শীতল শীতলতর যুগ, কোটি আলোকবর্ষব্যাপী বরফ আর হিমবাহের গল্প… তারপরও বলো : বাসযোগ্য হলো কি আমাদের এই মৃত্তিকার ঘর!!   তুমি আমি আরো কত মুখ শত সহস্র চোখ নীল বেদনায় উন্মুখ, দূর ছায়াপথে হেঁটে যায় একে…

  • বউমা ও চাঁদনি

    সাকিরা পারভীন রাত বারোটায় গেটের চাবি খুলে একা একা বউমাকে রাস্তায় হাঁটতে দেখা গেছে। পাশের বাড়ির দারোয়ানের এ-তথ্য এলাকায় তোলপাড় সৃষ্টি করেছে। বাড়ির পাশে বারোতলা বিল্ডিং সমস্ত আকাশপথ দখলে নিয়েছে। বছরখানেক ধরে চেষ্টার পরও বউমা বারান্দায় দাঁড়িয়ে জ্যোৎস্না দেখতে পারে না। তাই এই অভিলাষ। আজ বাড়িঅলা ঘুমিয়েছেন। বউমা সাহস করে চাঁদ দেখে ফেলেছে আর এই…

  • পেছনে ডেকো না

    রহিমা আখতার কল্পনা   হারিয়ে যেয়ো না মিঠা জল, প্রিয়পাতা সবুজ সুহৃদ হারিয়ে যেয়ো না মুখচম্পা, কৈশোরিক চাঁদছোঁয়া নিদ হারিয়ে যেয়ো না প্রিয়পদ্ম, বর্ষালক্ষ্মী – শৈশবের মুখ হারিয়ে যেয়ো না জোনাকিরা, রাত ভালোবেসে খোঁজো সুখ।   আড়ালে থেকো না প্রিয়কুঁড়ি, ফুটে ওঠো রোদের সোহাগে আড়ালে থেকো না কাশবন, ঢেউ তোলো – ধু-ধু চর জাগে আড়লে…

  • ইচ্ছেপাখি

    নাসরীন নঈম   একটি টাটকা কবিতার জন্য আমার কলম কাঁপছিল বহুদিন এখনো কাঁপছে। আমি মনকে বোঝাচ্ছি থামো মন যখন নির্জলা অবসরে যাবো জীবন ঘষে ঘষে আগুন জ্বালাবো অবশ্যই টাঙ্গাইল শাড়ির পাড়ের মতো মিহি সুতার কবিতা আমার কলমে উঠবে।   আমি সেই কবিতাটি নিয়ে একবার শামসুর রাহমান আল মাহমুদ নয়তো সুভাষ মুখোপাধ্যায় এবং নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তীর কাছে…

  • তরুণ কবি

    সরসিজ আলীম   কাঠবিড়ালির লেজের ওপর একটি কাঠঠোকরাকে বসিয়ে দিলে কাঠবিড়ালি অনেক দূর দৌড়ে গিয়েছে, কাঠঠোকরাকে কাঠবিড়ালির লেজে বসিয়ে দিয়েছিল সেই ছেলেটি?   ছেলেটি প্রিয় চায়ের দোকানির সঙ্গে ঝগড়া করে অনেক পথ হেঁটেছে, বুকপকেট সে চায়ের দোকানির কাছেই বিক্রি করেছে, সবগুলো পকেট সে চায়ের দোকানির কাছেই ফতুর করেছে।   সে রাজপথ, জনপথ বা রেলপথ আলাদা…

  • অন্যমনস্ক ভ্রমে থাকি

    গৌরশংকর বন্দ্যোপাধ্যায়   নিজের বিষয়ে আমি কতটুকু জানি এ-কথাই একা বসে মাঝে মাঝে ভাবি যা ভাবি না তা হলো পিতৃঋণের যতটুকু এতটা জীবনধরে মিটিয়ে দেবার আয়োজন করলাম তবু তা মেটাতে পারলাম কই   শোভনা ও অতুলচন্দ্রের জ্যেষ্ঠ ছেলে আমি মাদারীপুরের স্বপ্ন ছিন্ন করে কবে এ-শহরের আনাচ-কানাচ ঘুরে আমরা থিতু হয়েছিলাম এখন আর তা মনে নেই…

  • ভালো আছো তো

    মাহফুজ পারভেজ   কেউ কোনোদিন নিশ্চয় খুঁজবে – বলবে ‘ভালো আছো তো?’ আমি তখন একটি মায়াবী নদীর ছায়ায় দাঁড়িয়ে নিজের কোনো কথাই বলতে পারবো না; জানতে চাইবো তোমার ঠিকানা – ফিরে যাবো পুরনো সিন্দুকে মরিচাবিক্ষত নীল ছুরির চুম্বনে খুঁজবো দিগন্ত মাস্ত্তলে তোমার স্পর্শ দেখবো সারাটা জীবন উপুড় হয়েছে তোমার স্মৃতিতে : কেউ কোনোদিন নিশ্চয় খুঁজবে…

  • দেখে নিয়ো

    হাসান হাফিজ   চিন্তা নিয়ে পড়েছি বিপাকে। মগজে সে ঘূর্ণিঢেউ তোলে, নেচে যায় ছন্দোহীন, উথালি-পাথালি জ্বরে তৈরি করে শরীরে কাঁপুনি রিখটার স্কেলে যার মাত্রা বড়ো বেশি এভাবেই হতে থাকে জীবনীশক্তির ক্ষয় কমে আসে আয়ু, চারিদিকে অশান্তির বায়ু বেয়াড়া সে-রক্তচাপ বাড়তে বাড়তে আশা ছাড়তে হয়। জীবনের, সমৃদ্ধির। নদী ভাঙে তীর। ভাঙতে ভাঙতে নিরাশ্রয় ফুরিয়ে শূন্যতা ছোঁয়…

  • আমাদের নতুন স্কুল

    হাবীবুল্লাহ সিরাজী   পাটিতে মাটির পাঠ আকাশ শেখায় তার গলাগলি ভাব সমুদ্রের অভিযানে স্বপ্ন জানে বায়ু আগুনের ভিন্ন মানে অরণ্যে গোপন খুলিতেছে আমাদের প্রাইমারি স্কুল : ১. পরিযায়ী পাখিরা তো ভূগোলে তুখোড় ২. বাংলায় মহাব্যস্ত ধ্রুব বনসাই ৩. ইতিহাস উল্টায়-পাল্টায় ওরাংওটাং ৪. স্যামনের পেটে-পিঠে ইংরেজির তেল ৫. অঙ্কের নানান বোঝা গোলাপের ঘাড়ে   টেবিলে নুনের…

  • চুরি

    শ্যামলকান্তি দাশ   কেউ তালা ভাঙছে। চড়চড়াৎ শব্দ হচ্ছে পাথরের দরজায়। চুরি করবে। চুরি করবার আগে একটু দম নিচ্ছে। একটা দেশলাই জ্বলছে। ভাবছে, এই এতগুলো সোনার সিঁড়ি, সিঁড়ি টপকে যাওয়ার পর এই এতগুলো মানুষ, মানুষ অতিক্রম করবার পর বাড়িভর্তি অন্ধকার! একটা পূর্ণাঙ্গ ছাদ সুষুপ্তিকে জাগিয়ে রেখেছে।   হুড়কো খুলে ফেলবার পর কেউ ভাবছে প্রলয়ের আগে…