কবিতা

  • নিতল গহবর    

    মাহবুব সাদিক   স্বপ্ন দেখার মতো চোখ নেই আর কারো প্রাচ্যে কিংবা দূরপ্রাচ্যে তবু গভীর বিস্ময়ে দেখি কোমল রোদের নিচে কোদালের ফালে বাংলার কৃষকেরা নক্ষত্রের মতো জ্বলজ্বলে স্বপ্ন খুঁড়ে তোলে, যদিও মাটি নেই আর নেই প্রকৃত ও প্রাকৃত মানুষ পায়ের তলায় কালো নিতল গহবর আলোড়িত হওয়ার মতো হৃদয়ের সুনন্দ উদ্ভাস কোথায় স্থিরতা পাবে কেউ তা…

  • এই গাড়ি, ওই গাড়ি

    নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী   বাড়ির অদূরে নদী, নদীর উপরে ব্রিজ, ব্রিজের উপরে ঝমাঝম শব্দ তুলে এতক্ষণে যার নদীটিকে পেরিয়ে যাবার কথা ছিল, সেই যাত্রীতে-বোঝাই প্যাসেঞ্জার-গাড়ি আজকে এখনো এ-পাড়ে ঠায় দাঁড়িয়ে আছে। মাঝে-মাঝে সিটি দিচ্ছে অবশ্য। তা দিক। আসল কথাটা এই যে, সামনে ওই সিগন্যালের বাতি যতক্ষণ না নিষেধের রক্তবর্ণ ছেড়ে আবার সবুজ হচ্ছে, ঠিক ততক্ষণই এ-গাড়ি…

  • কাদম্বরী দেবীকে খোলা চিঠি

    মমি তাহমিন প্রিয় কাদম্বরী দেবী, কেমন আছেন আপনি? সুখে নিশ্চয়ই! সুখের জন্যেই তো মৃত্যুর সাথে সখ্য গড়লেন। শুনেছি মৃত্যুর আগে আপনি নীল শাড়ি পরেছিলেন – কোন নীল? ময়ূরকণ্ঠী? পূর্ণিমার নীল আগুনে পুড়ে ছাই হতে হতে গায়ে জড়িয়ে নিলেন নয়নসুখ সিল্ক। সুখ বোধকরি তখন উপচে পড়ছিল আপনার রন্ধ্রে রন্ধ্রে কাউকে পরাজিত করার সুখ। জানেন! আমিও নীল…

  • ত্রিশ লক্ষ বছর ধরে তাকে খুঁজছি

    মেহেদী হাসান আমি যাকে পবিত্র চুম্বনে রোদ্দুর করতে চেয়েছিলাম আঁধার ভালোবেসে সে রাত্রি হয়েছে। সমস্ত ফাল্গুন কেটে গিয়েছে কৃষ্ণচূড়াহীন। আমিও জানতাম চাষাবাদের চর্যাপদ, পৌরাণিক সঙ্গম কথা অথচ, বেদনার মৌলিক অর্থ যার কখনোই জানা হয়নি; এতো নিঃশব্দে কেউ ভালোবাসেনি প্রভু! ত্রিশ লক্ষ বছর ধরে তাকে খুঁজছি… মিরপুর থেকে প্যারিস মক্কা থেকে প্যালেস্টাইন দীর্ঘ থেকে দিগন্তহীন পথে!…

  • বৈশাখি মেলা

    চঞ্চল শাহরিয়ার ডায়েরির পাতাগুলো আরো একবার উলটে দেখি দেখি কোথায় পহেলা বৈশাখ, কোথায় অথই জলের ধারা কোথায় রাজশাহীর মেয়েগুলোর মুগ্ধ কোলাহল কেনইবা সুস্মিতা বলে ডাক দিলে হেসে দেয় স্পর্শিতা নামের অভিমানী বালিকা। ল্যাপটপে মনোযোগ মোবাইল ফোনে এসএমএস শিলাইদহের কুঠিবাড়ি, লালন শাহের মাজার সব আজ একাকার সাহেববাড়ির বৈশাখি মেলায়। আজ বুঝি ঝড় হবে, আজ বুঝি বাউরি…

  • দগ্ধ শিশুর জন্য এলিজি

    শামসুল ফয়েজ আনন্দের যাত্রা ছিল শাপলা ফোটা ভোরে শিশুটি নিশ্চিন্তে সুখী তৃপ্ত মাতৃক্রোড়ে প্রতিরোধ টিকা নিল সাদা হাসপাতালে অগ্নিবোমা ছুড়ে দিলো অচেনা মাতালে মা ও শিশু অবরুদ্ধ চলমান বাসে কড়ি ও মাদুলি ছিটকে পড়ে দূর্বাঘাসে খুশিতে হলো না শিশুটির বাড়ি ফেরা টক শোতে কথা হবে খুব চুলচেরা দগ্ধ শিশুটি নিস্তব্ধ বার্ন ইউনিটে দোষী ব্যক্তি সাজা…

  • ধনলিপ্সা

    গোলাম কিবরিয়া পিনু দ্রুত ও অনিয়মিত হৃৎস্পন্দনের মধ্যে দিয়ে আমরা পক্ষাঘাতগ্রস্ত হয়ে পড়ছি – কপটাচার আর দ্বিমুখী আচরণে তুচ্ছ ও নগণ্য ঘটনায় বিস্তীর্ণ প্রান্তরে বৃক্ষের চামড়া খুলে নিজেরাও নগ্ন হয়ে পড়ছি! নিজেকে অত্যধিক প্রশ্রয় দিতে দিতে সাদা ও কালো রঙের পার্থক্য ভুলে গেছি – ময়দা-ডিম-দুধ মিশিয়ে কেক তৈরির বদলে কী-সব মিশিয়ে ধনলিপ্সা চরিতার্থের জন্য কফিনের…

  • আড্ডা

    কমলেশ দাশগুপ্ত   কিছুই তো নয় শুধু অর্থহীন আলাপের টেবিলে কিছু খুচরো বিষয়েরা নিয়েছে মুজরো কেউ তো নেয়নি ভাগ সময়ের ঋণ।   কতবার ব্যর্থ শব্দের টেবিলে; অনান্তরিক হয়তো কেউ কি ছিলে কবিতার কায়া পিষ্ট নখরে অপবিত্র করে দিলে।   তাই তো জাগেনি একটিও কুঁড়ি দূষণের আঁচে অংকুর; নিষ্ফলা কৃষক, ফলনের ছবি টোকাতেই ভাংচুর।   কতদিন…

  • আমিহীন আমার ছায়ারা

    ওমর কায়সার   আমার আড়াল থেকে ওরা বেরিয়ে এসেছে হেঁটে গেছে সীমানা চিহ্নের বাঁধ ভেঙে চলে গেছে কোন পরবাসে।   আমিহীন আমার ছায়ারা পথে প্রান্তে ঘুরে ঘুরে কোনো ব্যস্ত কোলাহলে থমকে দাঁড়িয়েছে। অথবা নির্জনতার অতীব প্রাচীন কোনো গোলকধাঁধায় হারিয়েছে পথ।   কিংবা কোনো ঘুমন্ত নদীর বাঁকে আড়ি পেতে দু-একটা বেদনার গানে আমারই প্রতিচ্ছবি কল্লোলিত হতে…

  • নির্জনতা ও কোলাহল

    মাহবুব বারী   নির্জনতা খুব ভালোবাসত, অনন্ত; তাই সে নির্জনতায় ঢুকে নির্জনতা না দেখে চিৎকার করে ওঠে। তার স্ত্রী তখন কোলাহলে ব্যস্ত। চিৎকার শুনে হন্তদন্ত হয়ে নির্জনতা পৌঁছে দিলো। নির্জনতার ঘ্রাণ নিল সে, প্রাণভরে। তারপর দরজা বন্ধ করে অনেকক্ষণ নির্জনতার মধ্যে ডুবে থাকল – কী সুন্দর নির্জনতা! ঘুমেভরা আচ্ছন্ন মায়াবী! এরকমই আকাঙ্ক্ষা ছিল, চেয়েছিল এরকমই…

  • থাকা না থাকা

    আশরাফ আহমদ   অর্ধসত্যে যদি অথবা না ভেবে ভ্রমে, তবে তার মীমাংসা জরুরি। দীর্ঘভ্রমণ শেষে শূন্যহাত এইবার পকেটে রাখার মহাক্ষণ।   নির্বোধ, কাকে কার কথায় জড়াই, কাকে ফেলে কাকে টানি কাছে, না জেনে সংযোগসূত্র, সম্পর্কের গূঢ়মন্ত্র অপঠিত রেখে, কী গড়ার নেশায় যে দিনরাত! অবোধের এইবার থামার সময়।   নিজের নিখোঁজবার্তা প্রচারের আগে, জানা চাই –…

  • ছয়টি চার পঙ্ক্তির পদ্য

    রবিউল হুসাইন   এক. নিজের আমার কিছুই নেই ব্যক্তিত্বহীন আমি-র দেহ তৈরি পিতামাতার মনটি অন্তর্যামীর   দুই. পরিখাটি চারিদিকে প্রাচীর প্রাসাদ ঘিরে তবু আসে শত্রু বারে বারে ফিরে   তিন. মাঝরাতে বাজ পড়ে ঠা-ঠা – বিদ্যুতায়িত কর্ণকুহরে পৌঁছুলেই সবকিছু সত্যায়িত           চার. পাঁচমিশালি পাঁচে নয় অগণন তার সংখ্যা হয়তো দুই-তিনে মেশে…