কবিতা
-
মৌলভীবাজার খুব দূর নয়
শাহজাহান হাফিজ মৌলভীবাজার খুব দূর নয়, অথবা অনেক দূর – নাগাল পাবো না কোনোদিন! অথচ এমন ছিল একদিন, অরণ্যকে ভালোবেসে অরণ্যের কাছে গেছি; বলেছি, তোমাকে ভালোবাসি! অথচ এমন ছিল একদিন, একা-একা, উদাসী পাহাড় বেয়ে, গেছি বহুদূর; বলেছি, তোমাকে ভালোবাসি! এসবই স্বপ্ন আজ! স্বপ্নের ভিতর আজো টের পাই : ঝরে জল, ঝরে জল – ঝরে শুধু…
-
মুহূর্তপুরাণ
মুহম্মদ নূরুল হুদা মুহূর্তের গর্ভ-জাত, তোমার তো অন্য কোনো পরিচয় নাই; সময়ের গর্ভ ছেড়ে চিরকাল সময়ের গর্ভে থেকে যাই। কে গেছে তোমাকে ছেড়ে? সে কি তবে অধরা পালক? যে গেছে তোমাকে ছেড়ে তার সাথে তোমার তো লেনদেন নাই। যেতে যেতে ফিরে আসি, ফিরে ফিরে দেখি সব পথ, শ্বেত বলো কৃষ্ণ বলো সব পথে সমুড্ডীন…
-
একটি স্থিরতা
আলোক সরকার এক দুপুরে তার প্রয়োজন অপ্রয়োজন হল। যা শুরু হয়েছে তার দিকে নিস্পৃহ হও। হওয়ার দিকে নিস্পৃহতা বিরামের দিকে নিস্পৃহতা। এমন একটা কোলাহল যার কোনো শব্দ নেই। দিক দিগন্ত ব্যাপ্ত করা নিশ্চয়। নিশ্চয় প্রতিশ্রুতি দিচ্ছে না নিশ্চয় অঙ্গীকার করছে না। কালো এক ঢেলা অন্ধকার আর অপ্রতিরোধ্য একাদিক্রম।
-
অরণ্যের অন্ধকারে
মাহবুব সাদিক নির্বান্ধব অরণ্যের কোলে এক শীতের বিকেলে তার সঙ্গে দেখা হয়েছিলো আমার – সারাদিন দখিনা বাতাসে দোল খেয়েছে সবুজ পাতারা, যেন স্মৃতিকাতরতাময় শরীর দুলিয়ে কেউ নিজের ভান্ডার থেকে সবুজ ফেরি করছে সারাদিন, তারপর সেই ঘন সবুজের মধ্য দিয়ে অলস বিকেলে নিজের রাজকীয় গাম্ভীর্যে উদাস আর নির্ভীক উঠে এলো রাজার মতো বাংলার বাঘ –…
-
একটি ছোট্ট ক্লু
আসাদ চৌধুরী তিনি আশ্বিনের পর পাতে ইলিশের আয়োজন দেখে খুশি নয়, বরং দু-চার কথা রেখেমেগে শোনাতেন। মানুষের বাড়া বেশি ভুলো মন; তাঁর উপদেশ, মুচকি হেসে, পাওনা টাকা পেতে হলে বারবার চাইতে হবে, চুল পেকে গেলে বান্ধবের ঘাটতি হবে নিজের ছায়ার সাথে শুধু স্মৃতি নিয়ে কত আর আড্ডা দেবে ভ্রাতঃ? শোনাতেন, বলদে হলুদ কেনে, আদা…
-
অধস্তন
শঙ্খ ঘোষ স্বপ্নই দেখেছি তবে। বাস্তবে তো এমন হবে না! অধস্তন দিনগুলি হঠাৎ উড়েছে ডানা মেলে তোমার পায়ের কাছে সমর্পণে, নিরহংকারে – তুমি আছো মেঘেরই মতন আসন্নবর্ষণ, ঘন। কখনো-বা স্নান দেবে তারই প্রতীক্ষায় থেকে থেকে জড়িয়ে নিয়েছে তার সমস্ত পুরোনো অবসাদ সব গ্লানি, মনোভার, শরীরের সব ক্ষতজ্বালা। তোমার পায়ের কাছে উড়ে গিয়ে বলেছে সে…
-
বিষয়বদল
অলোকরঞ্জন দাশগুপ্ত শিল্পসরস্বতীর নির্দেশে ঝাউ জোনাকিদের নিয়ে সেমিনারের তোড়জোর চলছে এমন সময় অদূর ধুবুলিয়ার ক্যাম্পে মোকাম্মেল তানভীর আর এপার-বাংলা থেকে তাঁর সহযোগী সুশীল সাহা এসে হাজির তাঁরা তুলে রাখছেন দেশবদলের শামিল মানুষজনের কান্না এই মুহূর্তে শাশবতের প্রকল্পে ঘোষিত জোনাকিদের আমি কিছুতেই অন্তর্গত করে নিতে পারি না জোনাকিরা এখনো দারুণ…
-
অপ্রকাশিত জীবনানন্দ দাশ
ভূমেন্দ্র গুহের সৌজন্যে ৩৪-সংখ্যক কবিতার পান্ডুলিপির খাতা থেকে ৩৪/৬৮ ভোরের বেলা এই সাগরের নিঃশব্দ বাতাসে দু’-একটা শুকতারা মর্মর পাথরের মত হয়ে আসে মুছে যায় আকাশের থেকে এখানে ভোরের স্পষ্টতায় সব উঁচু গাছ নিজেদের শান্ত ছায়া দেখে নয় মাইল সান্ত্বনার কথা বলে যে যাহার পাশে সে-সব গাছের দেহ পৃথিবীতে ম’রে গিয়ে আজ…
-
এপিটাফ অথবা চুক্তিপত্র
চাণক্য বাড়ৈ হয়তো এভাবে একদিন অনূদিত হবে শতাব্দীর নীরবতা – মৌনতা নামে তোমাদের ভাষাবিজ্ঞানে যুক্ত হলো নতুন অধ্যায় – আমি ওই শ্যাওলা-সবুজ সমাধিতে ঘুমিয়ে গেলে তোমরা উদ্ধার করো তারাদের স্বরলিপি। আর আমার এপিটাফে জুড়ে দিয়ো একটি নমিত সুর – যার নিমজ্জন পাহাড়ে – নির্জনতার নিটোল নিস্তব্ধতায়। যে-জীবন পেরিয়ে এলাম, শৈশব কৈশোর যৌবন বার্ধক্য এসব বাহারি…
-
স্মৃতি, স্মৃতি, শুধুই স্মৃতি
সাঈদা কামাল ফের ভুল করি – স্নান করি চাঁদের রুপোলি জলে উন্মাতাল বসন্তের রাতে ভুলের বাঁধনে জড়াই – অলীক ভালোবাসার অদৃশ্য ফাঁস পরাই অসম্ভবের পায়ে। দিন যায় – চোখের জলের মতো, ভেঙে ভেঙে অনির্দিষ্ট তার যাওয়া। চোখ ফিরিয়ে থাকি ভুলে থাকি ভোরের সোনালি রোদ্দুর মায়াময় বিকেল, ভরা চাঁদ ছায়া ফেলে হলুদ পদ্মের…
-
উত্তরের পথ
সুজন হাজারী আগুন আছে বাহে, বিড়িটা হামার ধরাও। ট্যাঁকে গোঁজা দেশলাই ঠুকে বিড়ির মুখে আগুন দিয়ে ধুমছে মারে সুখটান। নিকোটিন তৃষ্ণায় ভিজে সুহৃদের মন-স্বজনপ্রীতিতে প্যারালাল বন্ধু দুজন। গ্রামের আবাল কাঁচা সড়ক অভিজাত হাইওয়ের পিঠে চড়ে জাহাজ কোম্পানির মোড়ে উঠে যায়। ধুলো-কাদামাখা নাবালক রাখাল গরুপাল লয়ে যায় মাঠে, সরু পুলের হাত ধরে নদীপার, হাঁপাতে-হাঁপাতে…
-
মানুষের মুখ
তমিজ উদদীন লোদী আমাকে মানুষের মুখ অাঁকতে বলা হয়েছিল। কিন্তু আমি অাঁকতে গিয়ে টের পাই পৃথিবীর অন্যতম কঠিন একটি কাজে আমার অজান্তেই আমি হাত দিয়ে ফেলেছি। বরং শৈত্যপ্রবাহের ভেতরে বরফ কুড়ানো কিংবা মরুভূর তপ্ত বালির ওপর হাঁটা ঢের ঢের সহজ কাজ। কপোল, চোখ ও থুঁতনি অাঁকতে গিয় টের পাই এদের নানা ভঙ্গি ও অভিব্যক্তি…