কবিতা

  • পথ রোধ ক’রে বারেবার

    মারুফ রায়হান   জোছনা-ধোয়া রাত্রি যখন কাবার পথ রোধ ক’রে দাঁড়ালে আবার এ ক’টা বছর কোথায় ছিলে হে ফাঁদ দেরি হলো যে আসতে গোঁফের তলায় শয়তানি হাসি হাসতে   ভেবেছ ভয়ে কাঁপব নবীন লতার মতো হবো টলমল সাগর ফুঁড়ে আসা রাক্ষসের সামনে যেমন বাতাস বিহবল! তিরিশ বছরে ঝড় কতবার উড়িয়ে নিতে এলে ঘনান্ধকার দানো হয়ে…

  • অলৌকিকের দিকে

    কালীকৃষ্ণ গুহ   সেদিন তুমি বলেছিলে, ‘আমাকে নিয়ে একটা প্রেমের কবিতা লিখুন -’ সেইদিন থেকে তোমার দিকে আর তাকাতে পারিনি।   সেইদিন থেকে মনে হয়েছে অচেনা একটা দিগন্তবিস্তৃত মেয়ে। অলৌকিক। অলৌকিকের দিকে তাকানো যায় না।   মনে পড়বে, ‘অলৌকিকের কাছে সকল আকৃতি ঝরে যায়।’ বলেছিলেন শক্তি চট্টোপাধ্যায়।

  • স্বদেশ জননী

    তরুণ সান্যাল   সুবচনির নিকোবর ওঙ্গি হাঁসে বুড়ো আংলা দেখাচ্ছে গণেশ। যাচ্ছ, যাও সাগরপার অবিন ঠাকুর ছবি লেখে বাংলাদেশে, ওঁর দাদা গগন ঠাকুর ওমনি ছায়া আলোয় সিঁড়ি এঁকেছেন মাঠ গৌড়দেশ কিংবা দশটা ব্যঙ্গ ছবি বঙ্গবাসী মরবে কুটোপাটিতে হেসে, যেখানে বাপ্পাদিত্য সাঙনে দোলায় দুলেছে শোলাঙ্কি দুহিতা। তারপর তো দিন গড়ায়, গণেশ বাপ্পা দেশ ছাপিয়ে রাজপুত সৈনিক,…

  • নিহতরা ফিরে আসে মধ্যরাতে

    ভাষান্তর : মঈনুস সুলতান গভীর রাতে জেগে ওঠে তারা সাদা হয়ে আসা কোটরে জ্বলছে মণিহীন অাঁখি, হেঁটে যায় শহরের ল্যাম্পপোস্টহীন দুর্গম গলিতে অবজ্ঞা করে পেঁচাদের ডাকাডাকি। কাফন জড়িয়ে রেখেছে তাদের দেহ কিন্তু ঢাকতে পারেনি পরিচয়, অননের রেখায় অাঁকা হয়েছে সিসার গাছপালা বীভৎস বুলেটের সাথে হয়েছে তাদের পরিণয়।   রোদন করে সমবেত… গান গায় তারা উচ্চৈঃস্বরে…

  • মর্মর

    তুষার কবির শীতঘুমে পাতা ঝরে; আরো ঝরে মর্মরের ধ্বনি – ভেজা কোরকের ঘ্রাণ ভাসে কৌমুদিনী স্বরে – বিকল পালক ওড়ে চারিদিকে – খড়ের গাদার পাশে শুয়ে থাকে শাদা কাকাতুয়া – কুয়াশার ক্যারাভানে চড়ে হারিয়ে ফেলেছে সে তার পীতাভ-পিঙ্গল ডেরা! তুমি চেয়েছিলে আজ শুধু কথা বলে যেতে – ভেতরের চাপা রাখা কথার বুদ্বুদ সব বের করে…

  • বিবাহিত শিক্ষয়িত্রী

    মাসুদ পথিক   এই যে ভূগোল, অতিসুন্দর! ক্লাশের পেছন থেকে দেখতে বিবাহিত শিক্ষয়িত্রীর গলায় দ’মগ্ন, বর্ণমালা একী! নেই কোনো প্রসাধন যার বাহিরে, ভেতরে একরোখা আলো   হ্যাঁ, ভূগোল ক্লাশে থাকে রহস্য টিলা, দুটি অক্ষরের কোমলভারা দুঃখ ঊরুসন্ধির বারান্দায় আমি ফেল করা ছাত্র এক, আর বন্ধুরা লুকিয়ে তাকিয়ে থেকে থেকে আলোতে গেছে মারা, পালিত লাশের উজ্জ্বলতায়…

  • অর্কেস্ট্রায়ন

    পিয়াস মজিদ   জীবন চলে যায় চলে যেতে থাকে শারদীয় পঙ্ক ও পূর্ণিমায়; স্বপ্ন ও ক্ষুধাকল্পনায় দানা বাঁধে যত হেমন্তরুধির কিংবা কালপুরুষের কারুকাজ। বিগত বর্ষার মরচেপড়া মেঘদূত চেয়ে চেয়ে দেখে পাখাহীন আমি তোমার দিগন্তে কেমন প্রজাপ্রতিপ্রোজ্জ্বল! আর প্রেমবর্ণ হিম মুছে দেয় ঋতুদের বিধিবদ্ধ ছয়রঙা বাহার।

  • সততার সতী

    সালেম সুলেরী   কতো ঘর গড়বর, কতো গুম নির্ঘুম জাগে, কতো গতি দুর্গতি, কতো বাঁক নির্বাক থামে। কতো নাম দুর্নাম, কতো সুর অমধুর রাগে কতো ঠাঁট বিভ্রাট, কতো গীতি বিকৃতি ঘামে…   কতো স্বাদ বিস্বাদ, কতো দম উদ্যম নেভে কতো তেজ নিস্তেজ, কতো বল দুর্বল খেলা – কতো গুণ নির্গুণ, কতো ভার নির্ভার ভেবে কতো…

  • যখন কেবল পাতা ঝরে

    শুভাশিস সিনহা যখন কেবল পাতা ঝরে, গাছের পায়ের তলে আপন দেহের এই খসা অঙ্গমালা তুমি কি দেখতে পাও, তোমারও আগুনরাতে তখন শরীর থেকে পুড়িয়ে পুড়িয়ে লোমভস্ম ফেলে শয্যার ওপর পাখি হয়ে গান করে ধাওন্ত হৃদয়   যখন কেবল পাতা ঝরে ধূলির শরীরে মাখা হবে বলে, কোনো এক বাওকুড়ানির ভালোবাসা তখন পড়ন্ত দিনে তাকে টেনে নেবে…

  • জেল রোডের প্রেমগীতি

    আহমেদ মুনির কাল রাতে নিজেরই শরীর ছেড়ে হেঁটে গেছি আমি জেল রোড ধরে মনে পড়ে আমানত শাহ, বদরপাতি; সরু গলি বেয়ে বয়ে গেছি রিকশায় চড়ে উড়ে গেছি নাকি আনমনে একা হেঁটেছি কেবলি; ভুলে গেছি স্বপ্নদৃশ্য, তবু মনে আছে সুগন্ধি দোকান, সারি সারি আতরের শিশি সাইনবোর্ডের নির্ঘুম অক্ষর এখানে আতর মেলে খাঁটি একনম্বর। কাল রাতে অচেনা…

  • জল-বালুচর

    টোকন ঠাকুর   অনেক কবিতা ছাপা হলো। অনেক দুঃখও পেয়ে গেলো ধ্রুপদী মর্যাদা। অনেক খ্যাতিও শেষে উপচে উপচে ফেনা হয়ে গেল   একটি কবিতা থেকে আরেকটি কবিতায় যেতে গিয়ে মধ্যপাতে ফাঁকা দিয়ে ঢুকে পড়ল মধুবন্তী, নারীবন্ধু, গুপ্ত-নানাচ্ছল এখন যে কবিতা লিখছি, কবিতার নাম ‘জল’ – এটি বালুচরে ছাপা হবে! ফলে রৌদ্রে বখাটে হলেও, জোছনাকালীন দাহশিল্প…

  • উৎসব শেষে

    সরকার মাসুদ   উৎসব শেষে ফানুস ওড়ানো হবে রং-তামাশার ভেতর থাকার মানে তো ভেতরের ঘা ঢেকে রাখা প্রিন্টেড জামায়! উৎসব শেষে উইপোকা উড়বে শত শত জয়শ্রীর দীর্ঘশ্বাস লেগে থাকবে আমার চিবুকে।   উৎসব শেষে অনেক রাতে জোনাকপল্লবী ফিরে যাব আমার জুতার ভেতর গোল হয়ে ঘুমিয়ে থাকবে অন্ধকার দু’পায়ে জঙ্গল ভেঙে আমি আরো ভেতরে তাকাবো।  …