কবিতা

  • বসন্ত-গুঞ্জরন

    পিয়াস মজিদ   মরু থেকে মহাকাশে কলাবতী হিমের বিস্তার ইতিহাস-পুস্তক থেকে আমার নিভৃত প্রাণের পৃষ্ঠায় জায়মান শতসহস্র শীতমহল।   ভাবছি, ক্ষতি কি! এক জীবন কুয়াশাকীর্ণ থেকে বাঁচিয়ে রাখি আসন্ন পৃথিবীর সমুদয় রৌদ্রপিপাসা…

  • জারুল : ১৯৫৮

    সৌভিক রেজা এতোদিন পরে এসে জারুল তোমার ছায়া, ক্যামন-একটা মায়া ধরিয়ে দিয়ে নদীতে সাঁতার কেটে ভেসে গেলে দূরে, তুলসীগঙ্গার বুকে; আমার শুধু একা বসে থাকা, একা-একা বসে থাকা, একাই বসে থাকা; বিচিত্র কোনো বাসনা নেই, নেই কোনো তুচ্ছ বীতরাগ; শুধু অন্ধ-চোখ নিয়ে শুনি প্রতিধ্বনি, তুলসীগঙ্গার স্রোতের প্রতিধ্বনি; হে ধ্বনি-প্রতিধ্বনি থাকতো যদি একটু অলস-মায়া, ভালো লাগতো…

  • বঞ্চনা

    কাজল চক্রবর্তী   বৃক্ষ অনায়াসে নিতে পারে লতা-ফল ও পাখিদের ভার। সহ্য করে বাতাস ও বৃষ্টির ওঠা-নামা। মাটিকে আঁকড়ে ধরেই তাঁর যাবতীয় উত্থান। আকাশের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে ছড়িয়ে দেয় রং আমাদের চারধারে। প্রয়োজনে ব্যবহার করি – খাঁচার পাখিদের মতো।   অসহায় বৃক্ষেরা কাঁদে কেউ শুনতে পায়, কেউ বা শোনে না। কিন্তু পৃথিবীময় বৃক্ষের হাহাকারে এখন…

  • অর্ধসত্য

    খালিদ আহসান   চারদিক দুদ্দাড়, বুনো দস্যুতা সেরে বুকের কাছে এসে হেরে গেছি হারিয়ে যাওয়া বাদামি মা’কে মনে পড়ে গেলো।   তুমি আমার ৫.২০-এর ট্রেন অপেক্ষার শেষ হুইসেল বেজে উঠেছে   তুমি আমার শেষ বিকেলের রোদ অল্প শীতে মিষ্টি লাগছে মিষ্টি লাগছে ভুবন   দিগন্তজোড়া চোখ হা-হা ড্যাব-ড্যাব পলকের ভার পৃথিবী ছুঁয়েছি সেই প্রথমবার  …

  • ডুয়েট অন্তর

    রাজু আলীম     এখন বিমান চোখ উড়ে যায় হেলিপোর্ট বাড়ি রোমান্স রাতের আহবানে ডাকে পরিণীতা নারী।   রূপসি আনন্দ প্রাণে দোলা দেয় অলৌকিক সুখ হাত পেতে চাই প্রেম-প্রিয়তমা নেচে উঠে বুক।   ফ্লায়িং আশাগুলো সব পোস্ট অফিসে অন্ধকার ভয়ার্ত বিড়ালী কাঁদে মধ্যরাতে সুরমন্ত্রকার।   সুপারসনিক লাফ দিয়ে যাবো প্রেম সীমান্তর ভবিষ্যৎ বীজ বোনে আমাদের…

  • মাঠের ওপারে

    শাহজাদী আঞ্জুমান আরা   আবেগের স্তর আছে। উঠোন পেরিয়ে পথ পথ ডিঙিয়ে হাওয়া হাওয়ার ওপারেই মাঠ – ক্রমশ মেলাতে থাকে। মেলাতে মেলাতে শূন্যে…   বাক্স-পেটরা যেখানে যেমন থাকার কথা পড়ে থাকে সেভাবেই। শব্দহীন নূপুর উপুড় হয়ে আবেগের পলেস্তারা ধীরে ধীরে খসে যায় –   এক, দুই, তিন, প্রতিদিন, প্রতিদিন… তারচেয়ে ভালো গুটিয়ে নেয়াই অবশিষ্ট কী…

  • সোনালু

    কাজী রোজী   সোনালু একটি ঘরের নাম। একটি ওয়াশরুম। একটি ডবল খাট আর একটি সিঙ্গেল খাট। ছোট সাইড টেবিল – তাতে একটি জগ – মামের বোতল একটি-দুটি গ্লাস, সবটাই জল-পূর্ণ। মৌলভীবাজার সার্কিট হাউস থেকে ওটা দেখা যায়।   ঘরটায় দিন-রাত নেই – সারাক্ষণ অন্ধকার। সুইচ আছে – বাল্ব নেই। ফ্যান ঘোরে সারাক্ষণ। কে বা কারা…

  • সুসময়

    অলোক বন্দ্যোপাধ্যায়   মাঝে মাঝে সুসময় এসে কড়া নাড়ে ঘরের দুয়ারে মাঝে মাঝে বালিহাঁস ভেসে চলে নিঝুম দুপুরে মাঝে মাঝে মনে হয় ঘাড়ে যে প্রচন্ড ব্যথা মেরুদন্ডে বরফের হিম শৈত্যপ্রবাহের সাথে আমাদের ভুল আলিঙ্গন একদিন প্রশমন বয়ে আনবে এই খর ঊষর শরীরে   নারী কি কেবলি স্মৃতি-ইন্দ্রিয় বিলাসমাত্র – রতি সম্মোহন অথবা অন্তর থেকে ভেসে…

  • এক দার্শনিকের মুখোমুখি

    রেজাউদ্দিন স্টালিন ‘নিজেকে জানো’ বলতে-বলতে ঘেন্না ধরে গেছে, এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন।   আত্মা কী, ঈশ্বর কোথায়? ভাবতে-ভাবতে উই ধরেছে জঙ্ঘায়। পৃথিবী কবে থেকে সূর্যের চারদিকে ঘুরতে শুরু করলো তা স্রষ্টা ছাড়া কেউ জানে না। তপোবনে এইসব বিজ্ঞানীকে ধুলোয় মিশিয়ে দিতে পারতেন ঋত্বিক বিশ্বামিত্র, কিন্তু তিনি ব্যস্ত ব্রাহ্মণ হতে।   দেখুন – একই নদীতে…

  • তোমাকে বিদায়

    রাতুল দেববর্মণ   আয়নায় ছায়া ফেলে কখন যে চলে গেল হৃদয়ে আকাশ মুদ্রণ করে ফেলে রেখে দীর্ঘশ্বাস বিদায় বিদায়   ধীরে বয়ে চলে চাঁদ বাতাসের ধ্বনি নারী একাকিনী ললাটের বিন্যস্ত চুল অনন্ত স্বপ্নে লুটোপুটি খায় বিদায় বিদায়   ফিরে যে চলে যায় তার গান শুনি দূরের হাওয়ায় যেভাবে নদীতরঙ্গের কল্লোল ভাটিয়ালি সুরে বেসে যায় বিদায়…

  • নবপ্রলয়

    কাদের মাহমুদ   চীন দেশে গিয়ে হুমড়ি খেয়ে পড়েছে সব শাদা ধন কিছুটা ভারতে, ব্রাজিলে খানিক, অন্যত্র ছিটেফোঁটা তাতেই চিৎপাত পাশ্চাত্যের কল, দক্ষ লোকবল একদা যা ছিলো প্রবল জিডিপি গোত্তা খেয়ে নেবেছে শূন্যমন্ডলে যেন কোনো ব্ল্যাকহোলের সমীপে।   মাও সে তুংয়ের ছবির নিচে ব’সে বেজিংয়ে কমিউনিস্ট পার্টি কিনেছে ট্রিলিয়ন ডলার আমেরিকানি সরকারি বন্ড – যেন…

  • পরাজয়ের ফেরিওলা

    মানবেন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায় খুঁটির গায়ে পা বাঁধা রয়, নাচতে গিয়ে শেষে হেরেই গেলো, হারলো সেধে-সেধে ভাঁড়ের হাসির পোশাক রাখলে আষ্টেপৃষ্ঠে বেঁধে। বিদঘুটে বাজপাখির ডানায় সমব্যথার ধূলি সঙ্গে তাদের ওই উড়ে যায় কাতর আর্তিগুলি। যেন একটা চলচ্চিত্র : অশ্বারোহীর দল, ছোটো বন্দুক ছুড়ছে গুলি, একের পর এক, তীব্র, প্রবল, তাগ নির্ভুল, ঠিক লাগে সব চাঁদমারিতে কেউ জানে…