কবিতা
-
শোকগাথা
তারিক সুজাত এক ঘুম ও জাগরণের মাঝে দূরত্ব কতোটুকু? কেউ বলবে এক চুলও না, আমি জানি মহাদেশ! – আমরা কি জেগে আছি? দুই পতাকায় আচ্ছাদিত মুখ, অজস্র কণ্ঠে একই গান তবু কেন আত্মায় মর্মরিত সুরে তোমাকে পাই না দেশ! তোমার শিয়রে এই পোড়া দেহখানি রাখি। এইমাত্র আগুনে পুড়েছে যে সে তো তোমারই…
-
উত্তরের হাওয়া
টোকন ঠাকুর কার কথা কীভাবে বলব আমি? বন থেকে প্রকাশিত দৈনিক ঝরাপাতা কারা তাতে লেখে আর কারাই বা পাঠক-পাঠিকা? কার কাছে বলা যায় উত্তরের হাওয়া আসে গুপ্তচর হয়ে? সন্ধে থেকেই ওঁৎ পেতে বসে আছে আততায়ী ঘ্রাণ, চন্দ্রমল্লিকার! মনে হয়, ভাবনা সম্প্রচার কেন্দ্রের আজ রজতজয়ন্তী, তুমুল ভাবনাসূচি : ভাবনাকে দেখতে আসে বুদ্বুদ, দোস্তে দোস্তে জুয়া…
-
নিশীথ নিশীথ
শুভাশিস সিনহা (বাবাকে) নিশীথ নিশীথ! শুনল না কেউ নিশীথ বাড়িতে নেই অন্ধ বন্ধ মনের ভিতর মন্ত্রে মন্ত্রে যাত্রাপথ খুলে বাঁশপাতি সাপের মতো সে ঢুকে গেছে মহাগোধূলির ঘরে ঘরে তোর বউ বাচ্চা মাটিতে লুটিয়ে কাঁদে আলোর সোনার ফুল গাছে গাছে কামনা জাগায় ঘোর হতে চাওয়া তিথি পায়ের ঘুঙুর খুলে ফাঁস নেবে,…
-
অযান্ত্রিক ছেলেবেলা
ওবায়েদ আকাশ অযান্ত্রিক ছেলেবেলাগুলো ছায়াবাতাসের গ্রীবায় মুহূর্তে উড়ে যায় তার এক পালক তোমার আর অবশিষ্টগুলো আমাদের নস্টালজিয়া-সমগ্র ১, ২, ৩… আমরা যেদিন থেকে নস্টালজিক হতে শিখেছি পুকুরের মাছ ধরে এনে পরিপালন করছি কবুতরের খাঁচায় ইচ্ছে হলে ভোরবেলার দরজা খুলে সারামাঠ ঘুরিয়ে এনে ঠিক আবার পৌঁছে দিচ্ছি বনবেড়াল, বুনোখরগোশের জন্য সুনির্দিষ্ট খোঁয়াড়ের ভেতর …
-
যন্ত্রঘর
তুষার কবির নৈঃশব্দ্যের ফেলে দেয়া আধুলি কুড়িয়ে ফিরে যাচ্ছে সংগীতের মৌন পুরোহিত; মন্দ্রিত মূর্ছনা আর ভগ্ন উপাখ্যান রচনার শেষ দিনে সে কুড়িয়ে কুড়িয়ে জড়ো করে নিচ্ছে যতো ছায়াচেরা গান আর স্তব্ধতার স্বরলিপি – ধ্বনিময় পৃথিবীর টানে আর শূন্যতার অনিঃসীম গানে সে ফিরে যাচ্ছে তার সুরমগ্ন যন্ত্রঘরে – দ্যাখে বেহালাটা আর আগের জায়গায় নেই;…
-
বালিকাবন্ধু
মাহবুব বারী এক বালিকাবন্ধু আমার, তোমাকে দেবো কল্পনার উড়ন্ত ডানা সমুদ্রের স্বপ্ন দেবো গান দেবো আকাশের প্রেম দেবো নানা রঙের, আর দেবো তারা-ভরা রাতের আলো জোছনার চাঁদ; আমাকে শুধু সঙ্গে নিয়ো আর কিছু তো নাই যে আমার সাধ। দুই স্বপ্ন নেই কোনো তবু স্বপ্ন দেখি বালিকার মুখখানি দেখে, কোথায় গন্তব্য তোমার, কোথায় রেখেছ…
-
বৌদ্ধবিহার
হাফিজ রশিদ খান আমি অক্লান্ত বৌদ্ধবিহার সময়ের সোপানে-সোপানে গেঁথে রেখেছি হাজার বছরের চিহ্ন মুক্তিকামী আমার উড়াল আকাশে-আকাশে নাদব্রহ্মে করি বিচরণ নক্ষত্রখচিত রাতে পর্বতমালার চূড়ায়-চূড়ায় মায়াভরা মাটিতে সবুজ ঘাসের ডগায় প্রব্রজ্যা বাতাস – জগতের প্রাণী, আমাকে তো চেনো সকলেই… বাসনার জটিল জাজিম ঘেরা এই বসুন্ধরা বীরভোগ্যা বলে নিত্য কুরুক্ষেত্র প্রণয়ন করি তাই স্থিতিস্থাপকতার…
-
মুসাফির
রোকসানা আফরীন পরমের হাতছানি পরমের আলো এই তো জীবন সখা, এই পরাজয় কারাগার থেকে কারাগারে ছিন্ন হতচ্ছিন্ন আলো আমাকে বন্দি করে, বন্দি করে রাখে আমার জন্মের ঋণ এইটুকু রেখে যেতে চাই নির্বাণ লাভের ভুলে আমাকেই ডুবে যেতে হবে একা একা কসমিক অন্ধকারে ব্ল্যাকহোল কসমিকে আলোর উদ্দেশে মহাজাগতিক মুসাফির হয়ে…
-
নদী ও কবিতা
রবিউল হুসাইন এদেশের মানুষ উর্বর পলিমাটি তাদের বুকের ওপর দিয়ে আকুল নদীগুলো সাগরের দিকে বয়ে চলেছে কুলকুল উন্মূল কূলে কূলে শস্যাদি ফসল ফলফুল প্রজাপতি দূরে রঙিন পাখা মেলে ওড়ে বাতাসের শূন্য পরিসরে ডানায় ডানায় প্রতিসাম্যের বর্ণালী চিত্রকলাসম্ভার কারা এইসব সৃষ্টির মৌলিক শিল্পী এত যে অপূর্ব অভিন্নতার প্রতিটিই স্বয়ংসম্পূর্ণ অথচ ভিন্ন ভিন্ন অবয়বে অসাম্যের…
-
বেচারা আঙুল
হারিসুল হক এ-পথ আমার নয় যে-পথে হেঁটে গেছো তুমি দুরন্ত বজ্রের শব্দে ফাটে কর্ণপটহ – বিচ্ছিন্ন হতে থাকে বেচারা আঙুল যে-পথে তুমি গেছো সে-পথ আমার নয়… স্টেশনে বিকেল নামে হিম এক নদীর আদলে অরণ্যে জারজ গাছ ছায়া গিলে… পথ কি ঝর্ণা নাকি নাকি পথ সর্ষে কুঁড়ি – শুধু দোলাচল শুধু মিটমিট… …
-
কথামালা
শংকর চক্রবর্তী কতদিন উড়িয়েছি পুরনো দিনের কথামালা নিজেরই একান্তে ছিল সবকিছু গোপন আলোয় সন্ধে নেমে এলে শান্ত হয় যেন গিরিতরঙ্গিনী আকাশে উড়া, ভাবি, এবার আকাশে উড়ি বেশ খোলামেলা কতদূর মনে নেই, দেখি দু-পা এক-পা খেলায় বৃক্ষ-সমারোহে শুধু হাসির ঝিলিক উড়তে উড়তে ডানা গেল ভেঙে রক্ত-লাগা ছেঁড়া পালকের ওড়াওড়ি আমি হালকা হয়ে দ্রুত নেমে আসি…
-
ঝাঁপতাল
সুহিতা সুলতানা এক স্বপ্নের রাতে জল ও জালের খেলা দেখতে গিয়ে ধীবরের জালের ভেতরে দেখেছি আমি তার চাঁদমুখ মায়ার ফাঁদে আসি জলে নেমেছি তাকে ছুঁতেও পারিনি। প্রতিরাতে অপাপবিদ্ধ আলো হয়ে ঘূর্ণায়িত নাভির ভেতরে তৃষ্ণার নদী হয়ে ভাসিয়ে নেয় ঝাঁপতাল। মগ্নতার ওপারে ডুবসাঁতার খেলে নীল ফড়িঙের ডানা। মাঝরাতে ঘুম ভেঙে গেলে ঘনীভূত হতে থাকে বিষাদের…