কবিতা
-
গ্রহ
তাপসকুমার রায় ধরো, এই গ্রহ যদি কোনোদিন রেগে ওঠে রেগে উঠে মাথা ঝাঁকিয়ে যদি বলে আমার এ অতিদূর সময়ের ভার আর রাখবো না – যদি জল নেমে যায়, পাহাড় ভেঙে পড়ে যদি ঘুমের মধ্যে গর্ভের শিশু নড়ে যদি আলো নিভে গিয়ে সূর্য হয়ে পড়ে এক মৃত নক্ষত্র যদি সমস্ত সবুজ মুছে গিয়ে আকাশ ভরে…
-
ছয়-দশকের একটি গল্প
জাহিদ হায়দার আমার বোনকে দেখার দাম দশ টাকা। হারিকেনের হলদে আলোয় জিন্নার টুপি পরা ছবি বোনের হাতে কেঁপে উঠেছিল শ্যামলা মুখের জন্যে পাঁচ, কালো, লম্বা চুলের দাম তিন, আর চার জোড়া চোখের সামনে ভীরু পায়ে হাঁটার মূল্য দুই টাকা; আমি মনে মনে হিসাব করেছিলাম। লক্ষ্মীপেঁচার ডাকে এক বার্তা খুঁজে – ও…
-
অগ্নিসঙ্গিনী
বায়তুল্লাহ্ কাদেরী এক আমাকে জলজ ভেবে কেন তুমি ভিজে উঠেছিলে স্বিন্নতায় নিজের ভিতরে? কেন গোধূলিকে গাভিছায়াময় স্মৃতিভূমি ভেবে বসেছিলে খুব নিচু, থুতুনিতে দেখি গম্ভীর মৌসুমি বায়ুর নিঃসঙ্গ ঘূর্ণি, মুখ ছেয়ে গেছে শৈতিক বিষণ্ণতায়, মনে পড়ে, তুমি ছিলে অগ্নিসঙ্গিনী। জীয়নকাঠি। শূন্যতায় আমার আগুনে এসে এলোমেলো কখনো তোমার মৃতধূপ জঙ্গমপারঙ্গমতা পায়, বিস্মৃতির নগ্ন তাসের তুরুপ তুমি…
-
তুমি গুপ্তধন
মাহমুদ কামাল খুঁজে খুঁজে যা পেলাম তা প্রার্থিত শরীর নয় একটি কংকাল ওই কাঠামো থেকে নিঃশ্বাস বেরিয়ে গিয়ে সৌন্দর্যের নিসর্গ-নিচয় শিকড়ে প্রোথিত। মাটি খুঁড়ে কেউ পায় সোনাদানা তেল কিংবা তিল দু-বুকের চিরচেনা তিল খুঁজতে গিয়ে যে-কংকালটি মাটি স্ফুরে এলো লাবণ্য-লতিকা আর তিলের প্রান্তিকে অন্বেষণে যা পেলাম তার প্রতিস্থাপনায় অন্য এক ছবি। আলোক চিত্রণের বিপরীতে…
-
নিয়ম নাস্তি
খালেদ হোসাইন যখন চারপাশে কেবল আন্ধার নয়ন মুদলেই আলোর বন্যা আমাকে ইশারায় কোথায় নিয়ে যায় যদিও জানি না তা, সোনালি ক্ষণ না? কৃষক ঘরে ফেরে চিলতে হাসি ঠোঁটে যদিও দেহে তার অশেষ কান্তি – ক্লান্তি মুছে যায় কিষানি যদি চায় একটু বাঁকা চোখে – শান্তি, শান্তি! শ্রমিক ঘাম মোছে আকাশে ওঠে চাঁদ…
-
ঘুমের বদলে
গৌরশংকর বন্দ্যোপাধ্যায় কাল রাতে যে স্বপ্ন দেখেছিলাম তার কথাই আজ ভোরে মনে পড়ে গেল অনেকদিনের পর এরকম স্বপ্ন কেন এলো সে ভাবনাই ক্রমশ আমাকে অন্ধকারে টেনে রাখে একদিন যাদের নিয়ে আমার দিন কেটেছিল তারাও ধীরে ধীরে নিজেদের সরিয়ে নিয়ে ভেবেছে একা একা নিজের মতো করে জীবন পালটাবে কারও মুখোমুখি দাঁড়িয়ে বিপন্ন হওয়ার চেয়ে…
-
অপমান
শ্যামলকান্তি দাশ মাথা নিচু হয়ে যাওয়ার পর তোমার ছবি দেখলাম। দাগলাগা, রক্তাভ, এবড়োখেবড়ো। দেখলাম রাত জেগে কেউ তোমার জন্য বসে নেই। ঘুমন্ত বাড়ির ভেতর থেকে যারা বেরিয়ে যাচ্ছে তারা স্বপ্ন বা কোনো অন্ধকার নয়, তারা একেকটা জ্যান্ত মুখোশ। অপমানের ভয়ে কথা বললাম কম, কিন্তু চিড়বিড় করে উঠল দেহ, দেহের সমস্তটুকু!
-
উপহার ২০১৩
মাকিদ হায়দার একাধিকবার জুতার বাড়ি খাইবার পরেও আমার মনে হয় নাই কেহ আমাকে অপমান করিয়াছে। তাহার বেকার ভাইটি হঠাৎ একদিন হরিপদ ঋষির নিজ হাতে বানানো জুতা দিয়া প্রকাশ্য দিবালোকে প্রহার করিলেন আমাকে। যদিও আমি সেই বেকার ভাইটির তৃতীয় ভগিনীর পাণিপ্রার্থী ছিলাম বলিয়াই সেই দিন আমার কপালে জুটিয়াছিলো হাজার রকমের উত্তম, মাধ্যম। সেই…
-
গীতাঞ্জলি
বীথি চট্টোপাধ্যায় একটি কথা সবাই জানি, মুখেও বলি রবীন্দ্রনাথ লিখেছিলেন গীতাঞ্জলি। গীতাঞ্জলি ছাড়লে লোকে কোথায় যাবে? জীবনদায়ী এমন লেখা আর কি পাবে? সত্যি ক-জন মনের জোরে বলবে বলো? দুঃখ থেকে শক্তি নিয়ে এগিয়ে চলো। ভয় পেয়ো না, যা বলছে তা বলুক লোকে নিজের জীবন দেখতে শেখো নিজের চোখে। পদ্মাপারে গাছের ছায়া নদীর জলে; সূর্য…
-
নুনচিত্র
হাবীবুল্লাহ সিরাজী অন্ধকারে নীল পিঠ ভেজে গন্ধ পায় ফেনা ও কাঁকড়া – যতো জরিমানা, দেনা তোমার বত্রিশ পেলে জিহবা-ঠোঁটে মিশ্রমদ একান্ত ভ্রমণ শেষে অঙ্গাঙ্গি নুন বিস্ময় তো কর্ণফুলি! উল্টে আছে চিনেমাটি জট-মূল ছত্রিশের তাপে ক্লাং টপকে গোম্বাকে উঁকি দিলে নাসিকার অগ্রভাগে নুনের আস্তানা ভালুকের থাবার মতো অজানা উপত্যকায় সম্ভাবনা বেসামাল! জলে যে…
-
আমি
শাহজাহান হাফিজ এক বাতাসও বিষণ্ণ আজ এমন সংসার! আমি শুধু একা হয়ে যেতে যেতে, জীবন যাপন আর জন্ম-সম্ভাবনা নিয়ে, সভ্যতার খেলাধুলা দেখি! আমি ফের নদীতীরে, ছিন্নমূল মানুষের স্বপ্নে যাতনায়, আঙুল জড়াই মৃত্যু; তারপর ফিরে যাই লোকজ বাসনা থেকে লক্ষ লক্ষ স্মৃতিময় ঢেউয়ের ওপারে! ছিলো মেঘ পরিচয়হীন, পরাভূত প্রেম থেকে জন্মেছিলো অশ্রুর সাগর। অসম্ভব…
-
মধ্যবিত্ত
প্রবালকুমার বসু বয়ে বয়ে সম্পর্কের গোপন ভার, উটের মতন তুমি কুঁজো হয়ে গেছ পিঠের কুঁজের ওপর একটা গোটা জীবনের নিঃসঙ্গতা এর খুব কাছাকাছি গেলে শুনি কীভাবে হাওয়া এসে নিঃসঙ্গতা আরো বাড়িয়ে দিয়ে যায়। একসময়ের সম্পর্কগুলো পক্ষাঘাতে পঙ্গু হয়ে পড়ে আছে অলৌকিকতার পাশে আর তুমি? নুড়ি ও পাথর ঘেঁটে, আশা করছ ঠিকই পাবে পুনরায় একবিন্দু…