কবিতা
-
দূরের সংকেত
মারুফুল ইসলাম দুপুরের বিষণ্ণ নূপুর থেমে গেলে নিজের গভীরে ডুব দিয়ে ছুঁয়ে আসি পাতালের সিক্ত মাটি ধরিত্রীর যোনির দেয়ালে জমে থাকে শ্যাওলার বিস্তার অলস দিবস কাটে, অলস রাত্রিও পাখা মেলে উড়ে যায় দূরের আভাসে ভেজা অন্ধকারের শরীর থেকে মৃতের দুর্গন্ধ পাই তবু কোথাও কেউ এখনো কারুর নামে জ্বেলে রাখে নিষ্কম্প প্রদীপ…
-
দুটি কবিতা
কামাল চৌধুরী পরবাস রাত্রিই আরাধনার শ্রেষ্ঠ সময় বলো, কবিতাকে বলো শীত রাত্রি আমি ঘুমিয়ে পড়িনি। বসন্ত আমি জেগে আছি হে গ্রীষ্ম হে অসহ্য উত্তাপ তোমার ঘামের গন্ধে আমার কবিতা ফিরে আসছে প্রতিদিনকার পরবাস থেকে এসো দিগন্ত, এসো কবিতা আঙুরের নেশায় ভুলে যাওয়া জীবন এবার জাগো পরবাস থেকে ফিরে…
-
স্বচ্ছ কাচ
অরুণাভ সরকার প্রজাপতি মাথা কোটে জানালার কাচে প্রজাপতি স্বচ্ছতা জানে না স্বচ্ছতা জানে না বলে মাথা কোটে ভাবে, ওই তো রয়েছে তার কাঙ্ক্ষিত আকাশ এক্ষুনি সে উড়ে চলে যাবে। আকাশ আকাশে থাকে জানালায় থাকে স্বচ্ছ কাচ প্রজাপতি মাথা কোটে স্বচ্ছতায়, কাচে প্রজাপতি স্বচ্ছতা জানে না বলে মাথা কোটে। প্রজাপতি মাথা কোটে জানালার কাচে।
-
মানুষ মূলত যোদ্ধা
মুহম্মদ নূরুল হুদা জন্ম যদি প্রাকৃতিক, মৃত্যু কেন প্রাকৃতিক নয়? মানুষ মূলত যোদ্ধা, মানুষের নেই পরাজয়। প্রকৃতির মুখোমুখি চিরকাল অতিপ্রাকৃতিক হন্তারক জীবেদের দন্তনখ অতিদানবিক ক্ষুধার দোহাই তুলে যত্রতত্র হাড়মাংস খায় ত্রিভুবনে অন্যসব প্রাণী-অপ্রাণীর; না, তাদের তো নেই কোনো দায় আকাশপাতাল জুড়ে সৃষ্টিসাম্য অটুট রাখার; ক্ষমতার ক্ষুধা-মুখে এ-ব্রহ্মা - তাদের আহার। নিরীশ্বর নয় তারা,…
-
জেগে থাকে অপ্রতিরোধ্য শাহবাগ
ফারুক আলমগীর তোমাদের যাত্রা শুভ হোক প্রতিদিন প্রতিক্ষণ হেমন্তে বসন্তে শীতে কী বর্ষার জলে থইথই রৌদ্রকরোজ্জ্বল শরৎ কী গ্রীষ্মের নিদাঘ দুপুরে তোমরা রচনা করো দৃঢ়-প্রতিরোধ প্রতিটি ঋতুতে তোমরাই আমাদের স্বপ্নে সুপ্তিতে সতত তোমরাই আমাদের মৃত্তিকার আকাশে বাতাস তোমরাই আমাদের চন্দ্র-সূর্য নক্ষত্রের আলো তোমরাই আমাদের সপ্তর্ষিমন্ডল ধ্রুবতারা তোমরাই আমাদের দিবানিশির দিকদর্শন তোমরাই আমাদের ভালোবাসার…
-
হাঁস চলার পথ
উৎপলকুমার বসু ভুলে যাই নিজের ঠিকানা। ছোট একটা বাড়ি ছিল। কিছু দূরে নীলকুঠি। গুটিকয় তালগাছ আর কিছু লতাপাতা জড়িয়ে আমার স্থাপত্যের সামান্য ঘোষণা। ছিল হাঁস। বাল্যের পাঠ্যবই থেকে নেমে আসা উট ও বিদেশি গাধার দলে আমি একা ক্রীতদাস – আপাতত স্থলপদ্মের বনে ঘুমিয়ে রয়েছ।
-
শান্ত শান্তি
আলোক সরকার একটা আলো একেবারে অন্য রঙের আলো। এইরকম মাঝে-মাঝে হয়। নারকেলগাছের পিছনের আলো জামরুলগাছের মাথার উপরের আলো – কতবার একেবারে অন্যরকম। সেই অন্যরকম তা আছে, চারদিক ভরে আছে। পথ চলতে চলতে ভাবি কতদিনের পথ-চলা। ধুলো হঠাৎ অন্য আলোর ধুলো। হাওয়া হঠাৎ অন্য আলোর হাওয়া। এমন একটা অন্যরকম প্রশ্নই…
-
ছায়া-অপচ্ছায়া
মোহাম্মদ রফিক সীমা, মুক্তা, মিলি, রণি; এরা হারিয়েই যায়, ওরা আসে ঢাকার সহরে, ভিড় করে, কাজ নেয় এ-বাড়ি ও-বাড়ি বড়োজোর সিউইং মেশিনে; ওদের কান্নার দাম অন্ধকার যতটা-বা বোঝে বোঝে না সময়, দৃষ্টিহীন চোখগুলি ঝলকে ওঠে অন্যায় অশুদ্ধ ব্যবহারে, দু-একটা চড় বা থাপ্পড় জোটে কপোলের ভাঁজে; অবশেষে ফিরে যায় বরিশাল-বরগুনার প্রত্যন্ত অঞ্চলে, মিশে…
-
দশটি প্রদীপ জ্বালো
আসাদ চৌধুরী কোলে-কাঁখে কখনো দেখিনি চার চরণের ব্যবহারও নেই, উল্লসিত মাতৃকুল চোখ ঠেরে বলেননি ‘ও রে ভাঁদর ফিরে চা।’ শুরু থেকে ঊর্ধ্বশ্বাসে ছোটা দিগন্তের দিকে। আগে-পিছে নার্সিসাস হুমড়ি খেয়ে পড়ে আছে। কোরাসের দলে নেই, শুধু মেঘ একাই বলেছে দগ্ধ দেহে প্রতিধ্বনি গুনগুন করে, ‘যাব, যাব’। লাঠি ফেলে, ঘৃত ঢেলে, সোনার মেয়েরা দশটি…
-
তোমার নাগকেশর
অলোকরঞ্জন দাশগুপ্ত অনেক খুঁজে ফুটপাতের দোকানে পেয়ে যাই তোমার ‘নাগকেশর’ জীর্ণ মলাট, উইপোকারা এসে আমার প্রিয় কবিতাগুলি থেকে মুছে দিয়েছে দু-তিনটি অক্ষর ঠাকুর দেখতে গিয়েছে কারা সপ্তমীতে শ্রাবণধারায় ভেসে – অন্যদিকে কবিরা আজ ব্যস্ত আছে তোমার অনুল্লেখে একমাত্তর আমিই বুঝি পিছুটানের অাঁজলকাজল মেঘে তোমার বেঁচে-থাকার পথের স্টেশনগুলো গুনতে-গুনতে চলি; নদীয়া আর বরানগর, বনহুগলি, হিন্দুস্থান পার্ক…
-
কুবো
নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী একটা পাখি ডেকে যাচ্ছে ভরদুপুরে আজ অদূরে কোথাও, অবিরাম। আর সে যতই ডাকে, ততই আমার চেতনায় আবছা হয়ে আসতে থাকে ট্রাম, বাস, জগঝম্প আর সাততলা-আটতলা হাইরাইজ বিলডিং নিয়ে কলকাতা শহর। ডাক শুনেই বুঝতে পারি, এ আমার চেনা জলচর কুবো পাখি। অজপাড়াগাঁয় গেরস্তবাড়ির যৎসামান্য দূরে হাজামজা ডোবার কিনারে ঠায় নিরঞ্জন দুপুরবেলায় নিরালা একাকী…
-
চিনতে নারি
আল মাহমুদ কোথায় কারা ডাক দিয়েছে হাঁক দিয়েছে আমার নাম হঠাৎ আমি দাঁড়াই ঘুরে বলি শুনুন, আছ ছালাম। আমার নামে পক্ষি উড়ে আকাশজুড়ে তারার ঢেউ তারায় তারায় পথ হারিয়ে একলা চলি নেই তো কেউ। একলা আমি অগ্রগামী কোথায় থামি কোথায় ঘর ভাঙা বেড়ার ফাঁক দিয়ে ওই চিনতে নারি আপন-পর।