কবিতা
-
শ্রাবণের পদাবলি
কামরুল ইসলাম কখনো মনও ডুবে যায় শ্রাবণের সামন্ত জলে তখন তালগাছের মাথা বেয়ে নেমে আসে সন্ধ্যা নির্জন অাঁধারে ডুবে যায় পাঠশালা আর কাঁঠালপাতারা রাতভর পড়তে থাকে জলের নামতা এ-সময়ে কোনো সোনাব্যাঙের জলকেলির দিকে মুখস্থ ফুলেরা ফুটতেই পারে – দুই জানালায় ঝুলে থাকা দুঃখগুলো লতিয়ে ওঠে মেঘের জাংলায় ভোরের অদূরে শববাহী মানুষেরা যেন সব কুয়াশা-পথিক…
-
প্রেমিক ও পতঙ্গ
আহমেদ বাসার পোড়ার আগে পতঙ্গ শুধু আগুনের রূপই দেখে ফণা-তোলা লেলিহান অগ্নির নৃত্য-মুগ্ধ পতঙ্গ বহুদূর থেকে ছুটে আসে প্রাণপণ আত্মাহুতির আনন্দ যতক্ষণ না ভস্ম…
-
বুদ্ধ বললেন, তবু…
সৌম্য সরকার একদিন ছিল যেদিন বুদ্ধের শরীরে দেশলাই ঠুকে দিলে জ্বলে উঠতো আগুন : কষ্টগুলো হামলে পড়লে কুঁকড়ে যেতেন তিনি, বেদনায় নীল, কামে-ঘামে বেগুনি হয়ে উঠতো শরীর – তারপর আবার একদিন অন্য এক আগুনে পুড়ে যখন শুদ্ধ হলেন তিনি, দীর্ঘ উপবাসের পর সুজাতার হাতে দগ্ধ একবাটি পায়েস খেয়ে প্রথম বললেন, ‘জগতের সব প্রাণী সুখী হোক’…
-
অন্ধ হতে পারিনি
সোহরাব পাশা আমাকে বিশ্বাস করো কেবল তোমার জন্যে অন্ধ হতে পারিনি আজো বহুকাল আগেই পৃথিবী মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে আমার সকল নিঃস্ব জেনে ভালোবাসা যেখানে ব্যাকুল ডাকে একা অধিক উজ্জ্বল দিগন্তের শেষ প্রান্তে ঝরে প্রার্থনার শুদ্ধজল আমি কোনো গ্রহবৃক্ষ নই ধু-ধু নির্জন ভাঙা সাঁকোর এপারে দাঁড়িয়ে আছি মাঝখানে ডেকে ওঠে দীর্ঘ ভয় অথই জলঘূর্ণি পেছনে…
-
দাঁড়াও পথিকবর
বীথি চট্টোপাধ্যায় [ফ্রান্সের মার্সাই শহরে অভুক্ত থেকেছেন কবি মধুসূদন ও তাঁর সংসার] এস্টেট থেকে টাকা আসছে না হাতে বাচ্চারা প্রায় কিছুই খায়নি রাতে, না-পেলে খাবে কী? শুধু কটা বাসি রুটি… পড়ে আছে দেখে, শুতে গেছে গুটিগুটি। রাত শেষ হয়ে সূর্য ওঠার পরে কী করে উনুন জ্বলবে কবির ঘরে? তারা ঝিকমিক করে ফ্রান্সের রাতে…
-
অধরা
জরিনা আখতার জীবনের সঙ্গে জড়িয়ে আছ বললে ভুল হবে – আজীবন তুমি আমার স্বপ্নে বসবাস করছ বন্ধুত্বের দাবি নিয়ে, সেই দূর শৈশবে জেগে উঠেছিলাম তোমাকে পাবার সাধনায় – আলপথে হাঁটতে হাঁটতে একাকিত্বের বেদনা যখন বিস্ময়কর আনন্দে রূপায়িত হলো সেই থেকে শুরু – শস্যক্ষেতে অধীর অপেক্ষায় একটি নিঃসঙ্গ বক জলের আরশিতে একটি হিজল গাছের অকৃত্রিম…
-
অগ্রবিজ্ঞান
রবিউল হুসাইন প্রকৃতির শিক্ষায় শিক্ষিত ওরা অক্ষরজ্ঞান ছাড়াই অভিজ্ঞতার বৈদগ্ধে উন্নত ব্যক্তিক উৎকর্ষতায় ওরাই এখন প্রজ্ঞাবান জিজ্ঞাসু পরিপূর্ণ ধর্মতলার অতলে ম্লান নিগূঢ়তা অসম্পূর্ণ ধর্মান্ধের তীব্র নেশায় জলসাপ সব নড়ে জংলিফুলের কৃষ্ণছায়ায় জলপরীরা ওড়ে ধর্মজলে খুব আবেগে সন্তরণ করে হঠাৎ আমি উঠি জেগে অনেক দিনের পরে তখন বিলম্বকাল সময় তমোময় সবকিছু…
-
দুটি কবিতা
অলোকরঞ্জন দাশগুপ্ত অজ্ঞেয় এবার যে-নৌকো এসে কূলে ভিড়ল আমি জানি ফেরার উজানি স্রোতে আমি তার একাকী সওয়ার। লোডশেডিংয়ের মোম জ্বেলে ধরে লক্ষ করি তার মাপ অবিকল আমারই দেহের সম্পূরক। তবে কি কফিন সেটা? অথবা কাঠের জামা বুঝতে পারি না। গলুইয়ে যে বসে আছে সে কি অন্ধ নাকি তার চোখে বাঁধা আমারই কাফন? আমি তার জায়গায়…
-
মৃত্যুর আগে
শ্যামল চন্দ্র নাথ বোবা সন্ধ্যায় আমি ফিরে যেতে চাই, মরে যাব তাই – নিজের বাড়ি ফিরে যাব ভাবতেই কেমন লাগে! কত যুবক-যুবতীর ভিড়ে ব্যর্থ দিনের শেষ প্রহরে দেখেছি প্রেমের বিক্ষিপ্ত উপহার! আর কি চাই? অন্ধকার গলির ভিতর হেঁটে যাওয়া স্মৃতির ব্যঙ্গ সান্ত্বনা নাকি তীব্র যন্ত্রণা; ওই বেদনার চোখে বিজয়ের হার দেয়নি কেউ তুলে; তবু আমার…
-
অনেকদিন পাইনি
সিজন নাহিয়ান অনেকদিন পাইনি সেই ঘ্রাণ – অমরত্ব কিংবা অম্লান হয়ে যাওয়া একাকিত্বে; শুভেচ্ছা দূতের সঞ্চারিত হৃদস্পন্দনে; অন্তর্দ্বন্দ্বে বুকের সবটুকু ভালোবাসাতে… অনেকদিন পাইনি সেই ঘ্রাণ – মিলনের এক একটি দিনের মৃত্যুর পর; ব্যর্থ প্রচেষ্টার অনুভবের টানে; হাতড়ে বেড়ানো প্রশ্নে – ‘কোথায় আমি। কোথায় আমার হারিয়ে যাওয়া বিকেল?
-
শহর দখলের পূর্বলেখ
কামরুল হাসান বাঁধরাস্তা থেকে নেমে গেল চারজন গ্রামমুখো মানুষ মিয়ানো আলোর ভেতর তাদের তেরচা শরীর সুস্পষ্ট বাঁকালো দূরে কুয়াশা আর তোরসা একাকার। বালি, ঘাস আর মাটির জুড়নে যে মাঠ তারা সেই মাঠের ভেতরে গিয়ে নামে, একটি সরলরেখার দাঁড়ায়। অস্পষ্টতার ভেতর বিলীন সাদা পথ, ওরা সেই পথের শরীরে নামে, সাদা ও সরল। কয়েকটি…
-
সূর্যোদয়ের পথ
মোসলেম উদ্দীন পাঠ করো একবার কেন থেমে আছি নির্বাক মননের কথা নিয়ে শারীরিক ভাষায়, এ-পাঠে ভুল করলেই ভুল তোমার আমার চোখের ভাষা মনন থেকে সরে না একচুল। জীবনটারে দেখতে হচ্ছে ধরে রেখে কায়ক্লেশে চলছে ক্ষীণগতির শকটে ছদ্মবেশে নয় বটে। ছন্দে চলতে চাই সবাই তোমার কী যে মতি বাড়াও না আরো গতি বাড়িয়েই ছুঁতে…