কবিতা

  • অনেকদিন পাইনি

    সিজন নাহিয়ান অনেকদিন পাইনি সেই ঘ্রাণ – অমরত্ব কিংবা অম্লান হয়ে যাওয়া একাকিত্বে; শুভেচ্ছা দূতের সঞ্চারিত হৃদস্পন্দনে; অন্তর্দ্বন্দ্বে বুকের সবটুকু ভালোবাসাতে…   অনেকদিন পাইনি সেই ঘ্রাণ – মিলনের এক একটি দিনের মৃত্যুর পর; ব্যর্থ প্রচেষ্টার অনুভবের টানে; হাতড়ে বেড়ানো প্রশ্নে – ‘কোথায় আমি। কোথায় আমার হারিয়ে যাওয়া বিকেল?

  • শহর দখলের পূর্বলেখ

    কামরুল হাসান বাঁধরাস্তা থেকে নেমে গেল চারজন গ্রামমুখো মানুষ মিয়ানো আলোর ভেতর তাদের তেরচা শরীর সুস্পষ্ট বাঁকালো দূরে কুয়াশা আর তোরসা একাকার।   বালি, ঘাস আর মাটির জুড়নে যে মাঠ তারা সেই মাঠের ভেতরে গিয়ে নামে, একটি সরলরেখার দাঁড়ায়।   অস্পষ্টতার ভেতর বিলীন সাদা পথ, ওরা সেই পথের শরীরে নামে, সাদা ও সরল।   কয়েকটি…

  • সূর্যোদয়ের পথ

    মোসলেম উদ্দীন পাঠ করো একবার কেন থেমে আছি নির্বাক মননের কথা নিয়ে শারীরিক ভাষায়, এ-পাঠে ভুল করলেই ভুল তোমার আমার চোখের ভাষা মনন থেকে সরে না একচুল।   জীবনটারে দেখতে হচ্ছে ধরে রেখে কায়ক্লেশে চলছে ক্ষীণগতির শকটে ছদ্মবেশে নয় বটে।   ছন্দে চলতে চাই সবাই তোমার কী যে মতি বাড়াও না আরো গতি বাড়িয়েই ছুঁতে…

  • তুমি বলো

    ধ্রুব দে আমি ভাবি আমি তুমি বলো গড়ো তুমি   মাঝখানে তিরতির নদী   দিন যায় রাত যায় বছরও কত পার ঘটি ভাসে বাটি ভাসে   তুমি বলো আমি ভাঙি আমি বলি   মাঝে থাকে পূর্ণতোয়া নদী

  • ত্রিমাত্রিক অঙ্কনের মতো

    তমিজ উদ্দীন লোদী ঝুলবারান্দা থেকে দেখছি তুমি ঝুলে আছ তোমার কার্নিশে টলোমলো পা তোমার, দুহাত ডানার মতো স্ট্যাটোস্ফিয়ার ঘেঁষে যাওয়া কুয়াশার মতো মেঘ ছুঁয়ে আছে।   যেন বহুরঙা ঘুড়ি, সুতোছেঁড়া, উড়ছে স্বাধীন ইচ্ছের মতো জলো কি ঠান্ডা বাতাসের ঘোর এসে ছুঁয়ে যাচ্ছে তোমার আঙুল আর ঈষৎ লিপস্টিক-ছোঁয়া ঠোঁটের কম্পন।   ত্রিমাত্রিক অঙ্কনের মতো যেন ক্যানভাসে…

  • চৈতন্য

    তপন গোস্বামী   খাঁ-খাঁ পড়ে থাকে বিকেল এখন নদীতীর সুনসান বাতাসও এখন ভারি হয়ে আছে দম ধরে আসে প্রাণ। এদিকে-ওদিকে শরৎ শিশির হিম জমা হয় হাড়ে তবুও নিমাই, পথে কত ভাই, কেউ কেউ বাড়ি ছাড়ে। মাথা ন্যাড়া করে পথে না নামলে সন্ন্যাসী তুমি নয় অথচ ভেতর পুড়ে পুড়ে খাক্ সংসারে বড়ো ভয়। নওল কিশোর কোথা…

  • জলজ জীবন

    খোরশেদ বাহার   দিনের আলো, ধ্যুৎ ছাই লাগে না ভালো নামুক অন্ধকার পৃথিবীজুড়ে রাত্রির আবাস টুংটাং রিকশার শব্দ ধোঁয়ার কুন্ডলী ভেসে যাক আপন ঠিকানায় চায়ের কাপ পড়ে থাক খদ্দেরহীন। খিল-আঁটা দরজায় না পড়ুক ভোরের টোকা জানালার গ্রিলে জমে থাক অন্ধকারের বরফ আর শীত সমুদ্রের তরল হাওয়ায় বেশ পালটে যাই জলজ জীবনে মীন রাশির এই জাতক।…

  • ঘুমের পিপাসা

    শিউল মনজুর   ভাল্ লাগছে না। ভাল্ লাগছে না। করপোরেট ভুবনে উড়ছে উদ্বাস্ত্ত ধূলি। প্লিজ হাত বাড়াও। মেঘের ভিতর জন্ম নিচ্ছে ঘুমের পিপাসা। সারিগাঙে উঁকি দিচ্ছে মাছরাঙা মাছের ঘর। ভাল্ লাগছে না। একদম না। দিঘির বাগানবাড়ি, একা একা ঘুরছে প্রজাপতি। বেলাশেষে চলে গেছে সমুদ্রজলের ধীবর। ভাল্ লাগছে না। ভাল্ লাগছে না। প্লিজ হাত বাড়াও। জলের…

  • বলিনি লিখবো না

    আহসান হামিদ   লিখিনি ব’লে লিখবো না কিছু – তা তো বলিনি। বলেছি শ্রাবণ মেঘের দিনে ফিরে আসবো একা-একা তোমার নিকনো উঠোনে। তুমুল বৃষ্টিতে নৃত্যরতা তোমাকে নেবো বুকে টেনে। এ তৃষিত ঠোঁট ছোঁয়াবো আশ্লেষে ওই দুটি ভেজা ওষ্ঠচূড়ে। তখনই লেখা হ’য়ে যাবে ঠিক চিরকালের অবিনাশী এক যুগল কবিতা।   লিখিনি ব’লে লিখবো না – বলিনি…

  • জীবনানন্দ

    সরকার মাসুদ চিল নয় জীবনানন্দ উড়ে যাচ্ছে সাঁকো পার হয়ে সাঁকোর তলপেটে শ্যাওলাফাটল! আমি রেটিনার অন্ধকারে আয়না মেলে ধরি বাতাসের ঝিলমিল ঢেউয়ে জীবনানন্দ ভাসে শূন্য নীল বহুরূপী সুদূর আকাশে ব্রিজের দৃশ্যের দিকে খোলা জানালাটি বন্ধ হলে পড়ন্ত আলোর শোভা শুষে নেয় মাটি!   উঠের পিঠের মতো সাঁকো মনে রাখে মানুষের ভাঙাচোরা মুখ ভেতরের চোখ গভীর…

  • তোমাকে ঘিরেই

    দুলাল সরকার   তোমাকে ঘিরেই যত স্বপ্ন জীব অগ্নি ঘুম, ক্লান্তিহীন পথহাঁটা তোমাকে ঘিরেই এতো জীবনের প্রতি নিবিড় আকর্ষণ, যত মেধাবী মনের ফোটা – সোহাগী রোদের গান, চাদর-জড়ানো ওম যত ঝর্ণার স্বর, পাহাড়ি পাখির উদ্দাম ওড়াউড়ি তোমাকে ঘিরেই যত হরিণীর চিত্রল বনচর অর্জিত সফলতা, যত পাল তোলা নায়ের বাদাম যত স্বপ্ন দেখা, যত তারা ফোটা…

  • একদিন যাবো

    মৃণাল বসুচৌধুরী ইতিহাসে অবিশ্বাসী নতুন প্রজন্ম এসে ডেকে গেল আবিরখেলায় পাখিদের অসম উড়াল ঋতুচক্রে অন্তহীন নিঃসঙ্গ ভ্রমণ অভিজ্ঞান পরিদের মায়াময় হাসির মুগ্ধতা শরীরের আদিম সৌরভ ঘুমের ওষুধ কিংবা সামুদ্রিক লোভ সমস্ত সরিয়ে রেখে যাবো বলে পা বাড়াতেই ছুটে আসে কলাবতী সাপ বেজে ওঠে সুরেলা নূপুর   যাবো অলৌকিক নৃত্যকলা উন্মুখ সাঁতার অসমাপ্ত কান্না আর স্বপ্নের…