কবিতা

  • বাংলাদেশ

    শামস আল মমীন যদি তুমি কুমিরের সাথে বসে নাওয়া-খাওয়া করো, সাবধান! শেষে তার খাবার না হয়ে যাও। এই ভয়ে, মোহে ও সংশয়ে ডুবে আছো তুমি; হাতে সমৃদ্ধির হাতকড়া। মুনাফার ভারে কুঁজো বহুজাতিক সংস্থার মনভোলা বিজ্ঞাপন, ঘাম ও সংগ্রাম রঙিন প্রচ্ছদে লোভনীয় আরো… বিলবোর্ডে পারদের মতো পিচ্ছিল অক্ষরগুলো, জ্বলে-নেভে কখনো নীলাভ তার আলো কখনো শঙ্কিত লাল…

  • কবিতা ২০১৩

    আসাদ চৌধুরী এক তুমি তো চুম্বক নও আমিও যে মরচে-পড়া লোহা।   দুই আমার দিগন্ত শেষ অব্দি ঘরের দেওয়াল?   তিন বিকলাঙ্গ দীর্ঘশ্বাসগুলো জন্ম নিতে থাকে, মারা যায়। তবু মাতাল বাতাস মিছিমিছি কড়া নাড়ে কেন?

  • অবাক! অবাক!!

    অরুণাভ সরকার পৃথিবী বিস্ময়ে ভরা ব্যাবিলনের বাগান আর মস্কোর ঘণ্টা মিশরের পিরামিড মমি করা সুন্দরীর দেহ সবই খুব বিস্ময় জাগায় বিস্ময় জাগায় নদী সাগর, পাহাড়, বনভূমি সমস্ত পৃথিবী ভরা এরকম অপার বিস্ময় তবু প্রশ্ন উঠেছিল, আপনার বিস্ময়ে কীসে? যুধিষ্ঠির বলেছিলেন, মরণশীল মানুষও নিজের মৃত্যুর কথা ভাবে না কখনো। অনেকেই ভাবে না, সত্য কিন্তু কেউ কেউ…

  • নিঃসঙ্গতার টিলা

    অসীমকুমার বসু নিঃসঙ্গতার সঙ্গে প্রায়ই মিশে থাকে অভিমান ও অহংকার, সে কারণেই নির্জন টিলাটির উদাসী সৌন্দর্য আমাকে টানে। বৈশাখে মনে হয় রুদ্র তাপস বর্ষায় ভিজে যাওয়া ত্যক্ত পুরুষ নির্জনতার লোভে জঙ্গল নদীতীর থেকে এতো দূরে একা আকাশের নিচে মেখে নিচ্ছে রোদ্দুর, ভোরের বাতাস। কোথাও যাওয়ার নেই, ব্যস্ততা নেই কোনো কেবল নিজস্ব ভাবনা নিয়ে, অহংকার নিয়ে…

  • কোথায় থাকি আমি

    আহমেদ মুনির   সকলে যখন ফিরে আসে কাজ শেষে দিনের তাঁবু থেকে রাতের তাঁবুতে যায় বউকে জড়িয়ে ধরে ঠান্ডা হয় বেলের শরবত কিংবা চা খায় রাতের সংবাদ শোনে তখন কোথায় থাকি আমি?   বউকে জড়িয়ে ধরা লোকজনের ভিড়ে শরবতের দোকানে, চায়ের আড্ডায় কিংবা টেলিভিশনের সামনে সর্বত্রই লোকে আমাকে দেখেছে আমিও দেখেছি তাদের ভাত খেতে বসে…

  • তিনটি কবিতা

    মোস্তাক আহমাদ দীন   নৈরাজ্য   শিঙের বিকার দেখে বালক বিস্মিত আর, আড়ালে, মাথা নত হয়েছে আমার বনবালিকারা দেখে-বুঝে নেয় চর্যা ছাড়াই আমি কোন ধর্মে বনপালয়িতা কারো পোড়া ঠোঁটে আর কোনোদিন বাজবে না বাঁশি হরিণের পাল ধায় – কেন ধায়? – সেই বাঘ-পথরেখা ধরে শিঙের তাৎপর্যে আজ পাতা-ঢাকা, লতা-ঢাকা, বর্ম-ঢাকা হয়েছে হৃদয়   বিলগাছ  …

  • প্রতিপক্ষ

    শঙ্খশুভ্র দেববর্মণ অস্তিত্ব জুড়ে শুধু অসময়ের বৃষ্টি রুপোলি পর্দায় স্বস্তির নীল পাহাড় অবেলা মেঘ বইল কত বেলা পাখালি বুকে অলিখিত রোদ্দুর দীর্ঘ ছায়ায় হাতছানি দেয় তবু সন্ধ্যা   উত্তাপ ভরা মসৃণ মোমদেহ আসঙ্গ কামনায় ক্রমে নির্মোহ মন ভিড় থেকে সরে যায় মুখ মুখোশ মানসে দলিত জনপদ তারপর একদিন সুদূর বক্ররেখা   পরাভূত চোখে তখন স্বপ্নের…

  • অমিতের জন্যে

    সৌভিক রেজা   পাতাঝরা বয়স; এই বালক-বয়সেই হারিয়েছে সে পরনের হাফ-প্যান্ট; চাঁদ থেকে পাওয়া স্ক্রু-ড্রাইভার – হারিয়েছে তা-ও; ভাঙা ক্যালকুলেটরে বয়সের কোনো হিসাব কি পাওয়া যায়, যায় নাকি? তার দুহাতে চুম্বক – এই যে এতসব মানুষকে একই জায়গায় টেনে নিয়ে আসা – সোজা কথা! কে কোথায় এখন… নিজের-নিজের নির্বাসনে… দেখি, একটু দাঁড়ান তো! ধরিত্রীর নীবিবন্ধে…

  • নির্ভার

    রজতকান্তি সিংহচৌধুরী   নিজের দুঃখের   স্কন্ধে ভর করে বটের পীত পাতা          ঝরে যায় তেমনি নির্ভার   মানুষ ঝরে যাবে জীবনবৃত্তের   কিনারায়? স্তব্ধ গোধূলিতে   গাছেরা প্রশ্বাস রুদ্ধ করে কোন   ইশারায় সেভাবে ভূমিজল   প্রাণকে ফিরে নেবে শ্মশানযাত্রা কি জানাজায়?

  • উঁকি দিচ্ছে আলোর অ্যান্টেনা

    শামসুল ফয়েজ অনেকদিন তো ছিলাম প্রগাঢ় অন্ধকারের জিম্মি। পাঁজর ফাটিয়ে ফুটছে আলোর কমল পাপড়ি তার অমলিন-নিদাগ-অমল। বুকের চাতালে নাচছে যেন ‘আন’ সিনেমার নৃত্যপরা নিম্মী।   খুলির ভিতরে তিমির কর্দমে উঁকি দিচ্ছে আলোর অ্যান্টেনা। করোটির আঙিনায় ভরা পূর্ণিমায় ফুটছে সুগন্ধি ল্যান্টানা।

  • দুটি কবিতা

    কাজল বন্দ্যোপাধ্যায় অরণ্য : অহমের   হিংস্রতায় ভরা ছিল বনের জীবন, আতঙ্কে ভরা, এক-চুলের জন্যে রক্ষা হওয়ার প্রাণ ছিল তার; মানুষ কোথায় গেল?   এভাবে সে হলো। তবে এভাবে হওয়া জন্ম দেয় হওয়ার প্রকান্ড বোধের। আর এই তার হওয়া, না-হওয়াও : দ্বি-ধার অহম শাঁখের করাত হয়ে দুদিকে গেল, চতুর্দিকে, যা অরণ্যের চেহারার নয় আর, তবু…

  • ছন্দবিষয়ক

    মাহমুদ কামাল ভেঙে পড়ে নাকি ভাঙে কৌশল স্থিতাবস্থাকে সার্বভৌম ছন্দ তবু দ্রুত আপনাকে অধিকারে আনে সকল মহিমা ঘুচিয়ে দ্বন্দ্ব পারক্যবোধে চলনে-বলনে নিপুণ ছন্দ ভরা নদী দ্রুত বয়ে চলে তার স্রোতের টানে ঢেউ এর ছন্দ তথাকথিতরা কতটুকু জানে ছন্দকে আমি শাসন করেছি প্রবল প্রভাবে যতই বন্দি ছন্দহীনতা যাদের স্বভাবে মিথুন মুদ্রা মুগ্ধনিচয়ে মুগ্ধচিত্তে তোমার শেকড় আষ্টেপৃষ্ঠে…