কবিতা

  • ট্রেনে উঠে পড়েছি

    ভূমেন্দ্র গুহ টিকিট কাটা হয়ে গেছে, বাক্স-প্যাঁটরা জলের বোতলটা অব্দি গুছিয়ে নিয়ে সিটে ব’সে পড়েছি, আরও কিছুটা সময় অপেক্ষা, নিজেকেও যতটা পারি গুছিয়ে নিচ্ছি, গাড়ির ভোঁ নিয়ে আবেগ-টাবেগের কোনো মানে হয় না। লোকটা তখনই এককাহন রাগ নিয়ে এসে সাতকাহন বকবক করতে শুরু ক’রে দিলো। কাউন্টারের শাটার নামানো : ‘লাঞ্চের সময়’। খুব একটা সুখের অভিজ্ঞতা নয়,…

  • এবারের বৈশাখ : ১৪১৯

    হায়াৎ সাইফ এই পুরনো জীর্ণ ও প্রায় বিধ্বস্ত ঘরেও আবার বৈশাখ ফিরে আসে, বিবর্ণ দেরাজে টেবিলে চৌকাঠে অবশ্যম্ভাবী ক্ষয় ও খর্বুট, সময়ের অভিক্ষেপে মানুষের নির্মমতায় প্রকৃতিও বদলে যায় বদলে যেতে থাকে, এবার হয়তো কিছুটা বৃষ্টি ধারা ঝরে নবাঙ্কুর ইক্ষুবন যদিও চোখেই পড়ে না তবু মনে হয় বর্ষ শেষ হয়ে আসে যদিও ঝড়ের উল্লাস নগরে তেমন…

  • বাউল দুপুর

    রাতুল দেববর্মণ বাউলদুপুরে যদি একা হয়ে যাই শুনি মেঘের আড়ালে আত্মীয়ের কান্না নীরবে শূন্য স্বপ্ন তখন রুদ্রঠোঁটে চুমো খায় এই খরতাপে ভেঙে পড়ে ভেঙে যায় নিদ্রাসমগ্র সমূহ কান্নার ধ্বনি ক্রমাগত অন্ধ পাখির মতো ঠোকাঠুকি করে আর চোখের ভাষা খুঁজে যায় এই বাউলদুপুরে যারা প্রিয় ছিল একদিন রৌদ্র খেয়ে নিত যারা ত্রিপুরা থেকে ভিয়েতনামের তাদেরও কী…

  • বয়সী শিশু

    কাজী রোজী নবীন কিংবা প্রবীণ নও, তুমি বয়সী শিশু। হাতে পায়ে বেড়েছো – কিন্তু মেধা ও মননে তুমি বাড়ন্ত। চাল বাড়ন্ত হলে হাটে-বাজারে পাওয়া যায় কিনতে, কিন্তু মেধা মননের হাট-বাজার খুঁজে পাওয়া যায় না। মাটির কলসি ভরে সোনা গয়না মুক্তো হীরে রেখে দেওয়া যায় কাঠ-চৌকির চোরা সিন্দুকে টাকা পয়সা দলিল-দস্তাবেজ রেখে দেওয়া যায় বয়সী শিশু…

  • তিনটি সনেট

    ফরিদ আহমদ দুলাল ক. প্রতিটি স্পর্শের আছে নিজস্ব অলীক অভিধান স্পর্শ-অভিঘাতে ভাঙে সকালের ক্ষোভ-অভিমান, আঙুলের ডগা থেকে স্পর্শ হেঁটে যায় করতলে চিবুক অধর কখনো সুগন্ধ ঘন কালো চুলে; বুদ্ধ-পূর্ণিমা জ্বালায় রাতে আকাশের বাতি চন্দ্রালোকে কনকচন্দ্রিমা উজ্জ্বল নক্ষত্র-স্বাতী, সুচারু চোখের সুনিপুণ কারুকাজে কী মুগ্ধতা খেলে অরণ্য সবুজ সমুদ্র মাতাল স্পর্শরা স্পর্শকে পেলে। স্পর্শ এবং স্পর্শরা হাঁটে…

  • মানুষজাতীয় পাখি

    মনিকা রহমান আমাকে বিধ্বস্ত করে, চলে যায় মানুষ জাতীয় পাখি। উড়াল দেয় স্বপ্নের গুচ্ছ, গুচ্ছ তরী। ভাঙা খেয়ায় বন্ধ হয়ে আসে – এক ভুতুম পেঁচা। আমার জগতের আনন্দের ঢেউ এটাই সব চাইতে বড় পাওনা। আমি ঘুম থেকে জেগে উঠে – দেখি সেই ভুতুম পেঁচাটি উড়াল দিয়েছে কখন। আমি তাই একা একা চোখ দুটো বুজে পড়ে…

  • পাখিদের নিয়ে বসো

    দুলাল সরকার পুরনো পাখিগুলোকে নিয়ে বসো – ওদের মনে আছে প্রাচীন ভোরের সব দৃশ্য, – পাহাড়ের গা-বেয়ে অলংকৃত আকাশের ক্রমশ পরিবর্তনের মধ্যে সূর্যোদয়ের সহিষ্ণু প্রস্তাব, সদ্য ফোটা পৃথিবীর প্রসূতি প্রসূতি গন্ধ প্রশস্ত কপাল থেকে সরিয়ে অজস্র অলক চূর্ণের চিহ্ন নিরীহ ঘুমের ভিতর হয়তো বা ফিরে পেতে পার হারানো মাদুলির স্মৃতিস্বর; পুরনো গল্পের ডালি বিস্মরিত অতীত…

  • আড়াল সৌন্দর্য

    মাহমুদ কামাল ছন্দকে সরিয়ে কিংবা বের করে দিলে কবিতাশরীর হয় আড়াল সৌন্দর্য ধ্বনিসাম্য ব্যতিরেকে অর্থহীন শব্দগুচ্ছ প্রায়োগিক প্রকৌশলে যতই নিপুণ হোক অরণ্যসংকুল পথে ঘটে বিড়ম্বনা। অস্থিতির স্থিতিস্থাপকতা টুকরো সুতোকে যদি প্রাকৃতদর্শন থেকে ছন্দের ভেতর বাড়ি স্রোতস্বিনী করে সংবিৎ প্রত্যয়সহ জীবনের গতি ও প্রগতি আড়ালকে উড়ালের সাথে নিয়ে যায় আকাশ-ভ্রমণে ছন্দহীন শব্দগুচ্ছ আর নয় কবিতা শরীরে।

  • আফ্রোদিতির খোলা জানালা

    শামসুল আরেফিন দেবীপাঠের আসক্তি আমাকে পুশ ইন করে দেয় রাহুল সাংকুত্যায়নের ভবঘুরে শাস্ত্রে তন্ত্রমন্ত্রে অশিক্ষিত প্রায় বর্বর আমি নিপতিত হই কৃষ্ণগহবরে – হকিংয়ের ডেরায় বিনা তদবিরে অর্জিত এই সিঙ্গেল খাটের বরাদ্দ নিরাময় কেন্দ্রই এখন আমার পার্মানেন্ট ঠিকানা ব্যবস্থাপত্রের কোথাও রোগের লক্ষণ আক্রান্তের উল্লেখ না করায় মহামতি ডাক্তার উপসর্গকে আমি নিশ্চিত চিহ্নিত করি হায়ারোগ্লিফির সঙ্গে অন্তত…

  • সে যেন

    সেলিম মাহমুদ নদী তুমি কোন গ্রামে যাও ভরা গাঙে খালি নায়ে কার বৈঠা বাও নদী তুমি ঢেউ ভেঙে ছলাৎ ছলাৎ কার মান ভাঙো এ-কূল ভেঙে ও-কূল গড়ে কী বাঁশি বাজাও নদী তুমি দেখা পেলে বলো তারে সে যেন ভুলে না আমারে! নদী তুমি উদয়াস্ত শহর-পল্লিতে কুপিবাতি আর বৈদ্যুতিক তারে বলো তারে রাত অন্ধকার হলে খেয়ালখুশিতে…

  • অন্ধকার

    বিষ্ণুপদ রায় পৃথিবীটা প্রতিদিন কী এমন অপরাধ করে বাড়ি ফেরে যে প্রতি রাতে তুমি তার মুখে কালি লেপে দাও এমন করে যে তাকে বারবার রং বদলাতে হয় আমিও তোমার শরীর ধরে গিরগিটির মতো নিচে নামি, গভীরে উষ্ণায়নের পাতালে সেখানে কালো আর আলো সমার্থক বলে মনে হয় যেখানে ঝঞ্ঝাবিধ্বস্ত সমুদ্রযাত্রায় নাবিক ঘরে ফেরার স্বপ্ন দেখে মৃত্যুর…

  • নীল ওড়নার ঘ্রাণ

    চঞ্চল শাহরিয়ার সোনাবউ বলে ডাক দিলে আর ফিরে আসছে না অদিতির বোন। অপেক্ষার পথ মাড়িয়ে আমিও চলে যাচ্ছি শিমুদের বাড়ি। শিমু ভোরের শিউলি কুড়ানো বালিকা শিমু অনন্ত প্রেমের মন হারানোর সাঁকো মুগ্ধকরা রাতের আশ্রয়। সোনাবউ বলে ডাক দিলে আজ শুধু শিমু হাওয়ায় উড়ছে কেবল নীল ওড়নার ঘ্রাণ।