কবিতা

  • এক আকাশ কবিতা লিখব

    নাসরীন নঈম একলা যখন বসে থাকি আপনমনে ভাবতে থাকি তোমার কথা বাবার কথা যখন দেখি আকাশজুড়ে মেঘের ঘটা। মেঘবালিকা কোথায় তুমি ভেবেছিলাম আকাশজুড়ে লিখব আমি আমার যত মনের কথা – মেঘটা হঠাৎ কেমন যেন রাগ করেই কি উড়ে গেল, তবু ভালো। বরফকুচি বৃষ্টি মাথায় ছাদের ওপর হাঁটতে থাকি – হলুদ বাড়ির জানলা থেকে কে যেন…

  • রবীন্দ্র জপমন্ত্র

    মুহম্মদ নূরুল হুদা ঘুরতে ঘুরতে রবীন্দ্রনাথ খুঁড়তে খুঁড়তে রবীন্দ্রনাথ উড়তে উড়তে রবীন্দ্রনাথ সরতে সরতে রবীন্দ্রনাথ ধরতে ধরতে রবীন্দ্রনাথ পড়তে পড়তে রবীন্দ্রনাথ জানতে জানতে রবীন্দ্রনাথ মানতে মানতে রবীন্দ্রনাথ ভাঙতে ভাঙতে রবীন্দ্রনাথ প্রথম দিনের রবীন্দ্রনাথ মধ্যদিনের রবীন্দ্রনাথ শেষের দিনের রবীন্দ্রনাথ বাবা-কাকার রবীন্দ্রনাথ সাকার যত রবীন্দ্রনাথ আকার ভেঙে রবীন্দ্রনাথ শিখছি আমি রবীন্দ্রনাথ লিখছি আমি রবীন্দ্রনাথ ছিঁড়ছি আমি রবীন্দ্রনাথ…

  • ব্রততী তোমার হাত

    নাজিম শাহ্রীয়ার শব্দগুলি যাচ্ছে হারিয়ে আদর্শলিপির ওষ্ঠে অনল! ব্রততী, হাতটা শক্ত করে ধরে রাখো কিচ্ছু করতে পারবে না কেউ নষ্ট ফুলগুলি ফেলে দাও আমি নতুন মালা এনে খোঁপায় পরাবো পচা ভাত ফেলে দাও, আবারও ফলবে শস্য ফরমালিনমুক্ত ভালোবাসা দেবো, সুস্বাদু মৎস্য। এটা কোনো দহন-পতন নয়, পালাবদলমাত্র। তুমি ভয় পেয়ো না, পাখিরা আবারও আসবে, তোমাকে জ্যোৎস্নায়…

  • হরিণের রক্তমাংস

    বিশ্বজিৎ মন্ডল অবাধ্য শিকারির শীতঘুম বলে কিছু নেই ক্লেভিয়াস জোনে দাঁড়িয়ে আজও খোঁজে সেমিকোলনের পরের লাইন সারবেঁধে অরণ্যের অলিন্দে ছুটে যায় ক্যামোফ্লাজ হরিণের দল রক্তাল্পতায় ভুগে কবেই শুকিয়ে গেছে রক্তচন্দনের বন দুমুঠো আয়োজন সাজিয়ে গড়ে ওঠে শিকারির সকাল ক্রমশ ভিজে যাচ্ছে পথ, ক্রিমেটোরিয়াম, উৎসবমুখর সেই কার্নিভাল ওই তো, হরিণদের সর্বস্ব নিয়ে ছুটে যাচ্ছে শূন্য দশকের…

  • প্রজ্ঞা ও পাথর

    সুমন সাজ্জাদ সুজাতা-সুন্দর ওই প্রজ্ঞার পাথর স্তব্ধতায় শুয়ে আছে চুপ। উপত্যকার খাদে জেগেছে কম্পমান দলছুট দুঃখের দেশ। কথা নাই। ধ্বনি নাই। একাকী পুড়ছে ধূপ। একাকিনী একা কেন? তুমি কি প্রথম প্রথম জরায়ু ছিঁড়ে দাও নাই শিশুর চিৎকার? তুমি কি প্রথম প্রথম জননীর মতো কেঁপে কেঁপে দাও নাই প্রথম শীৎকার? ওই সূর্যালোক ওই চন্দ্রঘোর ওই জীবাশ্মসুদূর…

  • কবিতাগুচ্ছ

    শুভাশিস সিনহা চারুগমন একটু ভেতরে যদি যাই পুষ্পের কুঁড়ির, গন্ধের রঙের, একটু অশান্ত চোখে আকাশে বিদ্যুতে, খানিক অধর্মে… যা ছিল তা কি থাকবে তখনো, – লেগে থাকা অবসন্নতার দাগ, প্রেমের অন্তিম সুর, রাত্রিগেলা ভোরের ঢেঁকুর?… একটু দাঁড়াতে চেয়ে ঠাঁইহীনা জলশ্রীর তটের ওপর, ডুবে ডুবে যেতে যেতে একটু আড়ালে গিয়ে একটু গভীরে গিয়ে অশেষ অতলে ভুলে…

  • তুমি আসবেই

    মাহমুদ টোকন সকালে তোমাকে ডাকি; সন্ধ্যায় – তুমি ঠিক চাঁদ। মধ্যদুপুরে রোদ তোমাকেই ডাকছি অকস্মাৎ। ডাকছি তোমাকে, ডাকি শেষরাতে চোখ গেল স্বরে; পদ্মার ডিঙি ঢেউয়ে ডাকছি ঠিক নিড়ানি আসরে। সবুজ তোমায় ডাকি, ঘাসফড়িং তিল সর্ষে ফুল ডাকছি তোমার নাম শুদ্ধ কি ভুল। আর্তস্বর ডাকছি খুউব জ্বরতপ্ত কপালে জলপটি ডাকছি খররৌদ্র দিনে বৃষ্টির আহুতি। তোমাকে ডাকছি…

  • মধ্যরাতের অশ্বারোহী

    জাফরুল আহসান কথার কথা নয়তো সবি ভালোবাসায় জড়িয়ে আছি রাতদুপুরে ঘুমের ঘোরে খেলছি দেখো কানামাছি আমার পথে তোমার চলা তাইতো আমি দাঁড়িয়ে আছি দুজন মিলে পথের বাঁকে বসবো সখি সাধ করেছি। লাগাম ছাড়া মধ্যরাতে অশ্বারোহী দুষ্টুভারি ঘুমের ঘোরে তোমায় নিয়ে জাবর কাটা স্বেচ্ছাচারী এই সময়ে অশ্বারোহী দুষ্টুভারী; দুয়ার খোল চুমু তোমার দেবেই যদি ভিন্ন দেহে…

  • ভালোবাসা আমার দশটি তারা কুসুম কুসুম

    রবীন্দ্রনাথ অধিকারী গানের ভেতর দিয়ে বুকের ভেতর দিয়ে তোমাকেই দেখি সাবলীল যেন মায়াবী ময়ূর, তুমি নাচো, নেচে ওঠে ধরিত্রী অস্থির নাবালক কিশোরীর মতো তোমাকেই লক্ষ্য করে ছুড়ে মারি তীর; বিষ দিয়ে বিষ তাড়ানোর তূণ, বুক থেকে তুলে এনে আগুনের শিস তোমাকেই ডাক দিই, ডেকে মরি চোখের ভেতরে কোনো বাহারি শ্রাবণ ভারি হয় কষ্টপাথর, উচাটন করে…

  • নির্মাণ

    শারদুল সজল আমার বুকের হাড় দিয়ে পৃথিবী গড়েছে সভ্যতার প্রথম হাতিয়ার বিস্ফোরিত সূর্যের অতল গহবরে – রোদরঙের পরস্পর হাওয়ায়… আগুন, তুষারপাত – যুদ্ধ ও দ্রোহের মধ্যে দিয়ে আগামী পৃথিবী অতীত আর অতীত আগুনে এই বিদগ্ধ পৃথিবী খুঁজে ফেরে কয়েকশ’ ভবিষ্যৎ জেগে ওঠে সভ্যতার উদারতন্ত্র চারদিকে, মানুষ ব্যাকুল রেসে – কৌশলে টেনে চলে সূর্য ও চাঁদকে…

  • কুয়াশায় ডুবে আছে নদীগণ

    জাহাঙ্গীর ফিরোজ কুয়াশায় ডুবে ছিল বাড়িঘর নদী চশমার কাচে মেঘ, ডুবেছিল চোখ; আজ ঘড়ির কাঁটায় ভোর – সকাল দুপুর রাত। এই কুয়াশাভেজা দিনে তুমি অসুখের চাদর জড়িয়ে শুয়ে আছ শীতার্ত, মঙ্গায় পুষ্টিহীন জড়সড় কুঁকড়ে আছ তুমি সন্ধ্যা নদীর জলে ক্রন্দনের ধ্বনি… তবু উত্তরে দক্ষিণে মেরুপ্রভাতের বর্ণিল আলোর ঝরনা নাচে শ্বেতশুভ্র ভল্লুকের লোমে। এখানে বরফ নেই,…

  • লোকায়ত

    জলধি হালদার আমার অর্ধেক আকাশ থেকে এসেছে। খোসা ছাড়াবার পর যেখানে নেমেছি দেখি থিয়ে-করা অাঁশবটি। তার এত ক্ষমতা যে আমার কৃষ্ণচূড়াকেও কালো করে দিয়েছে অগুনতি গিঁট বেঁধে দিয়েছে বাতাসের। গৃহস্থের দিঘল পাতা বুকে ধরে ছটফট করি – আমার একটি চোখ এখনো মাটির। যে-চোখে অবিরল বৃষ্টি আর নেমে আসছে মানুষের মতো অসংখ্য দেবতারা।