কবিতা
-
অন্য নদী
চন্দ্রিমা দত্ত নদীরা বন্ধু বলে নদী হবো-ই এমত বিশ্বাসী নই আমি আমি আমার মতো বন্ধুকে আলো বলে জানি কিছু বন্ধু না-আলো, না-অন্ধকার তাদের থেকে দূরত্ব রেখে এ জন্ম আলোকিত করি কবিতার সাথে। নদী আমার গহন-সই গঙ্গা অনুগামী গঙ্গার বুকে জল ডায়েরি লিখেছি আমি ও কবি। নদীরা বন্ধু বলে, চরাচরে সোনার ইতিহাস, মানুষ সোনার খনি খনন…
-
দাসপ্রথা ফিরে আসে
মোস্তফা তারিকুল আহসান লালনের মতো মাথার ভেতরে পোনা মাছ লাফালাফি করলে খুঁজে ফিরি আমার টেবিলে ল্যাপটপ তখনই মনে পড়ে ওটা আজ রেখে এসেছি অফিসে সারাবাড়ি তন্নতন্ন করে খুঁজি কলম পুরনো কবিতার খাতা কোথাও কিছ্ছু নেই মেয়ের স্কুলের খাতা টান দিয়ে নিতে সে ছোঁ মেরে তার খাতা কেড়ে নিয়ে যায় গালে হাত দিয়ে ভাঙা একটা পেনসিল…
-
ধৃষ্টতা
প্রবালকুমার বসু বলিনি অযথা কোনো কথা দিইনি সায়ও প্রস্তাবে সকলে নিরীহ বলে জানে যাইনি মিছিলে মতলবে থাকিনি সঙ্ঘে কোনো লোভে অনেকে ভেবেছে বুঝি বোকা এড়িয়ে গিয়েছি কৌশলে কঠিন পরিস্থিতি যত সহজে করেছি সমঝোতা তবু সুযোগ পেলে লোকে আঙুল তুলেছে এইদিকে দিয়েছে অযথা অপবাদ আস্থা রাখেনি কেউ তাই আমার সকল আশঙ্কাই বাড়িয়ে তুলেছে অবিশ্বাস পরিস্থিতি যা…
-
তখন চুম্বন
অরুণাভ সরকার এখানে এখন রোদ। তোমার ওখানে বৃষ্টি? আদিতে একটু বৃষ্টিও ছিল না কোথাও ছিল শুধু রোদ আর অন্ধকার; কিছু পরে মেঘ। মেঘ সমস্ত আকাশ জুড়ে মেঘ থেকে বৃষ্টি পৃথিবীতে প্রথম বর্ষণ বর্ষণে বর্ষণে নদী, হাওর, সাগর; সাগর থেকে মেঘ আর মেঘ থেকে বৃষ্টি। প্রথম বৃষ্টিপাতের মতো চলে এসো তুমি এসে সমস্ত রোদ ঢেকে দাও…
-
বিস্মরণ
উৎপলকুমার বসু কত না নৈকট্যবোধে দূরত্ব বজায় রাখি, বুঝে দ্যাখো। মৃত আত্মীয়দের পাশ থেকে অবশ্যই দূরে থাকি, বিদায়ী বন্ধুদের মনেও পড়ে না, শিউলি ঝরার আগে ‘কাজ আছে’ এই অজুহাতে স্টেশনে পালিয়ে যাই, যাত্রীদের কেউ কি আমাকে চেনে? শহরে যাচ্ছে তারা, কতজন ফিরে এলো, একে-তাকে প্রশ্ন করি ক’টা বাজে ভাই, অথচ সামনেই বড় ঘড়ি, আলোয় উজ্জ্বল,…
-
ফুলের আর্তি
সোহেল মাজহার একটা মৌমাছি গুনগুন করে যে গান গায় তা হলো ফুলের আর্তি। সমুদ্রস্রোত তোমার-আমার সব ভাসিয়ে নেবে বলে সমুদ্রবন্দনা করে নদী ছুটে চলে নগর ও জনপদের স্মৃতিকে উপেক্ষা করেই নদী-বাসনা তুমি জানো তারও অধিক। তাই স্বপ্নে এক নগ্নিকা বিষ হুল ফুটিয়ে নির্লিপ্ত নিরাভরণ তার চুলে সূর্যাস্তের আভা আলো-অাঁধারের স্রোত সমুদ্রজাহাজের ডেকে মত্ত এক নাবিক…
-
বিমানের জানালা থেকে
তমিজ উদ্দীন লোদী কখনো ৩৪০০০ কখনো ৩৯০০০ ফুটে উড়ে যাচ্ছি টানো গাঢ় কখনো হালকা মেঘের চাদর উড়ে যাচ্ছে গহিন গভীরে সমান্তরালে উড়ছে অপার শূন্যতা। আর মানচিত্রের মতো শুয়ে আছে নিস্তব্ধ পৃথিবী। যেন চ্যাপলিন মূকাভিনয় করে যাচ্ছেন অবিরাম শব্দহীন যেন কোনো প্রাণী নেই, কোনো প্রাণস্পন্দন নেই নিরেট শহর শুয়ে আছে – চারপাশে জল কি কাদার প্রলেপ…
-
বার্লিন দেয়াল
দিলীপ কির্ত্তুনিয়া ওরা তাকিয়ে তাকিয়ে ভাঙা দেয়াল দেখছে আর কষ্টকে বুঝে নিচ্ছে দেয়াল বিষয়ক। ওরা ভাঙা দেয়ালের টুকরোগুলো এখনো খুব যত্ন করে যাতে বিচ্ছেদের মর্মযাতনার পাথরগুলো আলোকিত থাকে দেখা যায় ভালোভাবে। ওরা ওখানে মিলিত হয় আর দেখে পেছনের অভিশাপগুলো – নাঙ্গা অগ্নি কীভাবে পুড়িয়েছে তাদের দীর্ঘদিন ধরে, ভুল করে। দেয়ালকে ভেঙে ফেলে ওরা ফুলকে করেছে…
-
স্বপ্ন-ছবি
শামিমা নাসরিন স্বপ্নসমুদ্র, কত ফসল ফলাও অন্ধকার গহবরে। রঙিন সুতোয় বোনা একমুঠো সুখ, প্রজাপতির নীলাভ ডানায় ভাসা সুর, মাতালের এলোমেলো প্রলাপ, কিংবা শিল্পীর প্রচ্ছদপট। চুম্বন, কামপিপাসা তৃপ্তির মোলায়েম ছোঁয়া ছোট ছোট আশা-নিরাশা এও স্বপ্ন। ছিনতাই, রাহাজানি, বলাৎকার – খুন তাও স্বপ্ন, জাগরিত স্বপ্ন। নষ্ট বেকারের অন্ধকার আকাশ, বিশ্বাসী প্রেমিকের আলোকদ্বীপ, সেও স্বপ্ন, কিংবা দুঃস্বপ্ন। স্বপ্ন,…
-
যখন ভাঙে নক্ষত্র
শিহাব শাহরিয়ার ১৫. তার গালে নেচে ওঠে প্রেম চোখে চোখে ভাসে রাঢ়িখাল পাখিরা বন্ধ্যা হলে – সন্ধ্যার পাটে ডুবে যাবে পাড় রাঙামাটির লেকে উড়বে পিঁপড়ার মতো লাল-নীল টিপ থাকবে কথা থাক শুধু তোমার একাকিত্ব হাঁটবে একা
-
কুয়াশায় ডুবে আছে নদীগণ
জাহাঙ্গীর ফিরোজ কুয়াশায় ডুবে ছিল বাড়িঘর নদী চশমার কাচে মেঘ, ডুবেছিল চোখ; আজ ঘড়ির কাঁটায় ভোর – সকাল দুপুর রাত। এই কুয়াশাভেজা দিনে তুমি অসুখের চাদর জড়িয়ে শুয়ে আছ শীতার্ত, মঙ্গায় পুষ্টিহীন জড়সড় কুঁকড়ে আছ তুমি সন্ধ্যা নদীর জলে ক্রন্দনের ধ্বনি… তবু উত্তরে-দক্ষিণে মেরুপ্রভাতের বর্ণিল আলোর ঝরনা নাচে শ্বেতশুভ্র ভল্লুকের লোমে। এখানে বরফ নেই, তুষার…