কবিতা
-
যখন ভাঙে নক্ষত্র
শিহাব শাহরিয়ার ১৫. তার গালে নেচে ওঠে প্রেম চোখে চোখে ভাসে রাঢ়িখাল পাখিরা বন্ধ্যা হলে – সন্ধ্যার পাটে ডুবে যাবে পাড় রাঙামাটির লেকে উড়বে পিঁপড়ার মতো লাল-নীল টিপ থাকবে কথা থাক শুধু তোমার একাকিত্ব হাঁটবে একা
-
কুয়াশায় ডুবে আছে নদীগণ
জাহাঙ্গীর ফিরোজ কুয়াশায় ডুবে ছিল বাড়িঘর নদী চশমার কাচে মেঘ, ডুবেছিল চোখ; আজ ঘড়ির কাঁটায় ভোর – সকাল দুপুর রাত। এই কুয়াশাভেজা দিনে তুমি অসুখের চাদর জড়িয়ে শুয়ে আছ শীতার্ত, মঙ্গায় পুষ্টিহীন জড়সড় কুঁকড়ে আছ তুমি সন্ধ্যা নদীর জলে ক্রন্দনের ধ্বনি… তবু উত্তরে-দক্ষিণে মেরুপ্রভাতের বর্ণিল আলোর ঝরনা নাচে শ্বেতশুভ্র ভল্লুকের লোমে। এখানে বরফ নেই, তুষার…
-
কাশের পতাকা
মলয়চন্দন মুখোপাধ্যায় গভীর রাতে করমচার মতো শীতের কামড় আকাশে নক্ষত্রগুলি লেপ মুড়ি দিয়ে শুতে চলে গেছে পুনর্ভবা নক্ষত্রটি কেবল তাকিয়ে পুনর্ভবা নদীটির দিকে বোয়াল, দুপারের মানুষিক বর্জ্য আর ভাসমান কচুরিপানায় নদীটি এখন চর্মরোগী নদীটির ডাইনে কুয়াশা, বামদিকে মাঝি যায় নৌকো বেয়ে গান নেই মুখে শুধু চর ধুধু চর রয়েছে সমুখে বয়ে যেতে যেতে নদী হঠাৎ…
-
আমারও কিছু কথা ছিল
বিশ্বজিৎ ঘোষ কেমন আছো তুমি? স্বর্গলোকে কেমন কাটছে তোমার দিনগুলো এখন? কীভাবে কাটছে বৈকুণ্ঠের রাতগুলো? মনে পড়ে আমার কথা? সেই কবেকার কথা? জানো আমার নাম? জানবে কী করে? তোমার কবি, যাকে তোমরা দেবতা বানিয়ে তুলেছো সেই ব্যাসদেব আমাকে একটা নাম দিতেও কত কার্পণ্য করেছেন। ভেবে দেখেছো একবার? নাকি বৃন্দাবনের লীলালাস্যে সব ভুলে এখন স্বর্গলোকে বসে…
-
গুড মর্নিং রবীন্দ্রনাথ
সৈয়দ আল ফারুক অনেকটা এক্স (X)-এর মতো দেখতে কাঠের রেহেল রেহেলের ওপর খোলা কোরান শরিফ জায়নামাজে বসে আছেন বাবা তার দরাজ কণ্ঠ থেকে ঝরে পড়ছে সুরেলা উচ্চারণ উঠোনে মাটিতে বিছানো পাটি উদোম শরীরে সর্ষে তেল মেখে-মেখে বাচ্চাটাকে ঊরু-কোলে মেলে ধরছেন মমতাময়ী মা আর পবিত্র উচ্চারণে তেলাওয়াত করছেন সন্তানের হাসিমাখা মুখ বিছানায় আধশোয়া, দ-য়ের মতো পড়ে…
-
টর্চ
আশরাফ আহমদ স্বপ্ন তো দিলেই, টর্চটাও নিয়ে গেলে! চিরজীবী অসুখের বীজ, কষ্টের কাঁকর যত মুখের ওপরে ছুড়ে ফিরে গেলে স্থায়ীভাবে অপর আলোয়, স্মৃতির ঘুণেরা আর অথই অন্ধকার অবিরাম গিলে খাচ্ছে আমার সময়। যাওয়ার বিপক্ষে, তবু থাকতে বলিনি – এই দোষে-মতিভ্রম, এই ভুলে-ছারখার, ছত্রখান, গোছানো জীবন। অতল পেয়েছি বলে, তলে? শীতল পাতাল হলো আমার ঠিকানা! বিবমিষা,…
-
দিনলিপি
জাহিদ হায়দার ০১.০১.২০১২ : মৃতদিন, বেশ শীত, কেউ বীজ উঠানে শুকায়; ০২.০১.২০১২ : মৃতদিন, ডানা থেকে শিশির ঝাড়লো পাখি, ছাদে বুড়ো পায়রা ওড়ায়; ০৩.০১.২০১২ : মৃতদিন, হাজার হাজার বিপরীত শব্দ স্কুলের সবুজ ব্যাগে নিয়ে যাচ্ছে একদল শিশু। আমরা, তোমরা আর আমি তিরিশটা দিন কি লিখবো? পঞ্জিকার পাতায় একটি কালো পাখি নেমে যাচ্ছে শিকারের দিকে, নখের…
-
চিত্রিত সাপের কথা
মৃণাল বসুচৌধুরী সে যখন একলা বেড়ায় শীতের উঠোনজুড়ে সে যখন অন্ধকারে একা একা নাচে নিঃসঙ্গ চুমুকে অস্থির গলায় ঢালে অনুদার বিষ অক্ষরবাগিচা থেকে সে যখন দ্রুতপায়ে ফিরে আসে একা মায়াকীট নষ্ট করে প্রাণের সবুজ দিশাহীন দূরত্ব পেরিয়ে সে যখন অন্তিম দুয়ারে মুখাগ্নির আগুন নিভিয়ে বসে থাকে নাভিকুন্ডে জমে থাকা মেঘের আড়ালে অনন্ত উড়ান শেষে মাটি…
-
পারহীন জলের মুর্শিদ
আসাদ মান্নান নিজেকে হারিয়ে এক জলশিশু ডুবে যায় গহন আলোয়, ঘুমন্ত মেঘের মতো মহাশূন্যে স্বপ্নডানা নিয়ে যে ওড়ে নির্জন নীল আগুনের নিচে, সে এক জলের শিশু – স্বপ্নে কিংবা জাগরণে ওই শিশু মরমিয়া অন্ধকারে পাঠ করে আগুনের প্রকৃত জীবন : শূন্য থেকে শুরু যার শূন্যে তার শেষ – মাঝখানে দু’দিনের মায়াবতী সংসার ফানুস। মেঘের অলিন্দে…
-
অন্য এক নির্জনতার দিকে
আশিস সান্যাল হেঁটে চলেছি সকাল থেকে সেই নির্জনে। পাহাড়তলির মাঠে অচেনা সব লাল-নীল পাখি হলুদবরণ ফুল আর টুকটুকে লাল শাড়িতে শরীর জড়িয়ে কাজ করছে তিনটি বালিকা। তাদের মধ্যে একজন বলল : কোথায় যাচ্ছ? তোমার চোখে নেই কোনো ক্ষুধা – কেবল হাহাকার। হাহাকার দিয়ে জয় করা যায় না কিছুই। জঠরাগ্নি থেকে তোমার দুচোখে প্রজ্বলিত করো দুরন্ত…
-
দুটি কবিতা
আলতাফ হোসেন দেড় আঙুলের বেলে মাছেরা কলা রামনাথের দিনকি পুরিয়ার আবহে বসতে হলো। আজকের মতো সকালের যা যা করা দরকার শেষ করে গেছে। এ মেয়েটির কথা তপন বলেছে অন্তত দশবার। তার আগে বৃষ্টি হচ্ছিল। দ্যাখো, আমাকে অত কুয়াশা দেখিয়ো না। এমনিতেই মেঘলা আকাশ। বাহ্, দারুণ তো! এই বুঝি নতুন রাগিণী? কিন্তু কথকের তো একবারের…