কবিতা
-
দুটি কবিতা
শঙ্খ ঘোষ বাস্ত্ত ঘরের দখল নিতে আসিনি তোমার কাছে আজ মাটির দখল নিতে নয়। আমি শুধু আগন্তুক। আমি শুধু নিমেষের দৃষ্টি মেখে চলে যাব ভেবে এসেছি ভিটের কাছে শতাব্দী পেরিয়ে। তুমি আছো, তাই আমি এসে বসি এখানে এ-সিঁড়ির কোনায় চা খাই মাটির ভাঁড়ে, দেয়ালে বুলিয়ে নিই হাত, সামনেই শুকোতে-দেওয়া হলুদ সুপুরিগুলি থেকে দুটো-একটা তুলে নিই।…
-
শুদ্ধসত্ত্ব
আবুবকর সিদ্দিক কামে ও প্রেমে ক্ষারকাচা হতে হতে সেই কবিমানুষটা দেখো ফৌত হয়ে এসেছে শেষটা। জহুরিরা চিরকাল নির্বিকার তার জীবনভর আত্মব্রতী লেখালেখি নিয়ে। পাঠকেরা ভুলো উদাসীন। পথে তার বিছিয়ে দেয়নি কেউ গোলাপপাপড়ি। প্রিয় নারী ক্লীবের অধিক তাকে পোছেনি কখনো। এমনকি পড়শিরা কেউ তাকে নিয়ে ঘামায়নি মাথা। পৃথিবী ঘুমের ঘোরে সংজ্ঞালুপ্ত হলে জেগে উঠত গোক্ষুরফণা। আগ্নেয়…
-
পারিপার্শ্বিক
উৎপলকুমার বসু ভ্রমেরই পারাবত ভ্রমণে এসেছে। বৃক্ষহীন, ছায়াহীন এই লোকালয় শুধু মানচিত্রে লেখা, শুধু কাগজে চিহ্নিত – মিথ্যা ও অবাস্তব। দিলো কি আশ্রয় সৃষ্টিছাড়া তোমাদের মতো দু-চারজন কবি ও চিত্রীকে – যারা ভুল করেছিল আত্মনির্বাসনে এই দেশে ঢুকে পড়ে? মৌচাকে মধু চায় প্রাণপাখি – ওই ভ্রম-পারাবত – ছায়া চায়, জল চায়, সে কোথায় পাবে? বেলা…
-
হয়, হতে পারে
আসাদ চৌধুরী ব্যাঙ ডাকুক বা না-ডাকুক, কদম ফুটলে ফুটবে, না-ফুটলেই বা কী? এক ধরনের বৃষ্টি হাত ধ’রে ছাদে নিয়ে যায় নিজের ছায়ার সঙ্গে আরও একটি ছায়ার কাঁপন। আর কোনো কোনো বৃষ্টি বাঘের মতো ধমকায়। কাকুতি-মিনতি করে ওগো আজ তোরা যাস নে ঘরের বাহিরে।
-
জীবন এরকমই
রবিউল হুসাইন চারিদিকে হইচই নিঃশব্দতা দরকার প্রচন্ড শব্দ করে চুপ্ বলতেই পলকে হুড়মুড় করে সুনসান অলক্ষে নির্জনতা এসে দেখা দেয় যদিও সবাই উপস্থিত ছিল তখনো অদূরে দূরত্ব দাঁড়িয়ে ছিল নৈকট্য বহু দূরে ঝাপসা চোখে কাছে ডাকে দূরত্ব কাছে আসে নিকট নিকটে আসে না কখনো দূরই কাছে নিকট ধরা দেয় না দুটি চোখ পাশাপাশি মিলেমিশে একটি…
-
কাইয়ুম চৌধুরীর তিনটি কবিতা
মৃগনাভি কী সুগন্ধি মেখেছো আজ – মৃগনাভি? তৃষ্ণার্ত কাতর শরীরী গন্ধে মাতাল সর্বব্যাপী। কর্ণকুহরে ভেসে আসে তিলক কামোদ কী যে সুমধুর – জল টলটল আকাশে জাগে অগুনতি তারা রাত্রি দ্বিপ্রহর। দু্ই চোখে ঘুম নেই সুগন্ধির উৎসমুখে – অবিরাম ওড়াউড়ি কী ভীষণ সুখে – নামিয়ে এনেছি দুকূলপ্লাবী স্বপ্নলোকের চাবি। কী সুগন্ধি মেখেছো আজ মৃগনাভি? সংলাপ হাতে…
-
দরিয়ায় কবি ডুবে যায়
মুহম্মদ নূরুল হুদা কবি মূর্খ থেকে গেলে কী ক্ষতি তোমার? তুমি তো শিখছো সব শব্দকলা, ভাষিক ছলনা, মাতৃভাষা রপ্ত করে লুটে নিচ্ছো মৃত-বা-জীবিত সব ভাষার গহনা, জগতের তাবৎ দর্শনশাস্ত্র, অর্থনীতি, আইনি ও বেআইনি বাহাস, তুমিও কি হতে চাও স্বর্গ-ও-নরকত্যাগী জ্ঞানীশ্রেষ্ঠ জেদি ফসটাস? কবি যদি মূর্খ থাকে কী ক্ষতি তোমার? তুমি তো রেখেছো খুলে জগতের আদি-অন্ত,…
-
দুটি কবিতা
ভূমেন্দ্র গুহ বাবা এক কাল রাতের বেলা বাবা এসে দাঁড়িয়েছিলেন দরজার চৌকাঠে, আমাদের ডেকেছিলেন। কোথাও গিয়েছিলেন, আটকে পড়েছিলেন। জামা-কাপড় পালটাতে আমাদের দেরি হল কেন-যে জানতুম না। হি-হি শীতের হাওয়া ছিল সারা-রাত। রাস্তাগুলি লম্বা, কালো, অন্ধকার। শেষ-অব্দি সেই ছোটো শহরটায় আমরা পৌঁছুলুম – ভিজে স্যাঁতসেঁতে। রাস্তার গা ঘেঁষে তিনি ল্যাম্প-পোস্টটা জড়িয়ে নিয়ে দাঁড়ালেন। রাস্তার পাশে শীত,…
-
বিরোধাভাস
কালীকৃষ্ণ গুহ ‘বিরোধাভাস নিয়ে আমার খেলা -’ বলেছিলেন অলোকরঞ্জন এখনো তাঁর লেখার কাজ বাকি এই হেমন্তে শীতের অরন্ধন। বিরোধাভাস মেঘে ও বিদ্যুতে অন্ধ নারী আকাশপ্রদীপ জ্বালেন সমগ্রতার মধ্যে গ্রীষ্মকাল আত্মত্যাগের হরিশ্চন্দ্রপালা। অন্ত্যমিলের মধ্যে আসন পাতা কে তাকে ভাঙে কে তাকে গড়ে ফের এই প্রশ্ন নিয়ে তরুণ কবি নিজেকে ভাবে যাত্রী দিগন্তের। পুরোনো কথা পুরোনো ছবিগুলি…
-
পশ্চিমের প্রেত
মাহবুব সাদিক পশ্চিমের ঝড়ো নীল মেঘের তলায় পাক খায় কোবাল্ট-ব্লু – পাগলা বাতাস নাকি একেই বলে আণবিক ঝড়! পরপর চমকায় আনত ঘন মেঘে ঊনপঞ্চাশ বিদ্যুৎ – এইসব আয়োজনে দেখি ঘূর্ণিঝড়ের মাধুরী আর সমূহ ধ্বংসের প্রেত – যে রকম ঝড় নিয়ে এককালে পশ্চিমারা এসেছিল পুবের শহরে-গ্রামে, তারপর যুদ্ধ, রক্তপাত ও যৌনতার ছড়াছড়ি – গড়ে নিলো তারা…
-
এখনো পারনি
অরুণাভ সরকার হয়তো তুমিই পার এই পৃথিবীকে বরফের মতো সাদা মানবতায় ঢেকে দিতে তখন জেএমবি সদস্যরা আর রক্তাক্ত করবে না উঠোন গঙ্গার প্রবাহ নিয়ে বিতন্ডা হবে না কাশ্মীরে হবে না কোনো রক্তপাত করাচিতে খুনোখুনি লেবাননে পড়বে না আর বোমা সমস্ত ট্রিগার থেকে ফিরে যাবে সন্ত্রাসী আঙুল কোনো নাইন ইলেভেন হবে না কোথাও বাগদাদে বন্ধ হবে…