কবিতা

  • নতুন বৈশাখে

    ফারুক মাহমুদ নিষেধকণ্টক ঠুকে ঢেকে দিলে আমার আকাশ উন্মুখ জানালা চাই। আলোমুখ। ফেলবো না শ্বাস! ইচ্ছের কপাট বোজা। কড়া হাতে তুলে দিলে খিল চৈত্রময়তায় – মূঢ় দগ্ধতায় – বাঁচা মুশকিল। তোমার চোখের থেকে ঝরে যদি দিগন্তের হাসি কেউ তো বলতেই পারে ‘হে নির্জন, আজো ভালোবাসি’ ভাটিপোড়া ঝামাগন্ধ… তা-ও থাকে রূঢ় রৌদ্রে মিশে চেয়েছি জলের ধারা।…

  • বরণ

    সব্যসাচী দেব যদি বিষণ্ণতা খোঁজো, যদি অন্যমনে ভেবে নাও শুদ্ধ জল খুনির হাতের রক্ত মুছে দিতে পারে, বিপন্ন সময় আরো একটু কুঁকড়ে যাবে, ভয়ে, সংশয়ে। যে-কোনো মৃত্যুর পাশে জিজ্ঞাসার রেখা অাঁকতে পারো? আততায়ী জামার আস্তিনে ঢেকে রাখে তার অস্ত্র, তরল পানীয় হাসিমুখে ঢেলে নেয় সুদৃশ্য গেলাসে। স্থানীয় সংবাদ যদি আন্তর্জাতিকতা পেয়ে যায়, তাহলে রাস্তার পাশে…

  • স্মৃতির সঙ্গে খেলাচ্ছলে

    হাসান হাফিজ ছলকে ওঠে স্মৃতি জেগে ওঠে শৈশবের গ্রাম আকাবাঁকা নদী চষাক্ষেত, জোছনা ঢেউ নিবিড় নিঝুম! স্মৃতিকে শাসন করি কৃত্রিম ধমকও দিই আপদ বিদেয় হও ভাঙা স্বরে বলি! বললেও মনে মনে স্মৃতিকে প্রশংসা করি কিছুটা প্রশ্রয়ও দিই অস্বীকার করি যদি ভুল হবে পাপও হয়তো হবে স্মৃতি ও আমার মধ্যে লুকোচুরি চলছে এভাবে ফিকে হয় না…

  • এমন মানবজমিন

    বায়তুল্লাহ্ কাদেরী জলস্পৃহায় সতৃষ্ণ ঝড় অতিলেহ্যময়তায় বার করেছি ধ্বনিত জিহবা আগুন অবধি। শরীর, বাঁশির ঝোপ, কালকচু-চুলমগ্নতার জল নৌকা-চাঁদ যৌবনের নাব্যনদী আমাকে উপড়ে ফেলে দেয় গহিন বিপিনে অতিকায় তরুর সতরে পাছাপেড়ে অাঁচল টানার মতো অবগুণ্ঠনের সন্ধ্যা মারীচমায়ায় বেহুদা বিভ্রমে আমাকে গুলিয়ে ফেলে, দীঘল শরীরব্যাপী যে-প্যাঁচানো হিমঝড় আমার মস্তকজুড়ে এধারে-ওধারে লেজ ঝাপ্টায়, তার কি অবসান নাই? সেই…

  • তুমি শুধু বৃষ্টি

    চঞ্চল শাহরিয়ার ইস্কাটন গার্ডেনে বৃষ্টি নামুক তুমি ভিজতে ভিজতে ফুটপাত তারপর গাড়ির দরোজা খুলে সিটে বসতে বসতে মুছে নেবে রেশমি কোমল ঝলমলে চুল। স্টিয়ারিংয়ে আমার হাতে হাত রেখে বৃষ্টি দেখবে আবার…। গাড়ি শাহবাগ পেরিয়ে ঢাকা ইউনিভার্সিটি নাকি গাজীপুর ন্যাশনাল পার্কে ছুটে গেল তুমি খেয়ালই করবে না। তুমি শুধু বৃষ্টি তুমি শুধু মেঘলা আকাশ তুমি শুধু…

  • মধুপুর-৮

    সৌভিক রেজা ‘নিবিড় অমা তিমির হতে বাহির হলো’… যে-কজনার গলায় শুনলাম তপ্ত দুপুর। পাথুরে ছায়া। বিস্বাদ-ঘোলা জল… মনে ভাবি : ওরা একজনও নীলিমা সেন শোনেনি! তাহলে গলায় কার গান তুলে নেয়?… সুর থেকে সুর বাতাসে ধূলির কণা সুদূর শান্তিনিকেতন… সেখান থেকে আরো সুদূরে প্রসারিত মাঠে ধূসর ছায়ায় গাছের পাতায় ধুলোর আস্তরণ আর পাথর থেকে পাথরে…

  • শীতের পাহাড়

    হাফিজ রশিদ খান কুয়াশার শাদাটে পশমে সজ্জিত তোমাকে বিউটি পারলার থেকে এখনই বেরিয়ে আসা তরুণীবধূর মতো পাচ্ছি স্বপ্নময় অবয়বে বিবাহ উৎসবে সমবেত ভদ্রমহিলা ও মহোদয়গণের উৎসুক অবলোকনের মতো পক্ষপাত প্রকাশ করছে মোহাবিষ্ট আমার সত্তা

  • যাওয়া আছে ফেরা নেই

    শাহজাদী আঞ্জুমান আরা আমি শুধু যাই, ফিরি না কোথাও আমার যাওয়া আছে, ফেরা নেই যেন এক চমৎকার উপাখ্যান আমার আঙুল দিয়ে শুধু ছবি অাঁকা জলের ওপর পেছনেই বেভুল বাতাস উদাসীন আমি যাই, ফিরি না কোথাও। সবকিছুই স্রোতের মতো ছায়া পড়ে, ভেঙে যায় আড়মোড়া ভেঙে বৈরাগ্যের ঢেলা জলপতনের মতো নিঃশব্দে গড়ায় আমি ছায়া ভেঙে হাঁটি আমার…

  • নষ্ট চোখের আয়না

    স্বপন সৌমিত্র সত্যিই কি জল আর আগুন ক্ষমাহীন স্বভাবশত্রু? আগুন! চির অতৃপ্ত, যার জিহবায় কোনো খাদ্য যথেষ্ট নয়। জল! মঙ্গল কর্মের সাক্ষী, প্রথম পুরুষের জলক্রীড়া সিন্দুসলিলে নীরবে লুকিয়ে ছিল। প্রত্যেকের কিছু ঘুমহীন রাত থাকে, যাকে চিরদিন নষ্ট চোখের আয়নায় রেখে অন্যের প্রতিবিম্ব খোঁজে, পৃথিবীর মায়া আবেগ দেহ এমন বিশুদ্ধ কিছু নয়। উর্বর রাত, মৃত্তিকা নদী-নারী…

  • বুড়ো ক্যাপটেন

    মণীন্দ্র গুপ্ত পুরো পথটা আদ্দেক জল আর আদ্দেক মদে ভেসে ভোরবেলা বন্দরে এসে ঢুকল জাহাজ। স্বাধীনতাসংগ্রামীদের মতো বলিষ্ঠ বাহু বাড়িয়ে দাঁড়িয়ে আছে কয়েকটা ক্রেন। জাহাজের উদর যেন মাটির তলার খনি – পাথরে মিশে থাকা ধাতু, ভাঙা মরচে পড়া লোহা, অকিঞ্চিৎকর আলকাতরা আমাদের জন্য দূরদেশ থেকে বয়ে এনেছে সে। সবাই বলে, বুড়ো ক্যাপটেনের প্রচুর অভিজ্ঞতা –…

  • এখন যা আছে, নেই

    ওবায়েদ আকাশ এখন যা আছে তার চেয়ে বেশি কিছু ছিল – পৈতৃক সম্পদের মতো তুচ্ছতর অহংকার, কখনো শালপ্রাংশু মনে হতো তাকে এখনো জলাজংলা, পলিবাহিত মাঠ আছে পৃথিবীর নিভৃত ক্রোড়ে শরীরের বাকল খুলে উড়ছে তো দুরন্ত শৈশব ঠোঁটে কাদা মেখে যে শালিক ধান খুঁটে খেত আর মাছরাঙা ঝুপ করে ঠোঁটে তুলে নিত মাছ – তাদের শৈশব…

  • প্রতিধ্বনি

    বিনায়ক বন্দ্যোপাধ্যায় আগুনে দাও দুধের বাটি সে হবে ক্ষীর আমার ছায়ায় উঠবে জেগে তোমার শরীর হবেন তোমার রবিঠাকুর তোমার শনি তখন আমার অন্ধতাও তো প্রতিধ্বনি তোমার জিভের পিছু পিছু। বেড়ায় ছুটে ফুলের ভিতর ঘুমিয়ে থাকা সব মুকুটে আর একটিবার মাথা ঢোকায় সর্বহারা আকাশ না থাক। তুমি আমার চোখের তারা।