কবিতা

  • বুড়ো ক্যাপটেন

    মণীন্দ্র গুপ্ত পুরো পথটা আদ্দেক জল আর আদ্দেক মদে ভেসে ভোরবেলা বন্দরে এসে ঢুকল জাহাজ। স্বাধীনতাসংগ্রামীদের মতো বলিষ্ঠ বাহু বাড়িয়ে দাঁড়িয়ে আছে কয়েকটা ক্রেন। জাহাজের উদর যেন মাটির তলার খনি – পাথরে মিশে থাকা ধাতু, ভাঙা মরচে পড়া লোহা, অকিঞ্চিৎকর আলকাতরা আমাদের জন্য দূরদেশ থেকে বয়ে এনেছে সে। সবাই বলে, বুড়ো ক্যাপটেনের প্রচুর অভিজ্ঞতা –…

  • এখন যা আছে, নেই

    ওবায়েদ আকাশ এখন যা আছে তার চেয়ে বেশি কিছু ছিল – পৈতৃক সম্পদের মতো তুচ্ছতর অহংকার, কখনো শালপ্রাংশু মনে হতো তাকে এখনো জলাজংলা, পলিবাহিত মাঠ আছে পৃথিবীর নিভৃত ক্রোড়ে শরীরের বাকল খুলে উড়ছে তো দুরন্ত শৈশব ঠোঁটে কাদা মেখে যে শালিক ধান খুঁটে খেত আর মাছরাঙা ঝুপ করে ঠোঁটে তুলে নিত মাছ – তাদের শৈশব…

  • প্রতিধ্বনি

    বিনায়ক বন্দ্যোপাধ্যায় আগুনে দাও দুধের বাটি সে হবে ক্ষীর আমার ছায়ায় উঠবে জেগে তোমার শরীর হবেন তোমার রবিঠাকুর তোমার শনি তখন আমার অন্ধতাও তো প্রতিধ্বনি তোমার জিভের পিছু পিছু। বেড়ায় ছুটে ফুলের ভিতর ঘুমিয়ে থাকা সব মুকুটে আর একটিবার মাথা ঢোকায় সর্বহারা আকাশ না থাক। তুমি আমার চোখের তারা।

  • শব্দগুচ্ছ

    আহমেদ মুনির ১০ আমার শব্দের ভেতর থেকে একটা শাদা বেড়াল সবার অলক্ষ্যে লাফিয়ে উঠে অন্য কারও শব্দের ভেতর মিলিয়ে যেতে দেখলাম। ১১ শব্দগুলোকে কার্নিশে উলটো করে ঝুলিয়ে দিয়েছে ওরা। এখন তাদের মুখ-নাক-চোখ বেয়ে টপ-টপ করে ঝরে পড়ছে রক্ত। ১৩ উষ্ণ, অস্ফুট একটা শব্দ তোমার বুকের ওপর রেখেছি কাল রাতে। যখন স্বপ্নে, বরফকুচিতে ঢেকে যাচ্ছিল তোমার…

  • কবি

    বদরে মুনীর যাবো না, পিঠে ব্যথা; যাবো না বৃত্তের বাইরে – বিদ্রোহের সোজা সমীকরণে ঠাঁই নাই রে! আপোস কাজে লাগে, এক পা পিছিয়েছি, দুই পা আগাতে পারি যেন; জানি তো কাহ্নুপা-লুইপা… ছিলো না কেউ বীর, সমাজ-সংগ্রামী যোদ্ধা, অথবা তাত্ত্বিক, নিরেট জ্ঞানজীবী বোদ্ধা।

  • লালনের বাণী

    সেলিম মাহমুদ অাঁকা বা আকাবা; অাঁকা-চিত্রকলা, আকাবা-বন্দর গাছের ছবি পাখি পাবে, বন্দরের পণ্য মহাজন; অাঁকি আমি অভাজন, কার ছবি, কার অনুভব; যে যায় প্লাস্টার ছিন্ন করে – অ্যাক্রিলিক কিবা তার! লালনের বাণী প্রান্তরে প্রান্তরে ঘোরে পথের মিস্তিরি ইট বিটুমিনে বালু ঢালে।

  • বিচিত্র বিষয়ের বিভাবন

    অনিন্দিতা ইসলাম নির্নিমিখ কথাশিল্পের রক্তিম সময় তুমি আছ অহনা মেঘে মুক্তোর মালা কিশোর বালক স্বপ্ন খোঁজে মুষ্টিবদ্ধ জনতার হাতে স্লোগান বিদ্রোহের অগ্নি তবু স্বপ্নের অপরূপ প্রান্তর খোঁজে – পৃথিবীর ছেলেবেলা অমূর্ত নিরূপণ শেষে আবার – দূর প্রেমের আস্তরণ চিলের বলিরেখা এসে মুছে দেবে বলে আমাকে অনিকেত দ্যোতনায় – তবু, সংশয় খোঁজে আলাপন

  • জীবনানন্দ

    পিয়াস মজিদ রোদে পুড়ে তামা হয়ে যাওয়া সোনালি চিলের ডানা খুঁড়ে জাগিয়ে তুললাম করুণ কঠিন ছায়াপাতের দিন। রক্ত ক্লেদ নিরন্তর আর স্বপ্নে একগাছা ধূসর দড়ি। তাই এখন দেশপ্রিয় পার্কের মোড়ে তুমি আসতেই রাত্রিকে নিঃসঙ্গ করে মধুকূপী ঘাস আমি; সুন্দর সে ট্রামের তলে

  • লড়াই ৩২

    কাজী রোজী ভালোবাসার আয়নাপথে আনিলা কী দেখতে পায় – আমি জানতে চেয়েছিলাম। বারো বছরের আনিলা এমন জবাব দেবে বুঝতে পারিনি। প্রতিবন্ধিতা দিয়ে যার সমস্ত অস্তিত্ব জড়ানো – মনন-মেধার সাথে সারাক্ষণ যুদ্ধ – দারুণ হুইল চেয়ার যার চলনশক্তির ধারাপাত – যার বলনের উৎসে অদ্ভুত অস্পষ্টতার এলোমেলো ভাব – যার উচ্চারণে ছবি কথা বলে – সাহস প্রজ্বালিত…

  • জননী, জন্মভূমি

    শিমুল আজাদ তোমার মাটিতে জন্মে মা গো অনেক কিছুই পেলাম। তোমার বুকেতে মাথা রেখে শান্তি, স্বস্তি ছুঁলাম। তোমার চোখে চোখ রেখে আজ অভয় মন্ত্রণা খুঁজি। মা গো তোমার হাতের গুণে এখন জীবন জোয়ার বুঝি। শত্রুরা দূরে শুধুই হিংস্রতার পায়া করে ভারী। মূর্খতার ঘোরে পড়ে থাকে যাবতীয় দরকারি। তোমার মাটিতে মা গো এখনো সোনা ফলে। তোমার…

  • কোকিল ও কলম

    মতেন্দ্র মানখিন কোকিল গান গায় – কলমও কম কিসে সেও গায় কুহু কুহু মুহুর্মুহু… কবির কী দোষ – দখিনা সমীরণে যদি পুষ্পবৃষ্টি হয় – সুপ্ত অনুরাগে ফুল ফুটে কবিতার শাখা-প্রশাখায়। কবিতার মন্ত্রগুণে কলম তো কোকিলই রাত-দিন অবিরত এ-কোকিল গান গায় মিলন বিরহ বিচ্ছেদ – অপূর্ব সুন্দরের। শিল্পীমন যার – সুন্দরের পিয়াসী যেজন শুনে – সেজনই…

  • মৃত্যু

    রোকসানা আফরীন প্রখর মৃত্যু তুমি কাছে এসো স্পর্শ করো ভোরের প্রহরে দিন আসে দিন যায় দিন কেন এতো বেশি দীর্ঘতর হয়? এতো বেশি ছায়া থাকে, ক্লান্তি থাকে, অশ্রুরেখা থাকে থমকে থাকে শরীরজুড়ে বাষ্পরুদ্ধ জ্বর আমাকে প্রসন্নতার কাছাকাছি একদিন নিয়ে যাবে                              আমার ঈশ্বর আমাকে কাঙাল নদীর দিকে একদিন নিয়ে যাবে                              সূর্যের দেবতা