কবিতা

  • হৃদয়চূর্ণ

    কামরুল হাসান একদিন ফিরে গিয়ে দেখি শূন্য সে-ঘর, শূন্য সে-উদ্যান ডাকবাক্সে জমে আছে আমার পাঠানো চিঠি, সুরবাঁধা গান ভাবি তবে কি পুরোটাই বিভ্রম, তবু প্রাণে একি মায়া জাগে প্রতিবেশী বলে, চামেলি? সে তো মরে গেছে ত্রিশ বছর আগে। দুই পথে পথে পাই কিছু ভাঙা প্রেম, জ্যোৎস্নার মেওয়া কণিষ্ক জ্যোতির টানে গড়িয়ে চলেছে প্রাণবঁধুয়া প্রণোদনা দিয়ে…

  • রূপান্তর

    চাণক্য বাড়ৈ বনের বাসিন্দা ছিলে। নেমে এলে জলে। শিকড়ের প্রেম ভুলে মোহনার মায়ায় মজেছ। ‘আজন্ম স্থাণু’ বলে হয়তোবা কটাক্ষ করেছিল কেউ কলঙ্কের বাকল খুলে জলে তাই দিয়েছ সাঁতার ছিপছিপে বাইচের নাও, সন্তরণ পটিয়সী তুমি আজ তড়িৎগতি জলজ ঘোড়া ভুলে গেছ গাছজন্ম, কোকিল, কমলাবউ, ফুলঝুরি শ্যামাদের কথা। এবার নদীতে নেমে মাছের বন্ধু হলে, অচল বৃক্ষ নও,…

  • বৈরিতার নুন

    মনসুর হেলাল নগ্ন নধর দেহে হাঁটুকল ভেঙে কাঁধে নিয়ে বিস্ময়ের ঝাঁপি দুই চোখে পরাগত স্বপ্নের দুন্দুভি; আর রক্তঘামে সিক্ত পাললিক মৃত্তিকায় সংবর্ধিত ফসলের শস্যদানা ছড়িয়ে-ছিটিয়ে তুমি এইখানে এলে। কেন এলে? প্রাকৃতিক বর্ণবাদ পাহাড়ের ধস প্রাক্কলিত জোয়ারের নোনা; এই বুক দিয়ে তুমি কতটা ঠেকাবে? নিঃশ্বাসের ভাঁজে ভাঁজে বৈরিতার নুন আর অমীমাংসিত সত্যের দীর্ণ প্রাচীর পেরিয়ে হাতে…

  • বায়োস্কোপ

    গ্যাব্রিয়েল সুমন শুদ্ধতম জোনাকির বুকের প্ল্যাটফর্মেও জমা থাকতে পারে অশুদ্ধ ইচ্ছের বিচ্ছিন্ন ডাংগুলি। বিলুপ্তপ্রায় স্টেশনের ক্লান্ত ছায়াটিও হয়ে উঠতে পারে টকটকে কবিতাবতী। তাই মুগ্ধতম আকাশ যেথা মেলে ধরে কামবন; সেইসব শান্ত চিরহরিৎ বৃক্ষেরও ছিল পা। মেঘের যোনিপথে আলগোছে নৌকাভ্রমণের আনন্দে ঘুরে বেড়াবার উড়ালবর্তী মুগ্ধতা। তাই দড়ি ও সাপ বিষয়ক জটিলতা থেকে রেহাই পাবার পূর্বেই মুক্ত…

  • দর্পণ-ঠিকানা

    কুমার চক্রবর্তী  তোমার আমার মাঝে পায়ে হাঁটা পথ ছিল এক সে-পথের ধারে ছিল গোধূলিশাসিত অস্পষ্টতা আমরা হেঁটেছি একা সেই পথে অন্ধকারে তবু দূরত্বশাসিত ছিল তোমার আমার আকুলতা। কে বাজায় লুপ্ত আজানার সুর অবিরত কাছে আর দূরে কতকাল রয়ে গেল জীবনের অপার অাঁধার প্রতিবিম্ব একা ক্রমে মৃদুভয়ে হয়ে যায় অস্তিত্বজটিল তার আছে আত্মমুগ্ধ স্বপ্নভার দগ্ধ এই…

  • চাঁদের তিনচাকা রথ

    জলধি হালদার   অতিকায় তিমিরা যেখানে লেজ উলটে দেয় হাঙর ও হারিকেনের খতরনাক কামড় ওত পেতে থাকে নেকড়ের ক্ষিপ্রতায় ঘোরাফেরা করে জলদস্যুরা…   বাঁ-কাঁধে ঝুলছে ওয়াকিটকি, ডান হাতে টর্চ, সুনসান রাতে এপি ওয়াচের সামুদ্রিক নৈঃশব্দ্যে ঢেউয়ের মাথায় ভেসে ওঠে কবেকার হারিয়ে যাওয়া কলম্বাসের টুপি।   গ্রহ-নক্ষত্রের ছায়াগুলি রাতের থমথমে জলে ভাঙা অক্ষরে কী যেন লেখে,…

  • সপ্তম আশ্চর্য হিসেবে সুন্দরবনকে ভোট না করা

    শামসুল আরেফিন তোমার দৌড়ে পালানোর দৃশ্য হরিণের বিচলিত চাহনির কথা আমাকে মনে করিয়ে দেয় শিকারির তাক করা বন্দুকের গুলি কিংবা রয়েল বেঙ্গল টাইগারের সন্তর্পণে ঝাঁপিয়ে পড়ার           যৌথ আক্রমণের ভয়           এসব কিছুই তোমার দরখাস্তে সংযুক্ত ছিল না প্রতিদ্বন্দ্বীহীন তুমি তোমার কোনো প্রতিযোগিতার উল্লেখ হাদিস শরিফে নেই তোমার নিরন্তর পালানোর দৌড় আমাকে মর্মাহত করে এভাবে…

  • কোনো এক হেমন্তের দিনে

    সুহিতা সুলতানা কোনো এক হেমন্তের দিনে তোমার বিবেক মানে শারদ প্রভাতে আমার কাছে না থাকা? তোমার বিবেক মানে চুপিচুপি অন্য আরেকটি পরকীয়া করা? এই তো তোমার বিবেক আর অনুভূতির রং? দ্যাখো ঘন কাশফুলে ছেয়ে গ্যাছে বন রেলগাড়ি চলে ঝমঝম, হৃদয় ছুঁয়ে ছুঁয়ে যায় নদীর ধারের কাশবন শরতের এমন দিনে মরে গ্যাছে স্মৃতির আহ্লাদ তোমার অভিবাসী…

  • জলের জাদুঘর

    রবীন্দ্র গোপ   রাত গভীর থমথমে কবিতার ঈশ্বর বসেন ধ্যানের প্রতিমা খুলে দেয় ত্রিকোণ জলের জাদুঘর বহু ঐশ্বর্যের গর্বিত মানবেরা কেটেছে সাঁতার রাত্রিভর ডুবেছে ভেসেছে, আবার কূলহারা নিমজ্জিত। বসন্তে কেউ বেসেছে ভালো মুছে শীতে কালো সাজিয়েছে জীবননদীর ঢেউয়ের ফুলে ফুলে  থইথই জল ছলছল স্পর্শের আনন্দে উত্তাল তার ঘাম মিশেছে ওর ঘামে তারপর শান্তি, জলের শরীর।…

  • প্রার্থনা

    শিহাব সরকার করি নিগূঢ় প্রার্থনা: ফেটো ওগো পাতালের ফুল দল মেলো অদৃশ্য নারী ও পরীরা বাগানে ফুটে গেছে সব কলি, বাগানের মৌমাছি সব মত্ত-মাতাল আমি বাঞ্ছা করি নিশ্চেতন নিদ্রা ওই ঘুমে স্বপ্নেরা জঞ্জাল, স্বপ্নে শুধু ভূত আসে। আশ্বিনের হঠাৎ বৃষ্টিতে ভিজে একাকার শহরের প্রিয় রাস্তায় রিকশা নেই মধ্যরাতে গলির মুখে অন্ধকারে-মেশা কালো গাড়ি মৃত্যুর শৃঙ্গার…

  • দুটি কবিতা

    সাযযাদ কাদির তবু মণিমালা জানে সে আমার মণিমালা। তবুও মণিমালা যেন মণিমালা নয় – এইভাবে মণিমালা থাকে মণিমালা হয়ে। অবশেষে – সব শেষে তবু আমি চিনেছি তাকে – জেনেছি তাকে আমার মণিমালা। তবু সে দেখে না আমাকে – দেখে না আমার কিছু, বলে না কোনো কথা। তাহলে কাকে দেখে মণিমালা? কাকে বলে কথা? এত কথা?…

  • যেসব ভোরের জন্য

    দুলাল সরকার যেসব ভোরের জন্য প্রকৃতির সম্মিলিত প্রয়াস যে সমন্বিত প্রস্ত্ততি – বাতাস ও আকাশের স্বাগতিক উচ্চারণে কচি আমন চারার দুহাত তুলে নাচের মুদ্রা, বহমান নদীর পাড়ে পাড়ে বোহেমিয়া পাখিদের নীল ব্যবহার ঘরোয়া আলাপ সেরে বয়ে চলা নদীর সংলাপ; শাপলা ফোটা প্রসারিত জলাশয়ে পাটভাঙা নীলিমার লালাভ অাঁচল ছুঁইয়ে এক মহিমান্বিত উদয়ের পালা, এক হিরণ্ময় স্তব্ধতার…