কবিতা

  • শহীদ কাদরী ‘ব্যক্তিগত, ব্যথিত শহরে’

    তমিজ উদ্দীন লোদী   তোমার চুম্বনগুলো পৌঁছাবার সাথে সাথে তুমিও পৌঁছে গেলে তোমার স্বদেশে তোমার অস্থি, মাংস, মাংসের খাঁচা মিশে থাকল স্বদেশের সোঁদা সুন্দর মাটিতে।   তুমি বলতে ‘দেশ’। দেশ মানে ত্রিশ লাখ মানুষের রক্তের ওপর দাঁড়িয়ে থাকা একটি বদ্বীপ। তার মাটি, তার জল, তার বৃষ্টি, টিকে থাকার সংগ্রামে যুযুধান মানুষের মুখ। দেশ মানে অজস্র…

  • সে

    হাফিজ রশিদ খান   সে মানে মোমশিখার একবিন্দু কালো কামারশালার হাপরের তলে কনকরঙা ইস্পাত ফাল্গুনের বিরহী শাখায় মুকুলের মুখ পোড়োবাড়িতে বিষণœ পাল শাসনামলের গল্প তপ্ত ফুটপাতে ঘরহারা মানুষের আর্ত পদপাত পাথরে নকশা খোদাইরত শরীর ঘেমো মজুরের   সে মানে বাঘের ঘরে দৌড়ক্লান্ত হরিণীর দৃষ্টিপাত ক্ষণিকের…

  • ভালোবাসার পাঠ

    মোহাম্মদ শামছুজ্জামান   আর কতবার জাগালে তুমি ভালোবাসার ঢেউয়ে পাঠ দেবে! এখন তো প্রদোষ শেষে সানবাঁধানো ঘাটে যাওয়ার সময় সব উপলক্ষ শেষ হলে আর কোনো বাহানা থাকে না থাকে শুধু ‘মুখোমুখি বসিবার’ দায়হীন খেলা, এখন লাল পিঁপড়েরা শবদেহ নিয়ে ভারাক্রান্ত প্রণয়পথে মড়া আর শকুনেরা বিছিয়ে থাকে, তখন আর কেউ নেই ফেলে আসা স্মৃতিচিহ্ন-পথে মরীচিকাময় দীর্ঘশ্বাসগুলো…

  • সেই সুখ

    চঞ্চল শাহরিয়ার   তখনো রবীন্দ্রনাথে আচ্ছন্ন আমি জোড়াসাঁকো ঠাকুরবাড়ির দোতলায় হাফপ্যান্ট আর গেঞ্জি পরা কিশোরীর কৌতূহল ভেঙে ভেঙে হাতে তুলে দিচ্ছি।   জোড়াসাঁকো, শিলাইদহের রবীন্দ্র-কুঠিবাড়ি আর দক্ষিণডিহির বর্ষার দুপুর দিয়ে দিচ্ছি ভালোবেসে কিশোরীর আঙিনায়।   সেই সুখ-সোহাগী কার্নিশে খেলা করে নিশিদিন।

  • নিবৃত্তির কোথায় সাকিন

    হাসান হাফিজ   পাহাড় প্রান্তর কেন ডাক দিচ্ছে উতরোল? এই ডাকে প্রণয়ের ভাত নুন লাবণ্য রয়েছে, উপেক্ষা কীভাবে করি? চাইলেও সম্ভবপর নয়। জাগতিক গ্লানির গ-ূষ ভাপ ইতিউতি ছলাকলা অস্বীকার করা যায় না। আষ্টেপৃষ্ঠে ছেঁকে ধরে তারা। বলছিলাম প্রণয়ের কথা। পরিণয় হবে না জেনেও কেন আর্তি দীর্ঘশ্বাস? চুঁইয়ে চুঁইয়ে রক্তের ক্ষরণ? নির্যাস জীবনমধু অনেক তো পান…

  • চিন্তা

    বিভাস রায়চৌধুরী   গাছের চিন্তাই ফুল   ফুলের আকার অনুযায়ী পাঠক অর্থাৎ প্রজাপতি নানা আকারের হয়   কিছু কিছু গাছ অপুষ্পক প্রজাপতি আসে না সেখানে   পৃথিবী বিস্ময়… পৃথিবী বিস্ময়…

  • ঝুড়ি

    সমরেশ মুখোপাধ্যায়   ভাঙা কাচের টুকরো বিঁধে আছে যেদিকেই ফিরি রক্তের ঝরনারা নুড়ি-পাথর ধুয়ে ধুয়ে জমাট বাঁধে কালো কালো সুতোয় জড়ানো রাত্রি এত্ত বড় ভবিষ্যতের ঝুড়ি…   একের পর এক ডিম ফাটাই ডিম ফাটাই রোজ…

  • মন পবনের ঢেউ

    মাহবুব বারী   ১.         দিনের বেলার ম্লান শাপলা তুমি রাতের বেলা পাপড়ি মেলে ফুটেছ।   ২.         আমাকে পৃথিবীর সবচেয়ে দুর্গম স্থানে নির্বাসন দাও, হে পরওয়ারদিগার না হলে লোহার কোনো কুঠুরিতে আটকে রাখো, এমন কোনো নিরাপদ স্থানে যেখানে প্রেমের বিকিরণ কোনোদিন স্পর্শ করতে পারে না।   ৩.        তোমার মধ্যে কোনো ভাব নেই তোমার মধ্যে কোনো ভালোবাসাও…

  • দুটি কবিতা

    মারুফ রায়হান   ফ্ল্যাটের বিড়াল স্বজন স্বজাতি থেকে বিচ্ছিন্ন বিদগ্ধ এক প্রাণ বসে থাকে দিনভর সূর্যের থাবায় পিঠ দিয়ে ভঙ্গিটি আয়েশি নয়, ঋজু, উৎসুক, গভীর চিন্তাশীল নিজ শব্দ নেই কোনো, সাড়া নেই সশব্দ সংস্রবে তার চোখদুটো দেখি – নিপাট বিড়াল-চোখ এই গ্রহ ভেদ করে দূর কোনো নির্জন নক্ষত্রে ছড়িয়ে পড়েছে দৃষ্টি, সেখানে রয়েছে বুঝি কাক্সিক্ষত…

  • হাজার বছর (প্রিয়জন, সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম)

    মাকিদ হায়দার   ইচ্ছে করে হাজার বছর বেঁচে থাকি।   ইচ্ছেটুকু পূরণ হলে লিখব না আর পত্র-চিঠি তাহার বাড়ির ভুল ঠিকানায়   মাঝে মাঝে ইচ্ছে করে মেঘের সাথে ভেসে বেড়াই, সময় পেলে রাখব ঢেকে দহন আমার, তাহার বাড়ির শিউলিতলায়।   পরশু রাতে ঠিক করেছি পুড়ব না আর জোছনা-রোদে, ইচ্ছে তবু জেগে থাকে একটি মুখ দেখার…

  • তখন ছদ্মবেশ পরতে হয় (বেলাল চৌধুরীকে)

    শিহাব সরকার   সকলেই নিশুতি রাত্রির কথা বলে নিঃশব্দে হতে থাকে অর্চনা রাত্রির। অন্ধকার তার দরজা খুলে রাখে, তারপর কুহেলির কাছে নেমে যাওয়া   ধ্রুবকথা এই যে, তুমি রাত্রির মুখোশে তবু দ্যাখোনি অন্ধকারের পিত্ত, আমার সব গদ্যকথা, বলি যা ধূলিবালি অনেক জানালার কিছু কিছু খোলা থাকে   তখন ছদ্মবেশ পরতে হয়, নারীরা সব কবিতা রেশমি…

  • এই আমি চেয়েছিলাম

    মাহবুব সাদিক ঝরনার কাছে ঘাসজমি জলের কল্লোল আকাশনীলের তলে কাঠকুটো আর ঘাসে ছাওয়া চারদিক খোলা অবারিত ছোটো বাড়ি – সারাদিন হাওয়া দেবে হানা সারারাত শিশিরের ধ্বনি নিঃশব্দ শীতের কড়া নাড়া – এই আমি চেয়েছিলাম – শুধু এই;   সংক্ষুব্ধ জীবন স্বপ্নের কপাট খুলে বারবার দেখে নেয় দ্যোতনাময় আলো ও আঁধার চেতনার আনাচেকানাচে তারা কোথায় করেছে…