কবিতা

  • মৃত্যুই অনিবার্য সত্য

    শাহাজাদা বসুনিয়া   বুড়িয়ে যাওয়া যদি নিশ্চিত সত্য হয়, তাহলে তোমার পাকা কেশ ছিল অনিবার্য সত্য। তোমার রূপ ছিল ফুলেল চন্দন আগর, বিচিত্র বেণী ছিল অপূর্ব শোভিত, আসমুদ্র মুকুলিত কেশসম্ভারে তুমি ছিলে দীর্ঘ কেশী কৃশাঙ্গী আপাদ লম্বিত কেশের শোভায় তোমার বিনোদীয় বেণী ছিল আখ্যানকাব্য। নির্মল শ্যামল অঙ্গচরণে প্রণয় সম্ভারসম তোমার কেশ যেন বাহুতে ঘন ফুলফলা…

  • মায়ের নাকফুল

    সুজন হাজারী   মাটির চুমুতে শোভা উঠোনে ঘাসফুল উনুনে পোড়া দীর্ঘশ্বাসের ঘ্রাণ মুখলজ্জা নয় আদিম এক অসুখ মা-র মুখে শুনিনি আজো বাবার নাম।   স্বামীর আগে ভাত বেনেবউ তোলেনি মুখে ক্ষুধায় মরা পেটে বাঁধে বাবার মুখ-মোছা গামছা দীর্ঘায়ু কামনায় অক্ষর ওজনের এ-কথা সত্য বাবার জুতায় মায়ের কল্যাণ নিহিত।   মায়ের নাকফুল আলোহীন গুহায় শোকচিত্র বাবার…

  • সুপাতলা

    তমিজ উদ্‌দীন লোদী   আমি হাঁটি আর ভাবি ওইসব টিলা কই?   ছড়ার দুপাশে বৃক্ষ, বানরের লাফালাফি, ঝাঁকঝাঁক পাখি কই? মানুষ নামিয়ে দিয়েছে সব সমতলে।   সারি সারি কমলা, লটকান, আম ও কাঁঠালগাছগুলো নেই   ইট, কাঠ, লোহার আধিপত্যে ওরা সব পালিয়ে বেঁচেছে।   শুধু আছে কোদাল ও কুঠার। যন্ত্রের দাপট। বদলে গেছে বনরাজিনীলা বুজে…

  • দুটি কবিতা

    অতনু ভট্টাচার্য্য   কৃষ্ণ সত্মব্ধতার মাথায় উঠে কাঁপে। তাল সুরের সাথে নাচবে তাই এটুকু দেখভাল। আঁচলে গিঁট দিয়েছে আর মনের ধুকপুক হাস্নুহানা গন্ধ-মাখা সোনারসিন্দুক!   এবং যদি তাকিয়ে চোখ, পলকে-অপলকে গুপ্তধন মিলতে পারে অশ্রুবিভালোকে।   সত্মব্ধতাও রমণী হয়! কাজল পরা চোখ চাইছো যদি কৃষ্ণ হওয়া – সামান্য দুর্ভোগ!   ঢেউ সেই      অজানা দ্বীপে যেতে হবেই…

  • কোথাও একজন কেউ অপেক্ষায় থাকুক

    সাজেদুল আউয়াল   হতে পারে ভুবনডাঙার মোড় অথবা উধাও হয়ে যাওয়া তিন প্রহরের প্রান্তর; না-হয় নিতাইগঞ্জের বাসস্টপই হোক, নতুবা ময়নাপাড়ার উঠান – কেউ একজন থাকুক দাঁড়িয়ে কোথাও। পরনে থাক নলসোঁদার শাড়ি, কপালে খয়েরি টিপ, মুখখানা না-হয় দেখাক কিছুটা মলিন।   না-হয় রয় যেন দাঁড়িয়ে ডুমুরিয়া নদীর বাঁকটি এসে মিশেছে যেখানে খালমনার সাথে, সেখানে; অথবা অভয়দাস…

  • প্রকৃতি

    কাজলেন্দু দে   ক্রমে বইমেলা ঘুরে ঘরে ফিরে আসি। এই ঘরে নীড়হারা পাখির উড়াল আর বিধবা সকালের স্বপ্ন মিলেমিশে থাকে – এককোণে পথ থেকে তুলে আনা দীর্ঘশ্বাসও থাকে। চৌকাঠ পেরোলে মাঠ, দূরে নদী, হাওয়ার চিৎকার। হাওয়া জানে কেন আমি মাঝে মাঝে বাড়ি থেকে পালিয়ে যেতাম। এভাবেই ক্রমশ নিজের কাছে ফিরে আসা, রহস্যকে ভালোবাসা আর পরাবাস্তবের…

  • জয়শ্রীচাদর

    হাফিজ রশিদ খান   একটি চবুতরের কাছাকাছি জয়শ্রীচাদর ঘিরে ঝাঁক-ঝাঁক শালিক-পুরুষ নাচে বিভিন্ন মুদ্রায়   তখন ছিল না কোথাও রোদের প্রিয়তম দাগ   একজন নীলবর্ণ মাছি ডাগর-ডোগর চোখ মেলে রজনীগন্ধার ঝোপে কাঁপছিল   রাতভর জয়শ্রীচাদরখানা ওর দিকে আড়চোখে চেয়ে থেকে-থেকে বলে গেল কেবল একটি কথা :   তোমার পাখার ঠিকরানো আলো আমার শরীরে জ্বালো…

  • মানুষ তুমি

    মাহবুব বারী   সংসারে আর একটি সংসার কেন পেতেছে এ কি তবে শুধু খেলা? সংসারে আর সংসারে এ-খেলাতে কোন বেলাতে কখন কোথায় থাকো যে মানুষ তুমি কেমন করে পার হও তুমি আবার আসো ফিরে দিনে-রাতে আসা-যাওয়ার পথে, কত শত মতে সঙ্গী পাবে কাকে, বন্ধু হবে কারা, গুরু হবে কে যে মানুষ তুমি পথের মতো যেতে…

  • সঙ্গে যদি

    মাকিদ হায়দার (শ্রদ্ধাভাজন কবি মাহমুদ আল জামান)   তীর্থে যাবো সঙ্গে যদি নিতে ধুইয়ে দিতাম সোনার চরণ দুটি।   কুড়িয়ে দিতাম হারিয়ে যাওয়া মুখ, প্রেমিক কবির দৃষ্টিভেজা চোখ।   তীর্থে যাবো সঙ্গে যদি নিতে।   নাইবা গেলাম গয়া-কাশী যেতাম, সুদূর বৃন্দাবন। সেথায় গেলে হয়তো আমি ফিরে পেতাম কারো হারিয়ে যাওয়া মন   তবু যদি তীর্থে…

  • আমি এ-জীবনটাকে উলটেপালটে দেখতে চাই

    খালেদ হোসাইন আমি এ-জীবনটাকে শেষ-অবধি উলটেপালটে দেখতে চাই। ভুলগুলো শুধরাতে চাই না, চাই না এ-জীবন আরো মসৃণ হয়ে উঠুক। যন্ত্রণায় কাতরাতে চাই না, তার রসটুকু পান করতে চাই। চাই না – আনন্দ যা পেয়েছি, তা সম্প্রসারিত হোক, গভীর হোক, বর্ণিল হোক।   পথ বদলাতে চাই না, খাত বদলাতে চাই না, ধাত বদলাতে চাই না। ফেলে…

  • আকাশের মানচিত্র

    রেজাউদ্দিন স্টালিন   তিনি বানালেন এক কর্মস্থল তাঁর নেপথ্য ভিত্তি পাথর ও দেয়াল এবং ছাদ আর বজ্রনিরোধক   জানালার ভেতর দিয়ে দেখা দিগন্ত এবং প্রস্থানের দরোজা অব্যাপ্ত পরিধি তবু বানালেন বাগান এবং তার সুরক্ষা সুগন্ধি ছড়ানো হাস্নুহেনা পাতাবাহারের শ্রদ্ধাঞ্জলি ভালোবাসার স্মরণীয় শিশির   তিনি বানালেন আকাশের মানচিত্র রাখলেন হৃদয়ে এক টুকরো স্বদেশ এবং বেরিয়ে পড়লেন…

  • কাহিনি

    হাবীবুল্লাহ সিরাজী   গল্পটির একটি চিন্তা ধার ক’রতে চেয়েছিলাম – ফোঁটা থেকে কাল, তারপর স্পর্শ করার জাল কিন্তু মানচিত্রে অবস্থান খুঁজতেই উন্মুক্ত হ’লো অবাস্তব প্রণালি নেত্রপথে ফিরে এলো ঝুঁকিপূর্ণ অবতরণদৃশ্য…   ইতিহাসের গলার দিকে গল্পটিকে ঠেলে দিলে – হইহই ক’রে উঠলো ভূগোলের খোঁড়া পা যেন ক্ষতিপূরণ হারাচ্ছে ছায়াচল যেন বৃষ্টিহীন হ’চ্ছে স্বাস্থ্যবল যেন দণ্ডের শীর্ষে…