কবিতা
-
বিকেলের মঞ্জ
শ্যামলেন্দু চৌধুরী এক ফাঁক ছিল তাই শেষ বিকেলে ঢুকল পাখি ঘরে- ঘুলঘুলিতে বাঁধল বাসা তার গাছের বাসা ভেঙে গেছে কালবোশেখির ঝড়ে খড়কুটোতে সাজাল সংসার… বুকের ওমে তা দেয় ডিমে ফাঁকফোকরে সময় ঝরে যায়… ডিমের ভেতর জেগে ওঠা আর এক পাখি সময়কে ঠোকরায় দুই বিকেলের গায়ে জড়িয়ে রয়েছে কবিতার নামাবলি আলো ঢলে পড়ে…
-
ইশারা
মারুফুল ইসলাম সিঁড়ি ভাঙছি সিঁড়ির ভাবনায় ভাঙার পথে ডাঙার দেখা নেই জলের পথে সজল যাত্রায় ডাকাত পড়ে পলক ফেলতেই কার নদীতে চিতল পাড়ে ডিম দুপুরবেলা দুচোখে নীল ঘুম যুগান্তরে পৃথক পশ্চিম শহর জুড়ে ছন্নছাড়া ধুম বিজ্ঞাপনে কাব্য জেরবার সালংকারা ভাবে শব্দযোগ যমক-শেস্নষে খেলে পুরস্কার বানান আর ছন্দে ঘোড়ারোগ পুবের বাড়ি খোলে…
-
শুধু ভালোবাসি বলে
খালেদ হোসাইন এই যে তোমার সঙ্গে আলো আর অাঁধারের খেলা দিন হোক রাত্রি হোক, কাছে থাকো অথবা সুদূর আমরা তো ভালোবাসি, ভান করি ভালো না-বাসার তর্ক করি ঝগড়া করি হৃদয়ে বসিয়ে দিই ক্ষুর আনন্দের ভান করি – জ্বলেপুড়ে দগ্ধ হতে থাকি যোগাযোগ বন্ধ হয়, কে কীভাবে শুরু করি ভেবে মরমে মরেও যাই, তারপর…
-
বিবরণ
[কবি শ্যামলী মজুমদার, প্রীতিভাজন] মাকিদ হায়দার ছেড়ে এলাম, ফেলে এলাম, বাঁশবাগানের মাথার ওপর দুই শালিকের ঝগড়া-বিবাদ। হুতোম এবং লক্ষ্মীপেঁচার আলাপ বিলাপ। ফেলে এলাম, ছেড়ে এলাম, সরল মুখের করুণ চোখের ভেজা পাতা। যে-পাতাতে লেখা ছিল সময় পেলে বেড়িয়ে যেয়ো, দেখতে পাবে কেমন আছি মাঘ পৌষে আসো যদি। বসতে দেবো চোখের পাতায়, সেলাই ছাড়া…
-
টিকে থাকাটাই বড়ো কথা
হাবীবুল্লাহ সিরাজী টিকে থাকাটাই বড়ো কথা নদী বইতে-বইতে একসময় বালি হ’য়ে যায় অরণ্য পরিণত হয় জ্বালানিতে পাহাড় কেটে চ’লতে থাকে বসতির প্রক্রিয়া চাকা প্রস্ত্তত হ’লে সভ্যতা ঘোরে ঘুরতে-ঘুরতে সৌরম-ল অতিক্রম করে সময় প্রাণ বদল হ’তে-হ’তে মানুষে রূপান্তর ঘটলে টিকে থাকাটাই বড়ো কথা জন্ম সে তো টিকে থাকার মহোৎসব আনন্দের অভ্যন্তরে প্রান্তর গুঁজে…
-
চাবির বুকে মনের তালা
মুহম্মদ নূরুল হুদা মনের খনন দেহের ঘরে, দেহের খনন মনে; জীবন যখন আপন ঘরে আপন নির্বাসনে। নতুন ডানা পেখম মেলে নতুন ঠিকানায়, চুপসাঁতারু হাত-পাগুলো সাঁতার কেটে যায়। ঘরের ভিতর ঘরসরোবর মনময়ূরীর বাস আকাশঘরের নকশা অাঁকে অন্ধ অবিনাশ। স্নানের ঘরে জলের ধারায় মনময়লা ভাসে, পুড়তে পুড়তে উড়তে শিখি বিরহী সন্তাপে। ও ময়ূরী, মেঘ দেখেই আর…
-
সবুজসাথী বই
সেলিম মাহমুদ উড়ে-পুড়ে যায় আজাদ-দিনের ভক্তিভরা ভালোবাসা আর সংকটের গান গায় বিজন বনের গাধা! তোলা ছিল অড়হড় পাতা, নামাতে হলুদ, জন্ডিসের- টোটকায় আস্থা রাখে মূর্খ ও গোঁয়ার! আমরা চালাই কলের গানে আঙুরবালার গান পুরাতনী শুনি পূর্ণ পুণ্য মনোযোগে ফিরে পাই তেঁতুলতলার ভূত-প্রেত আর গয়না-নৌকার রহস্যজনক মাঝি! পুড়ে-দৌড়ে আসে, জিরোবার ছলে, দমকল গাড়ি লালফিতা-লালফিতা, ওহে…
-
অনেক শব্দ
সুশীল মণ্ডল অনেক শব্দ ঘোরে আনকোরা নতুন ওদেরকে বসিয়ে দিতে ইচ্ছে করে সাদা পাতার দেয়ালে কবিতার শরীর। গরিব মানুষের পেটে খাবার থাকে না যাপনে জীবনে কবিতার রেণু ঝুরঝুর করে ওড়ে ভাবি এই রেণু নিয়ে বুনি কবিতার বীজ। ক্ষয়িষ্ণু চাঁদের গায়ে জড়িয়ে থাকে নিদারুণ শব্দ বিষণ্ণ পাখির ডানায় শিশিরের গুঁড়ো সমুদ্রের তরঙ্গে বিছিয়ে দেয়…
-
মা
শারদুল সজল চাঁদের বারান্দায় এ কার লাশ! কার বিরহে ভেসে গেছে গোলাপ-গন্ধের ইতিহাস আলফা সেনচুরির নিকটবর্তী হয়ে কষ্টগুলো আমাদের ঘরে বড় হয়েছে, মাও আহ্লাদি ওগুলো যত্ন করে করে রোয়া চৌকাঠে একের পর এক সাজিয়ে রেখেছে আর বাবা নিরুদ্দেশ ভোরের বাজার থেকে প্রতিদিন ব্যাগভর্তি অন্ধকার কিনে বাড়ি পাঠাতেন মা যতই একটুকরো হাসি রান্না…
-
নাতাশার বারান্দা
রনক জামান নাতাশার বারান্দা চিনে ফিরে যাচ্ছে বিকেলের রোদ। কিন্তু সে-নাতাশাই কিনা, তা তো বলতে পারি না, বা অন্য যে-কোনো নামে কেউ থাকে কি থাকে না ও-ফ্ল্যাটে, তাও জানা হয়নি। কেবল ওই বারান্দাটাকে খুব একা লাগছিল, যেনবা এই বিকেলস্য রোদ ফিরে যাবার আগেই নাতাশানাম্নী কারো বারান্দায় আসা দরকার। অথচ এরকম ছোট ছোট ট্র্যাজেডি,…
-
দুটি কবিতা
মুস্তাফিজ রহমান এক তীর্থে গেলে সাথে নিও আমায়, রেখে এসো কোনো এক নদীর কিনারে, শাপলার ডগা মেপে মেপে সন্ধ্যায় ফিরব কোথাও। রাতভর আঁধারে বিলাস করে ঝিঁঝিঁ পোকার গল্প শুনতে চাই, পূর্ণ চাঁদের ছলনায় নাই বা গেলাম! বুনো ঘাস যদি কিছু বলে, কান পেতে থাকি, এমন কিছু, তেমনি গোপন, বলেছিলে তুমি হয়তো কোনো একদিন,…
-
আস্তাবল
দেবাশিষ মহন্ত কাউকে না বলতে পারি না। শব্দে, চলাফেরায় সৎ থাকি নিজের কাছে। কার্তিকের জ্যোৎস্নায় অন্য ঘোড়া। ঠোক্কর মারছে ক্ষুরে ক্ষুরে। ফুসলিয়ে নিয়ে যাচ্ছে আমাকে আস্তাবলের দিকে। নতুন সওয়ারি। ভাবছে ‘কিছুই দেখেনি খোয়ার…।’ আস্তাবলের চিঁহি। টিউশনে টেনে দিচ্ছে ইন্টারভ্যাল। মাঝেমধ্যে আমার পথ না আগলে একটা নতুন বনভূমি খুঁজে নিলে… যেখানে কবিতা, রোদ্দুর আর…