কবিতা
-
গড়াগড়ি
আব্দুলস্নাহ মারুফ ঝিঁঝি পোকার গর্তে কান পেতে শুয়ে রয়েছি ছাবিবশ বছর ভেড়াখালীর গভীর তলদেশে বয়ে চলা নদীটার কলধ্বনি শুনব বলে, এখনো যে-নদী আবিষ্কার করা হলো না! মাটি ছেড়ে উঠেছি বলে মনে পড়ে না মাঝে মাঝে পাশ ফিরে মাটিকে বুকে জাপটে ধরি গড়াগড়ি খাই অন্য একটা গর্ত পর্যন্ত! এখানে প্রেমের কোনো স্থান নেই বেদরকারি ভালোবাসা…
-
অসমাপ্ত কবিতা
সোহরাব পাশা মৃত্যু এক অসমাপ্ত শিল্প স্বপ্নশূন্য ফেরারি জীবন আলোর শেকড় ছেঁড়া দীর্ঘ অন্ধকারে মার্ক্সের বণ্টনসূচি চশমায় ঘনীভূত মেঘ, দাপাদাপি কুয়াশার খোয়া যায় কারো শেষ পাড়ানির কড়ি, মেঘলা দুপুর কাঁপে শঙ্কিত আলোকে নীলকণ্ঠ পাখি তিন সন্ধের পরেও ফেরে না, দূর অনন্তে ওড়ে; নিরপেক্ষ অন্য পক্ষে শুদ্ধ পক্ষপাত দুঃখেরা জন্মান্ধ চিরকাল আর্তনাদে ব্যবহৃত…
-
আমাদের পথ
মেহেদী ইকবাল আমাদের সামনে এখন গোলকধাঁধা আমরা এখন এসে দাঁড়িয়েছি অনেকগুলো পথের সম্মুখে! সবগুলো পথের মুখে এখন আলোর ফোয়ারা, অজস্র বিপণিবিতান উপচেপড়া দ্রাক্ষারস আর আগ্রাসী মাংসের তুফান! কোন সে পথ, যে পথ আমাদের নিয়ে যাবে গন্তব্যে? আমরা বারবার হারিয়ে পথের দিশা হেঁটে চলি ভুল পথে। অথচ বালির ঢেউ মাড়িয়ে নির্ভুল ছুটে চলে উটের কারাভান…
-
প্রবাহ
শ্যামশ্রী রায় কর্মকার তোমার শিরালী হাত আমার হাতের পাশে রেখে একবার দেখে নিতে পার, উৎস থেকে অন্ত ঘোরে সেইসব অবিরত স্রোত তারা সব একাকার, সমান তাপিত আর লাল। যেসব আধার আজ ছিন্নভিন্ন হয়ে পড়ে আছে তাদের প্রবাহ কিছু ভিন্নতর নয়, মাটি হয়ে আছে সব পলি হয়ে আছে, পুরনো স্রোতেরা এসে নতুন বীজের গান গায়…
-
জল
তমিজ উদ্দীন লোদী জল যাচ্ছিল গড়িয়ে জলের মতন তুমি তাকে কাপে তুলে নিলে তুলে নিলে স্বচ্ছ-কাচ জারে জল এখন কাপের মতন জল এখন জারের মতন জল, আহা ফোঁটা ফোঁটা বৃষ্টির মতন জমাট বরফ কাদা, মেঘের ধরন কখনো স্রোতস্বিনী কখনো খরস্রোতা বান ডাকা বজ্রের গর্জন। কখনো সে বোতলজাত করপোরেট আকারবিহীন তবু অসংখ্য…
-
বারে বারে ফিরে ফিরে
রবিউল হুসাইন বাঁকে বাঁকে খালে বিলে ছোট ছোট জলে ঢেউ কেন খেলা করে কেন ওঠে নামে কেন তারা হাতে হাতে ধরে সব কিছু নিয়ে যায় দূরে যেতে যেতে শুধু তারা দূরে যেতে থাকে যেতে যেতে পিছু ফিরে …
-
শেফালির দিন আজ
সৈকত রহমান শেফালির দিন আজ ভিজে যায় বিধুর বৃষ্টিতে, মন খারাপের মরা আলোয় বার্তা আসে মুঠোফোনে, হ্যালো। দীর্ঘ স্মৃতির ছায়া ফেলা দিন প্রিয়-মুঠি বাড়িয়েছে আকাশের কোন রোদ্দুর খুলে দাঁড়িয়েছে দূরে। তুমি আছো বোঝা যায়, ভাবনা এক সরোবর, কণ্ঠের সহজ স্বরে জাগ্রত। সবকিছু ফুরিয়ে এলেও মিথ্যে ভানে দেখিনি তো কিছু, আমাদের যর্থার্থতা নির্ণয়ে, সময় কিংবা…
-
বনবাস
মোহাম্মদ সাদিক তোমার দিকে তাকিয়েছিলাম তুমিও ছিলে একা এ ব্রহ্মা–র কোথাও হয়তো কাব্য হয়নি লেখা মহাশূন্যের মধ্যে তুমি একটি তারার মতো অন্ধকার এই সৌরসভায় আলোর বিন্দু যত সবাই দেখে তোমার চোখে একটি প্রদীপ জ্বলে এই পৃথিবীর সব কবিতা তোমার কথাই বলে সেই কথাটি শুনবো বলে অনেক রাত্রি জেগে দুঃখ সুখের প্রাচীন…
-
চিঠি
সায়ন বসু মৃণাল, তোমার মনে পড়ে? সেদিন বিকেলের শেষ আলোয় নৌকার ওপর আমরা দুজন, গাছেদের সবুজ ছায়া পড়েছে দিঘির জলে মাঠ-ঘাট-বন-বাদাড় পেরিয়ে ছুটছি আমাদের কোনো গন্তব্য নেই দলছুট দুই প্রাণ আমরা। সুদূরে কোন জেলে ছিপ ফেলে বসে ছিল তোমার মনে আছে মৃণাল?? তারপর কত মাছ উঠল ওই ছিপে। ওরাও আমাদেরই মতো…
-
অন্ধকার থেকে লেখা…
শৌনক দত্ত মনে হয় নিশ্চয়ই একদিন নিরুপায় শব্দরা ব্যাকুলতায় অনুবাদ করে নেবে রুপালি মস্নান যুদ্ধশেষে ঘরে ফেরা চোখের মতো সোনালি সকাল ফিরবে মনে হয় একদিন চিন্তিত সিগারেট খসে পড়বে ভাবনাহীন প্রত্যয়ে সেইদিন সে দিন নিসর্গের ঘ্রাণ বুকে তুমি এসো প্রাকৃতিক সব হৃদয়ে বৃষ্টির মতো প্রিয়…
-
ওহে, তোমরা
রফিক উল ইসলাম কারবালার প্রান্তর থেকে যে-বাতাস ছুটে আসে লোকালয়ের দিকে, তার অন্তরে পিপাসার আত্মা লেগে থাকে। সেই পিপাসায় আমি তো সামান্য বারি, আমাকে খুন করতে পারো, এমন ছুরি তোমাদের হাতে নেই! আমাকে শুষে নিতে পারো এমন আলিঙ্গনও নেই তোমাদের! ওহে, তোমরা, পুরো আকাশ তোমাদের চোখে বসিয়ে নেওয়ার আগে, আমার জন্যেও দু-এক ফালি…
-
ভাবুক
সরকার মাসুদ ব্রিজের রেলিং ধরে দাঁড়িয়ে আছে লোকটা; তার চোখ কালোসবুজ তুলির মোটা রেখায় আঁকা ঘন গ্রামের দিকে লোকটা শেষ বিকেলের বাতাস খাচ্ছে তার আঙুল পুড়ছে বেগুনি আগুনে! সে-সময় দিগন্তের পাখি উড়ে চলে যেদিকে সূর্যাস্ত! রেলিং থেকে নিচে ঝুঁকে তাকালে পানির যৌবন শব্দ করে চলে যায়! ব্রিজ পেরিয়ে যাবার সময় লোকজন তাকে দ্যাখে…