কবিতা

  • আমি কার কাছে

    রহিমা আখতার কল্পনা   আমি কার কাছে আগুন শিখতে যাবো! আমার আগুনে ঝাঁপ দিয়ে খোলা চোখে পুড়ে পুড়ে নিভে গেছে লেলিহান অনেক দোজখ।   আমি কার কাছে শিখি বলো অনন্ত শূন্যতা! অনিত্য আমিই নৈরামণি চলিষ্ণু চর্যায় আমার শূন্যতা থেকে জন্ম ঘটে অযুত প্রাণের।   কার কাছ থেকে আমি পাঠ নেবো ঘাট-আঘাটার! আমিই তো পদপিষ্ট মায়াকাড়াঘাট-…

  • হাটসভা

    সুজন হাজারী হাঁটু গেড়ে বসেছি জয়েসের হাটসভায় নিমগ্ন পাঠ শেষে গল্পের প্লট খুঁজি তাঁতঘরে মাকু টানি শিল্পকারখানায় স্টিফেন ডিডেলাস তুলিতে আঁকে একজন ফরাসি নতজানু প্রার্থনায় ঈশ্বর নেমে আসে পাশে শ্রমিকেরা প্রিয় স্বদেশ ছেড়ে পাড়ি দেয় অজানা অভিবাসে পাপের দরজা পেরিয়ে গির্জা ত্যাগ করে মহান যিশু অনুশোচনায় বেথেলহামে পুনঃপ্রবেশ করে মাতা মরিয়ম সৃষ্টির যাতনায় সূর্যের আগুনে…

  • সময়-চিহ্ন

    আলোময় বিশ্বাস ১ সভ্য মানচিত্রের ছায়ায় এক অভিনব পাঠশালা, পাঠদান চলে ছেলেমেয়ে উল্লাসে সেই পীঠে সমবেত হয়। শিক্ষকেরা গেরুয়া ভিক্কুর মতো শান্ত সমাহিত বোধি, দুর্বোধ উচ্চারণে যা কিছু ঢালে জাদুবিদ্যা উঠে আসে তাতে, নিশ্বাসে জ্ঞান প্রশ্বাসে হিতোপদেশ এই যে পৃথিবী আর তাবৎ ব্রহ্মা- ওরা শুধু ঘুরে ঘূর্ণনই অনাদি সুখলতা ইতিহাস এইসব শুনে শুনে, বিদ্যার ঝাঁকি…

  • ছায়ালোক-৩৫

    সৌভিক রেজা   কিছু হওয়া না-হওয়ার কথা ভাবি। সবকিছুতেই একটা দায়সারাভাব লেগে থাকে, যেন অন্ধকারে অচেনা মলিন কোনো বারান্দা। মাঝে মাঝে যারা ফোন করেন, তাদের সঙ্গে কথা বলতেও ক্যামন যেন ক্লান্তি। অচেনা কোনো গলিতে, কোনো অচেনা নদীর মাঝখানে, ভাঙা লাল রাস্তায় নিয়ে যেতে পারে যারা তারা এখন কোথায়, কোথায় তাদের আবাস-নিবাস? যার কাছে যাই সে-ই…

  • সাদাই তো ছিল

    মাহমুদ কামাল   সাদাই তো ছিল রঙের প্রলেপ দিয়ে সৌন্দর্য বৃদ্ধির যে তুলির আঁচড়ে প্রস্ফুটিত হলো প্রকৃতপক্ষে তা কালিমা লেপন। এরকম চিত্রগুলো বিচিত্র হয়ে হেসে ওঠে যেন ক্রূর হাসি… সাদাই তো ভালো ছিল ভুল ব্যবহারে রঙেরও অর্থ বদলে যায় লাল-নীল-সাদা-কালো বদলে যেতে যেতে অবশেষে পড়ে থাকে ‘ছেঁড়া টুকরো মেঘ…’

  • একজন হাবীবুল্লাহ সিরাজী

    হাবীবুল্লাহ সিরাজী     কে শুয়ে আছে পদ্মপাতায়? কে ভাসে কচ্ছপের নাকে? কে নেয় ঘুমন্ত ডিমের মধ্যে আশ্বিনের চাঁদের হিসেব? বড়ো ভয় ছিল যদি মেঘ খোঁজ পায় ব্যাঙের ছাতার মতো সন্ধ্যাতারাটি তবে তাকে পুঁতে দেবে অন্ধ গোশালায়।   ম’রে গেলে বোঝা যাবে তাকে।   জল স’রে গেলে ধরা দায় এইখানে জলাশয় ছিল, আগুন নিভে গেলে…

  • কৃষ্ণকলির অন্য জীবন  একটি পদ্যগল্প

    কৃষ্ণকলির অন্য জীবন একটি পদ্যগল্প

    ধীরপায়ে সে এগিয়ে আসে ‘কেমন আছো এখন প্রিয়?

  • পটুয়া

    রণজিৎ অধিকারী   ওদিকে ও কার ঘর আলো জ্বালা! আরো ঘর, তারপরও ঘর যেদিকে তাকাই অজস্র ঘর গাঁথা।   পটুয়া এঁকেছে বেশ কত বড়ো পটে অত অত বিন্দু ধরে রাখা।   পটুয়া কি জানে টের? কে জানে এই পট কোথা থেকে আনা!   আমি বেশ মনে মনে পটুয়াকে ধরি সে হাসে – পাগল কিছুই জানে…

  • ছন্দ পরীক্ষা

    টোকন ঠাকুর   গরম তেলের কড়াই থেকে উড়াল দিল হাফ-ভাজা এক মাছ আমারও তো জিজ্ঞাসা ছিল, কেন উন্মাদিনী নাচে মৃত্যুর নাচ!   উন্মাদিনী নাচে বলে উন্মাদেরা বাঁচে এইখানেই তো কবিতা শেষ মাছ উঠে যায় গাছে   এসব খবর একাডেমিতে আছে?   নাচে নাচে নাচে উন্মাদিনী নাচে   শ্বাসের আঘাত কেমন লাগে, ব্যাকুল বুকের কাছে!

  • ওরা চলে যায়!

    বিদ্যুৎ দেব   শাসিত হয়নি জাতি কোন কালে? অথবা, লাল চোখা ভাইয়ের ইশারা! লুটেরা নিয়ে গেল কোন দেশিরা? ইতিহাসের ফুলগুলো কালো অথবা বিদঘুটে! মৌর্য-শশাঙ্ক-সেন-পাল-ইংরেজ দিলেন কি নিয়ে গেলেন কি? ইতিহাসের বই পড়ে নেবো শুনে মুরুবিবরা থুথু ছিটান ইয়হিয়ার নামে ওরা বর্বর রক্তখেকো বিড়াল মুক্তিকামী বাঘের কামড়ে চলে যায়!

  • হারিকেন ১১

    সুহিতা সুলতানা   জগতের সব আলো নিভে গেলে শুধু তোমার চোখের আলোয় জেগে উঠবে সবুজ দিগন্ত! এরকম বিশ্বাস নিয়ে সুপ্রভাতে তিনি ঘর ছেড়ে বেরিয়ে পড়েছিলেন বিমুক্ত হাওয়ায়। তবে কি সে ছিল নিঃসঙ্গ, উদ্বাস্ত্ত? বস্ত্তত অনেকেই যখন তাকে নপুংসক ভাবতে ভাবতে দিশেহারা অবস্থা তখন বিভীষিকাময় বার্ধক্য তাকে আতসবাজির শহরে নিয়ে এলো আবার বধ্যভূমির অভিশাপ তার পিছু…

  • দুলে ওঠে উল্টো নদী

    হারিসুল হক   যদি আজ রাত জাগি কটা চাঁদ টোকা দেবে আমার কবাটে? কটা নদী খুঁজে পাবে উৎস-প্রপাত তার নিজ বনে! কটা পাখি উড়ে যাবে মেঘের ছায়ায় নিগূঢ় মায়ায়! মেঘল ছায়ার মতো স্মৃতির প্রদীপ জ্বলে নেভে সে কোন প্রচ্ছন্ন দ্বীপে? জলার সীমানা ঘেঁষে অপসৃত সেইসব চরণধ্বনি যেন ফের ফিরে আসে চৈতন্যের বিহবল রথে কেশর দুলিয়ে।…