সৌভিক রেজা
কিছু হওয়া না-হওয়ার কথা ভাবি। সবকিছুতেই একটা
দায়সারাভাব লেগে থাকে, যেন অন্ধকারে অচেনা
মলিন কোনো বারান্দা। মাঝে মাঝে যারা ফোন করেন, তাদের সঙ্গে
কথা বলতেও ক্যামন যেন ক্লান্তি। অচেনা কোনো
গলিতে, কোনো অচেনা নদীর মাঝখানে, ভাঙা লাল
রাস্তায় নিয়ে যেতে পারে যারা
তারা এখন কোথায়, কোথায় তাদের আবাস-নিবাস? যার কাছে যাই
সে-ই তো দেখি গরঠিকানা ড্রয়ারজীবন
গোলাম কিবরিয়া পিনু
আমি এক ড্রয়ারে ছিলাম
এখন অন্য বাড়ির ড্রয়ারে এলাম
পুরনো আলমারি থেকে নতুন আলমারিতে!
নতুন আলমারি চকচকে
সৌষ্ঠব আলাদা –
সুনির্মিত – আয়তন বড়
বেশকটি পাল্লা – ড্রয়ার অনেক
বার্নিশ ও রং ভালো;
একদিন এক ড্রয়ারে তো অন্যদিন অন্য ড্রয়ারে
কখন যে কোন ড্রয়ারে থাকবো
তা তো আগে থেকে জানা যায় না –
গহনাগাটির সাথে ঢুকে যাই
জামাকাপড়ের সাথে ঢুকে যাই
ভ্যানিটি ব্যাগের সাথে ঢুকে যাই
পয়সাপাতির সাথে ঢুকে যাই
শ্যাম্পেনের সাথে ঢুকে যাই
এখানে এসেও স্বস্তি-স্ফূর্তি কই?
রৌদ্রস্নান নেই –
তন্দ্রা আসে – গাঢ় ঘুম আসে না আমার!
বিষমও লাগে – ক্লান্তি চলে আসে
অবসন্ন লাগে –
একটি সবুজ পাতা মুহূর্তে বিবর্ণ হয়ে যায়
বুকে কফ জমে –
মনে হয় বেদনার গিরিমাটি পাথর হয়েছে!
ড্রয়ারও নদী হয়ে যায়
তবে, সে-নদীর জলে পড়ে
বড় মাছের ঝাপটা খাই!
ড্রয়ারও খাঁচা হয়ে যায় – পোষাপাখি হয়ে উঠি
ড্রয়ারও জেলখানা হয়ে ওঠে – মনে হয় কারাদ- নিয়ে
অতিকষ্টে জেলজীবনধারণ করি!
যখন ড্রয়ার থেকে বের হই –
গর্দানে লাগে
থুতনিতে লাগে
মস্তকে লাগে!
বের হওয়ার পরও সরষে ও তিল হয়ে যাই
পিষে পিষে আমা হতে তেল বের করা হয়!
ভয় করলেও –
শক্ত হতে হয় – ধৈর্য ধরতে হয়
হতবুদ্ধি হওয়া চলবে না –
মা শিখিয়ে দিয়েছে!
কণ্ঠস্বর নিচু করি!
মুখে কুলুপ এঁটে কুলরক্ষা করি!
যতক্ষণ আমি খইয়ের মতো পুরোপুরি ফুটি না
ততক্ষণ খোলায় ভাজা হতে থাকি!
গগনবিহারী কবে হবো?
ড্রয়ারজীবনে –
কাঁটা বেঁধার অনুভূতিব্যঞ্জক শব্দ
আমারই মূলশব্দ হয়!
সম্মান ও মর্যাদার জন্য ঢিলেঢালা
পোশাকও পরেছি কতক
তবু তো মুক্ত হয়ে খেয়া পার হতে পারিনি!
মাঝে মাঝে ফাঁক গলিয়ে বের হতে গিয়ে
লবণপানিতে আরো দ্রবীভূত হয়ে যাই!
অনুকম্পা ছাড়া
ড্রয়ারেও জায়গা হয় না –
পিপাসাকুল হয়ে জল স্পর্শ করতে পারি না!
আমার জন্যই –
কোনো খোলা জায়গা নেই – সেখানে গজিয়ে উঠবে ঘাস
ঘাসের সবুজ ছেয়ে ফেলবে মনের উঠোন!
আমারই চেরাই করানো বুক শুধু সেলাই হয় না –
শুধুই রক্ত ঝরে – শুধুই রক্ত ঝরে!
ভেঙে পড়ে প্রতিবিম্বের মমি
শামসুল আরেফিন
নিদেনপক্ষে আমার জমিনটা হতে পারতো
ঘনকুয়াশার কুহেলিকা মোড়া একটুকরো আলকাতরার
নিঃশঙ্ক অবয়ব
তুমি যতোই গিলে খাও উদ্গিরণ করো প্রোটিন
মোটেও প্রকট হবে না পারের খেয়া
হাঁটুজলে কেউ কি কোনোদিন ডুবতে দেখেছে সোনার তরী
সাদা আর শূন্যতার ওপর যে কেউ
এতো অবজ্ঞা ছুড়ে দাও যেন
গহিন অরণ্যে দাঁড়িয়ে থাকা ন্যাড়ে মাথার
এক সনাতন বটবৃক্ষ ধূসর প্রকৃতি
আকাশের সীমানা যেদিন থেকে অধিগ্রহণ হয়ে গেলো
বারুদ ও বড় গলা পতিতার কলাকৌশলে
তখন খয়েরি ডানার চিল
বাজখাই ঈগল উড়ে গেলো শ্যেন দৃষ্টি খুলে
পত্র-পলস্নবের শোকে মুহ্যমান উদ্ভিদের উদারতা আমার সাকিন
জীবিত তোমার সাড়ে তিন ইঞ্চি ভূমিমূলে
লুটোপুটিমগ্ন একচোখা বেজি ও বিষধর সাপ
সর্পের সহজাত বশীকরণের মন্ত্রে
একটিবারের মতো কেঁপে উঠল না মায়াবী শালুক
ইভের দ্বিতীয় সত্তা
রাজ-রাজন্য আর আমার খোয়াব
শামুকের বাড়িতেই আজ হয়েছে অতিথি
Leave a Reply
You must be logged in to post a comment.