ছোট গল্প
-
সুখস্বপ্নের দিন
চন্দন আনোয়ার ভরা বসমেত্মর দুপুরের ঘুমে স্বসিত্মকর কিছু স্বপ্ন দেখে জেগে উঠে অথবা স্বপ্নঘোর শেষ না হতেই কোমর ভাঁজ করে উঠে বসতে-বসতে প্রফেসর হোসেন সিদ্ধান্ত নিলেন, এখনি বেরিয়ে পড়বেন। বাথরুমে এক মিনিট, জামা-প্যান্টে এক মিনিট, ৩০ সেকেন্ডে অ্যাপেক্সের ফিতাওয়ালা স্যান্ডেলে দুই পা ঢুকিয়ে আড়াই মিনিটের নিশ্বাসরুদ্ধ ব্যস্ততা শেষে প্রায় লাফিয়ে বাসা থেকে বের হয়ে…
-
লজ্জিত ঘাস
শাহ্নাজ মুন্নী হেমমেত্মর মধ্যরাত। মৃদুমন্দ ঠান্ডা হাওয়া বইছে। রংপুর শহরের সব মানুষ সারাদিনের কাজকর্ম সেরে গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন। রাস্তাঘাটে সুনসান নীরবতা। রংপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের হিমঘরের সামনে এসে থামল একটা অ্যাম্বুলেন্স আর চারটা সরকারি গাড়ি। গাড়িবহরের সামনের সাদা জিপ থেকে দ্রুত নেমে এলেন রংপুরের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট প্রিয়সিন্ধু তালুকদার। অন্য গাড়িগুলোর একটিতে পুলিশের দুজন…
-
তিমিরের তীরে
মনি হায়দার আপনারা আসমান আলীকে চিনতে পারবেন না। না, আসমান আলী কোনো আশ্চর্য প্রদীপ পায়নি। কিংবা হয়নি কোনো মন্ত্রী-টন্ত্রী। মানুষ হিসেবে ঠিকই আছে। রক্ত, মাংস, কাম, ক্রোধ-রিপু মিলিয়ে আগের মতোই আসমান আলী আছে আসমান আলীর মতোই। প্রশ্ন হচ্ছে – কী এমন ঘটনা বা দুর্ঘটনা ঘটল যে আমরা, পরিচিতজনেরা আজ আসমান আলীকে চিনতে পারছি না?…
-
হরবোলার হৃদয়বৃত্তান্ত
রফিকুর রশীদ শুরুটা ছিল তার পাতার বাঁশি দিয়ে। আমি তো খুব কাছে থেকে দেখেছি তাকে, বলতে গেলে তার সব পরিবর্তনই ঘটেছে আমার চোখের সামনে, ফলে তাকে অবিশ্বাস করার মতো কিছুই খুঁজে পাইনি আমি। সেই ছোটবেলা থেকে বাঁশি বাজাতে দেখেছি। স্রেফ পাতার বাঁশি। গাছের পাতা জড়িয়ে ভাঁজ করে বিশেষ কৌশলে হাতের মুঠোয় পুরে গাল ফুলিয়ে ফুঁ…
-
অনন্তকে যে পেয়েছিল আর যে পায়নি
হুমায়ূন মালিক মুখটি তার আর দোলনচাঁপার মতো গৌর চিকন নেই – একদা রবিঠাকুর থেকে যে-উপমাটি ধার করে আমি তাকে চিঠিতে লিখি, তা তখন তার জন্য যথার্থই ছিল; কিন্তু পঁচিশ বছর পর ও এখন এক গোলাপে প্রস্ফুটিত – গোলাপি আভায় অভিজাত। আগে মুখটি তার ছিল একটুখানি ওভাল শেপে, এখন তা গোল, ভরাট। তাকে দেখে ধারণা…
-
ছেলেটা আসলে মরতোই
মহীবুল আজিজ মরস না ক্যান তুই! তুই মরলে আমার হাড়টা জুড়াইতো। তুই মরলে তোর দাদার কবরের পাশে তোরে খাদায়া আইসা আমি দুই রাকাত নফল নামাজ পড়তাম। আকাশে-বাতাসে ছোট-বড় ঢেউ তুলে যেতে-যেতে আমেনার এই কথার টুকরো-টাকরা এ-বাড়ি ও-বাড়ি হয়ে বাড়ির পেছনের এজমালি পুকুরটার ওপর দিয়ে বিলের দিকে চলে যায়। তখন প্রখর রোদের বিলে অন্যের ক্ষেতে কামলা-খাটা…
-
অন্তর্লীন
প্রশান্ত মৃধা দশার মন্ত্রের পরে ছেলে এই ঘরে এলো। মু–ত মস্তক, এভাবে শরৎচন্দ্রের কোনো একটা চরিত্রের বর্ণনা দিয়েছিলেন স্কুলের প–ত মশাই। এখন তার ছেলের তাই, মাথা কামানো, ন্যাড়া। মায়ের স্মৃতির উদ্দেশে কেশ বিসর্জন। অশৌচ পালনের এই শেষ দিন। পাপ্পু অবশ্য পুলকেশের সামনে এসে দাঁড়ায়নি। নিজের কোনো প্রয়োজনে এসেছে। ফরসা গায়ে আটহাতি খাটো ধুতি-পরা ছেলেকে…
-
স্মৃতি
আহমাদ মোস্তফা কামাল মা নেই, মায়ের স্পর্শ যেন লেগে আছে এখনো, এই ঘরে। মুনীর ঘুরে-ঘুরে দ্যাখে – যে-চেয়ারে মা বসতেন, যে-বিছানায় ঘুমাতেন, সেগুলোতে আলতো করে হাত বুলায়, যেন মাকেই ছুঁয়ে-ছুঁয়ে দেখছে সে, এভাবে। মায়ের তসবি, জায়নামাজ, পানের বাটা, রুমাল, তোয়ালে সব রয়ে গেছে তেমনই, যেমনভাবে তিনি রেখে গিয়েছিলেন। দেখে মনে হয়, মা গেছেন পাশের ঘরে,…
-
উড়ন্ত গিরিবাজের ইন্দ্রজাল
পাপড়ি রহমান ও ই শহরে বিকেল নামে মন্থর গতিতে। ধীরস্থির ও মনোরম ভঙ্গিতে। শহরের তিনদিকেই পাহাড়ের সারি। ফলে রোদ্দুর হঠাৎ করে নিষ্প্রভ হয়ে উঠতে পারে না বা জলস্রোতের ভেতর নিরুদ্দেশে যেতে পারে না। গনগনে মধ্যদুপুর হয়ে তাকে ওইসব পাহাড়ের চূড়ায় ঝুলে থাকতে হয়। আর ভাপ-তাপের বিকিরণে ব্যতিব্যস্ত থাকতে হয়। পাহাড়ের শক্ত মাটিতে উত্তাপ ঢুকে পড়লে…
-
স্বপ্নের সারস ওড়ে সুবর্ণপুরাণে
পারভেজ হোসেন দুনিয়া ঘুরে এসে সুবর্ণগ্রামের মাটিতে প্রথমবারের মতো পা রাখলেন ভিন্ন দুটি সংস্কৃতি থেকে আসা দুই পর্যটক ইবনে আল আসাদ আর ফ্রান্সিস নাহিয়ান। একজন মরক্কোর মুসলমান, অন্যজন পর্তুগিজ খ্রিষ্টান হলেও বসবাস মালাক্কায়। জাহাজেই পরস্পরের পরিচয়। জাহাজেই তাদের বন্ধুত্ব। একুশ দিন একটানা জলে কাটিয়ে ডাঙায় নামতেই বিস্ময়ে ভরে উঠেছে তাদের চোখ, ঐশ্বর্যময় বন্দরের অপরূপ সৌন্দর্যে…
-
তোমার চরিত্র খারাপ
আন্দালিব রাশদী আমার মেয়ে নাতাশা ঠিক এই কথাটাই বলেছে। কাঁদতে-কাঁদতে বলেছে, বাবা তোমার চরিত্র খারাপ। স্বামীর চরিত্র নিয়ে স্ত্রী হাজার কথা বলতেই পারে; স্ত্রীরা বলেও থাকে। যা বলে তার পুরোটা না হোক আংশিক তো সত্য। কিন্তু তাই বলে মেয়ে বাবার চরিত্র নিয়ে প্রশ্ন তুলবে? নাতাশা যখন এই কথাটা বলে, তখন আমার সামনে নীতু, বিপাশা,…
-
আলীবাবার বাসায় দুই চোর
মঈনুল আহসান সাবের বাসের জন্য অপেক্ষা করতে-করতে আজিজুর রহমান একসময় বাসের কথা ভুলে গেল। অফিস ছুটির পর তার যথারীতি ক্লান্ত লাগছিল, প্রতিদিন যেমন ভাবে – অফিস থেকে বেরোবে আর বস বা এলাকার কোনো মাস্তান কষে একটা লাথি কষাবে পেছনে, সে বাড়ি পৌঁছে যাবে – এমনও ভেবেছিল একবার। তারপর, এটাও নিয়মমাফিক, সে হাঁটতে-হাঁটতে এসে দাঁড়িয়েছিল বাসস্টপেজে,…