ছোট গল্প

  • আমাদের বাসায় কয়েক ঘণ্টা পানির কল বন্ধ আছে

    মাহবুব তালুকদার  ভোরবেলা মাওলানা ফজলে খোদা অজু করতে গিয়ে কল ছেড়ে দেখলেন এক ফোঁটাও পানি আসছে না। মাঝেমধ্যে এমন হয়। রাতে যে-গার্ড সিকিউরিটির দায়িত্ব পালন করে, শেষরাতে মেশিন ছেড়ে ওপরের ট্যাংকে তারই পানি তোলার কথা। নিশ্চয়ই সে ওই সময়ে ঘুমিয়েছিল এবং পরে পানির মেশিন ছাড়তে ভুলে গেছে। মেজাজ বিগড়ে গেলেও নিজেকে একটু শান্ত রাখার চেষ্টা…

  • দুনিয়াদারি

    হামীম কামরুল হক কোনোমতেই রেহাই মিলছিল না। নতুন কোনো রোগ হলো নাকি? গরমকাল চলে গেছে সেই কবে। তারপরও এক সপ্তাহ ধরে অস্বাভাবিকভাবে সে ঘামছিল। দিনরাত্রি। অবিরাম। গ্লাসের পর গ্লাস পানি খেয়েছে। সে-মতো প্রস্রাব কিন্তু হয়নি। সারা শরীরে অদ্ভুত জ্বলুনি আর ঘাম। ভাগ্যিস এ কয়েকটা দিন সায়েকা আর ছেলেমেয়েরা বাড়ি ছিল না। দোহার গেছে। নানাবাড়িতে শীতের…

  • হারমোনিয়াম

    নলিনী বেরা  আমাদের গ্রামে এখন এক-আধটা নয়, ফোন আছে চল্লিশ-পঞ্চাশটা। তাও আবার যে সে ফোন তো নয়, রীতিমতো ‘সেলফোন’। অর্থৎাৎ মোবাইল ফোন। বিদ্যুৎ নেই, তাই ল্যান্ড-ফোনের প্রশ্নও নেই। অন্ধকার সান্ধ্যরজনীতে ঝোপে-ঝাড়ে এখন যত না জোনাকির আলো জ্বলে তার চাইতে সেলফোনের আলোই জ্বলে বেশি। মানুষ যত না ঘরের লোকের সঙ্গে কথা বলে, কানে মোবাইল চেপে তার…

  • নাদানের দান

    মালেকা পারভীন ছেলেপক্ষ দেখে যাওয়ার সময় কাজরির হাতে পাঁচশো টাকার দুইটা নোট গুঁজে দিয়ে গেলো। ছেলের বড়বোন টাকাটা দেওয়ার সময় নির্লিপ্তভাবে বললো, ছোট বোনদের নিয়ে খরচ করো। এটাই নাকি নিয়ম। মেয়ে দেখলে টাকা দিতে হয়। যদিও টাকাটা নিতে কাজরির মোটেও ভালো লাগেনি। যেমন ভালো লাগেনি এভাবে সেজেগুজে অপরিচিত কিছু লোকের সামনে বোকার মতো ঘণ্টাখানেক বসে…

  • গোপন

    নাসিমা আনিস রসুনের খোসা বাতাসে ওড়ে, উড়তে-উড়তে রান্নাঘর ছাড়িয়ে ডাইনিং পেরিয়ে বেডরুম পর্যন্ত পৌঁছে গেলে গিন্নি ভাবে, এতটা পথ অতিক্রম করে খোসা এলো কী করে! আশ্চর্য, বাতাস নাই, ফ্যান নাই, পায়ে-পায়ে! বইটা বন্ধ করে রান্নাঘরে গিয়ে দ্যাখে, ঠিক যা ভেবেছিল তাই। দুলির মা একটা ছড়ানো থালার ওপর খোসাসহ শুকনো রসুন কুচিয়ে রাখছে। কুচানো রসুনের খোসা…

  • বেনিফিট অব ডাউট

    মাসউদুল হক কোনো পূর্বপরিকল্পনা ছাড়াই আনিসকে খুন করে ফেললাম আমরা। আমরা মানে, আমি আর কাসেদ। বিপুল ছিল তখন টয়লেটে। হুড়োহুড়ির শব্দ শুনে সে যখন টয়লেট থেকে বের হয়ে এলো, তখন বিস্ময়ভরা চোখে ছাদের দিকে চেয়ে আছে আনিস। তার মুখ যন্ত্রণামাখা। সামান্য বের হয়ে আসা জিভটা দাঁত দিয়ে কামড়ে ধরা। আজরাইল যখন তার জানটা নিয়ে যাচ্ছিল,…

  • সোনায় সোহাগা কাহিনি

    জিয়া হাশান ইন্দেরহাটের লঞ্চ জেটি। তারে ঘিরে নাও-ট্রলারের মৌচাক। তাতে মাঝি-মাল্লারা গলা ফোলায় – ‘ওই কালামইল্যা! তোগো নাওয়ের হোগা সোজা হর। পুটকির মইদ্যে গলোই হান্দাইছো ক্যান…’ ‘ল্যাওড়া চোষা হউরের পো! কামারকাডির চোদন এহানে দ্যাহাবি না। পারার রশি খুইল্যা দ্যাখ, এ্যাক বারিতে মাথা দুই ভাগ কইরা ফালামু…’ তবে সব হাঁকাহাঁকি রে মাটিচাপা দেয় হালের মাঝির গালে…

  • অ্যান্টিপ্যার্টাম সাইকোসিস

    আবু হেনা মোস্তফা এনাম পৃথিবী ওকে ডাকছে – তখন গুঁড়ো-গুঁড়ো কাচের ধুলো সুগন্ধিত এবং তেতে গরম, রৌদ্রোজ্জ্বলময় গ্রীষ্মিত দিনগুলোর স্মৃতি আনন্দের অনুষঙ্গ বয়ে এনেছিল। শিয়ালমুখো লম্বা ফাইলগুলো ঘাঁটতেই একরাশ ধুলো স্বাগত জানাল, আর পুরনো কাগজের ম্রিয়মাণ ক্লোরিন থেকে একটি রুপালি কয়েন টুপ করে টেবিলের নিচে আঁধার হয়ে গেলে বিস্ময় ও হাসি পায়। ততক্ষণে কম্পিউটারের মনিটরে…

  • চুঁই ঝাল

    বদরুন নাহার আমি আর আমার সহকর্মী জামাল ঢাকা থেকে পেশাগত কারণেই দক্ষিণবঙ্গে যাওয়া আর পথে যেতে-যেতে বহুদিন পর আমার আকবরের কথা মনে হলো, যিনি বাদশা নন, তবু আগে তার কাছ থেকে আমরা সবসময় স্বর্ণময় অতীতের গল্প আশা করতাম। কারণ আমরা ভাবতাম গল্প আসে হতাশা অথবা স্বর্ণময় অতীত থেকে। কিন্তু  তিনি বলতেন না, তাঁর দাদার হাতে…

  • মুখপানে চেয়ে দেখি

    মাহবুব রেজা ঘরের মধ্যে একটা না আলো, না আঁধার। কোত্থেকে একটা ম্লান আঁধার ম্লান আলো ঘরে ঢুকে ঘরটাকে অন্যরকমের করে তোলে। ঘরের মাঝখানে দাঁড়িয়ে মোতালেব আবিষ্কার করে, এই না আলো, না অাঁধারির মধ্যেও ঘরের মেঝেটা বেশ ঝকঝকে। মোতালেব টের পায়, ঘরের মেঝে থেকে একটা ঠান্ডা স্রোত তার পায়ের তলা বেয়ে সবকিছু ঠেলেঠুলে বুকের কাছটায় চলে…

  • দেহ ও দেহাতীত

    হুমায়ূন মালিক ড্রইংরুমে বসে ও বোঝে শোভনা অদ্ভুত এক রাফ ভঙ্গিতে ওয়্যারড্রব খুলছে – তা খোলার শব্দে তার দিকে তাচ্ছিল্য ছুড়ে মর্দানি ফলাচ্ছে। মাহিনকে স্কুলে পাঠিয়েই সে বেরিয়ে যাওয়ার এমন এক প্রস্ত্ততি খেলায় মাতে। এখন ও তার পার্মিশন নেওয়া দূরে গায়ে-গতরে কামত্রুুদ্ধ হুলোবিড়ালের ভঙ্গি নিয়ে তারই সামনে দিয়ে বেরোবে। ঠিক আছে, একটা মেয়ে, তা একটু…

  • খসড়াজীবন

    ইমতিয়ার শামীম পুকুরের পাড়ে সজনে গাছওয়ালা দালানের পাশে টিনশেডের ঘরটায় সাজেদা যখন মেঝের ওপর বিছানা পাততে থাকে, একটা রিকশা তখন টুংটাং বেল বাজিয়ে নর্থ রোডের দিক থেকে এসে ছুটতে ছুটতে চলে যায় হাতিরপুলের দিকে। পুরানা খবরের কাগজ মাপতে মাপতে বেলের শব্দে কান তুললেও চিপা দোকানটার মধ্যে থেকে লোকটার আর চোখে পড়ে না সে রিকশার পেছনে…