উপন্যাস

  • ঈদসংখ্যা

    ঈদসংখ্যা

    নতুন কিছু চান বস। সম্পাদকের টেবিলে বসে তাগড়া গোঁফে তা দিতে দিতে একটাই কথা তাঁর, ‘ভাবুন মিস কবীর। নতুন অ্যাপ্রোচ আনুন। টাকা কোনো ব্যাপার নয়। আমরা এবারের ঈদসংখ্যাটি দিয়ে আলোড়ন তুলতে চাই এদেশে।’ মুখে অনর্গল ‘জি স্যার। জি স্যার’ করে অনীতা কবীর খসখস করে রাইটিং প্যাডে লিখে নেন, নতুন কিছু। এর ওপর অবিরাম কলম ঘষতে…

  • ধূসর নীল ভোরের নৌকো

    ধূসর নীল ভোরের নৌকো

    বাজার থেকে বাড়ি ফিরে ললিত শুনল, আবার একটা ঢেউ আসছে। কণিকার খবর। বাড়ি বসেই খবর পায় কণিকা। ইউটিউব, ইন্টারনেটের ওয়েব পোর্টাল, ফেসবুক, হোয়াটসঅ্যাপ তার খবরের উৎস। তা ব্যতীত টেলিফোন তো আছেই। বিকেলে খবরের কাগজ খুঁটিয়ে পড়ে কণিকা। ঢেউয়ের পরে ঢেউ আসছে। প্রথম ঢেউয়ে বেসামাল হয়েছে সারাবিশ্ব। তা কমতির দিকে এখন। মানুষজন ভাবছে, মহামারি বিদায় নিচ্ছে।…

  • প্রকৃতির রংছবি

    প্রকৃতির রংছবি

    দলবেঁধে কোথাও যাওয়া আনন্দের উৎসব। একা একা ঘুরে বেড়ানো উৎসব হয় না। তখন বিচ্ছিন্ন জীবনের আর্তনাদ ধ্বনিত হয় বুকের ভেতর। ভালো লাগার আনন্দ নষ্ট হয়। সামনে দিয়ে হেঁটে যাওয়া বুনোপাখিও আনন্দের জোয়ারে ভাসায় না। সেজন্য আশিকা কোথাও একা যাওয়ার প্রোগ্রাম মেনে নেয় না। গাছের নিচে চুপ করে বসে থাকলে বুকের ভেতরটা জমাট হয়ে যায়। পাথরের…

  • শিউলির বাবার শূন্যে উদ্যান

    শিউলির বাবার শূন্যে উদ্যান

    এক ঢাকা শহরটা জেগে ওঠার আগেভাগে সূর্য এর স্বপ্নিল আভা উপরমুখী উঠে যাওয়া ইটপাটকেলের জবুথবু অথচ দাপুটে দালানকোঠার ওপরকার ঝুলন্ত আস্তরণের বাধাবিপত্তি এড়িয়ে সন্তর্পণে, অনেকটা যেন সস্নেহ পরশ বুলিয়ে এসে পড়তে থাকে, জমতে থাকে ধানম–র চিলতে লেকের পশ্চিম পাড়ের জবরদখল করা বেঢপ পস্নটে মাথা তুলে দাঁড়ানো বিল্ডিংয়ের চতুর্থতলার ঝুলবারান্দার শিউলির বাবার সযত্নে লালিত মাটির টবের…

  • শেষ বিকেলের আলো

    শেষ বিকেলের আলো

    অশোককুমার মুখোপাধ্যায় ওই যে, নীল শার্ট কালো ট্রাউজার। ছ-ফুট দু-ইঞ্চি, চওড়া ছাতি – পঁয়তাল্লিশ ইঞ্চি নিশ্চয়। জিমে পাকানো শরীর। পরিষ্কার দাড়ি-গোঁফ কামানো। গাল নীলাভ, পঁচিশ-ছাবিবশ। প্রিন্স রহিমুদ্দিন লেন থেকে বেরিয়ে দুপাশ ভালো করে দেখে, লেফট-রাইট করে রাস্তা পেরিয়ে, তিনটি ঝুরি নামানো বটগাছের তলায়। পাঁচ মিনিট চুপচাপ দাঁড়িয়ে, টালিগঞ্জ থানার সামনে ফুটপাথে বসা জুতো পালিশওয়ালার দিকে…

  • একজন হেরে যাওয়া ডাক্তার

    একজন হেরে যাওয়া ডাক্তার

    এই গল্পটা জীবককে শোনাতে হবে। ঢোঁড়া সাপ কী করে বিষহীন হয়ে গেল। ঢোঁড়া সাপের একসময় খুব বিষ ছিল। বিষের কারণে ও অহংকারী হয়ে উঠেছিল। মনসা ঠাকুরাণকে ও তেমন পাত্তা দিচ্ছিল না। মনসা ভাবলেন – দাঁড়া, মজা দেখাচ্ছি। ঢোঁড়া ছিল খুব লোভী। সেটা মনসা ঠাকুরাণী জানতেন। একদিন এক পুকুরপাড়ে ঢোঁড়া সাপ শুয়ে আছে। একটা ব্যাঙ ঝম্প…

  • বাবর আজমের উপন্যাস

    বাবর আজমের উপন্যাস

    মঈনুল আহসান সাবের গুলির ঘটনাটা প্রথমেই থাকতে পারত। পরিবেশ একদম স্বাভাবিক থাকত, সাধারণত যা থাকে। এর মধ্যে হঠাৎ গুলি। গুলি হবে, একজন পড়ে যাবে, যাওয়ার আগে গুলির কারণ জানবেও না, তারপর কাহিনি বলি বা ঘটনা, এগোবে। এগোতে এগোতে কিংবা কখনো পেছতে পেছতে কোথায় কতদূর যাবে, এ-কথা পরের। কাহিনি যে প্রায় গুছিয়ে এনেছিল বাবর আজম, এমনও…

  • ও নাইটিঙ্গেল

    বিনায়ক বন্দ্যোপাধ্যায় বত্রিশ ইঞ্চি স্ক্রিনে সিনেমার শেষটা চলছিল। জায়গাটা লেবানন, প্যালেস্টাইন, সিরিয়া, মিসর বা পূর্ব ইউরোপের যে-কোনো শহর হতে পারে। গুলি চলছে চারধারে আর তার ভেতর দিয়ে একটা লোক ছুটে চলেছে; লোকটার কোলে নিজের মৃত স্ত্রী। লোকটার সারাশরীরে রক্ত আর মুখ দেখে বোঝা যাচ্ছে, মনে একটা উথালপাতাল চলছে। রাস্তার কেউ কিছু বলে উঠল আর সঙ্গে…

  • আদমসওদা

    স্বকৃত নোমান জোয়ারে ন আইলি রে পুত ভাডায় ন আইলি কন হাঙরে কন কুমীরে মোর পুতরে খাইলি ॥ চারশো বছর আগে সিতারা বানুর দেখা স্বপ্নের প্রায় কাছাকাছি একটা স্বপ্ন দেখেছিল কুমারী নূরনিসা, তার এক শিশুপুত্র তার কোল থেকে ধনেশ পাখি হয়ে আকাশে উড়ে গেছে। ছেলেটা ডানা মেলে উড়ছে, নূরনিসা বুক চাপড়ে ‘হায় হায়’ করতে করতে…

  • বাল্যকাল

    অ তী ন  ব ন্দ্যো পা ধ্যা য় এই বুড়ো বয়সে আর প্রাক-যৌবনের কথা আমার ঠিকঠাক মনে নেই। সম্ভবত আমি সবে বহরমপুর থেকে কলকাতায় জীবিকার খোঁজে চলে এসেছি। তখন তরুণ এক যুবক। এখানে-সেখানে ঘোরাঘুরি – আত্মীয়স্বজনের বাসায় উঠি। থাকি খাই। আমার সমুদ্র মানুষ বইটি তখন মিত্রালয় থেকে প্রকাশিত হয়েছে। প্রকাশক গৌরিশঙ্কর ভট্টাচার্য সস্নেহে বইটি প্রকাশ…

  • সবচেয়ে সুন্দর করুণ

    আ হ মা দ  মো স্ত ফা  কা মা ল এই অবেলায় হঠাৎ ঝড়-বৃষ্টিতে এলোমেলো হয়ে গেল সবকিছু। এটা বৃষ্টির ঋতু নয়, যে-কোনো সময় ঝমঝমিয়ে বৃষ্টি নামার কথাও নয়, ঝড় তো দূরের কথা। বৃষ্টির দিনে প্রস্ত্ততি থাকে সবারই, এখন কারোরই নেই। এটুকু পথ আসতে-আসতে তাই ভিজে একাকার হয়ে গেল সুমন। বৃষ্টিবাদলের দিনে রিকশায় যেমন পলিথিনের…

  • সুখবাস

    জ্যো তি প্র কা শ  দ ত্ত সব ভোরে পাখি ডাকে না চলে আসার সময় বারবার তাকিয়ে পেছনের দৃশ্যাবলি হৃদয়ে তুলে নিতে হয়। যেন কখনো ঝাপসা হয়ে না যায়। প্রিয়জনের সাশ্রম্নবিদায়, বন্ধুর শেষ আলিঙ্গন, পরিচিতজনের মুখে শুভেচ্ছার স্মিত হাসি, সব মনে আছে। মাত্র কটি বছর দেখতে-দেখতে কেটে যাবে চিরকালের এই সান্তবনা মনে প্রবল না-হলে মূল…