February

মারুফুল ইসলাম   দুপুরের বিষণ্ণ নূপুর থেমে গেলে নিজের গভীরে ডুব দিয়ে ছুঁয়ে আসি পাতালের সিক্ত মাটি   ধরিত্রীর যোনির দেয়ালে জমে থাকে শ্যাওলার বিস্তার অলস দিবস কাটে, অলস রাত্রিও পাখা মেলে উড়ে যায় দূরের আভাসে   ভেজা অন্ধকারের শরীর থেকে মৃতের দুর্গন্ধ পাই   তবু কোথাও কেউ এখনো কারুর নামে জ্বেলে রাখে নিষ্কম্প প্রদীপ…

কামাল চৌধুরী   পরবাস   রাত্রিই আরাধনার শ্রেষ্ঠ সময় বলো, কবিতাকে বলো   শীত রাত্রি আমি ঘুমিয়ে পড়িনি। বসন্ত আমি জেগে আছি হে গ্রীষ্ম হে অসহ্য উত্তাপ তোমার ঘামের গন্ধে আমার কবিতা   ফিরে আসছে প্রতিদিনকার পরবাস থেকে   এসো দিগন্ত, এসো কবিতা   আঙুরের নেশায় ভুলে যাওয়া জীবন এবার জাগো   পরবাস থেকে ফিরে…

অরুণাভ সরকার   প্রজাপতি মাথা কোটে জানালার কাচে প্রজাপতি স্বচ্ছতা জানে না স্বচ্ছতা জানে না বলে মাথা কোটে ভাবে, ওই তো রয়েছে তার কাঙ্ক্ষিত আকাশ এক্ষুনি সে উড়ে চলে যাবে। আকাশ আকাশে থাকে জানালায় থাকে স্বচ্ছ কাচ প্রজাপতি মাথা কোটে স্বচ্ছতায়, কাচে প্রজাপতি স্বচ্ছতা জানে না বলে মাথা কোটে। প্রজাপতি মাথা কোটে জানালার কাচে।

মুহম্মদ নূরুল হুদা জন্ম যদি প্রাকৃতিক, মৃত্যু কেন প্রাকৃতিক নয়? মানুষ মূলত যোদ্ধা, মানুষের নেই পরাজয়।   প্রকৃতির মুখোমুখি চিরকাল অতিপ্রাকৃতিক হন্তারক জীবেদের দন্তনখ অতিদানবিক ক্ষুধার দোহাই তুলে যত্রতত্র হাড়মাংস খায় ত্রিভুবনে অন্যসব প্রাণী-অপ্রাণীর; না, তাদের তো নেই কোনো দায় আকাশপাতাল জুড়ে সৃষ্টিসাম্য অটুট রাখার; ক্ষমতার ক্ষুধা-মুখে এ-ব্রহ্মা ­- তাদের আহার।   নিরীশ্বর নয় তারা,…

ফারুক আলমগীর   তোমাদের যাত্রা শুভ হোক প্রতিদিন প্রতিক্ষণ হেমন্তে বসন্তে শীতে কী বর্ষার জলে থইথই রৌদ্রকরোজ্জ্বল শরৎ কী গ্রীষ্মের নিদাঘ দুপুরে তোমরা রচনা করো দৃঢ়-প্রতিরোধ প্রতিটি ঋতুতে   তোমরাই আমাদের স্বপ্নে সুপ্তিতে সতত তোমরাই আমাদের মৃত্তিকার আকাশে বাতাস তোমরাই আমাদের চন্দ্র-সূর্য নক্ষত্রের আলো তোমরাই আমাদের সপ্তর্ষিমন্ডল ধ্রুবতারা তোমরাই আমাদের দিবানিশির দিকদর্শন তোমরাই আমাদের ভালোবাসার…

উৎপলকুমার বসু ভুলে যাই নিজের ঠিকানা। ছোট একটা বাড়ি ছিল। কিছু দূরে নীলকুঠি। গুটিকয় তালগাছ আর কিছু লতাপাতা জড়িয়ে আমার স্থাপত্যের সামান্য ঘোষণা। ছিল হাঁস। বাল্যের পাঠ্যবই থেকে নেমে আসা উট ও বিদেশি গাধার দলে আমি একা ক্রীতদাস –   আপাতত স্থলপদ্মের বনে ঘুমিয়ে রয়েছ।

আনিসুল হক হিমেল আশরাফ এসএমএস করেছে। স্যার, আমি আপনার রুমে। আমি সম্পাদক সাহেবের সামনে বসে আছি। আমাদের অফিসের তিন তলায়। জরুরি মিটিং হচ্ছে। এর মধ্যে এই এসএমএস। আমি মোবাইল ফোনটা টেবিলের নিচে নামিয়ে সবার অগোচরে এসএমএস করি : ১০টা মিনিট বসো। আসতেছি। তারপর বেমালুম ভুলে যাই হিমেলের কথা। মিটিং থেকে বেরোই দেড় ঘণ্টা পরে। রুমে…

অমর মিত্র স্ট্রেইট আইল্যান্ড থেকে লোকটা একটি পানসি করে আর কয়েকজন গ্রেট আন্দামানি কিংবা জারোয়া উপজাতির সঙ্গে কি এই লঞ্চে এসে উঠেছিল? লঞ্চ উপজাতিদের সেই দ্বীপে নোঙর করেনি। অনেক দূরে সমুদ্রের ভিতরে দাঁড়িয়েছিল। প্রশাসন বিলুপ্তপ্রায় ওই জনজাতির কাছে আমাদের নিয়ে যেতে চায় না। স্ট্রেইট আইল্যান্ড থেকে মানুষ তুলে এবং ওখানে মানুষ পাঠিয়ে দিয়ে যাত্রা করতেই…

মঈনুল আহসান সাবের মৃণ্ময়ী খুব অবাক হয়ে গেল যখন সাহান বলল রতন আদনানকে সে চেনে। সাহান অবশ্য নিজেও অবাক, সে বলল – গড, আমার এতো সময় কেন লাগল! সে বলল – মৃ, তুমি এক কাজ করো, তুমি চাকরিটা ছেড়ে দাও। রতন আদনান সাহানের সম্পর্কের মামা শহীদ রেজা টুকলুর বন্ধু। সাহান লোকটাকে দেখেছেও বারদুই। হয়তো কথাও…

কার্তিক লাহিড়ী অনীশ শুরুই করতে পারছে না কোনো লেখা, মাথায় গিসগিস করছে একগাদা প্লট, বিষয়, চরিত্র, ঘটনা, কাকে ধরে কাকে ছাড়বে, একটাকে ধরতে গেলে আরেকটা টপকে চলে আসে সামনে, সেটাকে কব্জা করতে গেলে আরেকটা, অনীশ নাজেহাল হয়ে যাচ্ছে, তাকে তো লিখতে হবে অন্তত দু-তিনটে, কিন্তু করবে কী? এই যদি অবস্থা হয় তখন হাল দেওয়া ছাড়া…

পূর্বলেখ ও টীকা : ভূঁইয়া ইকবাল বিশ শতকের তিরিশোত্তর আধুনিক বাংলা কবিতার অন্যতম প্রধান কবি অমিয় চক্রবর্তী (১৯০১-৮৬) ও পঞ্চাশের দশকের দুরন্ত দুপুরের কবি নরেশ গুহর (১৯২৩-২০০৯) মধ্যে পত্রালাপের সূচনা ১৯৪২-এ। তাঁকে লেখা অমিয় চক্রবর্তীর চিঠি সম্পর্কে নরেশ গুহ নিজেই জানিয়েছেন, ‘‘১৯৪২ থেকে শুরু করে ১৯৮৬ সালে তাঁর প্রয়াণকাল পর্যন্ত কবি অমিয় চক্রবর্তী আমাকে দুই…

আবুল আহসান চৌধুরী কাজী নজরুল ইসলাম (১৮৯৯-১৯৭৬) মেজাজে-মননে ছিলেন উদার-আন্তরিক-মজলিশি চেতনার সক্রিয় সামাজিক মানুষ। তাঁর ব্যক্তিত্বের সম্মোহনে সাহিত্য-সংস্কৃতি-সংগীত-রাজনীতি ও অন্যান্য পেশার মানুষের সঙ্গে তাঁর অন্তরঙ্গ সম্পর্ক রচিত হয়। সহজেই মানুষকে আপন করে নেওয়ার এক সহজাত প্রবৃত্তি ও অসামান্য ক্ষমতা ছিল নজরুলের। তাঁর ভক্ত-অনুরাগী-সুহৃদ-শুভার্থীর সংখ্যা ছিল অগণন। এই নজরুল-মন্ডলীর সঙ্গে যেমন নজরুলের জ্যেষ্ঠ ও সমবয়সীরা যুক্ত…