2012

  • শব্দ-হরিণ

    কিন্নর রায় অন্ধচোখে জল, বালি, আকাশ – কোনো কিছুকেই আলাদা করে বোঝা যায় না। অথচ স্পর্শে জল অথবা বালি – সবটাই আলাদা করে বুঝে নিতে অসুবিধা হয় না দৃষ্টিহীনের। এমনকি যদি বৃষ্টিও নামে, সেই আকাশজল ছুঁতে-ছুঁতে কী এক অলীক শিহর, মাথায়, গায়ে, ঠোঁটে – সর্বত্র জলেরই ছিটে। স্বাদ। বর্ধমান থেকে গো-গাড়িতে বীরভূম আসতে গেলে অজয়…

  • অর্ধেক জীবন : দাঙ্গা, দেশভাগ ও অন্যান্য প্রসঙ্গ

    গোলাম কিবরিয়া ভূঁইয়া আধুনিক বাংলা সাহিত্যের অন্যতম প্রধান লেখক সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়। তাঁর লেখা ইতিহাসাশ্রয়ী উপন্যাসসমূহে রয়েছে দেশভাগের করুণ গাথা। পূর্ব-পশ্চিম এবং  সেই সময় নানা কারণে যথেষ্ট আদৃত ও আলোচিত। তাঁর স্মৃতিকথামূলক লেখা অর্ধেক জীবন যথেষ্ট মূল্যবান এবং নিপুণ গদ্যের উল্লেখযোগ্য রচনা। ১৯৪৭-পূর্ববর্তী সমাজজীবন এবং এর পরবর্তী সময়ে তাঁর যাপিত জীবন উপজীব্য করে লেখা হয়েছে অর্ধেক…

  • জায়গিরদার ও তার কুকুর পান্নালাল প্যাটেল

    অনুবাদ : আন্দালিব রাশদী ইংল্যান্ড থেকে ফেরার পর জায়গিরদার এই প্রথম আমাদের গ্রামে আসছেন। সবাই তার আগমনের প্রতীক্ষায়। গায়ের তালাতি (হিসাবরক্ষক) সপ্তাহ ধরে দুধের ভাণ্ড ঠিক রাখছে। কে জানে, কখন বাপুজির অভ্যুদয় ঘটবে। চারপেয়ে চৌকি এবং কাঁথা স্তূপ করা হয়েছে। মুখির (গ্রামের মাতবর) ওপর হুকুম জারি হয়েছে এসময় তার গ্রাম ছেড়ে যাওয়া চলবে না। মুচি,…

  • কবিতার মায়াবী জংশন

    শিউল মনজুর মৃত্তিকার ছাইভস্ম কামাল আজাদ উৎস প্রকাশন ঢাকা, ২০১২ ৭০০ টাকা কবিতা বহুদূরের পথ। বহুদূরের পথ পাড়ি দিয়েই তবে একজন কবিকে পৌঁছতে হয় কবিতার জংশনে। যে-জংশনের স্বর্ণালি পতাকা কবিকে হাতছানি দিয়ে ডাকে, প্রলুব্ধ করে, স্বপ্ন দেখায়। এই জংশন অলৌকিক এক মায়াবী জংশন। এই আরাধ্য জংশনে সব কবিই পৌঁছতে চান। অথবা বলা যায়, সব কবিই…

  • নারীর লেখা নারীর কথা

    দীপা বন্দ্যোপাধ্যায় মেয়েরা গল্প লিখছেন শুনে উনিশ শতকের প্রায় আশি শতাংশ পুরুষের মনোভাব ছিল ‘আরশোলার পাখি হওয়ার ইচ্ছে হয়েছে।’ বঙ্কিমচন্দ্রের উপন্যাস নায়িকাপ্রধান, তাঁর নায়িকারা আত্মশক্তি এবং গরিমায় নায়কদের ছাপিয়ে গেছে। তারপরও বঙ্কিমচন্দ্রের কমলাকান্ত বলেছিলেন ‘নারিকেলের মালা বড় কাজে লাগে না, স্ত্রীলোকের বিদ্যাও বড় নয়।’ বাংলার প্রথম আত্মকথার লেখিকা রাসসুন্দরী দেবী স্বামীর ঘোড়াকে দেখে ঘোমটা দিতেন…

  • কূজন

    পিয়াস মজিদ মেঘ ও রৌদ্রের গ্রন্থিমূলে বয়ে যায় কত কবরদ্যোতনা। সে হাওয়ার কূলেই তো যাবতীয় কৃষ্ণ জাগরী, স্বপ্নের দ্গি¦লয়। এমন ঈমনকল্যাণ-বসন্তভৈরবী! তবু রাত্রি দুপুরের রাগ ওই তো আমার অনন্ত নিদ্রাবেদিতে। কাননে কাননে জলকরবীর ঢেউ; পুষ্পবহ্নি বেজে ওঠে কারো সুবাসিত করতলে। বন্দরে ভিড়ল রক্তমুখী চাঁদনী।

  • বোট স্টেশন ফায়ার স্টেশন

    জলধি হালদার এই জলপ্রান্তরের গোধূলিসন্ধিতে দুরকম ঘণ্টি বাজে একটি লাগাতার, একটি সেভেন শর্ট ওয়ান লং। ঘণ্টি বেজে উঠলেই জাহাজের আনিতে স্পষ্ট রবিনসন ক্রুশো। বুকে লাইফ জ্যাকেট বেঁধে দৌড় দৌড়। বোটের প্ল্যাগ এঁটে, ল্যাসিং খুলে স্টার্নসিট, বোম্যানেরা তৈরি হারবার পিন সরিয়ে বকের গলার মতো ডেভিট ঝুঁকে পড়ে জলের দিকে। আনিতে গোঁফদাড়িওলা ঝাঁকড়াচুলো ক্রুশো আপন মনে হাসছে।…

  • প্রিয়ভাষিণীর টিয়ে

    মারুফ রায়হান একটা নিষ্পত্র গাছে বসেছিল কি মিষ্টি টিয়েটি উজাড় বৃক্ষের দেশে কবিমন সবুজরহিত বীজ বন্ধ্যা হলে বুঝি মৃত্যুথাবা, বিস্তৃত বিপন্ন সুগন্ধে ভরুক মৃতপুষ্প – চেয়েছিল বৃক্ষসখা বাতাস বিনষ্ট হলে, বিষ মিশ্লে স্নেহার্দ্র মাটিতে মুছে যাবে উদ্ভিদের সুপ্রকাশ – জন্মইতিহাস মেঘে মেঘে ডানা মেলা পাখির ঠিকানা দৃঢ় ডাল বাঁচে যদি প্রাজ্ঞ গাছ, সুরও জাগে টিয়ের…

  • স্বপ্নের সূর্যটা যেন মুক্ত হয়

    নাসির আহমেদ স্বপ্ন সমাহিত! সব শেষ? বাঁশঝাড়ে জ্বলছে শোকার্ত জোনাকিরা। স্তব্ধতার অন্ধকারে ঝিঁঝিরাও নীরবতার শয্যায় ক্লান্ত মেঘের ভারে নুয়ে পড়েছে আকাশ। হয়তো কান্নার প্রস্ত্ততি নিচ্ছে। দুঃখের সমুদ্র ফুলে উঠছে আমার বুকের মধ্যে। অথচ তোমার জন্য, হ্যাঁ স্বপ্ন, শুধু তোমার আমন্ত্রণেই আসা এতটা কণ্টকাকীর্ণ পথ। তোমার দ্যুতিতে ঝলসে উঠেছিল সমস্ত পরিপাশ^র্, তীব্র স্বপ্নের উপমা যদি বাঁধভাঙা…

  • পরদেশি

    পিনাকী ঠাকুর পেটে লাথি মারল তবু বলতে হবে, ‘দোয়া করো পির’! শহর-বাজারে ঘুরছি পরদেশি ব্যর্থ মুসাফির। কামান, নাগরিভাষা, সেনাবাহিনীর কুচকাওয়াজ, তাপ্পি মারা আলখাল্লা, এই দেহে ফকিরের সাজ মনে আজ বেঁধে রাখছি করুণ সংলাপ, জারিগান ‘কল্যাণের দিকে এসো’ – মুয়াজ্জিন দিচ্ছেন আজান এই দিল্ মরুস্বর্গ, কারবালায় আজও ঝরছে খুন আশরফি ছুড়ে দিলে আমাকেই, জুলেখা খাতুন?

  • দেখা

    আশিস সান্যাল দেখা হলো পুনর্বার বরাকের পাশে তখন নদীর জলে ছড়ায়েছে গোধূলি রোদ্দুর ঘরে ফেরা পাখিদের শোনা যায় চারদিকে নিবিড় কূজন। বললাম মৃদু হেসে : আবার এখানে তুমি? তার চেয়ে ভালো এই বেঁচে থাকা পৃথিবীর দুই দিকে আমরা দুজন। শীর্ণা হীরার মতো হাত তার মুখে তার অপরূপ উদ্ভাসিত রোদের প্লাবন, চোখে তার স্বচ্ছ আভা যেন…

  • কেন যে তোমার সঙ্গে

    হায়াৎ সাইফ কেন যে তোমার সঙ্গে দেখা হলো এমন অনুর্বর দিনে বৃষ্টির মৌসুম চলে গেছে বহুদিন শুষ্ক বাতাসে চামড়াও ফেটে যায় রক্ত ঝরে সর্বত্র শরীরে, কেন যে তোমার সঙ্গে দেখা হলো এমন বেমক্কা দিনে চারদিকে যখন মন্বন্তরের মতন সমূহ রণন খেলা করে, তবু কেন প্রতিটি অঙ্গে তোমার অরণ্যের মাদকতা, সবুজের চিকন আভাস লাবণ্যের দৃপ্তি ঝরে…