2014

  • পাথরের প্রাণভোমরা

    মোবাশ্বির আলম মজুমদার হাতের তালুতে দেখ অসংখ্য পাথর, ওসব পাথর নয় – মানুষের চোখ। – হোসাইন কবির প্রস্তরযুগে পাথরের ব্যবহার আদিম জনগোষ্ঠীর জীবনযাত্রায় জড়িত ছিল। পাথরে পাথরে ঘষে আগুন জ্বালানোর কথা আমাদের জানা। মানুষের অস্তিত্বের সঙ্গে সেই প্রস্তরযুগ থেকে পাথর জড়িয়ে আছে। প্রাণহীন এ-জড়বস্ত্ত মাইকেলেঞ্জেলো, পিকাসো, রামকিংকর, হামিদুর রহমান, নভেরা, আবদুর রাজ্জাক, নিতুন কুন্ডু, সৈয়দ…

  • বিমূর্ত অবগাহনে নিসর্গরূপ

    জাহিদ মুস্তাফা ছবি আঁকার তাড়না একজন সৃজনশিল্পীকে এগিয়ে নেয়, সৃজনকর্মপ্রয়াসে উদ্বুদ্ধ করে তাঁকে। সেই সৃজনের পেছনে যদি থাকে মুহূর্তের সহজ-সাবলীল ভালোলাগা আর উতল আবেগ তাহলে সৃজন হয় সুললিত, সুন্দর। শিল্পী সৈয়দ হাসান মাহমুদের চিত্রকলায় সেই সহজ-প্রাণবন্ত আবেগের সাংগীতিক মূর্ছনা দর্শককে আলোড়িত ও স্পন্দিত করে। আমাদের দেখা কাছের-দূরের নিসর্গ, গাছের সারি, কুয়াশাধূসর ভোরের শিশিরভেজা ঘাস, জানালার…

  • আমেরিকা পর্ব

    সৈয়দ জাহাঙ্গীর ১৯৫৫ সালে ঢাকার চারুকলা ইনস্টিটিউট থেকে পাশ করে সবে বেরিয়েছি। ব্রিটিশ কাউন্সিলের ডিরেক্টর জিওফ্রে হেডলি এবং ইউএসআইএস লাইব্রেরির ডিরেক্টর গেইলর্ড হফ্টাইজার – এ দুজন আমাকে বেশ সহযোগিতা করেছিলেন সে-সময়। জিওফ্রে হেডলি ছিলেন আমার ছবির বিশেষ ভক্ত। আমার ছবি তিনি কিনেছিলেন এবং অন্যদের কাছে আমার ছবি বিক্রি করাতেও তিনি সচেষ্ট থাকতেন। ওই সময় তিনি…

  • স্মৃতি গড়ার আয়োজন

    জিয়া হাশান অফিস থেকে ফেরার পথে অফারটা আলমের ঘাড়ে সওয়ার হয়। বাসায় এসে তাই সরাসরি বউয়ের কোলে মাথাটা নামায় – ‘চলো দুজনে নেপাল ঘুরে আসি। এক সপ্তাহের ট্যুর।’ রুবি স্বামীর মুখের দিকে তাকায়। না, ঠাট্টা-তামাশার কোনো শানে-নজুল তাতে লেখা নেই। হাসি-মশকরার সূচনাবাক্যও নয়। বরং সিরিয়াসনেসের দৃঢ় পায়ে ঠাঁই। সুদৃঢ় ভঙ্গিতে দাঁড়ানো আলমের মুখ-চোখজুড়ে। সঙ্গে স্বাদ-আহ্লাদ…

  • জলরঙে নবমাত্রা

    মাহমুদ আল জামান বেঙ্গল গ্যালারি অব্ ফাইন আর্টসে গত ২৬ সেপ্টেম্বর থেকে ১৮ অক্টোবর, ২০১৪ পর্যন্ত ক্যালকাটা গ্রুপের অন্যতম সদস্য গোপাল ঘোষের চিত্রকর্মের প্রদর্শনী অনুষ্ঠিত হয়ে গেল। তিরিশ থেকে আশির দশকের মধ্যে তাঁর অঙ্কিত প্রধানত জলরং ও মিশ্রমাধ্যমের কাজ ছিল এ-প্রদর্শনীতে। গোপাল ঘোষ চল্লিশের দশকে অবয়বনির্ভর সমাজবাস্তবতা সৃজনে উৎকর্ষের ছাপ রেখেছিলেন। তাঁকে বিশিষ্ট করে তুলেছিল…

  • সোয়াজিল্যান্ডে ভ্রমণ হাউস অন ফায়ার

    মঈনুস সুলতান আমার আজ কোনোকিছু করার কোনো তাড়া নেই, তাই অনেকটা সময় নিয়ে ধীরেসুস্থে হাউস অন ফায়ারের দেয়ালটি দেখি। এর কেল্লার মতো করে স্থানীয় স্থপতি ও কলাকারদের হাতে গড়ার কায়দা দেখে ওয়ালটিকে বরং প্রাচীর বলাই সংগত। তার গায়ে নতশির হয়ে কতগুলো মূর্তি গভীর চিন্তায় মগ্ন। অর্ধভগ্ন হয়ে কয়েকটি প্রতিমা খামোকা ছড়িয়ে আছে আঙিনায় স্রেফ ভাস্করের…

  • এপিটাফ অথবা চুক্তিপত্র

    চাণক্য বাড়ৈ হয়তো এভাবে একদিন অনূদিত হবে শতাব্দীর নীরবতা – মৌনতা নামে তোমাদের ভাষাবিজ্ঞানে যুক্ত হলো নতুন অধ্যায় – আমি ওই শ্যাওলা-সবুজ সমাধিতে ঘুমিয়ে গেলে তোমরা উদ্ধার করো তারাদের স্বরলিপি। আর আমার এপিটাফে জুড়ে দিয়ো একটি নমিত সুর – যার নিমজ্জন পাহাড়ে – নির্জনতার নিটোল নিস্তব্ধতায়। যে-জীবন পেরিয়ে এলাম, শৈশব কৈশোর যৌবন বার্ধক্য এসব বাহারি…

  • স্মৃতি, স্মৃতি, শুধুই স্মৃতি

    সাঈদা কামাল   ফের ভুল করি – স্নান করি চাঁদের রুপোলি জলে উন্মাতাল বসন্তের রাতে ভুলের বাঁধনে জড়াই – অলীক ভালোবাসার অদৃশ্য ফাঁস পরাই অসম্ভবের পায়ে।   দিন যায় – চোখের জলের মতো, ভেঙে ভেঙে অনির্দিষ্ট তার যাওয়া।   চোখ ফিরিয়ে থাকি ভুলে থাকি ভোরের সোনালি রোদ্দুর মায়াময় বিকেল, ভরা চাঁদ ছায়া ফেলে হলুদ পদ্মের…

  • উত্তরের পথ

    সুজন হাজারী   আগুন আছে বাহে, বিড়িটা হামার ধরাও। ট্যাঁকে গোঁজা দেশলাই ঠুকে বিড়ির মুখে আগুন দিয়ে ধুমছে মারে সুখটান। নিকোটিন তৃষ্ণায় ভিজে সুহৃদের মন-স্বজনপ্রীতিতে প্যারালাল বন্ধু দুজন।   গ্রামের আবাল কাঁচা সড়ক অভিজাত হাইওয়ের পিঠে চড়ে জাহাজ কোম্পানির মোড়ে উঠে যায়। ধুলো-কাদামাখা নাবালক রাখাল গরুপাল লয়ে যায় মাঠে, সরু পুলের হাত ধরে নদীপার, হাঁপাতে-হাঁপাতে…

  • মানুষের মুখ

    তমিজ উদদীন লোদী আমাকে মানুষের মুখ অাঁকতে বলা হয়েছিল। কিন্তু আমি অাঁকতে গিয়ে টের পাই পৃথিবীর অন্যতম কঠিন একটি কাজে আমার অজান্তেই আমি হাত দিয়ে ফেলেছি।   বরং শৈত্যপ্রবাহের ভেতরে বরফ কুড়ানো কিংবা মরুভূর তপ্ত বালির ওপর হাঁটা ঢের ঢের সহজ কাজ। কপোল, চোখ ও থুঁতনি অাঁকতে গিয় টের পাই এদের নানা ভঙ্গি ও অভিব্যক্তি…

  • বঞ্চিতদের দলে

    শ্যামসুন্দর কুন্ডু   কাল যে আকাশ ছিল আকাশের মতো। কাল যে রাত ছিল রাতের মতো। গৃহদ্বারে ছিল সাজসজ্জা অভ্যন্তরে অভিজাত অতিথি। আলোকসজ্জা আর খাবারের সমারোহ প্রাচুর্যের অতিশয়োক্তি ছিল সবখানে। কোথাও কোনোখানে ছিল না ঘাটতি।   শেষ রক্ষা হলো ঠিক তবু কারা যেন জেনে গেল সব। গোল বাধল বাইরে। বাতাসে বাতাসে ছড়িয়ে এসব কিছু অতিথিদের গায়ের…

  • গাছির গান

    সায়ীদ আবুবকর   জিড়ন রসের মতো তোমার যৌবন, যূথীমালা; তোমার খেজুরগাছে আজ আমি দিনান্তের গাছি, কাটবো পৌরুষ দিয়ে তোমার দুচোখে যত জ্বালা, তারপর রস দিও, বসতে দেবো না কোনো মাছি   ছ-কুড়োর মাঠে আজো ছোলার কি-চমৎকার চাষ, সেই ছোলাগাছ তুলে পোড়াবো উঠানে মাঝরাতে; তারপর তোমার ঘরে হালাকুর চলবে সন্ত্রাস, পৌষের পবন আর স্তব্ধ রাত্রি কেঁপে…