সৈয়দ শামসুল হক

সৈয়দ শামসুল হক \ ২৮ \   নদী কেঁদে চলেছে, একটানা তার সিঁ সিঁ কান্নার শব্দ মকবুল হোসেনকে বধির করে দিতে থাকে। সে নির্ণয় করতে চেষ্টা করে, কেন নদী কাঁদছে। তার মনে হয় তার বাবা মইনুল হোসেন মোক্তারের জন্যে কাঁদছে। আধকোশার পানিতে ডুবে মৃত্যু হয় তাঁর। কেন তিনি ঝাঁপিয়ে পড়েছিলেন আধকোশার উন্মত্ত খলখল পানিতে? এই…

সৈয়দ শামসুল হক রাত খুব বেশি নয়, বড়জোর সাড়ে ৮টা, এ-সময় আকাশভরে তারা থাকবার কথা, কী গোল একটা চাঁদে প্রান্তর ধবধবে আলোয় ভেসে যাবার কথা, কিন্তু দুপুর থেকে ঘন মেঘ। রংপুর থেকে জলেশ্বরী পর্যন্ত আকাশটা থমথমে হয়ে আছে। মাঝে মাঝে ঝড়ো হাওয়া দিচ্ছে আর ছিপছিপিয়ে বৃষ্টি পড়ছে। আমরা বৃষ্টিমাথায় ট্রেনে উঠেছি রংপুরে। এখন বাড়ির প্রায়…

সৈয়দ শামসুল হক \ ২৬ \ আমরা এতদূর এসে অবধি ধারাবাহিক একটি গল্পের জন্যে যদি এখনো অপেক্ষা করে থাকি তাহলে স্মিতমুখ হয়ে উঠব। দেখাই কি যাচ্ছে না যে, আমরা এখন গল্পের ভেতরেই বাস করছি? আমাদের চারদিকেই এখন গল্পের অণু, কণা ও পর্বত এবং সমুদ্র। সৃষ্টির আদিতে যেমন – জল, বিশাল জল, পরে সংক্ষুব্ধ সেই জল,…

সৈয়দ শামসুল হক ॥ ২৫ ॥ মানুষের মন এমন, ভেতরের সব শক্তি দিয়ে শূন্যের ভেতরে সত্য ছবি তৈরি করতে চায়, এমন ছবি যা হাত বাড়িয়ে ছোঁয়া যাবে। নদীর বুকে নৌকো। নৌকোয় পা রাখবেন দেবী। মানবীর ছদ্মবেশে দেবী আজ। এভাবেই দেবী দেখা দেন মানুষের কাছে। তার ভেজা পায়ের ছাপ পড়ে নৌকোর পাটাতনে। পাটাতন তো নয়, জীবন!…

সৈয়দ শামসুল হক ॥ ২৪ ॥ চা আনতে কন্ট্রাক্টর সাইদুর রহমানের সমুখ থেকে উঠে যায় কুসমি। – আপনে বইসেন খানিক, চা নিয়া আসি। বিস্কুট কি দেমো? তিনি হাত নেড়ে অস্পষ্ট একটা ভঙ্গি করেন, যার অর্থ দিতেও পারো, নাও পারো। সাইদুর রহমানকে আজ গল্পে পেয়েছে। কুসমি তাঁর দিকে খানিক নজর ফেলে দেখে নেয়। মনে হয় অনেকক্ষণ…

সৈয়দ শামসুল হক ॥ ২৩ ॥ আধকোশার জল বড় শীতল মনে হয় বালক মুকুলের, চোখেমুখে সে জলের ঝাপট মারে, তারপর আঁজলা ভরে পান করে, তার ভেতরটাও শীতল হয়ে যায়। ভোরে জলখাবার তার জোটে নাই, মা আজ হেঁসেলে প্রবেশ করে নাই; আধকোশার জল তাকে ক্ষুধার মুখে তৃপ্তি দেয়, সে উদ্গার তোলে। দূরে দাঁড়িয়ে আছে মইনুল হোসেন…

সৈয়দ শামসুল হক ॥ ২২ ॥ ইতিহাস শুধু মানুষকেই হত্যা করে না, ঘোড়াও ইতিহাসের হাতে নিহত হয়! হ্যাঁ, ঘোড়াও বাদ যায় না ইতিহাসের ধারালো খড়্গ থেকে, কিংবা বন্দুকের গুলি থেকেই। আমরা মানিকগঞ্জের সেই জমিদারবাড়িতে না হয় যাই, সেখানে সেই তিনটি ঘোড়া আমরা একবার এই সুবাদে দেখে লই। বড় শৌখিন নাম ছিল ঘোড়া তিনটির – ঝড়,…