হারিসুল হক
-
উটের প্রহর
হারিসুল হক ১. শূন্যমঞ্চ। দর্শকহীন নাটসভা। আমি একা সব আলো জ্বেলে সেজেছি রাজাধিরাজ; পেছনে ময়ূর-আসন মস্তকে মণিরত্ন-বিভূষিত দর্পিত উষ্ণীষ চমকায় এরই মধ্যে বিবেকের ত্রস্ত প্রবেশ উলুবনে মুক্তো ছড়াতে এসেছো কে নিখাদ মাতাল? ২. নগর সভ্যতার চাপে ভেঙে গেছে জীবনের চাবি সময় হিমায়িত মাছ ভোঁতা চোখ জমে থাকা কালচে-নীল নাভি …
-
সিঁড়ি
হারিসুল হক উপরের সিঁড়িটা কোথায়? জিজ্ঞেস করতে করতে আচম্বিতে আমি এক গৃহপোষ্য বাদামি বেড়ালের সাক্ষাৎ পেয়ে যাই। উপায়ান্তর না দেখে আমি ওর পিছু নিয়েছিলাম। অন্দর থেকে বের হয়ে প্রথমে সে দুলকি চালে খানিকক্ষণ সোজা হেঁটে – তারপর বাঁ দিকে মোড় নিয়ে একটা টিলার দিকে এগোতে থাকলো। আমি লক্ষ করলাম, চলার সময় মাঝেমধ্যে সে…
-
দুলে ওঠে উল্টো নদী
হারিসুল হক যদি আজ রাত জাগি কটা চাঁদ টোকা দেবে আমার কবাটে? কটা নদী খুঁজে পাবে উৎস-প্রপাত তার নিজ বনে! কটা পাখি উড়ে যাবে মেঘের ছায়ায় নিগূঢ় মায়ায়! মেঘল ছায়ার মতো স্মৃতির প্রদীপ জ্বলে নেভে সে কোন প্রচ্ছন্ন দ্বীপে? জলার সীমানা ঘেঁষে অপসৃত সেইসব চরণধ্বনি যেন ফের ফিরে আসে চৈতন্যের বিহবল রথে কেশর দুলিয়ে।…
-
একাকী চরের ভিতর
হারিসুল হক একাকী চরের ভিতর একজোড়া ক্ষুধিত সিগ্যাল ঘাই মারে ঠিক যেন মনের ভিতর। ঠিক যেন মনের ভিতর থেকে খুঁড়ে পাওয়া ধূসর স্মারক, ছিন্নপ্রায় ভূর্জপত্র – দুষ্পাঠ্য তবু বোঝা যায় বেশ বোঝা যায়। হঠাৎ চরের মাঝে জেগে ওঠা নির্জন নারকেল গাছ – ওটাই কি স্মৃতি-প্রতিমা? হয়তোবা হয়তোবা সাগরের কূল ছেপে দুর্দান্ত ছাতিম এক দাঁড়িয়ে একা…
-
এখন আমার সময় আমিই শাসাব
হারিসুল হক এখন আমার সময় আমিই শাসাব হে আমার সময়, তুমি এখন কব্জিবন্দি ভীরু ভিমরুল আমার আস্তিনের কোণে ঢাকা পড়ে আছ থাকো একান্ত অনুগত সারমেয় সেজে নিশ্চুপ থাকো যদি সাধ হয় মাঝে মাঝে আমার নামের সাথে ওংকার তোলো তুমি জান ইচ্ছে করলেই এখন আমি চাকা ঘুরিয়ে রাতকে দিন আর দিনকে রাত করতে পারি।…
-
নদীই উপাত্ত যখন
হারিসুল হক ক. কী ছন্দে তুলি তাল টুং টাং নবাবি ঘরানা ভিতরে যে ঝড় বয় ভাঙে এ কোন তারানা খ. এ আমার ক’টাকে ভাঙি ষোলবার আছড়ালেও টোপর পড়ে না তাই ঝাঁকাই গ. নদীই উপাত্ত যদি মেঘ কার শিখ-ী বাহন ঘুমচোখে চেয়ে দেখি সজারুর যাপিত জীবন ঘ. উল্টাও উল্টাতে উল্টাতে তুমি…
-
কপট ঘুমের মোম
হারিসুল হক মেঘ চিরে নেমে আসা আলোর প্রপাত তাকে আমি কোন মাপে গাঙচিল ডাকি তাকে আমি কেন তবে পোষাপাখি ভাবি যে-পাখি আমার নয়, এমনকি স্বপ্নেও তার জন্য কোনো খাঁচা করিনি নির্মাণ কীভাবে মানুষ চেনে জীবনের চাবি কীভাবে মানুষ খুঁজে মানুষের ঘর বিতল সাগর আর অরণ্যের বুনো আবহাওয়ায় কীভাবে ইচ্ছের জিভ প্রসারিত হতে থাকে…
-
ব্যক্তিত্বের বহুমাত্রিক বর্ণচ্ছটা
হারিসুল হক স্বপ্ন ও সত্যের অদ্ভুত দোলাচলে সৃষ্টিশীল মন উদ্বেল হয়ে থাকবে – এ আর নতুন কী! কাইয়ুম চৌধুরীও তার ব্যতিক্রম ছিলেন না। ফলে যে অপার সুড়ঙ্গপথে তিনি যাত্রা শুরু করেছিলেন, সে-পথ তিনি যথার্থ অর্থেই একসময় খুঁজে পেয়েছিলেন। একসময় হাজারো বিনিদ্র মুহূর্তের ভাবনাপুঞ্জ একীভূত হয়ে পাখা মেলল তাঁর সৃষ্টির আকাশে এবং তার সে অনিবার্য যাত্রা…
-
প্রকৃত শ্রাবণে
হারিসুল হক এখন সকাল তবু মনে হয় জেগে আছি অশেষ রাত্রির ভিতর। যেন ঘুম নয় যেন তন্দ্রাচ্ছন্ন বোধের ভিতর ডনরন্তর হেঁটে যাচ্ছি ছায়াময় আমি দ্বিতীয় আমার সাথে তবে কি মৃত আমি বেঁচে আছি এই ছলনায় মেলাচ্ছি সম্মোহিত পা প্রীত-জনপদে আমি কি কারুর প্রেত নাকি আমার শরীরেরও কোনো ভিন্নরূপ আছে আলো কিংবা বর্ধিষ্ণু…
-
বক্ষ্যমাণ অংশটুকু
হারিসুল হক বক্ষ্যমাণ অংশটুকু হাওয়া থেকে পাওয়া হঠাৎ বৃষ্টিতে বোধ যে-প্রকারে হয় সচেতন কিছুটা সেভাবে কিছুটা স্বভাববশে একাকী বারান্দায় অস্পন্দ দোতারা কোলে বসি তন্ময় অতিশয় সতর্কতায় পাতি উদ্গ্রীব কান অই বুঝি বেজে ওঠে গেরুয়ার প্রাণছোঁয়া তান বক্ষ্যমাণ অংশটুকু বন থেকে পাওয়া মৌয়ালিরা বন থেকে মৌচাক কাটে যে-কৌশলে দার্শনিক প্রজাপতি ফুল থেকে মধু টানে যে-প্রকারে…
-
বেচারা আঙুল
হারিসুল হক এ-পথ আমার নয় যে-পথে হেঁটে গেছো তুমি দুরন্ত বজ্রের শব্দে ফাটে কর্ণপটহ – বিচ্ছিন্ন হতে থাকে বেচারা আঙুল যে-পথে তুমি গেছো সে-পথ আমার নয়… স্টেশনে বিকেল নামে হিম এক নদীর আদলে অরণ্যে জারজ গাছ ছায়া গিলে… পথ কি ঝর্ণা নাকি নাকি পথ সর্ষে কুঁড়ি – শুধু দোলাচল শুধু মিটমিট… …