অলোক সেন

  • কুশলতা তেমন মানি না

    বুড়ো তেজি, জেদি আর তির নয়, বাক্যভরা দ্রোণ নিয়েছি শরণ। লিখেছি অনেক কিছু ঘাসে মুখ যে-নাড়াটি বাঁধা তাকে আলগা করেছি গোপন। কত শব্দ, প্রতি ক্লাসে, কূট ও কচালি, এক একটি আচমন শেষে হাত মুছি, মুণ্ড ভাঙি কুশদের, কুশলতা তেমন মানি না। শ্রদ্ধায় নিচু হয় মাথা, তবু ঈষৎ পক্ব আমি এবং কপট। শিক্ষা ক্রমবর্ধমান, পত্রপুষ্পে বিগ্রহটি…

  • পুঁজি

    মতিচ্ছন্ন ভারি না হলে, ভরা বর্ষায় নদীতে কে পুঁটি ধরতে যায়! ছোট সে খ্যাপলা, থাকে না মীন, ইলিশও জেনেছে মেছো, পারবে না তাকে ছুঁতে। তবু গন্ধ ভাসে জানা নেই হেঁশেলে শ্রীমতী কীভাবে হয়েছে মাতোয়রা! বাঁশি হাতে টোপ ফ্যালে ছোঁড়া আঁশ গন্ধ শুধুই সম্বল।

  • স্মরণসভা

    অভিভূত শব্দমালা পাশে সামনে ভবিতব্য, রুমঝুম ট্রাম পিছনে –                         ওহ! শোক মুখ থুবড়ে ছিন্নভিন্ন; স্রোতের মতন শুধু শোকার্ত কবিতা – শুদ্ধতম হাহুতাশ। নিরুপায় ঈশ্বরী, দুহাতে রত্নখচিত সেসব দুঃখিত কৌতুক – প্রত্যক্ষদর্শীরা এর কিছুই জানে না দ্যাখে, শব্দ ও চিত্রের গহন শোকের সভা বক্তা, নিরীহ ঘাসফুল।

  • শ্রাবণ ধারা

    সামান্য লবণ কণা, একটু জিরে বাটা,                                সহযোগে আদা; অনুপাত ঠিক আছে, দ্যাখো তো? চাঁদ উঠল কি থালার ওপর। ঋতু পার হয়ে দুধ আসে সে জানে গোপন পথ Ñ অপেক্ষায় ব্যাকুল ডালিয়া। শোনো কৃষকমোহন, উনুনে রমণ কাঠে ও আগুনে নিরন্তর, দেহ গলতে গলতে – তুমি তো সেচন জানো, মাটির সরসতা; এখন শ্রাবণ, বাটি ভরা…

  • ও গোপাল

    ইজেরের নিচে ছোট সে                      চড়ুই ইক্ষুবন ছেড়ে ঝাঁপ দিলো জলে                 আহা ঢেউ থরোথরো পাড়ে যে বসন্ত জাগে! দিঘি নয়, শরিকি পুকুর ছবি নেমেছে সাঁতারে, নুয়ে-পড়া পেয়ারার ডাল,                      ঘন দাম – ওখানে গোপাল থাকে! ইজের ছেড়েছে কবে ভাঙা পেয়ারার ডাল –                    ঋতু ও বেয়াড়া, শ্বাস ওঠে, কাশি।

  • অবতরণ

    প্রণাম হে আর্য, স্নেহধন্য, পাঠ করি পুঁথিমালা শ্রমদান শেষ হলে ফলেফুলে প্রসন্নতা। কলমে কালিতে ভেদ ভেদ আছে পুঁথির পাতায়, টেক্সচারে, আনন্দ ভূলোক ঘিরে নাচে অরণ্যকে ঘিরে বাঁধ, জল টলটল – খিদেকে ডোবাই সেইখানে। প্রণাম হে আর্য, অমর বচনমালা, তোমার মঙ্গল-পুথি আমার দু-চোখ ঢাকে তুলসীর পাতা।

  • জোনাকি-গ্রামের আটচালা

    বর্ষা টইটম্বুর জোনাকি-গ্রামে গোছায় গোছায় খলবল ডিঙি নৌকা করে টলমল। ধানে আর চালে ওজন কতটা খুঁটে আনতে দিনের আহার কী যন্ত্রণা, জানে, দাওয়ার পাশের পেঁপে গাছ। ঋতুকাল পার হয়, ফলেফুলে পদ্মাবতী গেহ আলো পায় সন্ধ্যার তুলসীতলা আবারো আষাঢ় নামে, গহন জীবন, জোনাকি-গ্রামের পাশে নব পাঠশালা। ইছামতী জল দেয়, রবি ক্ষেতে ছোলা ও বাতাসা ওই বুঝি…

  • জাহাজঘাটায় অপেক্ষা

    অলোক সেন   হাই মারিয়া, এ্যাতো শান্ত কেন?   কে যেন বলেছিল – আসলে, নাম ছিল শামত্মা মারিয়া।   বাড়ির পূর্ব প্রামেত্ম তার বাসা, যেবার স্রোতে ভেসে এসেছিল পশ্চিমে – বঙ্গোপসাগর শান্ত ছিল; তাকে দেখি হলদিয়া বন্দরে সমুদ্র শস্যের মতো সংকটে –   ডেকেছিল সে, কথার ইঙ্গিতে, শীতরাতে।   এড়াতে পারিনি, তাই সংকেতে – ওম্…

  • আফসোস

    অলোক সেন   লোকটা খিঁচিয়ে উঠল – কেন যে লেখেন? ধ্যাবড়া এরকম মতিচ্ছন্ন রাগ?   ‘কেন’ – , ওই শব্দটির উৎসমুখ খুঁজতে গিয়ে – আঃ যমুনার সে কি কুলুকুলু…   নৌকা সেই যে ডুবল, কালিদাস একটুও মুচকি হাসলেন না, জয়দেবও লুকোলেন না মুখ চণ্ডীদাস হাসতে হাসতে নেড়ে দিলেন পঞ্চবি ডাল।   বিস্ময় যখন ফাটোফাটো সন্ন্যাসী…

  • জৈব বাহানা

    অলোক সেন   প্রণয় নেমেছে ঝেঁপে কাঁড়বাঁশও লেগেছে পিছনে, সরসর সরসর খরিশের অভিসার আধো নিপাট, আধো খচ্চর।   পুঞ্জিত কুঞ্জে হারালো পথ সে-ঠিকানা কে বা জানে পাতার ওপরে চাঁদের গহনা নামে- জাগে সংশয়, সে কি আগুন লাগাবে!   সুমতিকে ছিন্ন করে রাধাকে এনেছে টেনে সুরা ও দ্রাক্ষা পথে দু-একটি শায়র তবু, আটচালাটির পাশে পড়ে আছি…

  • সূর্যজন্মের দিকে

    অলোক সেন   এখন, সূর্যজন্মের আগে চাপচাপ অন্ধকার ঢেকে বসেছে টবের গাছে, বারান্দায়।   নক্ষত্রসভার সদস্য হতে চায় – এই আবেদনপত্রসহ একাকী অমলিন মৃত্যুর দরজায় কড়া নাড়ে আর হাই তোলে।   জীবনের বাড়ি যাবে শরবত খেতে তোমাকে তা কি করে বলে, এবার ভূত ও ভবিষ্যতে কড়া নাড় কবি।   বিদায়, সূর্যজন্মের দিকে – সে বলেছে…

  • সূর্যজন্মের দিকে

    অলোক সেন   এখন, সূর্যজন্মের আগে চাপচাপ অন্ধকার ঢেকে বসেছে টবের গাছে, বারান্দায়।   নক্ষত্রসভার সদস্য হতে চায় – এই আবেদনপত্রসহ একাকী অমলিন মৃত্যুর দরজায় কড়া নাড়ে আর হাই তোলে।   জীবনের বাড়ি যাবে শরবত খেতে তোমাকে তা কি করে বলে, এবার ভূত ও ভবিষ্যতে কড়া নাড় কবি।   বিদায়, সূর্যজন্মের দিকে – সে বলেছে…